ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যে যায় করি না কেন, মানুষ যেন উপকৃত হয় -ডিসি নজরুল ইসলাম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৩:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১২৭ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সেবায় সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘আমার ছোট বেলার বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশে অনেক পার্থক্য। আজকে অনেক বিষয় এমন অবস্থানে এসেছে, যাতে সব ইনফরমেশন অ্যাকসেস আছে। অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় অধিকারের চাহিদা বাড়ছে। আমরা আরও বেশি চাচ্ছি। চাওয়া শিখেছি, তাই আমাদের পাওয়াটাও আরও বেশি হয়ে যাবে। এই জনপদের মানুষের ১৯৭১ সালের আগে বলারও অধিকার ছিল না। আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো। সময় নিয়ে প্রত্যেকটা অসুবিধার সমাধান করতে হবে। সরকার গর্ভন্যান্সকে গুড গর্ভানেন্স করতে কাজ করেছ। আগে নারীদের স্কুলে যাবার জন্যও লড়াই করতে হতো। আর আজকে দেখেন। অধিকার প্রত্যেকটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে। আপনি তখনই সচেতন হবে, যখন আপনি ইনফরমেশন জানতে পাবেন। সরকার তথ্য অধিকার আইনে সকল তথ্য সরবরাহ করছে। এখন ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার বলা হচ্ছে।’
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সেবায় সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শহরের মালোপাড়াস্থ ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্যানেল অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনা ও প্রশ্নউত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রশ্ন ও উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুনির্তীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। গুড গর্ভন্যান্স-এর পাশাপাশি ই-গর্ভান্যান্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। নাগরিকরা এখন সেবা পাচ্ছে অতিদ্রুত। আপনারা স্বাস্থ্যবিভাগের সমস্যার কথা বলেছেন, ছোট জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যবিভাগের বহু সমস্যা। এ জেলায় আইসিইউ বেড পর্যন্ত নেই। আমরা দুইটা আইসিইউ বেডের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। বারবার নানাভাবে সুপারিশ করানোর পর, ইতোমধ্যে তা মঞ্জুর হয়েছে। অতিদ্রুতই এটির কাজ শুরু হবে। আমাদের এখানে অক্সিজের ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। নতুন ভবনে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের কাজ শুরু হবে অতিদ্রুত। হাসপাতালে লোকবল সংকট কাটানোর জন্য সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব মহোদয়কে জানিয়েছি। অতিদ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। করোনাকালেও যাতে কোনো না কোনোভাবে ছেলে মেয়েরা শিক্ষার সাথে সংযুক্ত থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে ডিশে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দারিদ্র দূরিকরণে এ জেলায় জমি আছে ঘর নাই প্রজেক্টে ইতিমধ্যে ৯ হাজার ৬৫৪ জনের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মানুষ এখন সেবা ঘরে বসে পাচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করছে। যখন করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল, তখন অনেকেই বলেছিল, করোনায় যত মানুষ মারা যাবে, তার থেকে বেশি না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে একজনও না খেয়ে মারা যায়নি। খাদ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল। শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষকে আমরা ত্রাণ দিয়েছি। এর বাইরেও ২৪শ জনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি করোনা সহায়তা তহবিল সহযোগিতা করেছি।
