ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭
  • / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ নির্দিষ্ট প্যাকেজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইন্টারনেট সেবার বিভিন্ন অফার নিয়ে। বেসরকারি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ নির্দিষ্ট প্যাকেজ কিনলেও বাড়তি অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে। টাকা দিয়েও সেবা পাননি অনেকেই। ফলে অফারের নামে প্রতারণা করছেন মোবাইল অপারেটররা। অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত জুন থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৫৯১টি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এরমধ্যে গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬৬টি, রবি অজিয়াটার বিরুদ্ধে ১৫১টি, বাংলালিংক এর বিরুদ্ধে ১১৫টি, এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ১২৮টি এবং টেলিটকের বিরুদ্ধে জমা পরেছে ৩১টি অভিযোগ।
একজন অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ২৮ দিন মেয়াদে ৯৮ টাকায় ১.৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটা অফার দেখে তিনি সেবাটি ক্রয় করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি মাত্র এক জিবি ডাটা পেয়েছেন। এরপর তাকে বাড়তি অর্থ গুণতে হয়েছে। অপর একজন অভিযোগ করেছেন, ২৮ টাকায় ৫০ এমবি ইন্টারনেট ডাটায় অফার দেওয়া হয়েছে যে একটি লিংকে গেলে সারা দিন বাংলা নাটক দেখা যাবে। কিন্তু তিনি ওই লিংকে গিয়ে কোনো নাটক দেখতে পাননি। প্রতিদিন ২ টাকার বিনিময়ে হেলথ টিপস পাওয়া যাবে এমন অফার গ্রহণ করেন অপর একজন গ্রাহক। সার্ভিসটি বন্ধ করতে গেলে নির্ধারিত শর্টকোট দিলেও তা বন্ধ হয়নি এবং চালু থাকার কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরকম শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, একটি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে গত মে মাসের পর থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ভোক্তারা এখনও লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছেন। তবে মোবাইল সেবা ছাড়া অন্যান্য ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিপরীতে প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যার ২৫ ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী পেয়েছেন। মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রবি অজিয়াটা লিমিটেড গত মে মাসে এ ধরনের জরিমানার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে, যেটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে নতুন কোন অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে শত শত গ্রাহক অভিযোগ জানালেও তার সুরাহা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভোক্তাদের সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রেসিডেন্ট ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। কেননা, মোবাইল সেবার সাথে সাধারণ ভোক্তারা জড়িত। অনেক সময় নানা প্যাকেজ দিয়েও তারা প্রকৃত সেবা দেয় না। ফলে লাখ লাখ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভোক্তারা অধিদপ্তরে এর সামান্যই অভিযোগ জানিয়ে থাকেন। কেউ মূল্য পরিশোধের পর সেবা না পেলে তার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে আর নুতন করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারেন। তিনি আরো বলেন, সাধারণ গ্রাহক সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে উচ্চ আদালতে রিটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

আপলোড টাইম : ০২:৪৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: মোবাইল ফোন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগের পাহাড় জমেছে। ভোক্তাদের অভিযোগ নির্দিষ্ট প্যাকেজ কিনে প্রতারিত হয়েছেন তারা। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইন্টারনেট সেবার বিভিন্ন অফার নিয়ে। বেসরকারি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেল ছাড়াও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ নির্দিষ্ট প্যাকেজ কিনলেও বাড়তি অর্থ কেটে নেওয়া হচ্ছে। টাকা দিয়েও সেবা পাননি অনেকেই। ফলে অফারের নামে প্রতারণা করছেন মোবাইল অপারেটররা। অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত জুন থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৫৯১টি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রাহকরা। এরমধ্যে গ্রামীণ ফোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬৬টি, রবি অজিয়াটার বিরুদ্ধে ১৫১টি, বাংলালিংক এর বিরুদ্ধে ১১৫টি, এয়ারটেলের বিরুদ্ধে ১২৮টি এবং টেলিটকের বিরুদ্ধে জমা পরেছে ৩১টি অভিযোগ।
একজন অভিযোগকারী জানিয়েছেন, ২৮ দিন মেয়াদে ৯৮ টাকায় ১.৫ জিবি ইন্টারনেট ডাটা অফার দেখে তিনি সেবাটি ক্রয় করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি মাত্র এক জিবি ডাটা পেয়েছেন। এরপর তাকে বাড়তি অর্থ গুণতে হয়েছে। অপর একজন অভিযোগ করেছেন, ২৮ টাকায় ৫০ এমবি ইন্টারনেট ডাটায় অফার দেওয়া হয়েছে যে একটি লিংকে গেলে সারা দিন বাংলা নাটক দেখা যাবে। কিন্তু তিনি ওই লিংকে গিয়ে কোনো নাটক দেখতে পাননি। প্রতিদিন ২ টাকার বিনিময়ে হেলথ টিপস পাওয়া যাবে এমন অফার গ্রহণ করেন অপর একজন গ্রাহক। সার্ভিসটি বন্ধ করতে গেলে নির্ধারিত শর্টকোট দিলেও তা বন্ধ হয়নি এবং চালু থাকার কারণে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরকম শত শত অভিযোগ জমা পড়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, একটি মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করার কারণে গত মে মাসের পর থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ভোক্তারা এখনও লিখিত অভিযোগ জানাচ্ছেন। তবে মোবাইল সেবা ছাড়া অন্যান্য ভোক্তা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিপরীতে প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। যার ২৫ ভাগ অর্থ সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারী পেয়েছেন। মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রবি অজিয়াটা লিমিটেড গত মে মাসে এ ধরনের জরিমানার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে, যেটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ওই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর মোবাইল কোম্পানির বিরুদ্ধে নতুন কোন অভিযোগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে শত শত গ্রাহক অভিযোগ জানালেও তার সুরাহা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ের কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভোক্তাদের সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর প্রেসিডেন্ট ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, এ ধরনের বিষয়গুলো দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন। কেননা, মোবাইল সেবার সাথে সাধারণ ভোক্তারা জড়িত। অনেক সময় নানা প্যাকেজ দিয়েও তারা প্রকৃত সেবা দেয় না। ফলে লাখ লাখ গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভোক্তারা অধিদপ্তরে এর সামান্যই অভিযোগ জানিয়ে থাকেন। কেউ মূল্য পরিশোধের পর সেবা না পেলে তার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন। এমন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে আর নুতন করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হতে না পারেন। তিনি আরো বলেন, সাধারণ গ্রাহক সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে উচ্চ আদালতে রিটের বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।