ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুই মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
  • / ৩২৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহে চার মামলায় বিএনপি ও জামায়েতের ২৫০ জন আসামী
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা সরকার উৎখাতের চারটি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত এক বিএনপির নাম নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইদ্রিস আলী নামে দুই বছর আগে মারা যাওয়া নলডাঙ্গা গ্রামের ওই বিএনপি নেতা ঝিনাইদহ সদর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। মামলায় তার পদবীও সহ-সভাপতি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তার গ্রাম বা পিতার নাম না থাকায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
তবে বিএনপি নেতারা দাবী করছেন, গনহারে আসামী করতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিরাও বাদ যায়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দীনের দায়েরকৃত ১৫ নং মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলীকে। তিনি এই মামলায় ২১ নং আসামী। এছাড়া নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা বদিউর রহমানের দায়েরকৃত ১৭ নং মামলাও ইদ্রিস আলীকে ১৭ নং আসামী করা হয়েছে। কিন্তু সহ-সভাপতি পদে ইদ্রিস আলী নামে বিএনপির জেলা, থানা ও পৌর কমিটিতে কেও নেই।
এদিকে ইদ্রিস আলীর ছেলে আহসান কবীর জানান, তার পিতা ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি সদর থানা বিএনপির পুরানো কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। হয়তো ভুল করে তার পিতার নাম এসেছে বলেও দাবী করেন আহসান।
আদালত সুত্রে জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬/২ ও ২৫ (খ) ধারায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮০/৯০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ৬ ফেব্রয়ারী ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে একই ধারায় করা দায়েরকৃত মামলায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৫০/৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত ৭ ফেব্রয়ারী সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দীনের দায়েরকৃত মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৪০/৫০ জন আসামী হয়েছেন। গত ৮ ফেব্রয়ারী সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা বদিউর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি মামলায় আসামী হয়েছেন বিএনপির প্রয়াত নেতা কথিত ইদ্রিস আলী।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, জেলা, থানা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটিতে ইদ্রিস আলী নামে তাদের কোন সহ-সভাপতি নেই। তবে পুরানো কমিটিতে নলডাঙ্গ গ্রামের মরহুম ইদ্রস আলী ছিল বলে আব্দুল মালেক যোগ করেন। তিনি আরো বলেন, ৩ বছর আগের পুরানো কমিটির অনেকের পদ পদবী দিয়ে মামলা করা হলেও বর্তমান কমিটিতে তাদের পদ পদবী ভিন্ন। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস জানান, বিএনপির সাবেক নেতা ইদ্রিস আলীই হচ্ছে ওই মামলার আসামী করা হয়েছে। কারণ সহ-সভাপতি পদে ইদ্রিস আলী নামে কেবল তিনিই ছিলেন। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মামলায় যে ইদ্রিস আলীকে দেখানো হয়েছে তিনি দুই বছর আগেই মারা গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা ও ১৫ নং মামলার বাদী আলাউদ্দীন জানান, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে ইদ্রিস আলীর নাম এসেছে। ইদ্রিস আলী মৃত হলে বিষয়টি ভুলের কারণে হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এদিকে নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা এবং ১৭ নং মামলার বাদী বদিউর রহমান জানান, তিনি মৃত হলে আদালতে লিখিত দিয়ে সংশোধন করা যাবে।
বিষয়টি নিয়ে সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, না ওটার তো কোন ঠিকানা ছিল না। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ইদ্রিস আলীর নাম এসেছে। তবে এমন মৃত ব্যক্তির কারো নাম আসলে চার্জশিটে ঠিক করে দেওয়া হবে। এই ইদ্রিস আলীকে শৈলকুপা বিএনপির নেতা হিসেবেও কেও কেও চিহ্নিত করছেন। তবে শৈলকুপার ইদ্রিস আলীকে ১০/১২ বছর আগে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান দিপু জানান, তাদের কোন কমিটিতে ইদ্রিস আলী নামে কেও সহ-সভাপতির পদ হোল্ড করেন না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুই মামলা

আপলোড টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮

ঝিনাইদহে চার মামলায় বিএনপি ও জামায়েতের ২৫০ জন আসামী