চুয়াডাঙ্গার পর্যটন খ্যাতের উন্নয়নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ডিসিইকোপার্ক নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। একশ কোটি টাকার প্রকল্প হবে এটি। ডিসি ইকোপার্কের সাথে কুষ্টিয়া রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িসহ আশেপাশের পর্যটন স্পটগুলোর একটি লিংক করতে চাচ্ছি। একটি বই আকারে ছাপা হবে। মর্ডান পার্কে যা যা থাকে, তার সব থাকবে এ প্রকল্পে। অত্যাধুনিক একটি পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হবে। একটি মাস্টার প্লান করা হচ্ছে। শুধু ওই বাগানের ভেতরেই আমার ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর আশেপাশে আরও দুই-তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী এক তারিখে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের একটি ওয়ার্কশপও আছে। আমরা যে যেই কাজই করি না কেন, আমাদের কাজে যেন মানুষ উপকৃত হয়।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, প্রথমে নিজের এবং নিজের বাড়ি থেকে অ্যাওয়ারনেস ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে লোকমোর্চা, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি যারা রয়েছেন, তারা যদি উদ্যোগ নেন, তাহলে তাহলে নারী নির্যাতন থামবে। স্বাস্থ্য বিভাগ-চিকিৎসক এবং রোগী এই দুইয়ের সম্পর্ক এবং অধিকার যতবেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে, মানুষ তার অধিকারটি তত বেশি আদায় করে নিতে পারবে। রোগী যদি সামাজিকভাবে উন্নত হয়, তাহলে অনেক চিকিৎসকের এক রকম চেহারা আর যদি তিনি একেবারেই নিচ তলার মানুষ হন, তাহলে এক রকম। ডাক্তার শুনলেন, শুনে উনি লিখে দিলেন, লেখাও পরিস্কার নয়। কী রোগ তাও বললেন না। তাই চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্ক আরও বেশি উন্নত হতে হবে।
কৃষির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘বীজ মনিটরিংএ আমাদের জেলাতে কমিটি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের চাষিরা প্রতারিত হয়। সারের ক্ষেত্রে দামে না হলেও, মানে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। হঠাৎ হঠাৎ করে এর গুণগত মান যদি পরীক্ষা করা যায়, তাহলে চাষিরা কম প্রতারিত হবে। আমাদের গতানুগতিক ধারাকে সংস্কার দরকার। ধানের ক্ষেত্রে ক্রয় ব্যবস্থায় যদি পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন তামাকের গ্রেডিং আছে। একেবারে কাছে বাইং সেন্টার আছে। সেখানে গেলে গ্রেডিং মান অনুযায়ী টাকা এ্যকাউন্টে চলে যায়। আর ধান গোডাউনে নিয়ে আসতে হবে। ময়েশ্চার আছে, শুকাও, এটা ওটা। ওই চাষি আর ধান নিয়ে আসে না। এক্ষেত্রে যদি কৃষকের কাছাকাছি ধানের একটি বাইং সেন্টার থাকে, যেখানে কৃষক যাবে গ্রেডিং থাকবে। সেই অনুযায়ী ধান দিবে, টাকা নিয়ে চলে আসবে। তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে, প্রতারকের প্রতারণার ফাদে পড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে। কোয়ান্টাক গ্রোয়ার্স এরও একটি চক্র আছে। চাষিরা নিজেরাই জানে না তাঁরাও তালিকাভুক্ত কি না। তাদের সবকিছুই বড় বড় কয়েকজনের কাছে আছে। যে যাই বলুক, কৃষি আমাদের ভিত্তি আর শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। কৃষিকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা যায়না। কৃষকের সুবিধা দেখতে পারলে, কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে।’ শিক্ষা ক্ষেত্রের বহুমূখি সমস্যার কথা বলে তিনি বলেন, প্রাইমারিতে ঝড়ে পরার সংখ্যাটা কমাতে হবে। আবার কিন্টার গার্ডেন ব্যবস্থা। এতে নার্সারি, কেজি ওয়ান টু ইত্যাদিতে দুই বছর এমনিতেই লস হয়। তাই আবার এসএসসিতে ১৬ ধরে বয়স চুরি করছে। গার্লস স্কুলে এইট, নাইন, টেন এ ঝরে পড়ার সংখ্যা অনেক বেশি। সেগুলির সবগুলোই বাল্যবিবাহের। এর মাধ্যমেই নারী নির্যাতন তৈরি হচ্ছে। আমাদের সংস্কার শুরু করতে হবে। সমস্যা সমাধানে হাত দিতে হবে। আমরা সমস্যার সমাধানে হাত দিলে আস্তে আস্তে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।’
