ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১১:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
  • / ৩৮৬ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গায় জালিয়াতচক্র আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে

আলমডাঙ্গা অফিস: আলমডাঙ্গার শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে জালিয়াত চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ভুয়া দুই লোক ভারতীয় দুভাই পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজারাম পাডিয়া সাজিয়ে কমিশনের মাধ্যমে নিজেদের অনুকুলে রায় করিয়ে নেবার চক্রান্তে নেমেছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার মুন্সিগঞ্জের বাড়ি ও গতকাল রোববার তার চুয়াডাঙ্গার বাড়িতে কমিশন করাানোর চেষ্টা করে। তারিখ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছে। জালিয়াত চক্র যে কোন মুল্যে গোপনে তাদের মিশন সম্পন্ন করতে চরম তৎপরতা শুরু করেছে। সরকারী ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের আশু দৃষ্টি কামনা করে জালিয়াত চক্রের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার দাবী জানিয়েছেন।
এছাড়াও ইতোপূর্বে একই ব্যক্তিরা ওই ২ ব্যক্তি রাজারাম পাডিয়া ও পুরষোত্তম পাডিয়া সাজিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন, যা পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হলে আলমডাঙ্গা নির্বাচন অফিস ও চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিস ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কর্তনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট প্রেরণ করেন। এই চক্র এখানেই ক্ষান্ত হননি তারা তাদেরকে টাঙ্গাইলের একটি এলাকায় চাকরি করে বলে জেলা প্রশাসকের অফিসে কাগজপত্র দাখিল করে। পরবর্তীতে জনরোশের মুখে ভুয়া লোকগুলি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আলমডাঙ্গার নাগরিক সমাজ পরবর্তীকালে রাজা রাম পাডিয়া ও পুরষোত্তম পাডিয়ার ভারতের ভোটার তালিকা উদ্ভার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের অফিসে দাখিল করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ বিভাগের পর রামজী পাডিয়ার ছেলে চুনিলাল পাডিয়া ও মনপ্রসাদ পাডিয়া এবং চুনিলাল পাডিয়ার স্ত্রী আইস্তা পাডিয়ার নামে আলমডাঙ্গার অন্তর্গত ৭২ নং মৌজায় এসএ ৯৬৮, ৬৪৬, ৬৩৯, ২২৪৭, ১৪৭৫, ৬৬৬, ২৩৭৫, ১৯৭৪, ৭১৬, ৬৯৩, ৯৭০, ৬৩০ খতিয়ানে প্রায় ৯বিঘা জমি ছিল। এসব জমিতে পাডিয়া ওয়েল মিল, করাতকল, পাডিয়া বিল্ডিং আড়ৎ বাড়ির নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে তারা ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলতে শুরু করে। এদের সন্তানরাও স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। এক পর্যায়ে তৎকালিন সরকার এই সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সরকার ওই সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটভুক্ত করে। এ সময় আলমডাঙ্গার অনেক গরীব সাধারন মানুষ সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়ে বসবাস ও ব্যবসা করতে থাকেন। এদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন পাশের পর একটি জালিয়াত চক্র শতকোটি টাকার এ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনে বাংলাদেশের প্রকৃত এবং অব্যাহত নাগরিক ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার কথা বলা হলেও জালিয়াত চক্র ভারতীয় দু’নাগরিক পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজারাম পাডিয়াকে এদেশে এনে গোপনে ভোটার তালিকাভুক্ত করে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নাগরিকত্বসহ ভূয়া বিদ্যুৎ বিলের কাগজ তৈরী, জাল সার্টিফিকেট তৈরী করে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। ঘটনাটি জানার পর ওই সম্পত্তি লীজ নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসক, ভুমি মন্ত্রণালয়, দূর্ণীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। শুরু হয় তদন্ত। এক পর্যায়ে সব কিছুই ভুয়া বলে প্রমানিত হয়।