ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাঠের মানুষের শেষ বিদায় হবে মাঠেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯
  • / ২২০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার সাবেক ফুটবলার টিটি সাবু জোয়ার্দ্দারের ইন্তেকাল
বিশেষ প্রতিবেদক:
‘মনে হয় আমার মাঠে যাওয়া হবে না, তবে ওই মাঠেই যেন আমার জানাজা হয়’ এক সময়ের মাঠ কাপানো ফুটবলারের শেষ কথা যদি হয় এমন, তবে তাঁর বিদায় বেলায় মাঠের মানুষ তথা ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তবুও বিদায় জানাতে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ফুটবল অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র বর্ষিয়ান ফুটবলার, সাবেক রেল কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দীন জোয়ার্দ্দার সাবুকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে এ ক্ষণজন্মা ফুটবল তারকার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী মনোয়ারা আশরাফ, তিন ছেলে কাকন, পাপন, সুমন ও দুই মেয়ে রীমা, সীমা, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, খেলার সঙ্গীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাবু জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মরহুম সালেহউদ্দিন আহমেদ জোয়ার্দ্দার ও মরহুমা খোদেজা খাতুনের সাত ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। তাই তাঁকে আদর করে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষরা ছোট মিয়া বলেই ডাকতেন।
তবে তিনি বার্ধক্যে এসেও চলাফেরা ও খাওয়া দাওয়ার কোনো সমস্যায় পড়েননি। নিজের কাজ নিজেই সব সময় করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু গত আগস্ট মাসে অসাবধানতাবশত ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে তাঁর বাম পায়ের হাড় ভেঙে যায়। ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা ভালোও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁকে বিছানায় শুয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তার। সেই থেকে বিছানায় কাটত তাঁর সময়। গত শনিবারে ছেলে সুমন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আব্বা শীতকাল তো চলে এলো, এবার মাঠে যাবেন তো।’ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এবার কি মাঠে যেতে পারব!।’ এ কথা বলে কয়েক মিনিট পরেই তিনি বলেন, ‘আর মনে হয় আমার মাঠে যাওয়া হবে না গো!’ এটিই ছিল ছেলেদের সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট ভাষায় শেষ কথা। কিন্তু বার্ধক্যে এসে পরিবারের সদস্যদের বলতেন, ‘এ টাউন ফুটবল মাঠে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি আমি। মাঠটি পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠে রুপান্তর করতে সবার সঙ্গে আমাকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাই আমি মারা গেলে এ মাঠেই যেন আমার জানাজা পড়ানো হয়। মাঠের মানুষ তো, তাই মাঠ থেকেই বিদায় নিতে চাই।’ মৃত্যুর আগ মূহুর্তেও তিনি কী যেন বলতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু বলতে পারেননি। তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এসব কথা জানান সাবু জোয়ার্দ্দারের ছোট ছেলে সুমন।
কৃতী ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন জোয়ার্দ্দার সাবুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এ ছাড়া মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোক জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কৃতী ফুটবলার কানাডা প্রবাসী মামুন জোয়ার্দ্দার, সাবেক কৃতী ফুটবলার মাহমুদুল হক লিটন, কৃতী গোলরক্ষক রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম টিপু, চুয়াডাঙ্গা শুভ সকাল স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মাহাবুল ইসলাম সেলিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি এ নাসির জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা ডিএফএ-এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি ইমরান হোসাইনসহ অনেকে।
এদিকে, যে টাউন ক্লাব ফুটবল মাঠে ফুটবলে হাতে খড়ি হয়েছিল, সে মাঠেই আজ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মরহুমের পরিবার জানিয়েছে, আজ জোহরের নামাজের পর চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জানাজা শেষে বড় মসজিদ-সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাঠের মানুষের শেষ বিদায় হবে মাঠেই

