ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রিফাত হত্যায় নতুন ঘটনা প্রকাশ করলেন মিন্নির বাবা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯
  • / ২০৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে নতুন এক তথ্য দিলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এবার তিনি রিফাত শরীফ হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কথা উল্লেখ করেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে এ হত্যাকা-ের নতুন উদ্দেশ্য সামনে আনলেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে তিনি দাবি করেন, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের এক বাকবিত-া ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই রিফাত ও রিশান ফরাজী তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তিনি বলেন, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকি সম্পর্কে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী খালা হয়। এ হত্যাকা-ের আগে রিফাতের সঙ্গে সামসুন্নাহার খুকির বাকবিত-া হয়। মনক্ষুণœ হয়ে বিষয়টি সামসুন্নার খুকি রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে নালিশ করেন। মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিফাত ও রিশান ফরাজী তাদের খালা সামসুন্নাহার খুকিকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতেন। তাকে মা বলেও ডাকতেন। তাই বিষয়টিতে তারা বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা বাকবিত-ার প্রতিশোধ নিতেই রিফাত ও রিশান ফরাজী রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও হত্যাকা-ের অগ্রভাগে থাকে।’ এর প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, যেদিন হত্যাকা-টি সংগঠিত হয়, সেদিন রিফাত ও রিশান ফরাজী বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল।’
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হোসেনের এসব বক্তব্যের সময় মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি, ছোট বোন ছামিরা মেঘলা ও ছোট ভাই আবদুল মুহিত ক্বাফি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সামসুন্নাহার খুকির সঙ্গে রিফাত শরীফের বাকবিত-ার বিষয়টি আমাকে রিফাত শরীফ ও মিন্নি জানিয়েছিল। এছাড়া বরাবরের মতোই সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির বাবা অভিযোগ করেন, মিন্নিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে জোরজবরদস্তি করে পুলিশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে পুলিশ আমার মেয়ে মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে অভিযোগ করে এ মামলার তদন্ত পিবিআইতে হস্তান্তরের আবেদন জানান তিনি। মিন্নি স্বামী রিফাতকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দাবি করে মোজাম্মেল হক বলেন, আপনারা সবাই ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন রিফাতকে বাঁচাতে মিন্নি জীবনবাজি রেখেছে। শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। মিন্নিকে জড়িয়ে রিফাত শরীফের বাবার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করেন মোজাম্মেল হক। তার দাবি , একটি কুচক্রী মহল এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এজন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েন। তিনি বলেন, সুনাম দেবনাথই নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি প্রকৃত আসামিদের বাঁচাতে মিন্নিকে এ হত্যাকা-ে জড়িত করার চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত গত ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জখম থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকা-ের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার দ্বিতীয় দিন শেষ হলে আদালতে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে সাক্ষী দেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রিফাত হত্যায় নতুন ঘটনা প্রকাশ করলেন মিন্নির বাবা

আপলোড টাইম : ১০:০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তদন্তভার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে নতুন এক তথ্য দিলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। এবার তিনি রিফাত শরীফ হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কথা উল্লেখ করেন। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় বরগুনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে এ হত্যাকা-ের নতুন উদ্দেশ্য সামনে আনলেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। সংবাদ সম্মেলনে লিখিতভাবে তিনি দাবি করেন, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রীর সঙ্গে নিহত রিফাত শরীফের এক বাকবিত-া ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই রিফাত ও রিশান ফরাজী তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তিনি বলেন, বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকি সম্পর্কে রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী খালা হয়। এ হত্যাকা-ের আগে রিফাতের সঙ্গে সামসুন্নাহার খুকির বাকবিত-া হয়। মনক্ষুণœ হয়ে বিষয়টি সামসুন্নার খুকি রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর কাছে নালিশ করেন। মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিফাত ও রিশান ফরাজী তাদের খালা সামসুন্নাহার খুকিকে মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতেন। তাকে মা বলেও ডাকতেন। তাই বিষয়টিতে তারা বেশ ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা বাকবিত-ার প্রতিশোধ নিতেই রিফাত ও রিশান ফরাজী রিফাত শরীফকে হত্যার পরিকল্পনা করে ও হত্যাকা-ের অগ্রভাগে থাকে।’ এর প্রমাণ হিসেবে তিনি বলেন, যেদিন হত্যাকা-টি সংগঠিত হয়, সেদিন রিফাত ও রিশান ফরাজী বলেছিল, ‘তুই আমার মাকে গালাগাল করেছিস। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল।’
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হোসেনের এসব বক্তব্যের সময় মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি, ছোট বোন ছামিরা মেঘলা ও ছোট ভাই আবদুল মুহিত ক্বাফি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, সামসুন্নাহার খুকির সঙ্গে রিফাত শরীফের বাকবিত-ার বিষয়টি আমাকে রিফাত শরীফ ও মিন্নি জানিয়েছিল। এছাড়া বরাবরের মতোই সংবাদ সম্মেলনে মিন্নির বাবা অভিযোগ করেন, মিন্নিকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে জোরজবরদস্তি করে পুলিশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিয়েছে। প্রভাবশালী মহলকে বাঁচাতে পুলিশ আমার মেয়ে মিন্নিকে ফাঁসাচ্ছে অভিযোগ করে এ মামলার তদন্ত পিবিআইতে হস্তান্তরের আবেদন জানান তিনি। মিন্নি স্বামী রিফাতকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দাবি করে মোজাম্মেল হক বলেন, আপনারা সবাই ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন রিফাতকে বাঁচাতে মিন্নি জীবনবাজি রেখেছে। শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করতে পারেনি। মিন্নিকে জড়িয়ে রিফাত শরীফের বাবার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করেন মোজাম্মেল হক। তার দাবি , একটি কুচক্রী মহল এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এজন্য তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথের ছেলে সুনাম দেবনাথের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েন। তিনি বলেন, সুনাম দেবনাথই নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তিনি প্রকৃত আসামিদের বাঁচাতে মিন্নিকে এ হত্যাকা-ে জড়িত করার চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত গত ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জখম থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিফাতের মৃত্যু হয়। এ হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। হত্যাকা-ের পরের দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বরগুনা থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ছাড়া সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ মামলার এক নম্বর সাক্ষীকে (মিন্নি) আসামি করা ও রিমান্ডে নেয়ার দ্বিতীয় দিন শেষ হলে আদালতে হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বলে সাক্ষী দেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।