প্যানেল অতিথি হিসেবে আলোচনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, ‘আমি যখন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আরএমও-এর দায়িত্ব নিই, সিসি ক্যামেরা ছিল মাত্র ৪টি। একটি নষ্ট। সেটি সারিয়ে বিভিন্নভাবে যোগাড় করে এখন ২১টি ক্যামেরা আছে। হাসপাতালে এখন আর আগের মতো চুরি হয় না। ওষুধপত্রও বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে সরবরাহ ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে।’ এ সময় তিনি লোকমোর্চার সদস্যদের করা বিভিন্ন সমস্যার প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান করার আশ্বাস দেন।
প্যানেল অতিথি হিসিবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার নাথ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন চত্রবর্তী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ দপ্তরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সরকারি সেবার কথা তুলে ধরেন। এ সময় লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অতিথিরা প্রশ্নের ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
পুরো সংলাপে জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহ আলম সনির পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশের পরিদর্শক গাজী শামিম ও ওয়েভ ফঅউন্ডেশনের সমন্বয়কারী কারুজ্জামান যুদ্ধ। মুক্ত আলোচনায় লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. মানিক আকবর, আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, এম সবেদ আলী, শাহ আলম মণ্টু, নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, কানিজ সুলতানা, হেলাল হোসেন, আসমান গনি, ইলয়াস হোসেন, শাহিনা আক্তার, পারভীন লায়লা, হেলেনা নাসরিন প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

যে যায় করি না কেন, মানুষ যেন উপকৃত হয় -ডিসি নজরুল ইসলাম

আপলোড টাইম : ০৯:১৩:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

চুয়াডাঙ্গায় ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সেবায় সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘আমার ছোট বেলার বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশে অনেক পার্থক্য। আজকে অনেক বিষয় এমন অবস্থানে এসেছে, যাতে সব ইনফরমেশন অ্যাকসেস আছে। অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় অধিকারের চাহিদা বাড়ছে। আমরা আরও বেশি চাচ্ছি। চাওয়া শিখেছি, তাই আমাদের পাওয়াটাও আরও বেশি হয়ে যাবে। এই জনপদের মানুষের ১৯৭১ সালের আগে বলারও অধিকার ছিল না। আমাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হতো। সময় নিয়ে প্রত্যেকটা অসুবিধার সমাধান করতে হবে। সরকার গর্ভন্যান্সকে গুড গর্ভানেন্স করতে কাজ করেছ। আগে নারীদের স্কুলে যাবার জন্যও লড়াই করতে হতো। আর আজকে দেখেন। অধিকার প্রত্যেকটিই বাস্তবায়িত হচ্ছে। আপনি তখনই সচেতন হবে, যখন আপনি ইনফরমেশন জানতে পাবেন। সরকার তথ্য অধিকার আইনে সকল তথ্য সরবরাহ করছে। এখন ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার বলা হচ্ছে।’
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি সেবায় সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সংলাপে এসব কথা বলেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমোর্চা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শহরের মালোপাড়াস্থ ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্যানেল অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনা ও প্রশ্নউত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন। লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রশ্ন ও উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুনির্তীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। গুড গর্ভন্যান্স-এর পাশাপাশি ই-গর্ভান্যান্স প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও