ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে আবারও ব্লাাষ্ট ভাইরাসে আক্রান্ত গম বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মাঠ পরিদর্শন দীর্ঘমেয়াদি মুক্তি পেতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দেয়া হচ্ছে উন্নত প্রশিক্ষন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৭
  • / ৩২৪ বার পড়া হয়েছে

MEHERPUR PIC-1মেহেরপুর অফিস: গত বছরের মত এবছরও মেহেরপুরে গমে ব্লাাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় ১৫ সদস্য’র একটি গম বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল দু’দিন ধরে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত বিভিন্ন গম ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।  রবিবার ও গতকাল সোমবার মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর ও গাংনী উপজেলার তেরাইলে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত জমির গম পরিদর্শন করেন । বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জালাল উদ্দিন, কৃষি গবেষনা ইনষ্টি্িটউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, গম গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মন, আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নতিকরণ কেন্দ্র’র (সিমিট) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা টিমথি জে. ক্রুপনিকসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রতিনিধি দলে অংশ নেন। ব্লাাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হলে গমের শীষ বের হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পেকে যাওয়ার মত সাদা বর্ণ ধারণ করেন এবং তার মধ্যে গমের কোনো দানা থাকেনা। যে কারণে গত বছর জেলায় কোনো গম উৎপান হয়নি। আক্রান্ত গম ক্ষেত পরিদর্শন শেষে ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন- সিমিট, গম গবেষনা কেন্দ্র, কুষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট সম্মিলত ভাবে ব্লাাষ্ট ভাইরাস নিয়ে গবেষনা চালাচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই ভাইরাসটিকে সম্পূর্নভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। গম গবেষনা কেন্দ্রে পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মন বলেন, গত বছর বাংলাদেশে ব্লাাষ্ট ভাইরাস সনাক্ত হয়। ব্লাাষ্ট প্রতিরোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। স্বল্প ও দির্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত এলাকায় পরপর দুই বছর গম চাষ না করা হলে এই ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, মেহেরপুর গম চাষের উপযোগী এলাকা। সেই হিসেবে গম চাষ নিরুৎসাহী করার পরও চাষীরা প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন। সেখানে এখন পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাাষ্ট সনাক্ত হয়েছে। যেহেতু এ বছরও ব্লাাষ্ট ভাইরাস রোগ দেখা যাচ্ছে তাই আগামী বছরও আমরা এ জেলায় গম চাষে নিরুৎসাহী করবো। প্লান এন্ড প্রটেকশন শাখার পরিচালক গোলাম মারুফ বলেন , পরপর দুই বছর গম চাষ বন্ধ রাখা গেলে এ রোগের যে জীবনু আছে সেটা ছড়াতে পারবে না। তাছাড়াও গবেষনা প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিরোধি জাত উদ্বাধন করার। আমরা আশা করছি অচিরেই প্রতিরোধী জাত পেয়ে গেলে আমরা প্রতিরোধ পেতে সম্ভব হব। মেহেরপুর কুষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহী করার জন্য গ্রামে গ্রামে আলোচনাসভা, মাইকিং সহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও কৃষক তাদের প্রয়োজনের তাগিদে গম চাষ করেছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাাষ্ট সনাক্ত হয়েছে। তিনি আশা করেন বাকি গমের জমিগুলোতে যদি সময়মত নাটিভো স্প্রে করা হয় তাহলে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নতিকরণ সেন্টার (সিমিট)’র সিস্টেম এগ্রোনমিষ্ট বিজ্ঞানী ড. টিমথি জে. ক্রুপনিক বলেন, ব্লাাষ্ট অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি ভাইরাস। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত জমি থেকে এই ভাইরাস অন্য জমিতে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ব্লাাষ্ট থেকে দির্ঘমেয়াদি মুক্তি পেতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উন্নত প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে সিমিটের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, গত বছর মেহেরপুরসহ দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি জেলায় গমে ব্লাষ্ট নামক এক ধরেনর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আক্রান্ত স্থান থেকে কোনো গম উৎপাদন হয়নি। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত গমের বীজ সংরক্ষন না করার জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে জেলার দুটি সরকারী গম উৎপাদন খামারের ২৭৬ একজর জমির গম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এবছর ব্লাষ্ট আক্রান্ত এলাকায় পরপর দুই বার গম চাষ না করার জন্য গম গবেষনা কেন্দ্র থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ভাইরাসের উপস্থিতির কারণে এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষীদের গম চাষে নিরুৎসাহীত করা হয়েছিল। পরামর্শে বলা হয়েছিল পরপর দুই বার গম চাষ না করা হলে ব্লাাষ্ট ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবে। তার পর থেকে শোধীত বীজ বপন করে গম চাষ করলে ব্লাাষ্ট’র ঝুঁকি থাকবে না। সেই মতে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর থেকে গম চাষে নিরৎসাহীত করার জন্য লিফলেট, মাইকিং, সেমিনার করা হয়েছিল বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। তারপরও মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর গম চাষ করেছেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, গত বছর জেলায় গম চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর কোনো লক্ষমাত্রা না থাকলেও ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন চাষীরা। বাকি জমিতে ভুট্টা, সরিষা সহ অন্যান্য চাষ হয়েছে। যেসকল জমিতে গম চাষ করা হয়েছে তার মধ্যে আগাম চাষকৃত ৫ হেক্টর জমিতে পুনরায় ব্লাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। গমের শীষ বের হওয়ার সাথে তা সাদা বর্ণ ধারণ করছে । সাদা বর্ণ শীষের মধ্যে গমের কোনো দানা পাওয়া যাচ্ছে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মেহেরপুরে আবারও ব্লাাষ্ট ভাইরাসে আক্রান্ত গম বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মাঠ পরিদর্শন দীর্ঘমেয়াদি মুক্তি পেতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের দেয়া হচ্ছে উন্নত প্রশিক্ষন

