ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষক সংকট বনাম বেতন বৃদ্ধি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৩৫৭ বার পড়া হয়েছে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই সুন্দর অবকাঠামো নিয়ে শিক্ষা বিতরণ করছে। কোথাও কোথাও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করানোর সংবাদ প্রচারিত হলেও তার সংখ্যা নগণ্য। খেলাধুলার তেমন চিত্র চোখে না পড়লেও প্রায় প্রতিটি স্কুলেই রয়েছে খেলার মাঠ। আন্তঃস্কুল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় প্রতি বছর। তারপরও যেন খুব একটা এগোচ্ছে না খেলার মান। প্রতিটি স্কুলে ক্রমান্বয়ে আরও ভবন স্থাপিত হবে এটি মূল উন্নয়নের অঙ্গীকার। এতকিছু করেও যেন প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট দূর হচ্ছে না। শিশুদের পড়ানো অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ, যা অকাতরে করে যাচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কথা বলেছি কয়েকজন তরুণ ও মধ্যবয়সী শিক্ষকের সঙ্গে। এই কঠিন কাজটি তারা কিভাবে করে থাকেন, জানতে চাইলে সদা হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষকদের সাদামাটা উত্তর- চালিয়ে নিচ্ছি। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোটা বেতন দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। পক্ষান্তরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবৈতনিক, তার ওপর দেয়া হয় উপবৃত্তি। এতকিছুর পরও কেন তবে ক্যাডেট, কোচিং কিংবা প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেখাপড়ায় পেরে উঠছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো? বিষয়টি নিয়ে যখন একটু গভীরে ভাবতে শুরু করলাম, তখন মনে হল বিদ্যালয়গুলোতে একটু সময় দিয়ে জানতে হবে মূল রহস্য। কয়েকটি বিদ্যালয়ে দেখা চিত্র এমন- প্রতিটি শ্রেণীতে গড়ে ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক! বস্তুত প্রধান সমস্যাটি এখানেই। ৪০-৪৫ মিনিটের ক্লাসে একজন শিক্ষককে অনবরত কথা বলতে হয়, অবুঝ শিশুরা খুব বেশি মনোযোগী একথা বলা যাবে না। তাহলে কিভাবে সম্ভব এতজন শিশুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ক্লাস পরিচালনা করা? উত্তর খুঁজতে হবে প্রশাসনকে। উন্নত বিশ্বে শিশুদের স্কুলে কিভাবে পড়ানো হয় তা আমাদের জানতে হবে। সাধারণত ২০-২৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি ক্লাস হয়। ফলে শিক্ষক খুব সহজে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কোনো দেশে ২০ জনের কম শিক্ষার্থী থাকে, এতে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিশেষ যতœ নিতে পারেন। আমাদের দেশে এমনটি সম্ভব কিনা তা নিয়ে মাথা না খাটিয়ে কোনোরকমে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এছাড়া শিক্ষকদের সরকারের নানা দাফতরিক কাজে বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। বছরজুড়েই থাকে বিভিন্ন জরিপের কাজ, খাতা মূল্যায়ন, নির্বাচনের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি কাজ। আবার পিটিআই ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি মিলিয়ে প্রায় সময়ই শিক্ষক অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। গড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪-৬ জন শিক্ষক থাকেন, যা কমপক্ষে ১৬-১৮ জন থাকা দরকার শিক্ষার্থী অনুপাতে। পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের দেশে তা নেই।
নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পুরনোদের বেতন বাড়ানো, স্কুলের সময় বাড়িয়ে একজন ব্যক্তিকে দিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করানোর ফলে মূলত প্রথম ঘণ্টা পড়ানোর পর বেশিরভাগ শিক্ষক দ্বিতীয় ক্লাসে শতভাগ পাঠ দিতে পারেন না। অথচ কমপক্ষে ৫-৬টি ক্লাস নিতে হয় প্রতিদিন, অন্যান্য দায়িত্ব তো রয়েছেই। এতে করে যে মানসম্মত শিক্ষার্থী তৈরি হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন কাটত শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে সমাধান হতো বেকার সমস্যার। কমসংখ্যক শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিতে কার্যত অর্থেরই অপচয় হচ্ছে, বরং অধিক শিক্ষক নিয়োগ হলে কোনো স্কুল শিক্ষক সংকটে ভুগত না এবং আনুপাতিক হারে শ্রেণীকক্ষে কমে আসত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে উন্নত বিশ্বের মতো এগিয়ে যেত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিক্ষক সংকট বনাম বেতন বৃদ্ধি

আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগই সুন্দর অবকাঠামো নিয়ে শিক্ষা বিতরণ করছে। কোথাও কোথাও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করানোর সংবাদ প্রচারিত হলেও তার সংখ্যা নগণ্য। খেলাধুলার তেমন চিত্র চোখে না পড়লেও প্রায় প্রতিটি স্কুলেই রয়েছে খেলার মাঠ। আন্তঃস্কুল ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় প্রতি বছর। তারপরও যেন খুব একটা এগোচ্ছে না খেলার মান। প্রতিটি স্কুলে ক্রমান্বয়ে আরও ভবন স্থাপিত হবে এটি মূল উন্নয়নের অঙ্গীকার। এতকিছু করেও যেন প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট দূর হচ্ছে না। শিশুদের পড়ানো অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ, যা অকাতরে করে যাচ্ছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কথা বলেছি কয়েকজন তরুণ ও মধ্যবয়সী শিক্ষকের সঙ্গে। এই কঠিন কাজটি তারা কিভাবে করে থাকেন, জানতে চাইলে সদা হাস্যোজ্জ্বল শিক্ষকদের সাদামাটা উত্তর- চালিয়ে নিচ্ছি। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোটা বেতন দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। পক্ষান্তরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবৈতনিক, তার ওপর দেয়া হয় উপবৃত্তি। এতকিছুর পরও কেন তবে ক্যাডেট, কোচিং কিংবা প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেখাপড়ায় পেরে উঠছে না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো? বিষয়টি নিয়ে যখন একটু গভীরে ভাবতে শুরু করলাম, তখন মনে হল বিদ্যালয়গুলোতে একটু সময় দিয়ে জানতে হবে মূল রহস্য। কয়েকটি বিদ্যালয়ে দেখা চিত্র এমন- প্রতিটি শ্রেণীতে গড়ে ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক! বস্তুত প্রধান সমস্যাটি এখানেই। ৪০-৪৫ মিনিটের ক্লাসে একজন শিক্ষককে অনবরত কথা বলতে হয়, অবুঝ শিশুরা খুব বেশি মনোযোগী একথা বলা যাবে না। তাহলে কিভাবে সম্ভব এতজন শিশুকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ক্লাস পরিচালনা করা? উত্তর খুঁজতে হবে প্রশাসনকে। উন্নত বিশ্বে শিশুদের স্কুলে কিভাবে পড়ানো হয় তা আমাদের জানতে হবে। সাধারণত ২০-২৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি ক্লাস হয়। ফলে শিক্ষক খুব সহজে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কোনো দেশে ২০ জনের কম শিক্ষার্থী থাকে, এতে শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিশেষ যতœ নিতে পারেন। আমাদের দেশে এমনটি সম্ভব কিনা তা নিয়ে মাথা না খাটিয়ে কোনোরকমে ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এছাড়া শিক্ষকদের সরকারের নানা দাফতরিক কাজে বছরের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। বছরজুড়েই থাকে বিভিন্ন জরিপের কাজ, খাতা মূল্যায়ন, নির্বাচনের দায়িত্ব পালন ইত্যাদি কাজ। আবার পিটিআই ট্রেনিং, মাতৃত্বকালীন ছুটি মিলিয়ে প্রায় সময়ই শিক্ষক অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। গড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪-৬ জন শিক্ষক থাকেন, যা কমপক্ষে ১৬-১৮ জন থাকা দরকার শিক্ষার্থী অনুপাতে। পরিতাপের বিষয় হল, আমাদের দেশে তা নেই।
নতুন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে পুরনোদের বেতন বাড়ানো, স্কুলের সময় বাড়িয়ে একজন ব্যক্তিকে দিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করানোর ফলে মূলত প্রথম ঘণ্টা পড়ানোর পর বেশিরভাগ শিক্ষক দ্বিতীয় ক্লাসে শতভাগ পাঠ দিতে পারেন না। অথচ কমপক্ষে ৫-৬টি ক্লাস নিতে হয় প্রতিদিন, অন্যান্য দায়িত্ব তো রয়েছেই। এতে করে যে মানসম্মত শিক্ষার্থী তৈরি হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বাড়ানো গেলে একদিকে যেমন কাটত শিক্ষক সংকট, অন্যদিকে সমাধান হতো বেকার সমস্যার। কমসংখ্যক শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধিতে কার্যত অর্থেরই অপচয় হচ্ছে, বরং অধিক শিক্ষক নিয়োগ হলে কোনো স্কুল শিক্ষক সংকটে ভুগত না এবং আনুপাতিক হারে শ্রেণীকক্ষে কমে আসত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। ফলে উন্নত বিশ্বের মতো এগিয়ে যেত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।