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা সরকার উৎখাতের চারটি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মৃত এক বিএনপির নাম নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইদ্রিস আলী নামে দুই বছর আগে মারা যাওয়া নলডাঙ্গা গ্রামের ওই বিএনপি নেতা ঝিনাইদহ সদর থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। মামলায় তার পদবীও সহ-সভাপতি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তার গ্রাম বা পিতার নাম না থাকায় বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
তবে বিএনপি নেতারা দাবী করছেন, গনহারে আসামী করতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিরাও বাদ যায়নি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দীনের দায়েরকৃত ১৫ নং মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে সহ-সভাপতি ইদ্রিস আলীকে। তিনি এই মামলায় ২১ নং আসামী। এছাড়া নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা বদিউর রহমানের দায়েরকৃত ১৭ নং মামলাও ইদ্রিস আলীকে ১৭ নং আসামী করা হয়েছে। কিন্তু সহ-সভাপতি পদে ইদ্রিস আলী নামে বিএনপির জেলা, থানা ও পৌর কমিটিতে কেও নেই।
এদিকে ইদ্রিস আলীর ছেলে আহসান কবীর জানান, তার পিতা ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেন। তিনি সদর থানা বিএনপির পুরানো কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। হয়তো ভুল করে তার পিতার নাম এসেছে বলেও দাবী করেন আহসান।
আদালত সুত্রে জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কাতলামারী পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬/২ ও ২৫ (খ) ধারায় ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৮০/৯০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ৬ ফেব্রয়ারী ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই ফজলুর রহমান বাদী হয়ে একই ধারায় করা দায়েরকৃত মামলায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৫০/৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গত ৭ ফেব্রয়ারী সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দীনের দায়েরকৃত মামলায় ৬২ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৪০/৫০ জন আসামী হয়েছেন। গত ৮ ফেব্রয়ারী সদর উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা বদিউর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় ৭৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৪০/৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে। সর্বশেষ দুটি মামলায় আসামী হয়েছেন বিএনপির প্রয়াত নেতা কথিত ইদ্রিস আলী।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, জেলা, থানা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটিতে ইদ্রিস আলী নামে তাদের কোন সহ-সভাপতি নেই। তবে পুরানো কমিটিতে নলডাঙ্গ গ্রামের মরহুম ইদ্রস আলী ছিল বলে আব্দুল মালেক যোগ করেন। তিনি আরো বলেন, ৩ বছর আগের পুরানো কমিটির অনেকের পদ পদবী দিয়ে মামলা করা হলেও বর্তমান কমিটিতে তাদের পদ পদবী ভিন্ন। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস জানান, বিএনপির সাবেক নেতা ইদ্রিস আলীই হচ্ছে ওই মামলার আসামী করা হয়েছে। কারণ সহ-সভাপতি পদে ইদ্রিস আলী নামে কেবল তিনিই ছিলেন। জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মামলায় যে ইদ্রিস আলীকে দেখানো হয়েছে তিনি দুই বছর আগেই মারা গেছেন।
বিষয়টি নিয়ে বাজারগোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা ও ১৫ নং মামলার বাদী আলাউদ্দীন জানান, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে ইদ্রিস আলীর নাম এসেছে। ইদ্রিস আলী মৃত হলে বিষয়টি ভুলের কারণে হয়েছে বলেও তিনি স্বীকার করেন। এদিকে নারিকেলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা এবং ১৭ নং মামলার বাদী বদিউর রহমান জানান, তিনি মৃত হলে আদালতে লিখিত দিয়ে সংশোধন করা যাবে।
বিষয়টি নিয়ে সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ বলেন, না ওটার তো কোন ঠিকানা ছিল না। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক ইদ্রিস আলীর নাম এসেছে। তবে এমন মৃত ব্যক্তির কারো নাম আসলে চার্জশিটে ঠিক করে দেওয়া হবে। এই ইদ্রিস আলীকে শৈলকুপা বিএনপির নেতা হিসেবেও কেও কেও চিহ্নিত করছেন। তবে শৈলকুপার ইদ্রিস আলীকে ১০/১২ বছর আগে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি নিয়ে শৈলকুপা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান খান দিপু জানান, তাদের কোন কমিটিতে ইদ্রিস আলী নামে কেও সহ-সভাপতির পদ হোল্ড করেন না।