ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুসলিম নারীর সম্ভ্রম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০
  • / ১২৯ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম প্রতিবেদন
নবী সা:-এর আবির্ভাবের আগে জাহেলি যুগে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। ধর্ষণ ব্যভিচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ কারণে মান-সম্মান রক্ষায় কন্যাশিশুর জন্মের পর বাবা-মা তাদের আদরের মেয়েকে মাটির গর্তে জীবন্ত পুঁতে ফেলতেন। ইসলাম আবির্ভাবের পর সে বর্বর মানুষগুলো এমন নৈতিক মানে উন্নত হলো, এমন সব নিয়ম-নীতির অধীন হলো- যাতে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ওই সমাজ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হলো। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে আমরা যদি তাকাই তবে দেখব, উন্নত সভ্য জাতির দাবিদার আইনের কঠোরতা সত্ত্বেও ইউরোপ, আমেরিকার নারীরা যে পরিমাণে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়, মুসলিম বিশ্বে সে হার অনেক কম। ইসলামী অনুশাসন (যদিও ইসলামী অনুশাসন পূর্ণভাবে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে মেনে চলা হয় না) কিছুটা মেনে চলাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামে বিয়ে বহির্ভূত যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্ক ও অশ্লীলতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২)। তিনি আরো বলেন- ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, এর নিকটেও যেও না, তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫১)। বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম ব্যভিচার রোধে যে সব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা না করা এর অন্যতম কারণ।
ইসলাম প্রতিরোধমূলক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তার কিছু দিক আলোচনা করছি- জেনা, ব্যভিচার মহাপাপ, মৃত্যুর পর তার জন্য কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে যে সব বর্ণনা রয়েছে- শিক্ষক, ইমাম ও মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রচার করে ব্যভিচার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। দেখা থেকে কামনার সৃষ্টি হয়। এ জন্য ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি নত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। সে জন্য মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ নয়) তারা ব্যতীত বিনা প্রয়োজনে অন্যদের সাথে কথাবার্তা না বলা ও দেখা সাক্ষাত না করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। নবী সা: বলেন, ‘নির্জনে কোনো নারী-পুরুষ একত্রিত হলে তাদের মধ্যে তৃতীয় জন হয় শয়তান’ (অর্থাৎ শয়তান তাদেরকে পাপের দিকে উৎসাহিত করে)। -তিরমিজি
শালীন পোশাক ও পর্দা মেনে চলাচল ও ঘরের কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। ঘর গোছানো, রান্না করা, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি সুন্দরভাবে সুসম্পন্নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তাই নারীরা বাইরের কাজের চেয়ে ঘরের কাজে বেশি সম্পৃক্ততা থাকলে বাইরে গিয়ে নিগৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। নারীর বাইরে যাওয়া যদি বেপর্দা ও অশালীন পোশাক পরে হয়, তা যৌন হয়রানিকে উসকে দেয়। বোরকা হলো নারী দেহের সৌন্দর্য ঢেকে রাখার জন্য। কিন্তু বোরকা যদি আকর্ষণীয়, রঙ্গিন এবং তাতে শরীরের আকার আকৃতি বোঝা যায়, তা বোরকা না হয়ে হয়ে যায় ফ্যাশন। নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শালীন পোশাক পরা দরকার। শালীন পোশাক পরাকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে শুধু তা নয়, অন্যান্য বিবেকবান মানুষ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
প্রচার মাধ্যম ও শিক্ষক, ইমাম, খতিবদের ভূমিকা- নাটক-সিনেমার মূল বিষয় থাকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের প্রেম, এ অবস্থান থেকে সরে এসে নির্মাতাদের সামাজিক কাহিনীনির্ভর নাটক-সিনেমা তৈরি এবং ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কাহিনীনির্ভর নাটক তৈরি করা। নারীদের প্রতি পুরুষদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। নারী-পুরুষ সবাই মানুষ, আল্লাহর সৃষ্টি, একে অপরের পরিপূরক এ ধারণা গড়ে তুলতে নাটক-সিনেমা, ইমাম, শিক্ষকদের ভূমিকা রাখা। গুগল, ইউটিউবে যে সব অশ্লীল সাইট রয়েছে, তা বন্ধ করা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক, ইমাম, খতিবদের যেভাবে কাজে লাগানো হয়েছে- ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধেও তাদের কাজে লাগানো। সর্বোপরী ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষাকে সম্প্রসারিত করে মানুষের নৈতিক মানকে উন্নীত করার মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা এবং ন্যায়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মুসলিম নারীর সম্ভ্রম

