ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের করুণ দশা : খেলাপি ঋণ ও লোকসান বন্ধ করতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ অক্টোবর ২০১৮
  • / ২৮৪ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট যেন কিছুতেই কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুন শেষে মূলধন সংক্রান্ত শর্তপূরণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংক। এ সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকায়। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে আবারও মূলধন সরবরাহের জন্য জনগণের করের টাকার ওপর নির্ভর করতে হবে। এ পরিস্থিতি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য মোটেই ভালো নয়। এটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার লক্ষণ। ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
বস্তুত মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে উদ্বেগজনক মাত্রায়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরে এসব ব্যাংক কাঙ্খিত মুনাফা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত এক তথ্যে দেখা যায়, মোট খেলাপি ঋণের ৩২ শতাংশ আটকে আছে ১০০ শীর্ষ খেলাপির কাছে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। কাজেই এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণটি স্পষ্ট। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ দুঃসংবাদটি এসেছে জনতা ব্যাংকের বিষয়ে। জুন শেষে দুই হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এ ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রায় সব সূচক নিম্নগামী। একদিকে পুরনো খেলাপির চাপ, অন্যদিকে নতুন করে বিপুল অঙ্কের খেলাপি, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে ধার করে চলতে হচ্ছে এ ব্যাংকটিকে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা শুধু ব্যাংকিং খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। বলা যায়, বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতিকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। ফলে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। পরিণামে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণ যাতে কুঋণে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে অসৎ কর্মকর্তাদের দাপট ও আধিপত্য রোধের বিষয়েও তৎপর হতে হবে। দেখা গেছে, অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি খেলাপি ঋণের বিস্তার ঘটায়। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দেয়া ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকটে পড়ার আরেকটি কারণ লোকসানি শাখা। এসব ব্যাংককে সারা দেশে তাদের কয়েকশ’ লোকসানি শাখার ঘানি টানতে হচ্ছে। ফিজিবিলিটি পরীক্ষা না করে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে শাখা স্থাপনের কারণে এসব শাখা লোকসানি শাখায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া কোনো কোনো শাখা ঋণ কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতিতেও জড়িয়ে পড়ছে। কাজেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমানো এবং নতুন করে যেন কোনো শাখা লোকসানি না হয়, এ উদ্দেশ্যে সতর্ক থাকার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় শাখা খোলার পেছনের হোতাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। ব্যাংকগুলোয় জবাবদিহিতার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলে খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য অনিয়ম হ্রাস পাবে বলে আমরা মনে করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের করুণ দশা : খেলাপি ঋণ ও লোকসান বন্ধ করতে হবে

আপলোড টাইম : ১০:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ অক্টোবর ২০১৮

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট যেন কিছুতেই কাটছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, জুন শেষে মূলধন সংক্রান্ত শর্তপূরণে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংক। এ সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৭০ কোটি টাকায়। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোকে আবারও মূলধন সরবরাহের জন্য জনগণের করের টাকার ওপর নির্ভর করতে হবে। এ পরিস্থিতি দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য মোটেই ভালো নয়। এটি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার লক্ষণ। ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে এ অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।
বস্তুত মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে উদ্বেগজনক মাত্রায়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছরে এসব ব্যাংক কাঙ্খিত মুনাফা অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি প্রাপ্ত এক তথ্যে দেখা যায়, মোট খেলাপি ঋণের ৩২ শতাংশ আটকে আছে ১০০ শীর্ষ খেলাপির কাছে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। কাজেই এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির কারণটি স্পষ্ট। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ দুঃসংবাদটি এসেছে জনতা ব্যাংকের বিষয়ে। জুন শেষে দুই হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এ ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রায় সব সূচক নিম্নগামী। একদিকে পুরনো খেলাপির চাপ, অন্যদিকে নতুন করে বিপুল অঙ্কের খেলাপি, প্রভিশন ঘাটতি এবং তারল্য সংকটের কারণে বর্তমানে ধার করে চলতে হচ্ছে এ ব্যাংকটিকে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির প্রবণতা শুধু ব্যাংকিং খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে। বলা যায়, বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ দেশের অর্থনীতিকে ক্রমেই গ্রাস করে ফেলছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। ফলে এগোতে পারছেন না ভালো উদ্যোক্তারা। পরিণামে বাড়ছে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর দেয়া ঋণ যাতে কুঋণে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে অসৎ কর্মকর্তাদের দাপট ও আধিপত্য রোধের বিষয়েও তৎপর হতে হবে। দেখা গেছে, অসৎ ব্যাংক কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি খেলাপি ঋণের বিস্তার ঘটায়। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দেয়া ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকটে পড়ার আরেকটি কারণ লোকসানি শাখা। এসব ব্যাংককে সারা দেশে তাদের কয়েকশ’ লোকসানি শাখার ঘানি টানতে হচ্ছে। ফিজিবিলিটি পরীক্ষা না করে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে শাখা স্থাপনের কারণে এসব শাখা লোকসানি শাখায় পরিণত হয়েছে। তাছাড়া কোনো কোনো শাখা ঋণ কেলেঙ্কারি ও জালিয়াতিতেও জড়িয়ে পড়ছে। কাজেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমানো এবং নতুন করে যেন কোনো শাখা লোকসানি না হয়, এ উদ্দেশ্যে সতর্ক থাকার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় শাখা খোলার পেছনের হোতাদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। ব্যাংকগুলোয় জবাবদিহিতার পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা গেলে খেলাপি ঋণসহ অন্যান্য অনিয়ম হ্রাস পাবে বলে আমরা মনে করি।