ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাদকে যুবশক্তির অপমৃত্যু; জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন হোক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৩১৯ বার পড়া হয়েছে

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশবাসী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। নিজ সন্তান এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা এখন তাড়া করে ফিরছে। সন্তান বাড়ির বাইরে গেলেই তার জন্য চিন্তায় অভিভাবকদের ঘুম হারাম হতে বসেছে। ইদানিং এই মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার সুস্থ জাতি গঠনে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে যা অনস্বীকার্য। আর দুশ্চিন্তার বড় কারণ, আমাদের সম্ভাবনাময় যুবশক্তির অপমৃত্যু। বিশ্বে একমাত্র দেশÑ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, যেখানে সবচেয়ে বেশি যুবশক্তি বসবাস করে। যারা দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে সহায়ক শক্তি। কিন্তু সেই যুবসমাজ আজ মাদকের করাল গ্রাসে পতিত হয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎই শুধু নয় নষ্ট করছে জাতিগঠনের একমাত্র শক্তি। মাদক নিয়ে দেশের মিডিয়া যেমন সোচ্চার তেমনি সরকারও এই বিষয়ে চোখবুজে নেই। সরকার বিভিন্ন সময়ে আইন করে এই মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে বহুবিধ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। মাদকের ব্যবহার এবং তা বিক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সরকার আইন পাস করেছে। তারপরও মাদক বেচা-কেনা এবং গ্রহণকারীদের আটকানো যাচ্ছে না। আর এই যে অবাধে মাদক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেটিও একেবারেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই না পারার পেছনে কারণ কী? তাও এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এমনকি প্রকাশ্যেও এসেছে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে মাদকের এই করাল এবং ভয়াবহতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। মাদকের বিষাক্ত ছোঁবল কীভাবে একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি এনে দাঁড় করাতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ফিলিপাইন। মাদকের প্রভাবে সে দেশে যুবসমাজ একেবারেই তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান প্রেসিডেন্ট রুদ্রিগেজ দুতের্তে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে বাধ্য হন। যার হাতে মাদক পাওয়া যাবে, হোক সে মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেবী, তাকেই গুলির নির্দেশ দেন তিনি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গুলি করায় মাদকের ব্যবহার থিতু হয়ে এসেছে। মাদক কেবল সড়ক পথে আসছে এই ধারণার বিপরীতে চমকে ওঠার মতো একটি সংবাদ মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে। সেখানে আকাশ পথে মাদক আনা-নেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আর এ অপকর্মের সাথে সরকারিভাবে পরিচালিত বিমানের কর্মচারীদের একটি অসাধু অংশ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরা ভাড়ায় মাদক পরিবহনের মতো নোংরা কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। বিষয়টি যে ভয়াবহ এবং জাতির জন্য উদ্বেগের তাও প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে অনুধাবন করা যায়। আর এই কাজে সক্রিয় আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের ক্রু এবং কর্মচারীরা। সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদে মাদকসহ বাংলাদেশ বিমানের দুইজন ক্রুকে আটক করেছে সেদেশের পুলিশ। বিমান ক্রু আটকের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জাতির ভাবমূর্তি যে বিনষ্ট হয়েছে, এটি আলোচনা না করলেও স্পষ্ট। জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজে নিজেদের সোপর্দ করেন, তখন আমাদের লজ্জা ঢাকার জায়গা অবশিষ্ট থাকে কি? কিন্তু সেটিই হয়েছে এবং হচ্ছে। আকাশ পথে মাদক পাচারে অনেকটা নিরাপদ ভেবেই বিমানের এসব দুর্নীতিবাজদের ব্যবহার করছে মাদকচক্র। এই কাজে তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি নিরাপদে মাদক পৌঁছানোর পর তাদের বিপুল অঙ্কের বখশিশও দেওয়া হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের আশীর্বাদপুষ্ট। এরা যেমন নিজেদের স্বার্থে যে কাউকে হত্যা বা খুন করে লাশ গায়েব করতে পারে তেমনি যে কাউকে ধনী করতেও এদের জুড়ি নেই। পার্থিব এসব লাভের কারণে লোভের বশবর্তী হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এই লোভ এবং লালসাকে রুখতে পারে একমাত্র দেশপ্রেম। আমাদের বিমান কর্মচারীদের মধ্যে সেই দেশপ্রেমের অভাব থাকায় অতি সহজেই তারা বিক্রি হচ্ছেন। যাদের আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ করার কথা তাদের ভিতরেও দেশপ্রেমের ঘাটতি এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোভের নিগড়ে তারাও বন্দি হওয়ায় আইন প্রয়োগে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব বাধা অপসারণে দেশপ্রেমের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মাদকের এই অবাধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আইনের আরো কঠোর বাস্তবায়ন দাবি করি। আকাশ, সড়ক এবং নৌপথসহ সকল পথে সরকারি বাহিনীর আরো কড়া নজদারির দাবি জানাই। একই সাথে মাদকের বিষয়ে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে যারা গড়িমসি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার কথা সরকারকে ভাবতে অনুরোধ জানাই। মাদকমুক্ত জাতি গঠনে যা যা করা দরকার সরকার এবং প্রশাসন তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকারের মাদকবিরোধী যেকোনো কর্মকান্ডে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে সরকারকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাদকে যুবশক্তির অপমৃত্যু; জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন হোক

