ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লোকসানে ডুবছে ডাক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯
  • / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে

বছরে গড়ে লোকসান ৩০০ কোটি টাকা ধুঁকছে ৯ হাজার ৮৮৬ ডাকঘর
সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে লোকসানে ডুবছে ডাক বিভাগ। প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিনশ কোটি টাকার লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল, এসএমএস আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্রুতগতির যোগাযোগে চিঠিতে আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। আর যুগের এ পরিবর্তনে নিজেদের পরিবর্তিত করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছে ডাক বিভাগ। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ক্ষতি ঠেকাতে কুরিয়ার, পার্সেল, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করলেও বাণিজ্যিক পরিকল্পনা না থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ডাক বিভাগ। চিঠির সংখ্যা কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, রাষ্ট্রীয় ডাক ও প্রাতিষ্ঠানিক ডাক ছাড়া চিঠি আদান-প্রদান প্রায় শূন্যের কোঠায়। মূলত নব্বইয়ের দশকের পর ডাক বিভাগ তার জৌলুস হারিয়েছে। এখন ডাক বিভাগের বড় ক্রান্তিকাল চলছে। ধুঁকছে ৯ হাজার ৮৮৬ ডাকঘর। দেড় দশকে ডাক বিভাগে চিঠি বিলির সংখ্যা কমেছে ২০ কোটি। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের সব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হয় না। তাই যদি হতো তাহলে সরকার বিনামূল্যে বই দিত না। ডাকও তেমনই একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তবে এটুকু বলতে পারি আগের তুলনায় এখন ডাকের উন্নয়ন ঘটেছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। তবে ডাক বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে উন্নয়নের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত বছরও রয়েছে ৪৩৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকার ঘাটতি।
ডাক বিভাগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে ১ দশমিক ৫৯৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে যাত্রা শুরু করে ডাক বিভাগের লোকসানের পাল্লা এখন বছরে ৪০০ কোটি ছাড়িয়েছে। ডাকবিভাগের জন্মলগ্ন থেকে এই ৪৭ বছরে কখনো লাভের মুখ দেখেনি। বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ। ১৯৭১-৭২ অর্থবছর লোকসান ছিল ১ দশমিক ৫৯৮ কোটি টাকা। ১০ বছরের মাথায় ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে সেই লোকসান দাঁড়ায় ৬ কোটিতে, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ১৯ কোটি, ২০০১-০২ অর্থবছরে ৮১ দশমিক ৯৪ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০০ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান দাঁড়ায় ৪৬২ দশমিক ৩৭২ কোটি টাকা। ১৯৭১-২০১৮ পর্যন্ত ৪৭ বছরে লোকসান করে ৪ হাজার ১৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর ব্যয়ের বড় অংশই খরচ হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুবিধার পেছনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটি রাজস্ব আয় করে ৩৭৪ দশমিক ২২৮ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয় হয় ৮৩৬ দশমিক ৬ কোটি টাকা। ৭৭১ কোটি টাকা খরচ হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডাক বিভাগের মোট রাজস্ব আয় ৪০৪ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ৮৪১ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরেও ৪৩৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে ডাক। সারা দেশে ডাকঘরে কর্মরত ৩৯ হাজার ৯০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের প্রায় ২৪ হাজার ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারীই হলেন রানার বা ডাক হরকরা, যাদের অবস্থা বড়ই করুণ।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১০টি। এক বছর পার হতেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ১১৫টিতে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পার্সেল আদান-প্রদানের সংখ্যা ছিল ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৮টি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পার্সেলের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪২টিতে। ডাক বিভাগের সেবার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ডাক সেবা, আন্তর্জাতিক ডাক সেবা, এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ইএমএস), গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্ট, সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, ডাক জীবন বীমা, মানি অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে ডাক বিভাগ নতুন বেশ কিছু সেবা নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাশকার্ড, ইএমটিএস, ইএমটিএস রেট, স্পিড পোস্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক সেবা অবমুক্ত করে ডাক বিভাগ। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছে বলে জানিয়েছে ডাক বিভাগ।
