ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাতের আধারে হরিলুট করা মালামাল বিক্রিতে সহায়তাকারী স্থানীয় ও ঢাকার চোরাকারবারীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মার্চ ২০১৮
  • / ৩৭৫ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা কাস্টমস গোডাউন থেকে যেভাবে মালামাল পৌছায় সিন্ডিকেটের হাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দর্শনা কাস্টমস গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের সহায়তায় গোডাউনের হরিলুট করা মালামাল বিক্রির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় চোরকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের আধাঁরে ও সুবিধাজনক সময়ে গোডাউন থেকে মালামাল বের করে নিজেদের কাছে রাখে এবং পরবর্তীতে মূল্য নির্ধারণ করে গোডাউন অফিসারের কাছ থেকে তা কিনে নিয়ে ওই মালামাল ঢাকার নির্দিষ্ট চক্রের কাছে পৌছে দেয়। শুধু তাই নয়; বিজিবি কর্তৃক আটক করা মালামাল নিজ সুবিধামত রেজিস্টারে অর্ন্তভুক্ত করে তা আত্মসাৎ করারও বিষদ অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দর্শনা কাস্টমস গোডাউন থেকে রাতের আধারে ও সুবিধাজনক সময়ে আসল সোনা-রুপা, দামী শাড়ী, থ্রিপিচ, মোটরপার্টসসহ বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান মালামাল বের করে তার পরিবর্তে নকল সোনা-রুপা, নি¤œমানের শাড়ী, থ্রীপিচ, ভাঙ্গা/পুরাতন মোটরপার্টস ও অন্যান্য মালামাল রাখা হয়। রাতের আধারে বের করে নিয়ে আসা ওই মালামাল রাখা হয় স্থানীয় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে। মালামালগুলো সেখানে নিয়ে ছবিতুলে ঢাকায় নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ ও আইএমও মারফতে পাঠানো হয়। ছবি দেখে মালামাল পছন্দ হলে আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তারা। সে অনুযায়ী অসাধু গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের কাছ থেকে দামদার করে মালামালগুলো কিনে নেয় স্থানীয় চোরকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ঢাকার লাগেজ ব্যবসায়ীরা তখন মালামাল সরেজমিনে দেখতে ঢাকা থেকে দর্শনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এখানে এসে মালামাল দেখে পছন্দ হলে এবং চুক্তি অনুযায়ী মূল্য দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌছে দেয়ার একটি ঠিকানা দিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের নির্ধারিত ঠিকানায় পৌছে দেয়া হয় সেই মালামাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সিন্ডিকেটের এক সদস্য গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের নিকট থেকে ৬০০ পিচ শাড়ী ও মোটরপার্টস কেনার কথাও স্বীকার করে। এ ছাড়া ভালো মালামাল গোডাউনে ঢুকলে তা তাকে জানানোর জন্য বলে। মালের মান ভালো হলে তিনি ঢাকা থেকে দর্শনায় আসবেন বলেও জানান।
এদিকে বিজিবির হাতে বিভিন্ন সময়ে চোরাচালানের এই সমস্ত মালামাল আটকের পর তারা একটি তালিকা করে তা সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাসহ মালামালগুলো কাস্টমস গোডাউনে জমা দেয়। এই তালিকায় মালামালের নির্দিষ্ট শ্রেণী উল্লেখ থাকলেও যেসব গোডাউন অফিসারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে ওই সকল অফিসার তালিকা অনুযায়ী রেজিস্টারে অর্ন্তভুক্ত না করে তাদের সুবিধামত তালিকা করে গোডাউন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেন। ফলে কাস্টমস গোডাউনের রেজিস্টারে মালামালের সংখ্যা ঠিক থাকলেও নি¤œ মানের মালামাল দিয়ে উন্নতমানের মালামাল সরিয়ে ফেলার সুযোগ তৈরী হয় এবং বিজিবি তাদের আটককৃত মালামাল কাস্টমস গোডাউনে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করায় এই লোপাটের সুযোগ আরো প্রসারিত হয় বলে অভিজ্ঞ জনদের অভিমত।
যেহেতু এই মালামালগুলো বিজিবি আটক করে কাস্টমস গোডাউনে জমা দেয় এবং সরকার তা বিক্রি করে রাজস্ব পায়। সুতরাং কাস্টমস গোডাউনে এই মালামাল সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না; না কি অসাধু কোন কর্মকর্তার যোগসাজশে মালামালগুলো প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে পূণরায় চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছে অভিজ্ঞ জনেরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রাতের আধারে হরিলুট করা মালামাল বিক্রিতে সহায়তাকারী স্থানীয় ও ঢাকার চোরাকারবারীরা

