ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব : দৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২২:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৩৩৫ বার পড়া হয়েছে

গত ৮ অক্টোবর সোমবার মহালয়ায় ‘মহাশক্তি, মহামায়া, দুর্গতিনাশিনী’ দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ১৪ অক্টোবর দুর্গার বোধন এবং পরদিন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে শুরু হয় মূল পূজা। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার দেবী দুর্গা এসেছিলেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, ফিরে গেছেন দোলায় (পালকি) চেপে। শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী ঘোড়ায় চড়ে এলে তার ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গসরঙ্গম’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর প্রভাব বাড়বে। আর দেবী দোলায় চেপে বিদায় নিলে ফল হয় ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’, অর্থাৎ দেখা দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়। হিন্দু আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবীপক্ষের। গতকাল দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। অন্যায়, অশুভ ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়, শুভ ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে—এই হলো সব সম্প্রদায়ের মানুষের, সব ধর্মের মূলকথা। মানুষের পরম লক্ষ্য আত্মিক শুচিতা অর্জন ও তা রক্ষা করে চলা। কিন্তু মানুষ সে লক্ষ্যে সব সময় অবিচল থাকতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ পথের দিশা হারায়। হয়ে ওঠে নির্মম, কখনো বা নৃশংস। পৌরাণিক মহিষাসুর সেই নির্মমতা ও নৃশংসতারই প্রতীক। মানুষকে পতন ও ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় মানুষের মনের ভেতরে থাকা মহিষাসুর। মানুষকে সেই পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হন দেবী দুর্গা। তিনি মানুষকে সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে দেন। মানবের কল্যাণে এবং অশুভের ওপর শুভর বিজয়কে নিশ্চিত করেন তিনি। বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসব। বিশেষ করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উত্কৃষ্ট উদাহরণ দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীর দিন থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া উৎসবের আমেজ পরের দিনগুলোতেও বজায় ছিল। বিজয়া দশমী পর্যন্ত সারা দেশ ছিল উৎসবমুখর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্ত নারী, শিশুসহ সব বয়সের মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিঃশঙ্ক আনাগোনায় মুখর ছিল দেশের পূজাম-পগুলো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষে মানুষে সব বিভেদ ও সংকীর্ণতা চিরতরে দূর হয়ে যাক। শক্তিশালী হোক মিলন ও সম্প্রীতির ধারা। সত্য, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয় হোক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব : দৃঢ় হোক সম্প্রীতির বন্ধন

আপলোড টাইম : ১০:২২:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অক্টোবর ২০১৮

গত ৮ অক্টোবর সোমবার মহালয়ায় ‘মহাশক্তি, মহামায়া, দুর্গতিনাশিনী’ দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ১৪ অক্টোবর দুর্গার বোধন এবং পরদিন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে শুরু হয় মূল পূজা। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার প্রাক-সন্ধ্যায় অর্থাৎ শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে কাত্যায়নী মুনির কন্যারূপে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার দেবী দুর্গা এসেছিলেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, ফিরে গেছেন দোলায় (পালকি) চেপে। শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী ঘোড়ায় চড়ে এলে তার ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গসরঙ্গম’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর প্রভাব বাড়বে। আর দেবী দোলায় চেপে বিদায় নিলে ফল হয় ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’, অর্থাৎ দেখা দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়। হিন্দু আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয় দেবীপক্ষের। গতকাল দর্পণ বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। অন্যায়, অশুভ ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়, শুভ ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে—এই হলো সব সম্প্রদায়ের মানুষের, সব ধর্মের মূলকথা। মানুষের পরম লক্ষ্য আত্মিক শুচিতা অর্জন ও তা রক্ষা করে চলা। কিন্তু মানুষ সে লক্ষ্যে সব সময় অবিচল থাকতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ পথের দিশা হারায়। হয়ে ওঠে নির্মম, কখনো বা নৃশংস। পৌরাণিক মহিষাসুর সেই নির্মমতা ও নৃশংসতারই প্রতীক। মানুষকে পতন ও ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় মানুষের মনের ভেতরে থাকা মহিষাসুর। মানুষকে সেই পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হন দেবী দুর্গা। তিনি মানুষকে সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে দেন। মানবের কল্যাণে এবং অশুভের ওপর শুভর বিজয়কে নিশ্চিত করেন তিনি। বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শারদীয় দুর্গোৎসব। বিশেষ করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উত্কৃষ্ট উদাহরণ দুর্গোৎসব। ষষ্ঠীর দিন থেকে দেশজুড়ে শুরু হওয়া উৎসবের আমেজ পরের দিনগুলোতেও বজায় ছিল। বিজয়া দশমী পর্যন্ত সারা দেশ ছিল উৎসবমুখর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্ত নারী, শিশুসহ সব বয়সের মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিঃশঙ্ক আনাগোনায় মুখর ছিল দেশের পূজাম-পগুলো। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষে মানুষে সব বিভেদ ও সংকীর্ণতা চিরতরে দূর হয়ে যাক। শক্তিশালী হোক মিলন ও সম্প্রীতির ধারা। সত্য, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয় হোক।