আপলোড টাইম : ০৯:২০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল ২০১৮

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় দেশবাসী চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। নিজ সন্তান এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠা এখন তাড়া করে ফিরছে। সন্তান বাড়ির বাইরে গেলেই তার জন্য চিন্তায় অভিভাবকদের ঘুম হারাম হতে বসেছে। ইদানিং এই মাদকের যথেচ্ছ ব্যবহার সুস্থ জাতি গঠনে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে যা অনস্বীকার্য। আর দুশ্চিন্তার বড় কারণ, আমাদের সম্ভাবনাময় যুবশক্তির অপমৃত্যু। বিশ্বে একমাত্র দেশÑ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, যেখানে সবচেয়ে বেশি যুবশক্তি বসবাস করে। যারা দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে সহায়ক শক্তি। কিন্তু সেই যুবসমাজ আজ মাদকের করাল গ্রাসে পতিত হয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎই শুধু নয় নষ্ট করছে জাতিগঠনের একমাত্র শক্তি। মাদক নিয়ে দেশের মিডিয়া যেমন সোচ্চার তেমনি সরকারও এই বিষয়ে চোখবুজে নেই। সরকার বিভিন্ন সময়ে আইন করে এই মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে বহুবিধ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। মাদকের ব্যবহার এবং তা বিক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে সরকার আইন পাস করেছে। তারপরও মাদক বেচা-কেনা এবং গ্রহণকারীদের আটকানো যাচ্ছে না। আর এই যে অবাধে মাদক সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেটিও একেবারেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এই না পারার পেছনে কারণ কী? তাও এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এমনকি প্রকাশ্যেও এসেছে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে মাদকের এই করাল এবং ভয়াবহতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে একই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। মাদকের বিষাক্ত ছোঁবল কীভাবে একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখোমুখি এনে দাঁড় করাতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ফিলিপাইন। মাদকের প্রভাবে সে দেশে যুবসমাজ একেবারেই তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় রাষ্ট্রপ্রধান প্রেসিডেন্ট রুদ্রিগেজ দুতের্তে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে বাধ্য হন। যার হাতে মাদক পাওয়া যাবে, হোক সে মাদক ব্যবসায়ী কিংবা সেবী, তাকেই গুলির নির্দেশ দেন তিনি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গুলি করায় মাদকের ব্যবহার থিতু হয়ে এসেছে। মাদক কেবল সড়ক পথে আসছে এই ধারণার বিপরীতে চমকে ওঠার মতো একটি সংবাদ মিডিয়ায় ছাপা হয়েছে। সেখানে আকাশ পথে মাদক আনা-নেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আর এ অপকর্মের সাথে সরকারিভাবে পরিচালিত বিমানের কর্মচারীদের একটি অসাধু অংশ জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এরা ভাড়ায় মাদক পরিবহনের মতো নোংরা কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে। বিষয়টি যে ভয়াবহ এবং জাতির জন্য উদ্বেগের তাও প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে অনুধাবন করা যায়। আর এই কাজে সক্রিয় আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের ক্রু এবং কর্মচারীরা। সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদে মাদকসহ বাংলাদেশ বিমানের দুইজন ক্রুকে আটক করেছে সেদেশের পুলিশ। বিমান ক্রু আটকের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জাতির ভাবমূর্তি যে বিনষ্ট হয়েছে, এটি আলোচনা না করলেও স্পষ্ট। জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজে নিজেদের সোপর্দ করেন, তখন আমাদের লজ্জা ঢাকার জায়গা অবশিষ্ট থাকে কি? কিন্তু সেটিই হয়েছে এবং হচ্ছে। আকাশ পথে মাদক পাচারে অনেকটা নিরাপদ ভেবেই বিমানের এসব দুর্নীতিবাজদের ব্যবহার করছে মাদকচক্র। এই কাজে তাদের বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি নিরাপদে মাদক পৌঁছানোর পর তাদের বিপুল অঙ্কের বখশিশও দেওয়া হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের আশীর্বাদপুষ্ট। এরা যেমন নিজেদের স্বার্থে যে কাউকে হত্যা বা খুন করে লাশ গায়েব করতে পারে তেমনি যে কাউকে ধনী করতেও এদের জুড়ি নেই। পার্থিব এসব লাভের কারণে লোভের বশবর্তী হয়ে তাদের ফাঁদে পা দেওয়া অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। এই লোভ এবং লালসাকে রুখতে পারে একমাত্র দেশপ্রেম। আমাদের বিমান কর্মচারীদের মধ্যে সেই দেশপ্রেমের অভাব থাকায় অতি সহজেই তারা বিক্রি হচ্ছেন। যাদের আইনের কড়াকড়ি প্রয়োগ করার কথা তাদের ভিতরেও দেশপ্রেমের ঘাটতি এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোভের নিগড়ে তারাও বন্দি হওয়ায় আইন প্রয়োগে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব বাধা অপসারণে দেশপ্রেমের শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা মাদকের এই অবাধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আইনের আরো কঠোর বাস্তবায়ন দাবি করি। আকাশ, সড়ক এবং নৌপথসহ সকল পথে সরকারি বাহিনীর আরো কড়া নজদারির দাবি জানাই। একই সাথে মাদকের বিষয়ে সরকার ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়নে যারা গড়িমসি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার কথা সরকারকে ভাবতে অনুরোধ জানাই। মাদকমুক্ত জাতি গঠনে যা যা করা দরকার সরকার এবং প্রশাসন তা করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সরকারের মাদকবিরোধী যেকোনো কর্মকান্ডে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে সরকারকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই।