ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাঠ সাজাচ্ছে পুলিশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৪৩০ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ সাজাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে শুরু করে থানা এমনকি ফাঁড়ি পুলিশে এর আঁচ পড়েছে। ‘আমলনামা’ দেখে চলছে কর্মস্থল অদল বদল। এমনকি যেসব স্থানে নির্ধারিতের চেয়ে কম পুলিশ রয়েছে সেসব ঘাটতি মেটানোর কাজও চলছে। বিশেষ করে ‘দলকানা’- এমন সদস্যদের ব্যাপারে বাড়তি নজরদারি করছে সদর দপ্তর। নির্বাচন ঘিরে যেসব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব ও ছায়া সমর্থনের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় দেশের যেসব জেলা ও উপজেলায় সহিংসতা হয়েছিল সেগুলোকে চিহ্নিত করে পুলিশ ওই এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয় তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পদোন্নতি ও পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছে সদর দপ্তর।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটেয়ারী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের মাঠ সাজানোর কোনো বিষয় থাকে না। পুলিশ সবসময়ই মাঠে থাকে, জনগণের জন্য কাজ করে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে বেশকিছু বাড়তি সতর্কতা নিতে হয়। এজন্য সবরকম কাজ চলছে। কিছু স্থানে অদল বদল করা হচ্ছে। পুলিশের রদবদলকে রুটিনওয়ার্ক হিসেবে মন্তব্য করে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পুলিশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপকর্ম বা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ পুলিশ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রযুক্তিসম্পন্ন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্যায় বা অপরাধ করে আইনের হাত থেকে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ মাঠের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। প্রয়োজনীয় জনবলের পাশপাশি অস্ত্র, গুলি, টিয়ারশেল মজুদ রয়েছে। সবকটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সদর দপ্তর থেকে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), এএসপি সার্কেল, জেলা ও মডেল থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি এবং ডিআইজিদের আমলনামা পর্যালোচনা করেই দেয়া হচ্ছে পোস্টিং। এরমধ্যে ৩৩৫ সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে তা হবে পুলিশের জন্য যুগান্তকারী। এ ছাড়া, সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) প্রশিক্ষণ শেষে ভোটের আগে মাঠে নামতে না পারলেও কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে হলেও তাদের পরিবার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মাঠে থাকবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, বর্তমান সরকার পুলিশে জনবল বৃদ্ধিসহ যেসব সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বাহিনী তুষ্ট হওয়ার কথা। এরপরও যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় অসন্তুষ্ট তাদের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সদর দপ্তর। বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব জেলায় সহিংসতা হয়েছিল সেসব জেলার ব্যাপারে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সদর দপ্তর। এরমধ্যে জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ অন্তত ২০টি জেলাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
সূত্র মতে, নির্বাচনের কারণে আটকে আছে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি। সুপারনিউমারারি হয়ে গেলে ভোটের পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি সবকটি জেলার কর্মকর্তাদের ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করেছে সদর দপ্তর। এরপর রদবদল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মহানগর ও জেলার জনবল সমন্বয় করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় পুলিশ সুপাররা জেলা প্রশাসক ও নিজ জেলার অন্তর্গত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করবেন। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ ও র‌্যাব বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাঠ সাজাচ্ছে পুলিশ

আপলোড টাইম : ১০:৪৩:০৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ সাজাচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে শুরু করে থানা এমনকি ফাঁড়ি পুলিশে এর আঁচ পড়েছে। ‘আমলনামা’ দেখে চলছে কর্মস্থল অদল বদল। এমনকি যেসব স্থানে নির্ধারিতের চেয়ে কম পুলিশ রয়েছে সেসব ঘাটতি মেটানোর কাজও চলছে। বিশেষ করে ‘দলকানা’- এমন সদস্যদের ব্যাপারে বাড়তি নজরদারি করছে সদর দপ্তর। নির্বাচন ঘিরে যেসব এলাকায় সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে কিংবা অঘটনের আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে পুলিশের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাব ও ছায়া সমর্থনের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় দেশের যেসব জেলা ও উপজেলায় সহিংসতা হয়েছিল সেগুলোকে চিহ্নিত করে পুলিশ ওই এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয় তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ, পদোন্নতি ও পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শেষে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছে সদর দপ্তর।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটেয়ারী বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের মাঠ সাজানোর কোনো বিষয় থাকে না। পুলিশ সবসময়ই মাঠে থাকে, জনগণের জন্য কাজ করে। তবে নির্বাচনকে ঘিরে বেশকিছু বাড়তি সতর্কতা নিতে হয়। এজন্য সবরকম কাজ চলছে। কিছু স্থানে অদল বদল করা হচ্ছে। পুলিশের রদবদলকে রুটিনওয়ার্ক হিসেবে মন্তব্য করে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পুলিশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপকর্ম বা অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। বাংলাদেশ পুলিশ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং প্রযুক্তিসম্পন্ন মন্তব্য করে তিনি বলেন, অন্যায় বা অপরাধ করে আইনের হাত থেকে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নেই।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশ মাঠের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। প্রয়োজনীয় জনবলের পাশপাশি অস্ত্র, গুলি, টিয়ারশেল মজুদ রয়েছে। সবকটি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সদর দপ্তর থেকে। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর), এএসপি সার্কেল, জেলা ও মডেল থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি এবং ডিআইজিদের আমলনামা পর্যালোচনা করেই দেয়া হচ্ছে পোস্টিং। এরমধ্যে ৩৩৫ সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ) প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে তা হবে পুলিশের জন্য যুগান্তকারী। এ ছাড়া, সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া দুই হাজার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) প্রশিক্ষণ শেষে ভোটের আগে মাঠে নামতে না পারলেও কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে হলেও তাদের পরিবার সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় মাঠে থাকবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন, বর্তমান সরকার পুলিশে জনবল বৃদ্ধিসহ যেসব সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বাহিনী তুষ্ট হওয়ার কথা। এরপরও যারা রাজনৈতিক বিবেচনায় অসন্তুষ্ট তাদের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে সদর দপ্তর। বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব জেলায় সহিংসতা হয়েছিল সেসব জেলার ব্যাপারে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে সদর দপ্তর। এরমধ্যে জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ অন্তত ২০টি জেলাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
সূত্র মতে, নির্বাচনের কারণে আটকে আছে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি। সুপারনিউমারারি হয়ে গেলে ভোটের পর এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে বিভিন্ন জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পাশাপাশি সবকটি জেলার কর্মকর্তাদের ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করেছে সদর দপ্তর। এরপর রদবদল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সব মহানগর ও জেলার জনবল সমন্বয় করা হচ্ছে। নির্বাচনের সময় পুলিশ সুপাররা জেলা প্রশাসক ও নিজ জেলার অন্তর্গত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা-উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করবেন। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে পুলিশ ও র‌্যাব বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে।