ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ ও কোমর ঘিরে চলছে মৎস্য শিকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৩১:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৩৯৩ বার পড়া হয়েছে

মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ ও কোমর ঘিরে চলছে মৎস্য শিকার
পানির গতিরোধে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ
আওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল: চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র মাথাভাঙ্গা নদীর খরস্রোত সংকটে পড়েছে। নদীটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও কোমর দেয়ার ফলে ¯্রােতকে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। সরকার যখন শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশের নদীগুলোর হারানো যৌবন ফেরাতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র নদী মাথাভাঙ্গায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবাধে মাছ শিকার করছে একশ্রেনীর অর্থলোভী মানুষ। যার ফলে ¯্রােত বাধাগ্রস্থ হয়ে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। প্রতিবছরই খরার মৌসুমে এ ধরনের  ঘটনা ঘটিয়ে চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই। বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলেই শুধুমাত্র তখনই সাময়িক ভাবে দৌড়ঝাপ শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা এ সময় দায়সারা গোছের কিছু পদক্ষেপ নিলেও অদৃশ্য সুতোর টানে এসব বাঁধ বা কোমর অপসারনের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কিছু বিবেকহীন মানুষের নানাবিধ অত্যাচারে নদীটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এক শ্রেনির মানুষ প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় বিভিন্ন নামধারী দলীয় লোকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নদীতে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবাধে মাছ শিকার করছে। এর ফলে পানির ¯্রােত বাধাগ্রস্থ হয়ে অনবরত পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। এছাড়া মানুষ নদীর বিভিন্ন স্থানে দুই ধারের মাটি কেটে সমান করে নানারকম ফসলের আবাদ করছে। ফলে নদীর দুই পাশের আলগা মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এক সময় পরিনত হবে মরা নদীতে তারপর দামুড়হুদা তথা চুয়াডাঙ্গার মানচিত্র থেকে হয়ত হারিয়ে যাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দামুড়হুদার রঘুনাথপুর থেকে শ্যামপুর পাইপঘাট পর্যন্ত নদীতে দর্শনা শ্যামপুর পাইপঘাট, সুবলপুর বাঁকে, গোবিন্দপুর ও রূদ্রনগর গ্রামের মাঝে ফকির বাগানের নীচে, গাজীর দোয়া ও জিরাট গ্রামের নীচে একটিসহ অসংখ্য স্থানে কোমর ঘেরা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের রঘু হালদার ও গনো হালদার, অর্জুন হালদার, কালু হালদার, সুবল হালদার,বদে হালদার, ভম্বল হালদারসহ বেশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবৈধভাবে মাছ শিকার  করছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দলীয় লোকজনকে বিশেষ ব্যাবস্থায় ম্যানেজ করেই তারা মাছ শিকার করে।  এছাড়াও একাধিক অভিযোগ আছে, এসব কোমরে যা মাছ ধরা পড়ে তার একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দলীয় নামধারী নেতাদের বাসায় নিয়মিত পাঠানো হয়। নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বা নদীর ¯্রােত বাধাগ্রস্থ করে মাছ শিকার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও মাথাভাঙ্গা নদীতে অবাধে চলছে মাছ শিকার। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার ইতোপূর্বে বলেছিলেন, আমি নিজে গিয়ে বাঁধ ও কোমর তুলে দিয়েছিলাম এবং অনেককে সেসময় নোটিশও দেওয়া হয়েছে। অসুবিধা হলো এসব তুলে দেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে আবার নুতন করে বাঁধ বা কোমর দেয়। আর এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার বাঁধ দেয়। তবে বিভিন্ন স্থানে যে কোমর দেওয়া আছে সেটাও ক্ষতিকর। বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে যেভাবে মাছ শিকার করে তাতে একেবারে ছোট মাছও ধরা পড়ে। তাই এভাবে মাছ ধরলে মাছের বংশ নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে আমি সরেজমিনে গিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় কোমর দেওয়া আছে দেখেছি। এগুলো তোলার পদক্ষেপ নিব। তারপরও যদি না হয়, তাহলে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কোমর তোলার ব্যবস্থা করব। সচেতনমহল মনে করেন, অনতিবিলম্বে স্থায়ীভাবে কোমর ও বাঁধ অপসারন, নদী খনন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়া হলে হয়ত আর কয়েক দশকে দামুড়হুদার মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে মাথাভাঙ্গা নামের এ ঐতিহ্যবাহী নদীটি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ ও কোমর ঘিরে চলছে মৎস্য শিকার

