ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা : প্রত্যাবাসনে চাপ বাড়াতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:২৭:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৬৯ বার পড়া হয়েছে

মিয়ানমার সরকারের বৈরী মনোভাব এবং বিদ্রোহী দমনের নামে সেনাবাহিনীর জাতি নির্মূল অভিযানের কারণে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তারও আগে থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে রয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এ দেশে অবস্থান করছে।
সামগ্রিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন খুবই জরুরি। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছে। নানামুখী তৎপরতার ফলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি হয়, তবে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সব মহলের সন্দেহ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা হয়নি। মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। অনিরাপত্তার বোধ রোহিঙ্গাদের মধ্যে এতই প্রবল যে তারা স্বদেশে ফেরার ভরসা পাচ্ছে না। এরই মধ্যে নতুন এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী বনাম সামরিক বাহিনীর ‘যুদ্ধাবস্থার’ কারণে বান্দরবানে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের বেশ কিছু নাগরিক। সম্ভবত তারা অন্য জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত মঙ্গলবার হলিউড অভিনেত্রী ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি উখিয়ার কুতুবপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। দুই দিনের সফরে তিনি কক্সবাজারে যান; আগের দিন টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন। তাঁর অভিমত বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রাষ্ট্রহীন এক অবস্থায় বাস করছে তারা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্বদেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। জোলি বলেন, বাংলাদেশে এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য বিষয়ে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে এবং দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। বাংলাদেশ দেড় বছর ধরে চেষ্টা করছে; কিন্তু মিয়ানমার আন্তরিকতা দেখাতে ব্যর্থ। আবার এর মধ্যেই মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু লোক বান্দরবানে ঢুকেছে। রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে বটে, তবে খতিয়ে দেখা জরুরি। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দোহাই দিয়ে মিয়ানমার নতুন ঝামেলা বাধিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে কি না। সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। নজর রাখতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকেও।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রোহিঙ্গা : প্রত্যাবাসনে চাপ বাড়াতে হবে

আপলোড টাইম : ০২:২৭:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

মিয়ানমার সরকারের বৈরী মনোভাব এবং বিদ্রোহী দমনের নামে সেনাবাহিনীর জাতি নির্মূল অভিযানের কারণে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরবর্তী কয়েক মাসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তারও আগে থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে রয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এ দেশে অবস্থান করছে।
সামগ্রিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন খুবই জরুরি। এ জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছে। নানামুখী তৎপরতার ফলে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি হয়, তবে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে সব মহলের সন্দেহ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তা হয়নি। মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। অনিরাপত্তার বোধ রোহিঙ্গাদের মধ্যে এতই প্রবল যে তারা স্বদেশে ফেরার ভরসা পাচ্ছে না। এরই মধ্যে নতুন এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী বনাম সামরিক বাহিনীর ‘যুদ্ধাবস্থার’ কারণে বান্দরবানে পালিয়ে এসেছে মিয়ানমারের বেশ কিছু নাগরিক। সম্ভবত তারা অন্য জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত মঙ্গলবার হলিউড অভিনেত্রী ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বিশেষ দূত অ্যাঞ্জেলিনা জোলি উখিয়ার কুতুবপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। দুই দিনের সফরে তিনি কক্সবাজারে যান; আগের দিন টেকনাফের চাকমারকুল রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে দেখেন। তাঁর অভিমত বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রাষ্ট্রহীন এক অবস্থায় বাস করছে তারা। মিয়ানমার সেনাবাহিনী স্বদেশি সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সহায়তার জন্য বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। জোলি বলেন, বাংলাদেশে এত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই তাদের ভরণ-পোষণ ও অন্যান্য বিষয়ে সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে এবং দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রত্যাবাসন শুরুর আগে রোহিঙ্গা এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের গুরুত্ব আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত। বাংলাদেশ দেড় বছর ধরে চেষ্টা করছে; কিন্তু মিয়ানমার আন্তরিকতা দেখাতে ব্যর্থ। আবার এর মধ্যেই মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু লোক বান্দরবানে ঢুকেছে। রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সতর্ক করা হয়েছে বটে, তবে খতিয়ে দেখা জরুরি। অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দোহাই দিয়ে মিয়ানমার নতুন ঝামেলা বাধিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে কি না। সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। নজর রাখতে হবে আন্তর্জাতিক মহলকেও।