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ মার্চ ২০১৮

দর্শনা কাস্টমস গোডাউন থেকে যেভাবে মালামাল পৌছায় সিন্ডিকেটের হাতে
নিজস্ব প্রতিবেদক: দর্শনা কাস্টমস গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের সহায়তায় গোডাউনের হরিলুট করা মালামাল বিক্রির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় চোরকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতের আধাঁরে ও সুবিধাজনক সময়ে গোডাউন থেকে মালামাল বের করে নিজেদের কাছে রাখে এবং পরবর্তীতে মূল্য নির্ধারণ করে গোডাউন অফিসারের কাছ থেকে তা কিনে নিয়ে ওই মালামাল ঢাকার নির্দিষ্ট চক্রের কাছে পৌছে দেয়। শুধু তাই নয়; বিজিবি কর্তৃক আটক করা মালামাল নিজ সুবিধামত রেজিস্টারে অর্ন্তভুক্ত করে তা আত্মসাৎ করারও বিষদ অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, দর্শনা কাস্টমস গোডাউন থেকে রাতের আধারে ও সুবিধাজনক সময়ে আসল সোনা-রুপা, দামী শাড়ী, থ্রিপিচ, মোটরপার্টসসহ বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান মালামাল বের করে তার পরিবর্তে নকল সোনা-রুপা, নি¤œমানের শাড়ী, থ্রীপিচ, ভাঙ্গা/পুরাতন মোটরপার্টস ও অন্যান্য মালামাল রাখা হয়। রাতের আধারে বের করে নিয়ে আসা ওই মালামাল রাখা হয় স্থানীয় চোরাকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে। মালামালগুলো সেখানে নিয়ে ছবিতুলে ঢাকায় নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটস এ্যাপ ও আইএমও মারফতে পাঠানো হয়। ছবি দেখে মালামাল পছন্দ হলে আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তারা। সে অনুযায়ী অসাধু গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের কাছ থেকে দামদার করে মালামালগুলো কিনে নেয় স্থানীয় চোরকারবারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ঢাকার লাগেজ ব্যবসায়ীরা তখন মালামাল সরেজমিনে দেখতে ঢাকা থেকে দর্শনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এখানে এসে মালামাল দেখে পছন্দ হলে এবং চুক্তি অনুযায়ী মূল্য দিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌছে দেয়ার একটি ঠিকানা দিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের নির্ধারিত ঠিকানায় পৌছে দেয়া হয় সেই মালামাল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সিন্ডিকেটের এক সদস্য গোডাউন অফিসার শামীম সরকারের নিকট থেকে ৬০০ পিচ শাড়ী ও মোটরপার্টস কেনার কথাও স্বীকার করে। এ ছাড়া ভালো মালামাল গোডাউনে ঢুকলে তা তাকে জানানোর জন্য বলে। মালের মান ভালো হলে তিনি ঢাকা থেকে দর্শনায় আসবেন বলেও জানান।
এদিকে বিজিবির হাতে বিভিন্ন সময়ে চোরাচালানের এই সমস্ত মালামাল আটকের পর তারা একটি তালিকা করে তা সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাসহ মালামালগুলো কাস্টমস গোডাউনে জমা দেয়। এই তালিকায় মালামালের নির্দিষ্ট শ্রেণী উল্লেখ থাকলেও যেসব গোডাউন অফিসারের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে ওই সকল অফিসার তালিকা অনুযায়ী রেজিস্টারে অর্ন্তভুক্ত না করে তাদের সুবিধামত তালিকা করে গোডাউন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেন। ফলে কাস্টমস গোডাউনের রেজিস্টারে মালামালের সংখ্যা ঠিক থাকলেও নি¤œ মানের মালামাল দিয়ে উন্নতমানের মালামাল সরিয়ে ফেলার সুযোগ তৈরী হয় এবং বিজিবি তাদের আটককৃত মালামাল কাস্টমস গোডাউনে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করায় এই লোপাটের সুযোগ আরো প্রসারিত হয় বলে অভিজ্ঞ জনদের অভিমত।
যেহেতু এই মালামালগুলো বিজিবি আটক করে কাস্টমস গোডাউনে জমা দেয় এবং সরকার তা বিক্রি করে রাজস্ব পায়। সুতরাং কাস্টমস গোডাউনে এই মালামাল সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না; না কি অসাধু কোন কর্মকর্তার যোগসাজশে মালামালগুলো প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে পূণরায় চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছে অভিজ্ঞ জনেরা।