ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ২২৮ বার পড়া হয়েছে

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্রাব্য ভাষায় কটূক্তি ও অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদে
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্রাব্য ভাষায় কটূক্তি ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেওয়ায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উভয় পদ থেকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন খাজার নেতৃত্বে মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মানববন্ধন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ‘আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের পিতা মরহুম আব্দুর রহমান খলিফা একজন রাজাকার ছিলেন। তাঁর ভাইয়েরা এখনও জামায়াতের রাজনীতি করেন। রাজাকারের ছেলে কখনো আওয়ামী লীগ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের আড়াল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাবোধকে ধ্বংস করছেন তিনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মী কারোর সঙ্গেই ভালো আচরণ করেন না, শুধু গালি আর হুমকি দেন। আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি। যার ফলে কেউ কোনো প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পান না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক সহকারী জেলা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, গোলাম হোসেন, পিরোজপুর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যাংকার জিল্লুর রহমান, সাবেক থানা কমান্ডার নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল আজিজ, মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আপনি রাজাকারের ছেলে। দ্রুত চেয়ারম্যানের চেয়ার ছাড়েন, নচেৎ টেনে হেঁচড়ে নামানো হবে।’ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কেউ ভিজিএফ-এর চাল বা কম্বল নিবেন না।’ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বাবলু বিশ^াসের নাম উচ্চারণ করতেই ঘৃণা লাগে। অবিলম্বে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। বাবলু বিশ্বাসের বাবা ছিলেন একজন অস্ত্রধারী রাজাকার।’ সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, ‘বাবলু বিশ্বাস মরহুম ছহিউদ্দিনের জামাই ভাবতে লজ্জা হয়। তিনি কীভাবে রাজাকারের ছেলের সঙ্গে তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, পারিবারিক মন্ত্রী না হয়ে মেহেরপুরের মানুষের মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে নাক শিটকান। চরিত্র বদল করেন। নচেৎ আপনাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামব। শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক, তাঁর কাছে অভিযোগ দিতে একটুও সময় লাগবে না।’ খাজা নাজিম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের আওয়ামী লীগের কোন জায়গা নেই, এটা শেখ হাসিনার কথা। সেই হিসেবে বাবলু বিশ্বাসের বহিষ্কার এখনই করতে হবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর গ্রামের মৃত আজগর আলীর কুলখানি অনুষ্ঠানে মেহেরপুরের বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভেজাল ঢুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করেছে। আর করেছে কারা জানেন? বক্তব্যে তিনি বলেন, বশির চোর, ঝাউবাড়িয়ার বাইটে কাশেম ও চাঁদবিলের আলতাবের অর্থের বিনিময়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। এরা তিনজনই নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলীর কুলখানী ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস উল্লেখিত বক্তব্য প্রদান করেন বলে স্মারকলিপির মাধ্যমে জানা যায়। আরও জানা যায়, ওই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করে সেই অনুষ্ঠানের খাবার না খেয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন

আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্রাব্য ভাষায় কটূক্তি ও অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদে
মেহেরপুর অফিস:
মেহেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্রাব্য ভাষায় কটূক্তি ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে অশালীন ভাষায় বক্তব্য দেওয়ায় মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উভয় পদ থেকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন খাজার নেতৃত্বে মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। মানববন্ধন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ‘আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসের পিতা মরহুম আব্দুর রহমান খলিফা একজন রাজাকার ছিলেন। তাঁর ভাইয়েরা এখনও জামায়াতের রাজনীতি করেন। রাজাকারের ছেলে কখনো আওয়ামী লীগ হতে পারে না। আওয়ামী লীগের আড়াল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনাবোধকে ধ্বংস করছেন তিনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতা-কর্মী কারোর সঙ্গেই ভালো আচরণ করেন না, শুধু গালি আর হুমকি দেন। আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ভগ্নিপতি। যার ফলে কেউ কোনো প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পান না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
কর্মসূচি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা খাজা নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সাবেক সহকারী জেলা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, গোলাম হোসেন, পিরোজপুর ইউনিয়ন কমান্ডার ইদ্রিস আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যাংকার জিল্লুর রহমান, সাবেক থানা কমান্ডার নজরুল ইসলাম, সাবেক জেলা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল আজিজ, মুজিবনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ, সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আপনি রাজাকারের ছেলে। দ্রুত চেয়ারম্যানের চেয়ার ছাড়েন, নচেৎ টেনে হেঁচড়ে নামানো হবে।’ মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কেউ ভিজিএফ-এর চাল বা কম্বল নিবেন না।’ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘বাবলু বিশ^াসের নাম উচ্চারণ করতেই ঘৃণা লাগে। অবিলম্বে তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। বাবলু বিশ্বাসের বাবা ছিলেন একজন অস্ত্রধারী রাজাকার।’ সাবেক উপজেলা কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, ‘বাবলু বিশ্বাস মরহুম ছহিউদ্দিনের জামাই ভাবতে লজ্জা হয়। তিনি কীভাবে রাজাকারের ছেলের সঙ্গে তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন।’ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেনকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, পারিবারিক মন্ত্রী না হয়ে মেহেরপুরের মানুষের মন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনের অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখলে নাক শিটকান। চরিত্র বদল করেন। নচেৎ আপনাদের বিরুদ্ধেও মাঠে নামব। শেখ হাসিনা আমাদের অভিভাবক, তাঁর কাছে অভিযোগ দিতে একটুও সময় লাগবে না।’ খাজা নাজিম উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজাকার স্বাধীনতা বিরোধীদের আওয়ামী লীগের কোন জায়গা নেই, এটা শেখ হাসিনার কথা। সেই হিসেবে বাবলু বিশ্বাসের বহিষ্কার এখনই করতে হবে।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুর গ্রামের মৃত আজগর আলীর কুলখানি অনুষ্ঠানে মেহেরপুরের বেশকিছু মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় পিরোজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভেজাল ঢুকিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করেছে। আর করেছে কারা জানেন? বক্তব্যে তিনি বলেন, বশির চোর, ঝাউবাড়িয়ার বাইটে কাশেম ও চাঁদবিলের আলতাবের অর্থের বিনিময়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। এরা তিনজনই নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযোদ্ধা।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলীর কুলখানী ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাস উল্লেখিত বক্তব্য প্রদান করেন বলে স্মারকলিপির মাধ্যমে জানা যায়। আরও জানা যায়, ওই বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করে সেই অনুষ্ঠানের খাবার না খেয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেন।