ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সংলাপে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর ২০১৮
  • / ৩৩২ বার পড়া হয়েছে

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করেছে যুক্তফ্রন্ট। দুই দিনের দুই সংলাপ অনুষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি ছিল দেশের সচেতন নাগরিকদের। সংলাপ পুরোপুরি ব্যর্থ, এমন কথা প্রকাশ্যে না বললেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক বিএনপি সংলাপ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে ফ্রন্টপ্রধান ড. কামাল হোসেন মনে করছেন, সব আশা ফুরিয়ে যায়নি। সংবিধানসম্মত যে সমাধানের আশা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দফা সংলাপে আগ্রহী ড. কামাল হোসেন মনে করেন, আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে খুব বেশি সময় হাতে নেই। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফা সংলাপের সময় না পাওয়া গেলে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে দিতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা। ফ্রন্টের অনেক নেতাই মনে করেন, প্রথম দফা সংলাপের অর্জন একেবারে কম কিছু নয়। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পর অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও বলেছেন, সংলাপের শুরুটা যেভাবে হয়েছে, তাতে তিনি আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই জোটের সংলাপ অনুষ্ঠানকে ইতিবাচক বলেই ধরে নিতে হবে। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংলাপ অনুষ্ঠানের অনেক চেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফান সমঝোতার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর মধ্যস্থতায়ও সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় সংলাপ হলেও কার্যকর কিছু হয়নি। ২০১৮ সালে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিতেই পাল্টা চিঠিতে তাদের সংলাপে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এবারের সংলাপের তাৎপর্য এখানেই। অতীতে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেখানে ব্যর্থ, এবার বিদেশিদের কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই সংলাপ শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের সংলাপ নিয়ে আশাবাদী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তাদের আশা, একটি সংঘাতময় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে এই সংলাপ অনুষ্ঠান জনমনে স্বস্তি ফেরাবে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মানুষের প্রত্যাশা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। মাঠের রাজনীতিতে পরস্পরকে আক্রমণরত রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের মধ্য দিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরস্পরের মনোভাবও বুঝতে পেরেছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। শুরুতে সংলাপকে অসম্পূর্ণ মনে হলেও দুই প্রতিপক্ষ সামনা-সামনি বসে আলোচনা করছে, এটাও কম প্রাপ্তি নয়। সংলাপ অনুষ্ঠানকেই অনেকে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখতে চাইছে। এখানেই আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে পরস্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল, সেখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে, এটা একেবারে কম প্রাপ্তি নয়। এভাবেই গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলা সম্ভব। সংলাপের ভেতর দিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী হতে চাই। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসলে ভবিষ্যতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলেই মনে করি আমরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

সংলাপে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে

আপলোড টাইম : ০৯:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ নভেম্বর ২০১৮

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ করেছে যুক্তফ্রন্ট। দুই দিনের দুই সংলাপ অনুষ্ঠানের দিকে দৃষ্টি ছিল দেশের সচেতন নাগরিকদের। সংলাপ পুরোপুরি ব্যর্থ, এমন কথা প্রকাশ্যে না বললেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বড় শরিক বিএনপি সংলাপ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে ফ্রন্টপ্রধান ড. কামাল হোসেন মনে করছেন, সব আশা ফুরিয়ে যায়নি। সংবিধানসম্মত যে সমাধানের আশা প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় দফা সংলাপে আগ্রহী ড. কামাল হোসেন মনে করেন, আলোচনার মধ্য দিয়েই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে খুব বেশি সময় হাতে নেই। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফা সংলাপের সময় না পাওয়া গেলে একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে দিতে চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা। ফ্রন্টের অনেক নেতাই মনে করেন, প্রথম দফা সংলাপের অর্জন একেবারে কম কিছু নয়। যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পর অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীও বলেছেন, সংলাপের শুরুটা যেভাবে হয়েছে, তাতে তিনি আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই জোটের সংলাপ অনুষ্ঠানকে ইতিবাচক বলেই ধরে নিতে হবে। অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৯৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সংলাপ অনুষ্ঠানের অনেক চেষ্টা হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১৩ অক্টোবর কমনওয়েলথ মহাসচিবের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফান সমঝোতার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। তাঁর মধ্যস্থতায়ও সংলাপ ফলপ্রসূ হয়নি। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় সংলাপ হলেও কার্যকর কিছু হয়নি। ২০১৮ সালে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চিঠি দিতেই পাল্টা চিঠিতে তাদের সংলাপে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এবারের সংলাপের তাৎপর্য এখানেই। অতীতে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেখানে ব্যর্থ, এবার বিদেশিদের কোনো রকম হস্তক্ষেপ ছাড়াই সংলাপ শুরু হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের সংলাপ নিয়ে আশাবাদী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। তাদের আশা, একটি সংঘাতময় রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে এই সংলাপ অনুষ্ঠান জনমনে স্বস্তি ফেরাবে। নির্বাচন সামনে রেখে দেশের মানুষের প্রত্যাশা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। মাঠের রাজনীতিতে পরস্পরকে আক্রমণরত রাজনৈতিক দলগুলো সংলাপের মধ্য দিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরস্পরের মনোভাবও বুঝতে পেরেছে বলে ধারণা করা যেতে পারে। শুরুতে সংলাপকে অসম্পূর্ণ মনে হলেও দুই প্রতিপক্ষ সামনা-সামনি বসে আলোচনা করছে, এটাও কম প্রাপ্তি নয়। সংলাপ অনুষ্ঠানকেই অনেকে বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখতে চাইছে। এখানেই আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে পরস্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল, সেখানে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে, এটা একেবারে কম প্রাপ্তি নয়। এভাবেই গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেলা সম্ভব। সংলাপের ভেতর দিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে, তা অব্যাহত থাকবে বলে আমরা আশাবাদী হতে চাই। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসলে ভবিষ্যতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকবে না বলেই মনে করি আমরা।