ডাক নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের অভিযোগ:
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের লাখো যুবক ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। দেশে বসে বহির্বিশ্বের কাজ করছেন। কেউ অনলাইন পোর্টাল খুলে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন এনে রোজগার করছেন। কেউ সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন সেবা অনলাইনে দেশে-বিদেশে বিক্রি করছেন। সেই সঙ্গে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য কিনছেন এবং বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেইলর ইনফোটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট করতে বেগ পেতে হচ্ছে। গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ডাকের মাধ্যমে ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পিন পাঠায়। অনেক সময় সেই পিন হাতে এসে পৌঁছায় না। আবার পৌঁছালেও বিলম্বে। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই পিন না পেলে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট করা যায় না। আমার অ্যাকাউন্টটি করতে গিয়ে দুবার পিন মিসিং হয়েছে। তৃতীয়বার পোস্ট অফিস, জিপিও দৌড়াদৌড়ি করে পিন উদ্ধার করেছি। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাইয়োনিয়ার কার্ডের মাধ্যমে তুলতে হয়। সেই কার্ড বিদেশ থেকে ডাকের মাধ্যমে আসে। আমার পরিচিত অনেকেরই পোস্ট অফিস থেকে এই কার্ড হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট আলি এক্সপ্রেস থেকে দেশের বাইরের পণ্য কিনে অনেকবারই আমি তা পাইনি। একবার জিপিওতে গিয়ে পণ্য উদ্ধার করতে হয়েছে। এসব কারণে দেশে ও দেশের বাইরে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ডাক বিভাগ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

লোকসানে ডুবছে ডাক

আপলোড টাইম : ১০:১৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯

বছরে গড়ে লোকসান ৩০০ কোটি টাকা ধুঁকছে ৯ হাজার ৮৮৬ ডাকঘর
সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে লোকসানে ডুবছে ডাক বিভাগ। প্রতি বছর গড়ে প্রায় তিনশ কোটি টাকার লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটি। মোবাইল, এসএমএস আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্রুতগতির যোগাযোগে চিঠিতে আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। আর যুগের এ পরিবর্তনে নিজেদের পরিবর্তিত করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছে ডাক বিভাগ। ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ক্ষতি ঠেকাতে কুরিয়ার, পার্সেল, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করলেও বাণিজ্যিক পরিকল্পনা না থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ডাক বিভাগ। চিঠির সংখ্যা কমতে কমতে এমন পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, রাষ্ট্রীয় ডাক ও প্রাতিষ্ঠানিক ডাক ছাড়া চিঠি আদান-প্রদান প্রায় শূন্যের কোঠায়। মূলত নব্বইয়ের দশকের পর ডাক বিভাগ তার জৌলুস হারিয়েছে। এখন ডাক বিভাগের বড় ক্রান্তিকাল চলছে। ধুঁকছে ৯ হাজার ৮৮৬ ডাকঘর। দেড় দশকে ডাক বিভাগে চিঠি বিলির সংখ্যা কমেছে ২০ কোটি। এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের সব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হয় না। তাই যদি হতো তাহলে সরকার বিনামূল্যে বই দিত না। ডাকও তেমনই একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তবে এটুকু বলতে পারি আগের তুলনায় এখন ডাকের উন্নয়ন ঘটেছে, ভবিষ্যতে আরও হবে। তবে ডাক বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদনে উন্নয়নের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গত বছরও রয়েছে ৪৩৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকার ঘাটতি।
