ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শৈলকুপায় চাচাতো দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০
  • / ১৯৩ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধুলিয়াপাড়া গ্রামে লাল্টু (৪৫) ও অভি (২৬) নামের দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এলাকায় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস খানের সমর্থকেরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিহত লাল্টু ধুলিয়াপাড়া গ্রামের মনজের মণ্ডলের ছেলে। অন্যদিকে অভি একই গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। তাঁরা সম্পর্কে চাচা ভাই। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে শৈলকুপায় ১২ দিনে ৪ জন খুন হয়েছে।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান জানান, ধুলিয়াপাড়া ও পাথরবাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুটি সামাজিক দল রয়েছে। মকবুল মহুরী ও আব্দুল কুদ্দুস খান এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ধুলিয়াপাড়া গ্রামে গত ৭ মে সকালে আইয়ুব মুসল্লি নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলা করে কুদ্দুস খাঁ গ্রুপ। একই দিন বিকেলে মকবুল হোসেন ও তাঁর ভাতিজা রাকিবুল ইসলাম পলাশের ওপর পাল্টা হামলা করে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের সমর্থকেরা। প্রতিশোধ নিতে রোববার সকালে অবেদ খাঁ নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালানো হয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের লোকজন মকবুল মণ্ডলের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অভি (২৫), লাল্টু (৪৫) ও মনজের মণ্ডল (৬০) গুরুতর আহত হয়। তাঁদের উদ্ধার করে দুপুরে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে দুপুর ১টার দিকে লাল্টু ও অভি মৃত্যুবরণ করেন। মনজের মণ্ডলকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত অভির চাচা শফিউদ্দীন অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাই লাল্টু ও ভাতিজা অভি বাড়ির সামনে বসেছিলেন। এ সময় পাথরবাড়িয়া গ্রাম থেকে এসে তাঁদের ব্যাপক মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। কুপিয়ে জখম করার ফলে তাঁরা মৃত্যুবরণ করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রোববার আবেদ আলীকে মারধরের পর পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আপস-মীমাংসা করে দেয়। ফলে সোমবার দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। অভিযোগ পাওয়া গেছে শৈলকুপা থানায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান যোগদান করার পর থেকেই সামাজিক বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি না করে তিনি আপস-রফা করে বেড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ওসির অপসারনের দাবিতে শৈলকুপার সাধারণ মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপার সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই বলেন, ‘করোনা আতঙ্ক ও পবিত্র রমজান মাসে ১২ দিনের ব্যবধানে শৈলকুপায় চারজন খুন হওয়ায় আমি লজ্জিত।’ তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছি আপনারা শুধু নিরপেক্ষই থাকবেন না, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হবেন। এ ক্ষেত্রে দলমত দেখার দরকার নেই।’ তিনি বলেন, গত ৪-৫ বছর শৈলকুপায় কোনো হানাহানি ছিল না। কোনো মানুষও মরেনি। বর্তমান ওসি যোগদানের পর থেকে দেখছি আপসের প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখছি বলে জানান আব্দুল হাই এমপি।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ, ওসি বজলুর রহমান ফোন ধরেন না। খালি ঘুমায়। আপসের মাধ্যমে তিনি সবকিছুর সমাধান করতে চান। ফলে অপরাধী ও অত্যাচারীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, জেলার সবচেয়ে দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে শৈলকুপায় কোনো খুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির নজির নেই। হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোর দবরদস্তি করে প্রতিটি হত্যা মামলা আপস করে ফেলা হয়। ফলে একের পর এক মারামারি ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও কোনো সাজা নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শৈলকুপায় চাচাতো দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যা

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০

ঝিনাইদহ অফিস:
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ধুলিয়াপাড়া গ্রামে লাল্টু (৪৫) ও অভি (২৬) নামের দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এলাকায় সামাজিক আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে স্থানীয় আব্দুল কুদ্দুস খানের সমর্থকেরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিহত লাল্টু ধুলিয়াপাড়া গ্রামের মনজের মণ্ডলের ছেলে। অন্যদিকে অভি একই গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে। তাঁরা সম্পর্কে চাচা ভাই। খবর পেয়ে পুলিশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ নিয়ে শৈলকুপায় ১২ দিনে ৪ জন খুন হয়েছে।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান জানান, ধুলিয়াপাড়া ও পাথরবাড়িয়া গ্রামে আওয়ামী লীগের দুটি সামাজিক দল রয়েছে। মকবুল মহুরী ও আব্দুল কুদ্দুস খান এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ধুলিয়াপাড়া গ্রামে গত ৭ মে সকালে আইয়ুব মুসল্লি নামে এক ব্যক্তির ওপর হামলা করে কুদ্দুস খাঁ গ্রুপ। একই দিন বিকেলে মকবুল হোসেন ও তাঁর ভাতিজা রাকিবুল ইসলাম পলাশের ওপর পাল্টা হামলা করে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের সমর্থকেরা। প্রতিশোধ নিতে রোববার সকালে অবেদ খাঁ নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলা চালানো হয়। এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার দুপুরে আব্দুর রশিদ খাঁ গ্রুপের লোকজন মকবুল মণ্ডলের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে অভি (২৫), লাল্টু (৪৫) ও মনজের মণ্ডল (৬০) গুরুতর আহত হয়। তাঁদের উদ্ধার করে দুপুরে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে দুপুর ১টার দিকে লাল্টু ও অভি মৃত্যুবরণ করেন। মনজের মণ্ডলকে মুমূর্ষ অবস্থায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত অভির চাচা শফিউদ্দীন অভিযোগ করেন, ‘আমার ভাই লাল্টু ও ভাতিজা অভি বাড়ির সামনে বসেছিলেন। এ সময় পাথরবাড়িয়া গ্রাম থেকে এসে তাঁদের ব্যাপক মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। কুপিয়ে জখম করার ফলে তাঁরা মৃত্যুবরণ করেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, রোববার আবেদ আলীকে মারধরের পর পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং আপস-মীমাংসা করে দেয়। ফলে সোমবার দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটে যায়। অভিযোগ পাওয়া গেছে শৈলকুপা থানায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলুর রহমান যোগদান করার পর থেকেই সামাজিক বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি না করে তিনি আপস-রফা করে বেড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ওসির অপসারনের দাবিতে শৈলকুপার সাধারণ মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপার সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই বলেন, ‘করোনা আতঙ্ক ও পবিত্র রমজান মাসে ১২ দিনের ব্যবধানে শৈলকুপায় চারজন খুন হওয়ায় আমি লজ্জিত।’ তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছি আপনারা শুধু নিরপেক্ষই থাকবেন না, অত্যাচারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর হবেন। এ ক্ষেত্রে দলমত দেখার দরকার নেই।’ তিনি বলেন, গত ৪-৫ বছর শৈলকুপায় কোনো হানাহানি ছিল না। কোনো মানুষও মরেনি। বর্তমান ওসি যোগদানের পর থেকে দেখছি আপসের প্রবণতা বেড়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপ করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় দেখছি বলে জানান আব্দুল হাই এমপি।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ, ওসি বজলুর রহমান ফোন ধরেন না। খালি ঘুমায়। আপসের মাধ্যমে তিনি সবকিছুর সমাধান করতে চান। ফলে অপরাধী ও অত্যাচারীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। তথ্য নিয়ে দেখা গেছে, জেলার সবচেয়ে দাঙ্গা প্রবণ এলাকা হিসেবে শৈলকুপায় কোনো খুনের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির নজির নেই। হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জোর দবরদস্তি করে প্রতিটি হত্যা মামলা আপস করে ফেলা হয়। ফলে একের পর এক মারামারি ও হত্যার ঘটনা ঘটলেও কোনো সাজা নেই।