আপলোড টাইম : ০২:৫৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০১৭

MEHERPUR PIC-1মেহেরপুর অফিস: গত বছরের মত এবছরও মেহেরপুরে গমে ব্লাাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ায় ১৫ সদস্য’র একটি গম বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল দু’দিন ধরে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত বিভিন্ন গম ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন।  রবিবার ও গতকাল সোমবার মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদবপুর ও গাংনী উপজেলার তেরাইলে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত জমির গম পরিদর্শন করেন । বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জালাল উদ্দিন, কৃষি গবেষনা ইনষ্টি্িটউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ, গম গবেষনা কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মন, আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নতিকরণ কেন্দ্র’র (সিমিট) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা টিমথি জে. ক্রুপনিকসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা প্রতিনিধি দলে অংশ নেন। ব্লাাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হলে গমের শীষ বের হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পেকে যাওয়ার মত সাদা বর্ণ ধারণ করেন এবং তার মধ্যে গমের কোনো দানা থাকেনা। যে কারণে গত বছর জেলায় কোনো গম উৎপান হয়নি। আক্রান্ত গম ক্ষেত পরিদর্শন শেষে ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন- সিমিট, গম গবেষনা কেন্দ্র, কুষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট সম্মিলত ভাবে ব্লাাষ্ট ভাইরাস নিয়ে গবেষনা চালাচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই ভাইরাসটিকে সম্পূর্নভাবে নির্মূল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন। গম গবেষনা কেন্দ্রে পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মন বলেন, গত বছর বাংলাদেশে ব্লাাষ্ট ভাইরাস সনাক্ত হয়। ব্লাাষ্ট প্রতিরোধে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। স্বল্প ও দির্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত এলাকায় পরপর দুই বছর গম চাষ না করা হলে এই ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, মেহেরপুর গম চাষের উপযোগী এলাকা। সেই হিসেবে গম চাষ নিরুৎসাহী করার পরও চাষীরা প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন। সেখানে এখন পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাাষ্ট সনাক্ত হয়েছে। যেহেতু এ বছরও ব্লাাষ্ট ভাইরাস রোগ দেখা যাচ্ছে তাই আগামী বছরও আমরা এ জেলায় গম চাষে নিরুৎসাহী করবো। প্লান এন্ড প্রটেকশন শাখার পরিচালক গোলাম মারুফ বলেন , পরপর দুই বছর গম চাষ বন্ধ রাখা গেলে এ রোগের যে জীবনু আছে সেটা ছড়াতে পারবে না। তাছাড়াও গবেষনা প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রতিরোধি জাত উদ্বাধন করার। আমরা আশা করছি অচিরেই প্রতিরোধী জাত পেয়ে গেলে আমরা প্রতিরোধ পেতে সম্ভব হব। মেহেরপুর কুষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহী করার জন্য গ্রামে গ্রামে আলোচনাসভা, মাইকিং সহ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও কৃষক তাদের প্রয়োজনের তাগিদে গম চাষ করেছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমিতে ব্লাাষ্ট সনাক্ত হয়েছে। তিনি আশা করেন বাকি গমের জমিগুলোতে যদি সময়মত নাটিভো স্প্রে করা হয় তাহলে ব্লাাষ্ট আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নতিকরণ সেন্টার (সিমিট)’র সিস্টেম এগ্রোনমিষ্ট বিজ্ঞানী ড. টিমথি জে. ক্রুপনিক বলেন, ব্লাাষ্ট অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি ভাইরাস। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত জমি থেকে এই ভাইরাস অন্য জমিতে বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, ব্লাাষ্ট থেকে দির্ঘমেয়াদি মুক্তি পেতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উন্নত প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে সিমিটের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, গত বছর মেহেরপুরসহ দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ৬টি জেলায় গমে ব্লাষ্ট নামক এক ধরেনর ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আক্রান্ত স্থান থেকে কোনো গম উৎপাদন হয়নি। ব্লাাষ্ট আক্রান্ত গমের বীজ সংরক্ষন না করার জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে জেলার দুটি সরকারী গম উৎপাদন খামারের ২৭৬ একজর জমির গম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। এবছর ব্লাষ্ট আক্রান্ত এলাকায় পরপর দুই বার গম চাষ না করার জন্য গম গবেষনা কেন্দ্র থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ভাইরাসের উপস্থিতির কারণে এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চাষীদের গম চাষে নিরুৎসাহীত করা হয়েছিল। পরামর্শে বলা হয়েছিল পরপর দুই বার গম চাষ না করা হলে ব্লাাষ্ট ভাইরাস নষ্ট হয়ে যাবে। তার পর থেকে শোধীত বীজ বপন করে গম চাষ করলে ব্লাাষ্ট’র ঝুঁকি থাকবে না। সেই মতে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর থেকে গম চাষে নিরৎসাহীত করার জন্য লিফলেট, মাইকিং, সেমিনার করা হয়েছিল বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। তারপরও মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে এ বছর গম চাষ করেছেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, গত বছর জেলায় গম চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর কোনো লক্ষমাত্রা না থাকলেও ৪ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করেছেন চাষীরা। বাকি জমিতে ভুট্টা, সরিষা সহ অন্যান্য চাষ হয়েছে। যেসকল জমিতে গম চাষ করা হয়েছে তার মধ্যে আগাম চাষকৃত ৫ হেক্টর জমিতে পুনরায় ব্লাষ্ট ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। গমের শীষ বের হওয়ার সাথে তা সাদা বর্ণ ধারণ করছে । সাদা বর্ণ শীষের মধ্যে গমের কোনো দানা পাওয়া যাচ্ছে না।