ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাদকের গডফাদারদের মৃত্যুদণ্ড প্রস্তাব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ মে ২০১৮
  • / ৩৪০ বার পড়া হয়েছে

আইন সংশোধনের উদ্যোগ : ইয়াবা ব্যবসার অপরাধের মামলা হবে জামিন অযোগ্য
বন্দুকযুদ্ধে’ আরো ১১ জন নিহত : সারাদেশে গ্রেফতার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক: যদি কেউ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করেন অথবা ‘গডফাদার বা মূলহোতা’ হিসেবে প্রমাণিত হন, সেই ক্ষেত্রে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়ার বিধান রেখে বিদ্যমান আইন’ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সম্প্রতি প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র আরও জানায়, আইনি দুর্বলতার কারণে মাদকের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তদন্তের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যমান আইনে এই অপরাধের শাস্তিও স্বল্পমেয়াদি ও জামিনযোগ্য। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হলেও অনায়াসেই ছাড়া পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটেছে ইয়াবাসহ মাদকের ব্যবসা। এর ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জঙ্গি দমনের মতো মাদকের সঙ্গে জড়িতদের দমন করতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পর দেশব্যাপী চলছে পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান। দীর্ঘ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে গ্রেফতার ছিলো প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিলো ১১ জন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রণীত হয়েছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, যা ২০০৪ সালে সংশোধন করা হয়। এরপর প্রায় ১৪ বছর চলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। কিন্তু আইনটি রয়ে গেছে আগের মতোই। তাই বর্তমান বাস্তবতায় সেই পুরনো আইনে নতুন করে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন-২০১৮’ শিরানামে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় মাদকের খুচরা বিক্রেতা বা ডিলার ছাড়াও গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টি অর্ন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় মূল অপরাধীর সহযোগী হিসেবে তাদেরও আসামি করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে।
সেক্ষেত্রে তাদেরও (গডফাদার) শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ-। সেই সঙ্গে রয়েছে অর্থদ- বা উভয় দ-। কেউ যদি যাবজ্জীবন কারাদ- ভোগ করে বা জামিনে ছাড়া পেয়ে একই অপরাধে পুনরায় দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায়ও তাকে আগের মতো দ- ভোগ করতে হবে।
মাদকদ্যব্য নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইনের খসড়ায় ভয়াবহ মাদক ‘ইয়াবা’র আইনগত নাম ‘এ্যামফিটামিন’ (কোড নাম) হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি নাম। এতে ইয়াবা ব্যবসায়ী বা অন্তরালের গডফাদারদের বিচার করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে কাউকে ৫ গ্রাম ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হলে বা তার হেফাজত থেকে ৫ গ্রাম ইয়াবা উদ্ধার হলে তাকে সর্বনিম্ন ৬ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছরের সাজা দেয়ার বিধান রাখা আছে।
আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যদি মাদকের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০০ গ্রাম হয়, সেক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির সর্বনি¤œ শাস্তি ১ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর এবং এর সঙ্গে অর্থদ- হবে। যদি ১০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে হয় এবং ২০০ গ্রামের নিচে হয় তাহলে সর্বনি¤œ শাস্তি ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর ও এর সঙ্গে অর্থদ-। আর মাদকের পরিমাণ যদি ২০০ গ্রামের বেশি হয় তাহলে জড়িত অপরাধীর ক্ষেত্রে সাজার বিধান মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ- করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ায় ‘ক’ শ্রেণীর মাদক হিসেবে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, আফিম ও কোকেনকে নির্দিষ্ট করে এই মাদকের সঙ্গে জড়িতদের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদ-ের শাস্তির সুপারিশের পাশাপাশি আসামির জামিন অযোগ্য হবে। খসরায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সময় না দিয়ে অপরাধীর জামিন দেয়া যাবে না।’ নতুন আইনে ‘ক’ শ্রেণীর ভয়ংকর মাদক ‘ইয়াবা’ ২ গ্রাম পেলেও আসামির জামিন অযোগ্য হবে।
এদিকে সারাদেশে আড়াই লাখ মাদকের মামলা বিচারাধীন আছে উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও ইন্টেলিজেন্স) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার বলেন, সাক্ষীর অভাবে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। পুলিশ সাক্ষীরা অবসরে গেলে আর সাক্ষ্য দিতে আসতে চান না। আর পাবলিক সাক্ষীরা অনেক সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তিসহ আসামিদের সাজার হার কমে যাচ্ছে। আইনে সংশোধনী আনার পাশাপাশি আদালতে মামলা নিষ্পত্তির দিকেও নজর দেয়া উচিত। কেন সাক্ষী আসছে না তার কারণ বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার আছে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাদকের গডফাদারদের মৃত্যুদণ্ড প্রস্তাব

