ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ময়নাতদন্ত : আগুনে ঝলসানো ছিল গলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৮০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ‘দুই কান, থুতনি, গলা ও ঘাড় ঝলসানো’। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করেছেন শাহবাগ থানার এসআই মো. শামছুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুই পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গত ১১ এপ্রিল শাহবাগ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-৬০২)। এতে নুসরাত জাহানের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ বছর। এসআই মো. শামছুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এএসআই মিনারা খাতুন ও মো. রমজান আলীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে যান। লাশটি মর্গের মেঝেতে সরকারি স্ট্রেচারের ওপর উত্তর শিয়রে চিৎ অবস্থায় শায়িত পান। নুসরাতের আপন চাচাতো ভাই মুহাম্মদ আলী তাকে শনাক্ত করেন। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে শালিনতা বজায় রেখে মর্গে কর্মরত বিশেষ আয়া চাঁন বিবিকে দিয়ে নুসরাত জাহানের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা শুরু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নুসরাতের মাথার চুল পোড়া, লম্বা অনুমান ১৮ ইঞ্চি। কপাল স্বাভাবিক। উভয় চোখ ও মুখ বন্ধ। নাক দিয়ে সাদা ময়লা বেরিয়ে এসেছে। উভয় কান, থুতনি, গলা, ঘাড়সহ পোড়া ও ঝলসানো। উভয় হাতের আঙুল পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গলার নিচ থেকে বুক-পেট-পিঠ-যৌনাঙ্গ-মলদ্বারসহ উভয় পায়ের পাতা পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গায়ের রঙ ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। পরনে ব্যান্ডেজ ছাড়া কিছু নেই, সরকারি চাদর দিয়ে ঢাকা, উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে।
নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক স্বাক্ষরিত মৃত্যুর প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ এপ্রিল সকাল অনুমান ৯টা ৪৫ মিনিটে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার সাইক্লোন সেল্টার ভবনের ছাদে নুসরাত জাহানকে পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীরা (ঘাতক) নিয়ে গায়ে কেরোসিন অথবা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হলে আহত অবস্থায় লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য সোনাগাজী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য একই তারিখে অর্থাৎ ৬ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডের রেড ইউনিটে এনে ভর্তি করা হয়।
নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়ে এ প্রতিবেদনের শেষের দিকে বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যু সনদে উল্লেখ থাকলেও নুসরাতের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ময়নাতদন্তের জন্য মো. রমজান আলীর মাধ্যমে লাশটি ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনের শেষ অংশে এসআই মো. শামছুর রহমান উল্লেখ করেছেন, নুসরাত প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা? ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের মতামত একান্তভাবে প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ময়নাতদন্ত : আগুনে ঝলসানো ছিল গলা

আপলোড টাইম : ১০:৩১:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ এপ্রিল ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ‘দুই কান, থুতনি, গলা ও ঘাড় ঝলসানো’। তার মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উল্লেখ করেছেন শাহবাগ থানার এসআই মো. শামছুর রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুই পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনের শুরুতে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে গত ১১ এপ্রিল শাহবাগ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি (নম্বর-৬০২)। এতে নুসরাত জাহানের বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ বছর। এসআই মো. শামছুর রহমান সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এএসআই মিনারা খাতুন ও মো. রমজান আলীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে যান। লাশটি মর্গের মেঝেতে সরকারি স্ট্রেচারের ওপর উত্তর শিয়রে চিৎ অবস্থায় শায়িত পান। নুসরাতের আপন চাচাতো ভাই মুহাম্মদ আলী তাকে শনাক্ত করেন। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে শালিনতা বজায় রেখে মর্গে কর্মরত বিশেষ আয়া চাঁন বিবিকে দিয়ে নুসরাত জাহানের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা শুরু হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নুসরাতের মাথার চুল পোড়া, লম্বা অনুমান ১৮ ইঞ্চি। কপাল স্বাভাবিক। উভয় চোখ ও মুখ বন্ধ। নাক দিয়ে সাদা ময়লা বেরিয়ে এসেছে। উভয় কান, থুতনি, গলা, ঘাড়সহ পোড়া ও ঝলসানো। উভয় হাতের আঙুল পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গলার নিচ থেকে বুক-পেট-পিঠ-যৌনাঙ্গ-মলদ্বারসহ উভয় পায়ের পাতা পর্যন্ত রাউন্ড গজ ব্যান্ডেজ, যাতে পোড়া ঝলসানো। গায়ের রঙ ফর্সা। লম্বা অনুমান ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। পরনে ব্যান্ডেজ ছাড়া কিছু নেই, সরকারি চাদর দিয়ে ঢাকা, উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে।
নুসরাতের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে ও ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক স্বাক্ষরিত মৃত্যুর প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত ৬ এপ্রিল সকাল অনুমান ৯টা ৪৫ মিনিটে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার সাইক্লোন সেল্টার ভবনের ছাদে নুসরাত জাহানকে পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীরা (ঘাতক) নিয়ে গায়ে কেরোসিন অথবা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হলে আহত অবস্থায় লোকজন তাকে চিকিৎসার জন্য সোনাগাজী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য একই তারিখে অর্থাৎ ৬ এপ্রিল বিকেল ৩টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ ওয়ার্ডের রেড ইউনিটে এনে ভর্তি করা হয়।
নুসরাতের মৃত্যুর বিষয়ে এ প্রতিবেদনের শেষের দিকে বলা হয়েছে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর কারণ হাসপাতালের দেওয়া মৃত্যু সনদে উল্লেখ থাকলেও নুসরাতের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ময়নাতদন্তের জন্য মো. রমজান আলীর মাধ্যমে লাশটি ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মর্গে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনের শেষ অংশে এসআই মো. শামছুর রহমান উল্লেখ করেছেন, নুসরাত প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা? ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের মতামত একান্তভাবে প্রয়োজন।