ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা আর নেই : প্রধানমন্ত্রীর শোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০১৭
  • / ৩২৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: একাত্তরের গেরিলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি……..রাজেউন)। তিনি ‘মামা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গত শুক্রবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহার একটি হাসপাতালে শহীদুল হকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তার শ্যালিকা সৈয়দা শরিফুন্নেসা। শহীদুল হক সুইডেন থাকতেন। ২৯ এপ্রিল সেখানে যাওয়ার পথে কাতারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দোহার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ৩ মে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শরিফুন্নেসা বলেন, কাতার থেকে সুইডেনে তার লাশ নেওয়ার পর সেদেশেই তার দাফন হবে।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকস রোগে ভুগছিলেন। তার কিডনিতেও সমস্যা ছিল। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর প্রবাস থেকে ফিরেছিলেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন। কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড না হওয়ার পর যে গণজাগরণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে সক্রিয় থেকে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মামার ভাগ্নে মামুন হাসানের বরাত দিয়ে বলেন, কাতারের দোহায় ‘আর ওয়াকার’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। গণজাগরণ মঞ্চ এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। শোক জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারাও।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মামা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বীর মুক্তযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মামা। রণাঙ্গনের ২ নম্বর সেক্টরের মেলাঘর ইউনিটের প্রধান ছিলেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে অতুলনীয় পরাক্রমের সাথে আত্মসমর্পণ না করা স্বাধীনতার শক্র বিহারিদের দখলে থাকা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি মিরপুর মুক্ত করেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল হক মামা । ১৯৭২-৭৬ পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামালের নিবিড় সান্নিধ্যে কেটেছে তার দীর্ঘসময়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমানে তিনি সিকিউরিটি অফিসারের চাকরি পান। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর জীবনের ঝুঁকি ও হুমকিকে অগ্রাহ্য করে তিনি জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ চালিয়েছেন দুঃসাহসিক আন্দোলন। পঁচাত্তরের পর আশির দশকে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান সুইডেনে।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গঠনে শহীদুল হকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি প্রয়াতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক মামা আর নেই : প্রধানমন্ত্রীর শোক

আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: একাত্তরের গেরিলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি……..রাজেউন)। তিনি ‘মামা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গত শুক্রবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহার একটি হাসপাতালে শহীদুল হকের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন তার শ্যালিকা সৈয়দা শরিফুন্নেসা। শহীদুল হক সুইডেন থাকতেন। ২৯ এপ্রিল সেখানে যাওয়ার পথে কাতারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দোহার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে ৩ মে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শরিফুন্নেসা বলেন, কাতার থেকে সুইডেনে তার লাশ নেওয়ার পর সেদেশেই তার দাফন হবে।
মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিকস রোগে ভুগছিলেন। তার কিডনিতেও সমস্যা ছিল। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর প্রবাস থেকে ফিরেছিলেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন। কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড না হওয়ার পর যে গণজাগরণ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তাতে সক্রিয় থেকে তরুণ প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছিলেন তিনি। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার মামার ভাগ্নে মামুন হাসানের বরাত দিয়ে বলেন, কাতারের দোহায় ‘আর ওয়াকার’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। গণজাগরণ মঞ্চ এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। শোক জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারাও।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মামা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বীর মুক্তযোদ্ধা সৈয়দ শহীদুল হক মামা। রণাঙ্গনের ২ নম্বর সেক্টরের মেলাঘর ইউনিটের প্রধান ছিলেন তিনি। ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে অতুলনীয় পরাক্রমের সাথে আত্মসমর্পণ না করা স্বাধীনতার শক্র বিহারিদের দখলে থাকা দুর্ভেদ্য ঘাঁটি মিরপুর মুক্ত করেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদুল হক মামা । ১৯৭২-৭৬ পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ কামালের নিবিড় সান্নিধ্যে কেটেছে তার দীর্ঘসময়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমানে তিনি সিকিউরিটি অফিসারের চাকরি পান। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর জীবনের ঝুঁকি ও হুমকিকে অগ্রাহ্য করে তিনি জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ চালিয়েছেন দুঃসাহসিক আন্দোলন। পঁচাত্তরের পর আশির দশকে পরিবার নিয়ে পাড়ি জমান সুইডেনে।
প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার এ বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জনমত গঠনে শহীদুল হকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি প্রয়াতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।