আপলোড টাইম : ০৬:০২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ মে ২০১৮

আইন সংশোধনের উদ্যোগ : ইয়াবা ব্যবসার অপরাধের মামলা হবে জামিন অযোগ্য
বন্দুকযুদ্ধে’ আরো ১১ জন নিহত : সারাদেশে গ্রেফতার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক: যদি কেউ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করেন অথবা ‘গডফাদার বা মূলহোতা’ হিসেবে প্রমাণিত হন, সেই ক্ষেত্রে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়ার বিধান রেখে বিদ্যমান আইন’ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। সম্প্রতি প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। সূত্র আরও জানায়, আইনি দুর্বলতার কারণে মাদকের গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তদন্তের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যমান আইনে এই অপরাধের শাস্তিও স্বল্পমেয়াদি ও জামিনযোগ্য। ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হলেও অনায়াসেই ছাড়া পেয়ে ফের একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এতে সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটেছে ইয়াবাসহ মাদকের ব্যবসা। এর ভয়াবহতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জঙ্গি দমনের মতো মাদকের সঙ্গে জড়িতদের দমন করতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পর দেশব্যাপী চলছে পুলিশ ও র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান। দীর্ঘ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত সারাদেশে গ্রেফতার ছিলো প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ছিলো ১১ জন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইনে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রণীত হয়েছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, যা ২০০৪ সালে সংশোধন করা হয়। এরপর প্রায় ১৪ বছর চলে গেছে। এই সময়ের মধ্যে মাদকের তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। কিন্তু আইনটি রয়ে গেছে আগের মতোই। তাই বর্তমান বাস্তবতায় সেই পুরনো আইনে নতুন করে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।
‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইন-২০১৮’ শিরানামে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় মাদকের খুচরা বিক্রেতা বা ডিলার ছাড়াও গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টি অর্ন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলায় মূল অপরাধীর সহযোগী হিসেবে তাদেরও আসামি করে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে।
সেক্ষেত্রে তাদেরও (গডফাদার) শাস্তির প্রস্তাব করা হয়েছে মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ-। সেই সঙ্গে রয়েছে অর্থদ- বা উভয় দ-। কেউ যদি যাবজ্জীবন কারাদ- ভোগ করে বা জামিনে ছাড়া পেয়ে একই অপরাধে পুনরায় দোষী সাব্যস্ত হন, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায়ও তাকে আগের মতো দ- ভোগ করতে হবে।
মাদকদ্যব্য নিয়ন্ত্রণ সংশোধন আইনের খসড়ায় ভয়াবহ মাদক ‘ইয়াবা’র আইনগত নাম ‘এ্যামফিটামিন’ (কোড নাম) হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি নাম। এতে ইয়াবা ব্যবসায়ী বা অন্তরালের গডফাদারদের বিচার করতে আর কোনো বাধা থাকবে না। বিদ্যমান আইনে এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে কাউকে ৫ গ্রাম ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হলে বা তার হেফাজত থেকে ৫ গ্রাম ইয়াবা উদ্ধার হলে তাকে সর্বনিম্ন ৬ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৫ বছরের সাজা দেয়ার বিধান রাখা আছে।
আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, যদি মাদকের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ১০০ গ্রাম হয়, সেক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির সর্বনি¤œ শাস্তি ১ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর এবং এর সঙ্গে অর্থদ- হবে। যদি ১০০ গ্রামের ঊর্ধ্বে হয় এবং ২০০ গ্রামের নিচে হয় তাহলে সর্বনি¤œ শাস্তি ৫ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর ও এর সঙ্গে অর্থদ-। আর মাদকের পরিমাণ যদি ২০০ গ্রামের বেশি হয় তাহলে জড়িত অপরাধীর ক্ষেত্রে সাজার বিধান মৃত্যুদ- ও যাবজ্জীবন কারাদ- করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
খসড়ায় ‘ক’ শ্রেণীর মাদক হিসেবে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, আফিম ও কোকেনকে নির্দিষ্ট করে এই মাদকের সঙ্গে জড়িতদের যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদ-ের শাস্তির সুপারিশের পাশাপাশি আসামির জামিন অযোগ্য হবে। খসরায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রপক্ষকে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সময় না দিয়ে অপরাধীর জামিন দেয়া যাবে না।’ নতুন আইনে ‘ক’ শ্রেণীর ভয়ংকর মাদক ‘ইয়াবা’ ২ গ্রাম পেলেও আসামির জামিন অযোগ্য হবে।
এদিকে সারাদেশে আড়াই লাখ মাদকের মামলা বিচারাধীন আছে উল্লেখ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও ইন্টেলিজেন্স) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ গতকাল শনিবার বলেন, সাক্ষীর অভাবে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। পুলিশ সাক্ষীরা অবসরে গেলে আর সাক্ষ্য দিতে আসতে চান না। আর পাবলিক সাক্ষীরা অনেক সময় নিরাপত্তাজনিত কারণে সাক্ষ্য দিতে আসেন না। এ কারণে মামলা নিষ্পত্তিসহ আসামিদের সাজার হার কমে যাচ্ছে। আইনে সংশোধনী আনার পাশাপাশি আদালতে মামলা নিষ্পত্তির দিকেও নজর দেয়া উচিত। কেন সাক্ষী আসছে না তার কারণ বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার আছে মন্তব্য করেন তিনি।