ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মিথ্যা অমার্জনীয় অপরাধ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৬
  • / ৪৪৬ বার পড়া হয়েছে

ধর্ম ডেস্ক: মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমাদের সমাজে এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই মহাঅন্যায়ের পরিণাম-পরিণতি সম্পর্কে ভয়াবহ বর্ণনা এসেছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা বলা থেকেও বেঁচে থাক এমতাবস্থায় যে, মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করবে। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ সূরা : হজ, আয়াত : ৩০-৩১ । এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণ লিখেছেন, উল্লিখিত আয়াতে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে মূর্তিপূজা তথা শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কারণ, শিরক হলো এমন মিথ্যা অপবাদ যা আল্লাহর প্রতি আরোপ করা হয়। অর্থাৎ যারা শিরক করে তারা এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সঙ্গে অন্যান্য দেবদেবীও ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তারাও ভাগ্য পরিবর্তন করার মালিক। অথচ আল্লাহতায়ালা সব ধরনের শরিক থেকে মুক্ত এবং পবিত্র। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এমন একটি অন্যায় যার দ্বারা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। নির্দোষ মানুষকে দোষী বানানো হয়। অথচ সেই ব্যক্তি এই অপবাদ থেকে পবিত্র। তাই মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও শিরক করা উভয়টি কাছাকাছি অপরাধ। তাই পবিত্র কোরআনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে মূর্তিপূজার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রসুলে আকরাম (সা.)-এর বহু হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াও শিরক সমপর্যায়ের অন্যায়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত খুরায়ম ইবনে ফাতেক (রা.) বলেন, ‘একবার রসুল (সা.) ফজরের নামাজ শেষ করার পর দাঁড়ালেন এবং তিনবার বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সঙ্গে শিরকের সমতুল্য করা হয়েছে। আবু দাউদ শরিফ। আরেকটি হাদিসে মিথ্যা সাক্ষ্যদান করাকে সবচেয়ে বড় গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওনায়স (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, (১) আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (৩) মিথ্যা কসম খাওয়া। প্রকৃতপক্ষে যখন কোনো শপথকারী বাধ্যতামূূলকভাবে শপথ করে এবং তাতে মাছির ডানা পরিমাণও মিথ্যা মিশ্রণ করে তখনই তার অন্তরের মধ্যে মাছির ডানা পরিমাণ একটি দাগ পড়ে যায়, যা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।’ (তিরমিজি শরিফ)। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে এরূপ বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী হয়, (অর্থাৎ মিথ্যা হয়) সে যেন আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দায়ের করে, যতক্ষণ না সে তা থেকে ফিরে আসে ততক্ষণ সে আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে থাকে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুুুসলমানের ওপর এমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, যা থেকে সেই মুসলমান পবিত্র এবং মুক্ত; এমতাবস্থায় যতক্ষণ না সে তা থেকে (মিথ্যা মামলা করা থেকে) তওবা করবে, ততক্ষণ সে দোজখের কাদার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে।’ (আবু দাউদ)। প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে অপর একটি হাদিস ইরশাদ হয়েছে।  তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মামলায় সাহায্য করে, সে বস্তুত আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে যায়।’ (আবু দাউদ)।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মিথ্যা অমার্জনীয় অপরাধ

আপলোড টাইম : ১২:৪৭:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

ধর্ম ডেস্ক: মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমাদের সমাজে এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এই মহাঅন্যায়ের পরিণাম-পরিণতি সম্পর্কে ভয়াবহ বর্ণনা এসেছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করেন, ‘তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক এবং মিথ্যা বলা থেকেও বেঁচে থাক এমতাবস্থায় যে, মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশ করবে। তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ সূরা : হজ, আয়াত : ৩০-৩১ । এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদগণ লিখেছেন, উল্লিখিত আয়াতে মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে মূর্তিপূজা তথা শিরকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। কারণ, শিরক হলো এমন মিথ্যা অপবাদ যা আল্লাহর প্রতি আরোপ করা হয়। অর্থাৎ যারা শিরক করে তারা এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহর সঙ্গে অন্যান্য দেবদেবীও ইবাদত পাওয়ার যোগ্য। তারাও ভাগ্য পরিবর্তন করার মালিক। অথচ আল্লাহতায়ালা সব ধরনের শরিক থেকে মুক্ত এবং পবিত্র। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এমন একটি অন্যায় যার দ্বারা একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়। নির্দোষ মানুষকে দোষী বানানো হয়। অথচ সেই ব্যক্তি এই অপবাদ থেকে পবিত্র। তাই মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া ও শিরক করা উভয়টি কাছাকাছি অপরাধ। তাই পবিত্র কোরআনে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে মূর্তিপূজার সমতুল্য অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। রসুলে আকরাম (সা.)-এর বহু হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াও শিরক সমপর্যায়ের অন্যায়। বিখ্যাত সাহাবি হজরত খুরায়ম ইবনে ফাতেক (রা.) বলেন, ‘একবার রসুল (সা.) ফজরের নামাজ শেষ করার পর দাঁড়ালেন এবং তিনবার বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সঙ্গে শিরকের সমতুল্য করা হয়েছে। আবু দাউদ শরিফ। আরেকটি হাদিসে মিথ্যা সাক্ষ্যদান করাকে সবচেয়ে বড় গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওনায়স (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘গুনাহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হলো, (১) আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। (২) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। (৩) মিথ্যা কসম খাওয়া। প্রকৃতপক্ষে যখন কোনো শপথকারী বাধ্যতামূূলকভাবে শপথ করে এবং তাতে মাছির ডানা পরিমাণও মিথ্যা মিশ্রণ করে তখনই তার অন্তরের মধ্যে মাছির ডানা পরিমাণ একটি দাগ পড়ে যায়, যা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।’ (তিরমিজি শরিফ)। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে এরূপ বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তির সুপারিশ আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী হয়, (অর্থাৎ মিথ্যা হয়) সে যেন আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দায়ের করে, যতক্ষণ না সে তা থেকে ফিরে আসে ততক্ষণ সে আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে থাকে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুুুসলমানের ওপর এমন মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, যা থেকে সেই মুসলমান পবিত্র এবং মুক্ত; এমতাবস্থায় যতক্ষণ না সে তা থেকে (মিথ্যা মামলা করা থেকে) তওবা করবে, ততক্ষণ সে দোজখের কাদার মধ্যে আবদ্ধ থাকবে।’ (আবু দাউদ)। প্রসিদ্ধ সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে অপর একটি হাদিস ইরশাদ হয়েছে।  তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মামলায় সাহায্য করে, সে বস্তুত আল্লাহর গজব নিয়ে ফিরে যায়।’ (আবু দাউদ)।