আপলোড টাইম : ০৫:৩১:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

মাথাভাঙ্গা নদীতে বাঁধ ও কোমর ঘিরে চলছে মৎস্য শিকার
পানির গতিরোধে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ
আওয়াল হোসেন/ওয়াসিম রয়েল: চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র মাথাভাঙ্গা নদীর খরস্রোত সংকটে পড়েছে। নদীটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও কোমর দেয়ার ফলে ¯্রােতকে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। সরকার যখন শত শত কোটি টাকা খরচ করে দেশের নদীগুলোর হারানো যৌবন ফেরাতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র নদী মাথাভাঙ্গায় আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবাধে মাছ শিকার করছে একশ্রেনীর অর্থলোভী মানুষ। যার ফলে ¯্রােত বাধাগ্রস্থ হয়ে পলি পড়ে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ। প্রতিবছরই খরার মৌসুমে এ ধরনের  ঘটনা ঘটিয়ে চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই। বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলেই শুধুমাত্র তখনই সাময়িক ভাবে দৌড়ঝাপ শুরু হয়। সংশ্লিষ্টরা এ সময় দায়সারা গোছের কিছু পদক্ষেপ নিলেও অদৃশ্য সুতোর টানে এসব বাঁধ বা কোমর অপসারনের স্থায়ী কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কিছু বিবেকহীন মানুষের নানাবিধ অত্যাচারে নদীটি আজ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদীর পানি কমে যাওয়ায় এক শ্রেনির মানুষ প্রশাসনের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারি ও স্থানীয় বিভিন্ন নামধারী দলীয় লোকদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে নদীতে আড়াআড়ি ভাবে বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবাধে মাছ শিকার করছে। এর ফলে পানির ¯্রােত বাধাগ্রস্থ হয়ে অনবরত পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। এছাড়া মানুষ নদীর বিভিন্ন স্থানে দুই ধারের মাটি কেটে সমান করে নানারকম ফসলের আবাদ করছে। ফলে নদীর দুই পাশের আলগা মাটি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নদীটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এক সময় পরিনত হবে মরা নদীতে তারপর দামুড়হুদা তথা চুয়াডাঙ্গার মানচিত্র থেকে হয়ত হারিয়ে যাবে। সরেজমিনে দেখা গেছে, দামুড়হুদার রঘুনাথপুর থেকে শ্যামপুর পাইপঘাট পর্যন্ত নদীতে দর্শনা শ্যামপুর পাইপঘাট, সুবলপুর বাঁকে, গোবিন্দপুর ও রূদ্রনগর গ্রামের মাঝে ফকির বাগানের নীচে, গাজীর দোয়া ও জিরাট গ্রামের নীচে একটিসহ অসংখ্য স্থানে কোমর ঘেরা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের রঘু হালদার ও গনো হালদার, অর্জুন হালদার, কালু হালদার, সুবল হালদার,বদে হালদার, ভম্বল হালদারসহ বেশ কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে অবৈধভাবে মাছ শিকার  করছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দলীয় লোকজনকে বিশেষ ব্যাবস্থায় ম্যানেজ করেই তারা মাছ শিকার করে।  এছাড়াও একাধিক অভিযোগ আছে, এসব কোমরে যা মাছ ধরা পড়ে তার একটি অংশ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় দলীয় নামধারী নেতাদের বাসায় নিয়মিত পাঠানো হয়। নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে বা নদীর ¯্রােত বাধাগ্রস্থ করে মাছ শিকার আইনগতভাবে নিষিদ্ধ হলেও মাথাভাঙ্গা নদীতে অবাধে চলছে মাছ শিকার। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার সরকার ইতোপূর্বে বলেছিলেন, আমি নিজে গিয়ে বাঁধ ও কোমর তুলে দিয়েছিলাম এবং অনেককে সেসময় নোটিশও দেওয়া হয়েছে। অসুবিধা হলো এসব তুলে দেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে আবার নুতন করে বাঁধ বা কোমর দেয়। আর এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার বাঁধ দেয়। তবে বিভিন্ন স্থানে যে কোমর দেওয়া আছে সেটাও ক্ষতিকর। বাঁধ দিয়ে ও কোমর ঘিরে যেভাবে মাছ শিকার করে তাতে একেবারে ছোট মাছও ধরা পড়ে। তাই এভাবে মাছ ধরলে মাছের বংশ নষ্ট হয়। ইতোমধ্যে আমি সরেজমিনে গিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় কোমর দেওয়া আছে দেখেছি। এগুলো তোলার পদক্ষেপ নিব। তারপরও যদি না হয়, তাহলে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে কোমর তোলার ব্যবস্থা করব। সচেতনমহল মনে করেন, অনতিবিলম্বে স্থায়ীভাবে কোমর ও বাঁধ অপসারন, নদী খনন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা না নেয়া হলে হয়ত আর কয়েক দশকে দামুড়হুদার মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে মাথাভাঙ্গা নামের এ ঐতিহ্যবাহী নদীটি।