কাজ করছে সরকার। নাগরিকরা এখন সেবা পাচ্ছে অতিদ্রুত। আপনারা স্বাস্থ্যবিভাগের সমস্যার কথা বলেছেন, ছোট জেলা হিসেবে চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যবিভাগের বহু সমস্যা। এ জেলায় আইসিইউ বেড পর্যন্ত নেই। আমরা দুইটা আইসিইউ বেডের জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। বারবার নানাভাবে সুপারিশ করানোর পর, ইতোমধ্যে তা মঞ্জুর হয়েছে। অতিদ্রুতই এটির কাজ শুরু হবে। আমাদের এখানে অক্সিজের ব্যবস্থা মোটামুটি ভালো। নতুন ভবনে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্টের কাজ শুরু হবে অতিদ্রুত। হাসপাতালে লোকবল সংকট কাটানোর জন্য সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব মহোদয়কে জানিয়েছি। অতিদ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে তারা আশ্বাস দিয়েছেন। করোনাকালেও যাতে কোনো না কোনোভাবে ছেলে মেয়েরা শিক্ষার সাথে সংযুক্ত থাকে। তাই স্থানীয়ভাবে ডিশে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। দারিদ্র দূরিকরণে এ জেলায় জমি আছে ঘর নাই প্রজেক্টে ইতিমধ্যে ৯ হাজার ৬৫৪ জনের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মানুষ এখন সেবা ঘরে বসে পাচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন করছে। যখন করোনা মহামারি শুরু হয়েছিল, তখন অনেকেই বলেছিল, করোনায় যত মানুষ মারা যাবে, তার থেকে বেশি না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে একজনও না খেয়ে মারা যায়নি। খাদ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল। শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ৫২ হাজার মানুষকে আমরা ত্রাণ দিয়েছি। এর বাইরেও ২৪শ জনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমি করোনা সহায়তা তহবিল সহযোগিতা করেছি।
চুয়াডাঙ্গার পর্যটন খ্যাতের উন্নয়নের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ডিসিইকোপার্ক নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। একশ কোটি টাকার প্রকল্প হবে এটি। ডিসি ইকোপার্কের সাথে কুষ্টিয়া রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িসহ আশেপাশের পর্যটন স্পটগুলোর একটি লিংক করতে চাচ্ছি। একটি বই আকারে ছাপা হবে। মর্ডান পার্কে যা যা থাকে, তার সব থাকবে এ প্রকল্পে। অত্যাধুনিক একটি পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হবে। একটি মাস্টার প্লান করা হচ্ছে। শুধু ওই বাগানের ভেতরেই আমার ৩ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এর আশেপাশে আরও দুই-তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আগামী এক তারিখে পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে আমাদের একটি ওয়ার্কশপও আছে। আমরা যে যেই কাজই করি না কেন, আমাদের কাজে যেন মানুষ উপকৃত হয়।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, প্রথমে নিজের এবং নিজের বাড়ি থেকে অ্যাওয়ারনেস ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে লোকমোর্চা, রাজনৈতিক নের্তৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধি যারা রয়েছেন, তারা যদি উদ্যোগ নেন, তাহলে তাহলে নারী নির্যাতন থামবে। স্বাস্থ্য বিভাগ-চিকিৎসক এবং রোগী এই দুইয়ের সম্পর্ক এবং অধিকার যতবেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে, মানুষ তার অধিকারটি তত বেশি আদায় করে নিতে পারবে। রোগী যদি সামাজিকভাবে উন্নত হয়, তাহলে অনেক চিকিৎসকের এক রকম চেহারা আর যদি তিনি একেবারেই নিচ তলার মানুষ হন, তাহলে এক রকম। ডাক্তার শুনলেন, শুনে উনি লিখে দিলেন, লেখাও পরিস্কার নয়। কী রোগ তাও বললেন না। তাই চিকিৎসক এবং রোগীর সম্পর্ক আরও বেশি উন্নত হতে হবে।