আপলোড টাইম : ০৯:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৯

চুয়াডাঙ্গার সাবেক ফুটবলার টিটি সাবু জোয়ার্দ্দারের ইন্তেকাল
বিশেষ প্রতিবেদক:
‘মনে হয় আমার মাঠে যাওয়া হবে না, তবে ওই মাঠেই যেন আমার জানাজা হয়’ এক সময়ের মাঠ কাপানো ফুটবলারের শেষ কথা যদি হয় এমন, তবে তাঁর বিদায় বেলায় মাঠের মানুষ তথা ক্রীড়াঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তবুও বিদায় জানাতে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ফুটবল অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র বর্ষিয়ান ফুটবলার, সাবেক রেল কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দীন জোয়ার্দ্দার সাবুকে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। মৃত্যুকালে এ ক্ষণজন্মা ফুটবল তারকার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি স্ত্রী মনোয়ারা আশরাফ, তিন ছেলে কাকন, পাপন, সুমন ও দুই মেয়ে রীমা, সীমা, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, খেলার সঙ্গীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সাবু জোয়ার্দ্দার চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মরহুম সালেহউদ্দিন আহমেদ জোয়ার্দ্দার ও মরহুমা খোদেজা খাতুনের সাত ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট। তাই তাঁকে আদর করে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষরা ছোট মিয়া বলেই ডাকতেন।
তবে তিনি বার্ধক্যে এসেও চলাফেরা ও খাওয়া দাওয়ার কোনো সমস্যায় পড়েননি। নিজের কাজ নিজেই সব সময় করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু গত আগস্ট মাসে অসাবধানতাবশত ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে তাঁর বাম পায়ের হাড় ভেঙে যায়। ডাক্তারের নিকট চিকিৎসা নিয়ে অনেকটা ভালোও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তাঁকে বিছানায় শুয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডাক্তার। সেই থেকে বিছানায় কাটত তাঁর সময়। গত শনিবারে ছেলে সুমন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আব্বা শীতকাল তো চলে এলো, এবার মাঠে যাবেন তো।’ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এবার কি মাঠে যেতে পারব!।’ এ কথা বলে কয়েক মিনিট পরেই তিনি বলেন, ‘আর মনে হয় আমার মাঠে যাওয়া হবে না গো!’ এটিই ছিল ছেলেদের সঙ্গে তাঁর স্পষ্ট ভাষায় শেষ কথা। কিন্তু বার্ধক্যে এসে পরিবারের সদস্যদের বলতেন, ‘এ টাউন ফুটবল মাঠে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি আমি। মাঠটি পূর্ণাঙ্গ খেলার মাঠে রুপান্তর করতে সবার সঙ্গে আমাকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তাই আমি মারা গেলে এ মাঠেই যেন আমার জানাজা পড়ানো হয়। মাঠের মানুষ তো, তাই মাঠ থেকেই বিদায় নিতে চাই।’ মৃত্যুর আগ মূহুর্তেও তিনি কী যেন বলতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু বলতে পারেননি। তার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এসব কথা জানান সাবু জোয়ার্দ্দারের ছোট ছেলে সুমন।
কৃতী ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন জোয়ার্দ্দার সাবুর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁর বাড়িতে ছুটে যান এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। এ ছাড়া মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোক জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কৃতী ফুটবলার কানাডা প্রবাসী মামুন জোয়ার্দ্দার, সাবেক কৃতী ফুটবলার মাহমুদুল হক লিটন, কৃতী গোলরক্ষক রবিউল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম টিপু, চুয়াডাঙ্গা শুভ সকাল স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি মাহাবুল ইসলাম সেলিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি এ নাসির জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা ডিএফএ-এর সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সহসভাপতি ইমরান হোসাইনসহ অনেকে।
এদিকে, যে টাউন ক্লাব ফুটবল মাঠে ফুটবলে হাতে খড়ি হয়েছিল, সে মাঠেই আজ তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মরহুমের পরিবার জানিয়েছে, আজ জোহরের নামাজের পর চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জানাজা শেষে বড় মসজিদ-সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হবে।