ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মামলার জালে ব্যাংকের ১ লাখ কোটি টাকা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ২৭০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতেও সমাধান পাচ্ছে না খেলাপি ঋণের। দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব মামলার পাহাড় জমছে। আবার অর্থঋণ আদালত রায় দেয়ার পর তা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এরকম স্থগিত হওয়া মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর অর্থঋণ আদালতে চলমান মামলায় আটকে আছে এক লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। এতে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি তারল্য সংকটও থেকেই যাচ্ছে।গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকেই খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। এ জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর নির্দেশের পর এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিদ্যমান কোন কোন আইনে সংশোধন আনতে হবে, সে বিষয়ে সুপারিশের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গ্রাহক ঋণ নেয়ার পর যখন গ্রাহক কিস্তি পরিশোধ করেন না, তখন টাকা আদায়ে নানা উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেষ্টা-তদবির করে অর্থ আদায় করতে না পারলে শেষ উপায় হিসেবে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। বছরের পর বছর এসব মামলার পেছনে সময় দিয়েও ব্যাংকগুলো টাকা আদায় করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৬৪টি জেলার অর্থঋণ আদালতে চলমান ৫৭ হাজার ৪১৬টি মামলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এক লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।একই হিসাব থেকে জানা গেছে, অর্থঋণ আদালতে ব্যাংক মামলা করার পর বড় অঙ্কের অর্থের খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে অর্থঋণ আদালতে চলা মামলায় স্থগিতাদেশ নিয়ে নিচ্ছে। খেলাপি হওয়ার পরও একইভাবে নতুন করে ঋণ নিচ্ছে অন্য ব্যাংক থেকে। উচ্চ আদালতে এ ধরনের পাঁচ হাজার ৩৭৬টি মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেছেন, ঋণের পরিমাণের সঙ্গে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে।
বিশাল সংখ্যক মামলা জেলার একজন বিচারকের পক্ষে নিষ্পত্তি করা কষ্টকর। কোথাও কোথাও আবার অর্থঋণ আদালতের বিচারকের পদ খালি আছে। সেখানে যে বিচারক অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকেন, তার পক্ষে ওইসব মামলা পরিচালনা আরও দুষ্কর হয়ে পড়ে। তা ছাড়া হাইকোর্টেও রিট মামলার সংখ্যা এমনভাবেবেড়েছে যে, ব্যাংক খাতের এসব মামলা সময়মতো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচারকার্য সম্পন্ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। প্রতি জেলায় একাধিক আদালতের ব্যবস্থাসহ অর্থঋণ আদালতের বিচারকের সংখ্যা এবং হাইকোর্টে রিট মামলার বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতে থাকা রিট মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকা দরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পৃথক বেঞ্চ গঠনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে চিঠি দিলেও তা গঠন করা হয়নি।কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিবুল আলমের মতে, মামলার চেয়ে আদালত ও আদালতে বিচারকের সংখ্যা কম হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আদালত ও বিচারক বাড়ালে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। অগ্রণী ব্যাংকের আমিন কোর্ট শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৯৪ সালে খেলাপি হয় ক্রোমভেজ ট্যানারি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ আদায়ে ১৯৯৭ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে অগ্রণী ব্যাংক। দুই দশকের বেশি সময়ে মামলা চালিয়ে এবং বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা আদায় করতে পারেনি ব্যাংক। জালিয়াতি করে ঋণ দেয়ার পর হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ২০১৪ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। এসব মামলায় স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে হলমার্ক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মামলার জালে ব্যাংকের ১ লাখ কোটি টাকা!

আপলোড টাইম : ১০:১২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থঋণ আদালতেও সমাধান পাচ্ছে না খেলাপি ঋণের। দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব মামলার পাহাড় জমছে। আবার অর্থঋণ আদালত রায় দেয়ার পর তা উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। এরকম স্থগিত হওয়া মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর অর্থঋণ আদালতে চলমান মামলায় আটকে আছে এক লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। এতে আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি তারল্য সংকটও থেকেই যাচ্ছে।গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ২০০৯ সালে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে চার গুণ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার দিন থেকেই খেলাপি ঋণের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। এ জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে আর্থিকপ্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রীর নির্দেশের পর এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিদ্যমান কোন কোন আইনে সংশোধন আনতে হবে, সে বিষয়ে সুপারিশের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গ্রাহক ঋণ নেয়ার পর যখন গ্রাহক কিস্তি পরিশোধ করেন না, তখন টাকা আদায়ে নানা উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেষ্টা-তদবির করে অর্থ আদায় করতে না পারলে শেষ উপায় হিসেবে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। বছরের পর বছর এসব মামলার পেছনে সময় দিয়েও ব্যাংকগুলো টাকা আদায় করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৬৪টি জেলার অর্থঋণ আদালতে চলমান ৫৭ হাজার ৪১৬টি মামলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এক লাখ ১০ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।একই হিসাব থেকে জানা গেছে, অর্থঋণ আদালতে ব্যাংক মামলা করার পর বড় অঙ্কের অর্থের খেলাপি গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে অর্থঋণ আদালতে চলা মামলায় স্থগিতাদেশ নিয়ে নিচ্ছে। খেলাপি হওয়ার পরও একইভাবে নতুন করে ঋণ নিচ্ছে অন্য ব্যাংক থেকে। উচ্চ আদালতে এ ধরনের পাঁচ হাজার ৩৭৬টি মামলায় আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ৫২ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেছেন, ঋণের পরিমাণের সঙ্গে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে।
বিশাল সংখ্যক মামলা জেলার একজন বিচারকের পক্ষে নিষ্পত্তি করা কষ্টকর। কোথাও কোথাও আবার অর্থঋণ আদালতের বিচারকের পদ খালি আছে। সেখানে যে বিচারক অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকেন, তার পক্ষে ওইসব মামলা পরিচালনা আরও দুষ্কর হয়ে পড়ে। তা ছাড়া হাইকোর্টেও রিট মামলার সংখ্যা এমনভাবেবেড়েছে যে, ব্যাংক খাতের এসব মামলা সময়মতো এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচারকার্য সম্পন্ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। প্রতি জেলায় একাধিক আদালতের ব্যবস্থাসহ অর্থঋণ আদালতের বিচারকের সংখ্যা এবং হাইকোর্টে রিট মামলার বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্চ আদালতে থাকা রিট মামলা নিষ্পত্তির জন্য পৃথক এক বা একাধিক বেঞ্চ থাকা দরকার। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পৃথক বেঞ্চ গঠনের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে চিঠি দিলেও তা গঠন করা হয়নি।কোম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিবুল আলমের মতে, মামলার চেয়ে আদালত ও আদালতে বিচারকের সংখ্যা কম হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আদালত ও বিচারক বাড়ালে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। অগ্রণী ব্যাংকের আমিন কোর্ট শাখা থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৯৪ সালে খেলাপি হয় ক্রোমভেজ ট্যানারি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঋণের অর্থ আদায়ে ১৯৯৭ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে অগ্রণী ব্যাংক। দুই দশকের বেশি সময়ে মামলা চালিয়ে এবং বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনা আদায় করতে পারেনি ব্যাংক। জালিয়াতি করে ঋণ দেয়ার পর হলমার্ক গ্রুপের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে ২০১৪ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক। এসব মামলায় স্থগিতাদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে হলমার্ক।