ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রমজানে আমাদের কর্তব্য

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মে ২০২০
  • / ১৮৫ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
চলতি বছর মাহে রমজান এমন একসময় এসেছে যখন সারা দুনিয়া করোনাভাইরাস নামের মহামারীতে আক্রান্ত। এ মহামারী ইতিমধ্যে প্রথম মহাযুদ্ধের চেয়েও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আরও কত জীবন কেড়ে নেবে সে আশঙ্কায় ভুগছে প্রতিটি মানুষ। করোনার এই দুঃসময়ের মধ্যেও কোটি কোটি মুসলমান রোজা পালন করছেন মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রমাণে মুমিনরা সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকছেন। রোজা একটি অবশ্যপালনীয় ইবাদত। নামাজের পরই রোজার স্থান। সব নবীর আমলে রোজা পালন করা হতো। দুনিয়ার প্রায় সব ধর্মেই রোজার বিধান রয়েছে। রোজা যে মানবদেহের জন্য কল্যাণকর তা আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে। রোজার বিধান যে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে তা আল কোরআনেও স্পষ্ট করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল।’ কোরআনের উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য নয়, আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর আমলেই রোজার বিধান ছিল। রোজা এমন এক ইবাদত যা পালনকারী এবং আল্লাহর পক্ষেই শুধু জানা সম্ভব। আমরা ভোরে সাহরি খাই। সারা দিন খাদ্য, পানীয় ও সব ধরনের দৈহিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকি। রোজাদাররা আল্লাহর ভয়ে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে সংযম পালন করে। নিজেদের আল্লাহমুখী করার চেষ্টা চালায়। রোজার মাধ্যমে মানুষ আত্মসংযমের শিক্ষা পায়। এ সংযম মানুষকে শুদ্ধচারী হওয়ার পথ দেখায়। ঘরে খাদ্য থাকতেও রোজা পালনের সময় সেই খাদ্য গ্রহণ থেকে মুমিনরা দূরে থাকে। আল্লাহর প্রতি ভয় তাদের দীর্ঘ সময় খাদ্য ও পানীয় থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। রোজার এক মাস মুমিনদের জীবন পুরোপুরি আল্লাহমুখী হয়। একেবারে প্রত্যুষে সাহরি খাওয়া, তারপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবির পাশাপাশি অনেকে দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে কোরআন তিলাওয়াত করে সময় কাটায়। রোজার মাসে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য অনেক বেশি স্পষ্ট হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাস থেকেই সিয়াম বা রোজার প্রস্তুতি নিতেন। শাবান মাসে তিনি বেশি বেশি রোজা রাখতেন। সাহাবিদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন। যাতে রোজার মাসে রোজা থাকতে তাদের কষ্ট না হয়। একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের এক মাহফিলে ভাষণ দান করেন।
তিনি মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, হে মানুষসকল! এক সুমহান মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করেছে। এ এক মুবারক মাস। এ মাসের মধ্যে এমন এক রাত রয়েছে যা ১ হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। আর এ মাসে রাতের কিয়াম নফল করা হয়েছে। যে ব্যক্তি এ মাসে আন্তরিকতা সহকারে নফল কাজ করে সে যেন অন্য মাসে ফরজ কাজ করে। যে এ মাসে একটি ফরজ কাজ সম্পাদন করে সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ কাজ করে। এ মাস সবর ও ধৈর্যের। সবরের বিনিময় হলো জান্নাত। এ মাস সহানুভূতির। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি পায়। যে এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করায়, তার গুনা মাফ হয় এবং তার ঘাড় দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভ করে। রোজাদারের জন্যও অনুরূপ সওয়াব রয়েছে। রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই হ্রাস করা হয় না।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ শোনার পর সাহাবায়ে কিরাম আরজ করল, হে রসুলুল্লাহ! রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই।
এর উত্তরে তিনি বললেন, যে এক ফোঁটা দুধ বা একটি খেজুর বা সামান্য পানির দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহ তাকেও এ সওয়াব দান করেন। যে রোজাদারকে পেট ভরে খাদ্য দান করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউসে কাওসার থেকে পানি পান করাবেন এবং জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তির কোনো পিপাসা লাগবে না।
এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মাঝের ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ ১০ দিন দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভের। এ মাসে যে ব্যক্তি তার অধীনদের কাজ হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন এবং দোজখ থেকে নাজাত দান করেন।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরোক্ত ভাষণের আলোকে আমরা করোনার এই দুঃসময়ে গবির-দুঃখীরা যাতে সাহরি ও ইফতারের তৌফিক লাভ করে তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশে দাঁড়াব। আল্লাহর কাছে দুনিয়াবাসীকে করোনাভাইরাসের থাবা থেকে মাফ করার প্রার্থনা জানাব। দয়ালু আল্লাহ রমজানে আমাদের প্রতি তাঁর রহমতের হাত বাড়াবেন- আমরা এমন আশা করতে চাই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

