ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিক্ষকদের লোভ-লালসা ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  • / ২২৯ বার পড়া হয়েছে

‘ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে দেখা যায়, তাতে আমরা আশ্চর্য ও মর্মাহত হই। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাষ্ট্র প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবী পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং এ ব্যস্ত থাকেন। অনেকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হননা। এটা অত্যন্ত অসন্মানের ও অমর্যাদাকর।’ সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সময়োপযোগী মোক্ষম একথাগুলো বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বর্তমানে দেশের সার্বিক শিক্ষার করুণ দশার সঠিক চিত্রটাই দেশের সর্বোচ্চ অভিভাবকের এ মতামতের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। এমনিতেই দেশের বিদ্যালয়গুলোর এক শ্রেণির শিক্ষকদের বাণিজ্যিক ভিত্তিক প্রবণতায় শ্রেণিবহির্ভূত কোচিং পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে বিদ্যালয় কেন্দ্রিক বা শ্রেণি কেন্দ্রিক শিক্ষাদান বিমুখ হওয়ায় সর্বোতভাবে দেশের শিক্ষাদান কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে এবং হয়ে চলছে। এটা জাতিকে অধপতনের পথে ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর। একটা জাতির জন্যে এর চেয়ে দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার আর কী হতে পারে? এতে কষ্টে থাকা আর্থিক সঙ্গতিহীন অভিভাবকদের পক্ষে সন্তানদের লেখাপড়া করানোটা রীতিমতো একটা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে লেখাপড়া ব্যতীত বাঁচা ও চলার কোনো উপায় নেই। শিক্ষা ছাড়া, জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা ছাড়া একটা জাতিকে সভ্য ও উন্নত করে তোলা যায় না। যে দেশের জনসংখার বড় একটি শ্রেণি দরিদ্র, অনেকে আছে দারিদ্র্য সীমারও নীচে, অনেকে নামে মাত্র কোনো প্রকারে খেয়েপরে বেঁচেবর্তে আছে। এমন একটা দেশের এসব পরিবারের লোকদের জন্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিক শিক্ষার বাজারে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং ধনী বা অবস্থাপন্ন আর্থিক স্বচ্ছল পরিবারের লোকদের জন্যে বর্তমান পেঁয়াজের দামের মতো বাজার দর যতো অসহনীয়ই হোক, সেটা তাদের বিচলিত করেনা, কিন্তু বিচলিত করে সীমিত সামর্থ্যরে লোকদের। এমন লোকদের অনেকেই অন্ন-ব্যঞ্জনের স্বাদ-গন্ধ বিসর্জন দিয়ে ইতোমধ্যে পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। আর একেবারে যারা ছেড়ে দিতে পারছেনা, তাদের বেলায় স্বদ-গন্ধ যেমনই হোক, তবু সামান্য একচু পেঁয়াজকুচি ব্যবহারের ইচ্ছেটাকে দমন করতে না পেরে অন্তত একটি বা দুটি পেঁয়াজ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। লেখাপড়ার দুর্মূল্যের বাজারের সঙ্গে খাদ্যপণ্যের দুর্মূল্যের তুলনাটা এজন্যেই করতে হচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্যের বাজার যখন পুরোপুরি সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়, তখন একটা দেশে দুর্ভিক্ষ মহামারী আকার ধারণ করে এবং তাতে দেশের অগণিত মানুষ না খেয়ে মারা যায়। ঠিক তেমনি যেভাবে দেশের শিক্ষাপণ্যের বাজার দর এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাই একটা বিশেষ শ্রেণির পরিবারের সন্তানরাই ভালো মানের শিক্ষা লাভ করতে পারছে, বাদ বাকিদের ব্যাপারটা সামান্য পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা তরকারির স্বাদের মতো কোনো রকম হয়ে চলছে। মেজরিটি পরিবারের সন্তানদের এমনতরো ‘কোনো রকমের পড়াশোনাটা ও অর্জিত সার্টিফিকেট’ তাদের নিজেদের বা জাতির কোনো কল্যাণ বা উন্নতি সাধনে মোটেই সহায়ক নয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি যতœবান হয়ে সময়মতো যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ও চলমান এসব নৈরাজ্যকর অবস্থার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিক যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে দেশ ও জাতির ভাগ্যাকাশে যে ঘোর ঘনঘটা নেমে আসবে তা থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকবেনা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শিক্ষকদের লোভ-লালসা ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম

আপলোড টাইম : ১০:১৭:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

‘ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে দেখা যায়, তাতে আমরা আশ্চর্য ও মর্মাহত হই। আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা রাষ্ট্র প্রশাসনের বিভিন্ন পদ-পদবী পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন লবিং এ ব্যস্ত থাকেন। অনেকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হননা। এটা অত্যন্ত অসন্মানের ও অমর্যাদাকর।’ সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে অত্যন্ত সময়োপযোগী মোক্ষম একথাগুলো বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। বর্তমানে দেশের সার্বিক শিক্ষার করুণ দশার সঠিক চিত্রটাই দেশের সর্বোচ্চ অভিভাবকের এ মতামতের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। এমনিতেই দেশের বিদ্যালয়গুলোর এক শ্রেণির শিক্ষকদের বাণিজ্যিক ভিত্তিক প্রবণতায় শ্রেণিবহির্ভূত কোচিং পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে বিদ্যালয় কেন্দ্রিক বা শ্রেণি কেন্দ্রিক শিক্ষাদান বিমুখ হওয়ায় সর্বোতভাবে দেশের শিক্ষাদান কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে এবং হয়ে চলছে। এটা জাতিকে অধপতনের পথে ঠেলে দেওয়ারই নামান্তর। একটা জাতির জন্যে এর চেয়ে দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার আর কী হতে পারে? এতে কষ্টে থাকা আর্থিক সঙ্গতিহীন অভিভাবকদের পক্ষে সন্তানদের লেখাপড়া করানোটা রীতিমতো একটা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে লেখাপড়া ব্যতীত বাঁচা ও চলার কোনো উপায় নেই। শিক্ষা ছাড়া, জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা ছাড়া একটা জাতিকে সভ্য ও উন্নত করে তোলা যায় না। যে দেশের জনসংখার বড় একটি শ্রেণি দরিদ্র, অনেকে আছে দারিদ্র্য সীমারও নীচে, অনেকে নামে মাত্র কোনো প্রকারে খেয়েপরে বেঁচেবর্তে আছে। এমন একটা দেশের এসব পরিবারের লোকদের জন্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিক শিক্ষার বাজারে সন্তানদের লেখাপড়া করাতে যাওয়াটা দুঃস্বপ্নের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং ধনী বা অবস্থাপন্ন আর্থিক স্বচ্ছল পরিবারের লোকদের জন্যে বর্তমান পেঁয়াজের দামের মতো বাজার দর যতো অসহনীয়ই হোক, সেটা তাদের বিচলিত করেনা, কিন্তু বিচলিত করে সীমিত সামর্থ্যরে লোকদের। এমন লোকদের অনেকেই অন্ন-ব্যঞ্জনের স্বাদ-গন্ধ বিসর্জন দিয়ে ইতোমধ্যে পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। আর একেবারে যারা ছেড়ে দিতে পারছেনা, তাদের বেলায় স্বদ-গন্ধ যেমনই হোক, তবু সামান্য একচু পেঁয়াজকুচি ব্যবহারের ইচ্ছেটাকে দমন করতে না পেরে অন্তত একটি বা দুটি পেঁয়াজ কিনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। লেখাপড়ার দুর্মূল্যের বাজারের সঙ্গে খাদ্যপণ্যের দুর্মূল্যের তুলনাটা এজন্যেই করতে হচ্ছে যে, দ্রব্যমূল্যের বাজার যখন পুরোপুরি সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়, তখন একটা দেশে দুর্ভিক্ষ মহামারী আকার ধারণ করে এবং তাতে দেশের অগণিত মানুষ না খেয়ে মারা যায়। ঠিক তেমনি যেভাবে দেশের শিক্ষাপণ্যের বাজার দর এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাই একটা বিশেষ শ্রেণির পরিবারের সন্তানরাই ভালো মানের শিক্ষা লাভ করতে পারছে, বাদ বাকিদের ব্যাপারটা সামান্য পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করা তরকারির স্বাদের মতো কোনো রকম হয়ে চলছে। মেজরিটি পরিবারের সন্তানদের এমনতরো ‘কোনো রকমের পড়াশোনাটা ও অর্জিত সার্টিফিকেট’ তাদের নিজেদের বা জাতির কোনো কল্যাণ বা উন্নতি সাধনে মোটেই সহায়ক নয়। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণের প্রতি যতœবান হয়ে সময়মতো যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ও চলমান এসব নৈরাজ্যকর অবস্থার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিক যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে দেশ ও জাতির ভাগ্যাকাশে যে ঘোর ঘনঘটা নেমে আসবে তা থেকে বাঁচার কোনো উপায় থাকবেনা।