কৃষির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘বীজ মনিটরিংএ আমাদের জেলাতে কমিটি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের চাষিরা প্রতারিত হয়। সারের ক্ষেত্রে দামে না হলেও, মানে প্রতারিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। হঠাৎ হঠাৎ করে এর গুণগত মান যদি পরীক্ষা করা যায়, তাহলে চাষিরা কম প্রতারিত হবে। আমাদের গতানুগতিক ধারাকে সংস্কার দরকার। ধানের ক্ষেত্রে ক্রয় ব্যবস্থায় যদি পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন তামাকের গ্রেডিং আছে। একেবারে কাছে বাইং সেন্টার আছে। সেখানে গেলে গ্রেডিং মান অনুযায়ী টাকা এ্যকাউন্টে চলে যায়। আর ধান গোডাউনে নিয়ে আসতে হবে। ময়েশ্চার আছে, শুকাও, এটা ওটা। ওই চাষি আর ধান নিয়ে আসে না। এক্ষেত্রে যদি কৃষকের কাছাকাছি ধানের একটি বাইং সেন্টার থাকে, যেখানে কৃষক যাবে গ্রেডিং থাকবে। সেই অনুযায়ী ধান দিবে, টাকা নিয়ে চলে আসবে। তাহলে কৃষকরা লাভবান হবে, প্রতারকের প্রতারণার ফাদে পড়বে না।’
তিনি বলেন, ‘কৃষকের সমস্যা অনেক ক্ষেত্রে। কোয়ান্টাক গ্রোয়ার্স এরও একটি চক্র আছে। চাষিরা নিজেরাই জানে না তাঁরাও তালিকাভুক্ত কি না। তাদের সবকিছুই বড় বড় কয়েকজনের কাছে আছে। যে যাই বলুক, কৃষি আমাদের ভিত্তি আর শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। কৃষিকে বাদ দিয়ে কিছুই ভাবা যায়না। কৃষকের সুবিধা দেখতে পারলে, কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে।’ শিক্ষা ক্ষেত্রের বহুমূখি সমস্যার কথা বলে তিনি বলেন, প্রাইমারিতে ঝড়ে পরার সংখ্যাটা কমাতে হবে। আবার কিন্টার গার্ডেন ব্যবস্থা। এতে নার্সারি, কেজি ওয়ান টু ইত্যাদিতে দুই বছর এমনিতেই লস হয়। তাই আবার এসএসসিতে ১৬ ধরে বয়স চুরি করছে। গার্লস স্কুলে এইট, নাইন, টেন এ ঝরে পড়ার সংখ্যা অনেক বেশি। সেগুলির সবগুলোই বাল্যবিবাহের। এর মাধ্যমেই নারী নির্যাতন তৈরি হচ্ছে। আমাদের সংস্কার শুরু করতে হবে। সমস্যা সমাধানে হাত দিতে হবে। আমরা সমস্যার সমাধানে হাত দিলে আস্তে আস্তে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।’
প্যানেল অতিথি হিসেবে আলোচনায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, ‘আমি যখন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আরএমও-এর দায়িত্ব নিই, সিসি ক্যামেরা ছিল মাত্র ৪টি। একটি নষ্ট। সেটি সারিয়ে বিভিন্নভাবে যোগাড় করে এখন ২১টি ক্যামেরা আছে। হাসপাতালে এখন আর আগের মতো চুরি হয় না। ওষুধপত্রও বিভিন্নভাবে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে সরবরাহ ওষুধও দেওয়া হচ্ছে। ৫০ শয্যার লোকবল দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালানো হচ্ছে।’ এ সময় তিনি লোকমোর্চার সদস্যদের করা বিভিন্ন সমস্যার প্রশ্নের উত্তর ও সমাধান করার আশ্বাস দেন।
প্যানেল অতিথি হিসিবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলী হাসান, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার নাথ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল রঞ্জন চত্রবর্তী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ও জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা আব্দুল আওয়াল। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ দপ্তরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও সরকারি সেবার কথা তুলে ধরেন। এ সময় লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। অতিথিরা প্রশ্নের ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
পুরো সংলাপে জেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শাহ আলম সনির পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশের পরিদর্শক গাজী শামিম ও ওয়েভ ফঅউন্ডেশনের সমন্বয়কারী কারুজ্জামান যুদ্ধ। মুক্ত আলোচনায় লোকমোর্চার বিভিন্ন ইউনিটের প্রতিনিধি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. মানিক আকবর, আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল, এম সবেদ আলী, শাহ আলম মণ্টু, নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, কানিজ সুলতানা, হেলাল হোসেন, আসমান গনি, ইলয়াস হোসেন, শাহিনা আক্তার, পারভীন লায়লা, হেলেনা নাসরিন প্রমুখ।