রমজানে আমাদের কর্তব্য

আপলোড টাইম : ০৯:৩৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মে ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
চলতি বছর মাহে রমজান এমন একসময় এসেছে যখন সারা দুনিয়া করোনাভাইরাস নামের মহামারীতে আক্রান্ত। এ মহামারী ইতিমধ্যে প্রথম মহাযুদ্ধের চেয়েও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আরও কত জীবন কেড়ে নেবে সে আশঙ্কায় ভুগছে প্রতিটি মানুষ। করোনার এই দুঃসময়ের মধ্যেও কোটি কোটি মুসলমান রোজা পালন করছেন মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য। আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রমাণে মুমিনরা সিয়াম সাধনায় নিয়োজিত থাকছেন। রোজা একটি অবশ্যপালনীয় ইবাদত। নামাজের পরই রোজার স্থান। সব নবীর আমলে রোজা পালন করা হতো। দুনিয়ার প্রায় সব ধর্মেই রোজার বিধান রয়েছে। রোজা যে মানবদেহের জন্য কল্যাণকর তা আধুনিক বিজ্ঞানও স্বীকার করে। রোজার বিধান যে হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে তা আল কোরআনেও স্পষ্ট করা হয়েছে। সূরা আল বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল।’ কোরআনের উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন শুধু উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য নয়, আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর আমলেই রোজার বিধান ছিল। রোজা এমন এক ইবাদত যা পালনকারী এবং আল্লাহর পক্ষেই শুধু জানা সম্ভব। আমরা ভোরে সাহরি খাই। সারা দিন খাদ্য, পানীয় ও সব ধরনের দৈহিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকি। রোজাদাররা আল্লাহর ভয়ে খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে সংযম পালন করে। নিজেদের আল্লাহমুখী করার চেষ্টা চালায়। রোজার মাধ্যমে মানুষ আত্মসংযমের শিক্ষা পায়। এ সংযম মানুষকে শুদ্ধচারী হওয়ার পথ দেখায়। ঘরে খাদ্য থাকতেও রোজা পালনের সময় সেই খাদ্য গ্রহণ থেকে মুমিনরা দূরে থাকে। আল্লাহর প্রতি ভয় তাদের দীর্ঘ সময় খাদ্য ও পানীয় থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। রোজার এক মাস মুমিনদের জীবন পুরোপুরি আল্লাহমুখী হয়। একেবারে প্রত্যুষে সাহরি খাওয়া, তারপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবির পাশাপাশি অনেকে দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে কোরআন তিলাওয়াত করে সময় কাটায়। রোজার মাসে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য অনেক বেশি স্পষ্ট হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাস থেকেই সিয়াম বা রোজার প্রস্তুতি নিতেন। শাবান মাসে তিনি বেশি বেশি রোজা রাখতেন। সাহাবিদেরও উদ্বুদ্ধ করতেন। যাতে রোজার মাসে রোজা থাকতে তাদের কষ্ট না হয়। একবার শাবান মাসের শেষ দিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামের এক মাহফিলে ভাষণ দান করেন।
তিনি মহান আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, হে মানুষসকল! এক সুমহান মাস তোমাদের ওপর ছায়া বিস্তার করেছে। এ এক মুবারক মাস। এ মাসের মধ্যে এমন এক রাত রয়েছে যা ১ হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। আর এ মাসে রাতের কিয়াম নফল করা হয়েছে। যে ব্যক্তি এ মাসে আন্তরিকতা সহকারে নফল কাজ করে সে যেন অন্য মাসে ফরজ কাজ করে। যে এ মাসে একটি ফরজ কাজ সম্পাদন করে সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ কাজ করে। এ মাস সবর ও ধৈর্যের। সবরের বিনিময় হলো জান্নাত। এ মাস সহানুভূতির। এ মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি পায়। যে এ মাসে রোজাদারকে ইফতার করায়, তার গুনা মাফ হয় এবং তার ঘাড় দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভ করে। রোজাদারের জন্যও অনুরূপ সওয়াব রয়েছে। রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই হ্রাস করা হয় না।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ভাষণ শোনার পর সাহাবায়ে কিরাম আরজ করল, হে রসুলুল্লাহ! রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই।
এর উত্তরে তিনি বললেন, যে এক ফোঁটা দুধ বা একটি খেজুর বা সামান্য পানির দ্বারা রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহ তাকেও এ সওয়াব দান করেন। যে রোজাদারকে পেট ভরে খাদ্য দান করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন আমার হাউসে কাওসার থেকে পানি পান করাবেন এবং জান্নাতে না যাওয়া পর্যন্ত সে ব্যক্তির কোনো পিপাসা লাগবে না।
এ মাসের প্রথম ১০ দিন রহমত, মাঝের ১০ দিন মাগফিরাত এবং শেষ ১০ দিন দোজখের আগুন থেকে পরিত্রাণ লাভের। এ মাসে যে ব্যক্তি তার অধীনদের কাজ হালকা করে দেয়, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন এবং দোজখ থেকে নাজাত দান করেন।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরোক্ত ভাষণের আলোকে আমরা করোনার এই দুঃসময়ে গবির-দুঃখীরা যাতে সাহরি ও ইফতারের তৌফিক লাভ করে তা নিশ্চিত করতে তাদের পাশে দাঁড়াব। আল্লাহর কাছে দুনিয়াবাসীকে করোনাভাইরাসের থাবা থেকে মাফ করার প্রার্থনা জানাব। দয়ালু আল্লাহ রমজানে আমাদের প্রতি তাঁর রহমতের হাত বাড়াবেন- আমরা এমন আশা করতে চাই।