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গার নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন নির্বাচন অফিস ঘেরাওসহ নানা কর্মসুচী পালনের এক পর্যায়ে নির্বাচন অফিস ওই দুব্যক্তি সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে। আলমডাঙ্গা নির্বাচন অফিস ও চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করে ওই দুজন বাংলাদেশী নাগরিক নয় প্রমাণিত হলে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কর্তণের জন্য সুপারিশ করে বাংলাদেশ নির্বাচন অফিসে প্রতিবেদন প্রেরণ করে। এসময় জালিয়াতচক্র ভোটার লিস্টের নাম কর্তণ ঠেকাতে আদালতে রিট করে তা স্থগিত করে। জালিয়াত চক্র এ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ের চালানো অপতৎপরতা নস্যাৎ হয়ে যায়। এরই এক পর্যায়ে তারা আবারো অপতৎপরতা শুরু করেছে। আগামী ১৭ অক্টোবর আদালতে স্বশরীরে ওই দুজনের হাজিরের কথা থাকলেও তারা গোপনে কমিশন করানোর চক্রান্ত করে।
গত ১৪ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার বাড়িতে কমিশনের চেষ্টা করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তারপরেও তাদের চক্রান্ত থামেনা। জালিয়াতচক্র গোপনে আবারো রোববার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার বাড়িতে কমিশন করানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তাদের এই চক্রান্ত জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে সরকারী উকিল এ তারিখ পরিবর্তনের জন্য অবেদন করলে আপাতত এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী ওই সম্পত্তি জালিয়াতচক্র যাতে হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য লীজ গ্রহণ করে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা

আপলোড টাইম : ১০:১১:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

আলমডাঙ্গায় জালিয়াতচক্র আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে

আলমডাঙ্গা অফিস: আলমডাঙ্গার শতকোটি টাকার অর্পিত সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে জালিয়াত চক্র আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ভুয়া দুই লোক ভারতীয় দুভাই পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজারাম পাডিয়া সাজিয়ে কমিশনের মাধ্যমে নিজেদের অনুকুলে রায় করিয়ে নেবার চক্রান্তে নেমেছে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার মুন্সিগঞ্জের বাড়ি ও গতকাল রোববার তার চুয়াডাঙ্গার বাড়িতে কমিশন করাানোর চেষ্টা করে। তারিখ পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় নতুন ষড়যন্ত্রে মেতেছে। জালিয়াত চক্র যে কোন মুল্যে গোপনে তাদের মিশন সম্পন্ন করতে চরম তৎপরতা শুরু করেছে। সরকারী ওই সম্পত্তিতে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের আশু দৃষ্টি কামনা করে জালিয়াত চক্রের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার দাবী জানিয়েছেন।
এছাড়াও ইতোপূর্বে একই ব্যক্তিরা ওই ২ ব্যক্তি রাজারাম পাডিয়া ও পুরষোত্তম পাডিয়া সাজিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন, যা পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত হলে আলমডাঙ্গা নির্বাচন অফিস ও চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিস ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কর্তনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট প্রেরণ করেন। এই চক্র এখানেই ক্ষান্ত হননি তারা তাদেরকে টাঙ্গাইলের একটি এলাকায় চাকরি করে বলে জেলা প্রশাসকের অফিসে কাগজপত্র দাখিল করে। পরবর্তীতে জনরোশের মুখে ভুয়া লোকগুলি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। আলমডাঙ্গার নাগরিক সমাজ পরবর্তীকালে রাজা রাম পাডিয়া ও পুরষোত্তম পাডিয়ার ভারতের ভোটার তালিকা উদ্ভার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের অফিসে দাখিল করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশ বিভাগের পর রামজী পাডিয়ার ছেলে চুনিলাল পাডিয়া ও মনপ্রসাদ পাডিয়া এবং চুনিলাল পাডিয়ার স্ত্রী আইস্তা পাডিয়ার নামে আলমডাঙ্গার অন্তর্গত ৭২ নং মৌজায় এসএ ৯৬৮, ৬৪৬, ৬৩৯, ২২৪৭, ১৪৭৫, ৬৬৬, ২৩৭৫, ১৯৭৪, ৭১৬, ৬৯৩, ৯৭০, ৬৩০ খতিয়ানে প্রায় ৯বিঘা জমি ছিল। এসব জমিতে পাডিয়া ওয়েল মিল, করাতকল, পাডিয়া বিল্ডিং আড়ৎ বাড়ির নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। পরে তারা ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তুলতে শুরু করে। এদের সন্তানরাও স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। এক পর্যায়ে তৎকালিন সরকার এই সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি ঘোষণা করে। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সরকার ওই সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গেজেটভুক্ত করে। এ সময় আলমডাঙ্গার অনেক গরীব সাধারন মানুষ সরকারের কাছ থেকে লীজ নিয়ে বসবাস ও ব্যবসা করতে থাকেন। এদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন পাশের পর একটি জালিয়াত চক্র শতকোটি টাকার এ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইনে বাংলাদেশের প্রকৃত এবং অব্যাহত নাগরিক ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার কথা বলা হলেও জালিয়াত চক্র ভারতীয় দু’নাগরিক পুরুষোত্তম পাডিয়া ও রাজারাম পাডিয়াকে এদেশে এনে গোপনে ভোটার তালিকাভুক্ত করে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে নাগরিকত্বসহ ভূয়া বিদ্যুৎ বিলের কাগজ তৈরী, জাল সার্টিফিকেট তৈরী করে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে। ঘটনাটি জানার পর ওই সম্পত্তি লীজ নিয়ে বসবাসকারী ব্যক্তিরা জেলা প্রশাসক, ভুমি মন্ত্রণালয়, দূর্ণীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে সরকারী সম্পত্তি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। শুরু হয় তদন্ত। এক পর্যায়ে সব কিছুই ভুয়া বলে প্রমানিত হয়।
অন্যদিকে, আলমডাঙ্গার নাগরিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন নির্বাচন অফিস ঘেরাওসহ নানা কর্মসুচী পালনের এক পর্যায়ে নির্বাচন অফিস ওই দুব্যক্তি সম্পর্কে তদন্ত শুরু করে। আলমডাঙ্গা নির্বাচন অফিস ও চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন অফিস তদন্ত করে ওই দুজন বাংলাদেশী নাগরিক নয় প্রমাণিত হলে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কর্তণের জন্য সুপারিশ করে বাংলাদেশ নির্বাচন অফিসে প্রতিবেদন প্রেরণ করে। এসময় জালিয়াতচক্র ভোটার লিস্টের নাম কর্তণ ঠেকাতে আদালতে রিট করে তা স্থগিত করে। জালিয়াত চক্র এ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে বিভিন্ন সময়ের চালানো অপতৎপরতা নস্যাৎ হয়ে যায়। এরই এক পর্যায়ে তারা আবারো অপতৎপরতা শুরু করেছে। আগামী ১৭ অক্টোবর আদালতে স্বশরীরে ওই দুজনের হাজিরের কথা থাকলেও তারা গোপনে কমিশন করানোর চক্রান্ত করে।
গত ১৪ অক্টোবর মুন্সিগঞ্জের শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার বাড়িতে কমিশনের চেষ্টা করে। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। তারপরেও তাদের চক্রান্ত থামেনা। জালিয়াতচক্র গোপনে আবারো রোববার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় শ্যামসুন্দর আগরওয়ালার বাড়িতে কমিশন করানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। তাদের এই চক্রান্ত জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। এরই এক পর্যায়ে সরকারী উকিল এ তারিখ পরিবর্তনের জন্য অবেদন করলে আপাতত এ ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে সরকারী ওই সম্পত্তি জালিয়াতচক্র যাতে হাতিয়ে নিতে না পারে সে জন্য লীজ গ্রহণ করে বসবাসকারী ভুক্তভোগীরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাবি জানিয়েছেন।