ডাক বিভাগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ১৯৭১-৭২ অর্থবছরে ১ দশমিক ৫৯৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়ে যাত্রা শুরু করে ডাক বিভাগের লোকসানের পাল্লা এখন বছরে ৪০০ কোটি ছাড়িয়েছে। ডাকবিভাগের জন্মলগ্ন থেকে এই ৪৭ বছরে কখনো লাভের মুখ দেখেনি। বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ঘাটতির পরিমাণ। ১৯৭১-৭২ অর্থবছর লোকসান ছিল ১ দশমিক ৫৯৮ কোটি টাকা। ১০ বছরের মাথায় ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে সেই লোকসান দাঁড়ায় ৬ কোটিতে, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ১৯ কোটি, ২০০১-০২ অর্থবছরে ৮১ দশমিক ৯৪ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০০ দশমিক ৬৯ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লোকসান দাঁড়ায় ৪৬২ দশমিক ৩৭২ কোটি টাকা। ১৯৭১-২০১৮ পর্যন্ত ৪৭ বছরে লোকসান করে ৪ হাজার ১৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আর ব্যয়ের বড় অংশই খরচ হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিভিন্ন সুবিধার পেছনে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সংস্থাটি রাজস্ব আয় করে ৩৭৪ দশমিক ২২৮ কোটি টাকা। সেখানে ব্যয় হয় ৮৩৬ দশমিক ৬ কোটি টাকা। ৭৭১ কোটি টাকা খরচ হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডাক বিভাগের মোট রাজস্ব আয় ৪০৪ দশমিক ৯৩ কোটি টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ৮৪১ দশমিক ২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরেও ৪৩৬ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা ঘাটতিতে রয়েছে ডাক। সারা দেশে ডাকঘরে কর্মরত ৩৯ হাজার ৯০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। তাদের প্রায় ২৪ হাজার ভাতাপ্রাপ্ত কর্মচারীই হলেন রানার বা ডাক হরকরা, যাদের অবস্থা বড়ই করুণ।
বার্ষিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্যসূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩১০টি। এক বছর পার হতেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পত্র আদান-প্রদানের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৭ লাখ ৮১ হাজার ১১৫টিতে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পার্সেল আদান-প্রদানের সংখ্যা ছিল ৪২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৮টি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পার্সেলের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬৪২টিতে। ডাক বিভাগের সেবার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ডাক সেবা, আন্তর্জাতিক ডাক সেবা, এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিস (ইএমএস), গ্যারান্টিড এক্সপ্রেস পোস্ট, সঞ্চয় ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, ডাক জীবন বীমা, মানি অর্ডার, পোস্টাল অর্ডার। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে ডাক বিভাগ নতুন বেশ কিছু সেবা নিয়ে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাশকার্ড, ইএমটিএস, ইএমটিএস রেট, স্পিড পোস্ট এবং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক সেবা অবমুক্ত করে ডাক বিভাগ। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ এটি ডাউনলোড করেছে বলে জানিয়েছে ডাক বিভাগ।
ডাক নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের অভিযোগ:
প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের লাখো যুবক ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। দেশে বসে বহির্বিশ্বের কাজ করছেন। কেউ অনলাইন পোর্টাল খুলে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন এনে রোজগার করছেন। কেউ সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন সেবা অনলাইনে দেশে-বিদেশে বিক্রি করছেন। সেই সঙ্গে ই-কমার্সের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য কিনছেন এবং বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেইলর ইনফোটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নাজমুল হাসান নাহিদ বলেন, ডাক বিভাগের গাফিলতির কারণে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট করতে বেগ পেতে হচ্ছে। গুগল অ্যাডসেন্স থেকে ডাকের মাধ্যমে ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য পিন পাঠায়। অনেক সময় সেই পিন হাতে এসে পৌঁছায় না। আবার পৌঁছালেও বিলম্বে। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই পিন না পেলে অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট করা যায় না। আমার অ্যাকাউন্টটি করতে গিয়ে দুবার পিন মিসিং হয়েছে। তৃতীয়বার পোস্ট অফিস, জিপিও দৌড়াদৌড়ি করে পিন উদ্ধার করেছি। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাইয়োনিয়ার কার্ডের মাধ্যমে তুলতে হয়। সেই কার্ড বিদেশ থেকে ডাকের মাধ্যমে আসে। আমার পরিচিত অনেকেরই পোস্ট অফিস থেকে এই কার্ড হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট আলি এক্সপ্রেস থেকে দেশের বাইরের পণ্য কিনে অনেকবারই আমি তা পাইনি। একবার জিপিওতে গিয়ে পণ্য উদ্ধার করতে হয়েছে। এসব কারণে দেশে ও দেশের বাইরে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে ডাক বিভাগ।