আপলোড টাইম : ০৮:৩৫:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০২০

ধর্ম প্রতিবেদন
নবী সা:-এর আবির্ভাবের আগে জাহেলি যুগে নারী ও কন্যাশিশুর নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। ধর্ষণ ব্যভিচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এ কারণে মান-সম্মান রক্ষায় কন্যাশিশুর জন্মের পর বাবা-মা তাদের আদরের মেয়েকে মাটির গর্তে জীবন্ত পুঁতে ফেলতেন। ইসলাম আবির্ভাবের পর সে বর্বর মানুষগুলো এমন নৈতিক মানে উন্নত হলো, এমন সব নিয়ম-নীতির অধীন হলো- যাতে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ওই সমাজ থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হলো। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে আমরা যদি তাকাই তবে দেখব, উন্নত সভ্য জাতির দাবিদার আইনের কঠোরতা সত্ত্বেও ইউরোপ, আমেরিকার নারীরা যে পরিমাণে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়, মুসলিম বিশ্বে সে হার অনেক কম। ইসলামী অনুশাসন (যদিও ইসলামী অনুশাসন পূর্ণভাবে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে মেনে চলা হয় না) কিছুটা মেনে চলাই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোতে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি কম হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রে ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিতে হবে। ইসলামে বিয়ে বহির্ভূত যেকোনো ধরনের যৌন সম্পর্ক ও অশ্লীলতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-৩২)। তিনি আরো বলেন- ‘লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে, এর নিকটেও যেও না, তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক’ (সূরা আনআম, আয়াত-১৫১)। বর্তমানে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলাম ব্যভিচার রোধে যে সব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে, তা বাস্তবায়নের চেষ্টা না করা এর অন্যতম কারণ।
ইসলাম প্রতিরোধমূলক যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তার কিছু দিক আলোচনা করছি- জেনা, ব্যভিচার মহাপাপ, মৃত্যুর পর তার জন্য কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে যে সব বর্ণনা রয়েছে- শিক্ষক, ইমাম ও মিডিয়ার মাধ্যমে তা প্রচার করে ব্যভিচার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে হবে। দেখা থেকে কামনার সৃষ্টি হয়। এ জন্য ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে দৃষ্টি নত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। সে জন্য মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে বৈধ নয়) তারা ব্যতীত বিনা প্রয়োজনে অন্যদের সাথে কথাবার্তা না বলা ও দেখা সাক্ষাত না করতে উৎসাহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। নবী সা: বলেন, ‘নির্জনে কোনো নারী-পুরুষ একত্রিত হলে তাদের মধ্যে তৃতীয় জন হয় শয়তান’ (অর্থাৎ শয়তান তাদেরকে পাপের দিকে উৎসাহিত করে)। -তিরমিজি
শালীন পোশাক ও পর্দা মেনে চলাচল ও ঘরের কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। ঘর গোছানো, রান্না করা, সন্তান মানুষ করা ইত্যাদি সুন্দরভাবে সুসম্পন্নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। তাই নারীরা বাইরের কাজের চেয়ে ঘরের কাজে বেশি সম্পৃক্ততা থাকলে বাইরে গিয়ে নিগৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। নারীর বাইরে যাওয়া যদি বেপর্দা ও অশালীন পোশাক পরে হয়, তা যৌন হয়রানিকে উসকে দেয়। বোরকা হলো নারী দেহের সৌন্দর্য ঢেকে রাখার জন্য। কিন্তু বোরকা যদি আকর্ষণীয়, রঙ্গিন এবং তাতে শরীরের আকার আকৃতি বোঝা যায়, তা বোরকা না হয়ে হয়ে যায় ফ্যাশন। নারীদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শালীন পোশাক পরা দরকার। শালীন পোশাক পরাকে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে শুধু তা নয়, অন্যান্য বিবেকবান মানুষ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।
প্রচার মাধ্যম ও শিক্ষক, ইমাম, খতিবদের ভূমিকা- নাটক-সিনেমার মূল বিষয় থাকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের প্রেম, এ অবস্থান থেকে সরে এসে নির্মাতাদের সামাজিক কাহিনীনির্ভর নাটক-সিনেমা তৈরি এবং ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কাহিনীনির্ভর নাটক তৈরি করা। নারীদের প্রতি পুরুষদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা। নারী-পুরুষ সবাই মানুষ, আল্লাহর সৃষ্টি, একে অপরের পরিপূরক এ ধারণা গড়ে তুলতে নাটক-সিনেমা, ইমাম, শিক্ষকদের ভূমিকা রাখা। গুগল, ইউটিউবে যে সব অশ্লীল সাইট রয়েছে, তা বন্ধ করা। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শিক্ষক, ইমাম, খতিবদের যেভাবে কাজে লাগানো হয়েছে- ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধেও তাদের কাজে লাগানো। সর্বোপরী ইসলামী ও নৈতিক শিক্ষাকে সম্প্রসারিত করে মানুষের নৈতিক মানকে উন্নীত করার মাধ্যমে যৌন হয়রানি প্রতিরোধসহ অন্যায়ের প্রতি ঘৃণা এবং ন্যায়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে।