ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারকে জাতিসংঘের হুমকি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯
  • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

প্রয়োজনে আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে
দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না মিয়ানমার। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এমনকি জাতিসংঘকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও মানছে না দেশটি। উল্টো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে মিয়ানমারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ জাতিগত বিদ্বেষকেই আরো উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পগুলোতে খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিয়ানমারে অবস্থানকারী জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি কেনাট ওস্টবি এক চিঠিতে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও এর মানবিক সংস্থাগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকারকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অথচ জাতিসংঘ ২০১২ সাল থেকে এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাঁচিয়ে রাখতে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে নির্যাতনের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। পরে এদের একটি অংশকে মিয়ানমার ফেরত নিলেও অনেকে বাংলাদেশেই থেকে গেছে। এরপর ১৯৯২ সালে আবারও দেশটির সেনাবাহিনী ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। তখনো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর পর থেকেই শুরু হয় প্রত্যাবাসনের নামে মিয়ানমারের টালবাহানা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর আক্রমণ চালায় তাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এর মধ্যেও দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিধনে আরো অনেক নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে। ২০১২ সালে এমনি এক নিধনযজ্ঞের মুখে এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হয়। তাদের অবাধে চলাচলের অধিকার নেই। জীবিকার জন্য কাজ করার সুযোগ নেই। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে যায় জাতিসংঘ। খাদ্যসহ অতিপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সহায়তা দিতে থাকে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বারবার জাতিসংঘকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দিয়ে তাদের নিজ গ্রামে বা নিকটস্থ এলাকায় পুনর্বাসন করা হবে। চলাচল ও কাজ করার অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা কিছুই করেনি। এখন জাতিসংঘ মনে করছে, মিয়ানমার এই সংকটের সমাধান করার বদলে বরং সংকটকে আরো উসকে দিচ্ছে। সে কারণেই সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। অতীতে মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা যেভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছিল, বর্তমানের গণতান্ত্রিক সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে। বাংলাদেশে অবস্থান করা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নিচ্ছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরির কথা মুখে বললেও বাস্তবে মিয়ানমার সরকার কিছুই করছে না; বরং অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার ফন্দিফিকির আঁটছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়কে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাঙ্গীণ অবরোধ আরোপ করতে হবে, যাতে তারা বাধ্য হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মিয়ানমারকে জাতিসংঘের হুমকি

আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯

প্রয়োজনে আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে
দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না মিয়ানমার। বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। এমনকি জাতিসংঘকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও মানছে না দেশটি। উল্টো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ব্যাপারে মিয়ানমারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ জাতিগত বিদ্বেষকেই আরো উসকে দিচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে থাকা উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পগুলোতে খাদ্যসহ অন্যান্য সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, মিয়ানমারে অবস্থানকারী জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি কেনাট ওস্টবি এক চিঠিতে এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়, এ বিষয়ে জাতিসংঘ ও এর মানবিক সংস্থাগুলোর নেওয়া সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকারকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অথচ জাতিসংঘ ২০১২ সাল থেকে এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাঁচিয়ে রাখতে নানাভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নির্যাতন শুরু হয়। ১৯৭৮ সালে নির্যাতনের মুখে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল। পরে এদের একটি অংশকে মিয়ানমার ফেরত নিলেও অনেকে বাংলাদেশেই থেকে গেছে। এরপর ১৯৯২ সালে আবারও দেশটির সেনাবাহিনী ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। তখনো কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এর পর থেকেই শুরু হয় প্রত্যাবাসনের নামে মিয়ানমারের টালবাহানা। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বর আক্রমণ চালায় তাকে ‘গণহত্যা’ ও ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এর মধ্যেও দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিধনে আরো অনেক নিষ্ঠুরতা চালিয়েছে। ২০১২ সালে এমনি এক নিধনযজ্ঞের মুখে এক লাখ ২৮ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে অমানবিক পরিবেশে থাকতে বাধ্য করা হয়। তাদের অবাধে চলাচলের অধিকার নেই। জীবিকার জন্য কাজ করার সুযোগ নেই। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে যায় জাতিসংঘ। খাদ্যসহ অতিপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সহায়তা দিতে থাকে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বারবার জাতিসংঘকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ক্যাম্পগুলো বন্ধ করে দিয়ে তাদের নিজ গ্রামে বা নিকটস্থ এলাকায় পুনর্বাসন করা হবে। চলাচল ও কাজ করার অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা কিছুই করেনি। এখন জাতিসংঘ মনে করছে, মিয়ানমার এই সংকটের সমাধান করার বদলে বরং সংকটকে আরো উসকে দিচ্ছে। সে কারণেই সহায়তা প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হয়েছে। অতীতে মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা যেভাবে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছিল, বর্তমানের গণতান্ত্রিক সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে। বাংলাদেশে অবস্থান করা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকেও তারা ফেরত নিচ্ছে না। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরির কথা মুখে বললেও বাস্তবে মিয়ানমার সরকার কিছুই করছে না; বরং অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার ফন্দিফিকির আঁটছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়কে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে সর্বাঙ্গীণ অবরোধ আরোপ করতে হবে, যাতে তারা বাধ্য হয় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক মানবাধিকারগুলো ফিরিয়ে দিতে।