ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো দৈত্যাকার প্রাণীদের কঙ্কাল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪১:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০
  • / ১২৫ বার পড়া হয়েছে

বিস্ময় প্রতিবেদন
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এক বাণিজ্যিক বিমানবন্দরে নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কর্মীরা নির্ধারিত সময়ে শেষ করার জন্য দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানেই একটি বিল্ডিং তৈরি করার জন্য মাটি খোঁড়া হয়। মাটি খোঁড়ার সময় নির্মাণ কর্মীরা প্রথমে কিছু বড় আকারের হাড়গোড় দেখতে পান। খবর যায় প্রশাসনের কাছে, পরে সেখানে যান বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা দেখেন, এগুলো কোনও বড় পশুর হাড়গোড়। পরে তাঁরা পরীক্ষা করে জানান, এগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ম্যামথের কঙ্কাল। প্রসঙ্গত, প্রাগৈতিহাসিক কালের বৃহৎ স্থলচরদের মধ্যে ম্যামথ ছিল অন্যতম। বর্তমানে আমরা যে হাতি দেখি, এরা তাদেরই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ম্যামথের কম-বেশি কঙ্কাল উদ্ধার হলেও এক সঙ্গে এত কঙ্কাল কোথাও উদ্ধার হয়নি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমেরিকা বা সাইবেরিয়াতেও প্রচুর ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, নির্মাণস্থলের প্রায় ২০০টি জায়গায় মাটির নিচ থেকে ১০০-রও বেশি ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। মেক্সিকোতে ম্যামথ কঙ্কালের যে খনি আবিষ্কার হল, তা এ ক্ষেত্রে আমেরিকা ও সাইবেরিয়াকে পিছনে ফেলে দিল। এটিই এখনও পর্যন্ত ম্যামথ-কঙ্কালের সব থেকে বড় ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াল। তবে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের মধ্যে শুধু যে ম্যামথই রয়েছে তা নয়, সঙ্গে তুষার যুগের আরও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর কঙ্কালও মিলেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ রুবেন মানজানিল্লার নেতৃত্বে এখানে কাজ করছে গবেষকদের একটি দল। তিনিই এক সঙ্গে এত ম্যামথ ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কঙ্কাল পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। রুবেন জানিয়েছেন, প্রায় ২৪ হাজার বছর আগে এই এলাকায় বৃহদাকার পশুগেলো দল বেঁধে এসে পৌঁছয়। এই এলাকার ঘাস অন্যান্য গাছপালা এবং হ্রদের উপস্থিতি তাদের আশ্রয় তৈরি করতে সাহায্য করে। রুবেন ব্যাখ্যা করেছেন, এই জায়গাটি পশুদের কাছে স্বর্গের মতো ছিল। বরফ গলে যাওয়ার পর ম্যামথ ও সেই সঙ্গে প্রাচীন প্রজাতির উট, ঘোড়া, মহিষের মতো প্রাণীরা এখানে বসবাস শুরু করে। তুষার যুগের পর সেখানে বিস্তীর্ণ কর্দমাক্ত এলাকাও সৃষ্টি হয়। কর্দমাক্ত এলাকায় যাতায়াতের ফলে বড় বড় পশুরা কাদা জমিতেও নেমে পড়ত। আর বড় পশুদের ক্ষেত্রে যা হয় সেই গল্পই এখানে পুনরাবৃত্তি হয়েছে, কাদায় নেমে এক প্রকার ফাঁদে পড়ে যায় তারা। আর সেখানেই এক সময় মারা যেতে থাকে। রুবেন জানিয়েছেন, তাঁদের ধারণা ছিল বিশ্বে কোথাও না কোথাও এক সঙ্গে অনেক ম্যামথের কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে তার পরিমাণ যে এত হবে, সেটা তাঁরা কল্পনাও করেননি। এখন বিমানবন্দরটির মূল টার্মিন্যালের কাছে ম্যামথের একটি জাদুঘরের মতো তৈরি করে কঙ্কাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রুবেন। এই বিমানবন্দর তা হলে হয়ে দাঁড়াবে এক অনন্য জায়গা, যেখানে আধুনিক বিমান আর প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথের কঙ্কাল একসঙ্গে অবস্থান করবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো দৈত্যাকার প্রাণীদের কঙ্কাল

আপলোড টাইম : ০৮:৪১:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিস্ময় প্রতিবেদন
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে এক বাণিজ্যিক বিমানবন্দরে নির্মাণ কাজ চলছে। নির্মাণ কর্মীরা নির্ধারিত সময়ে শেষ করার জন্য দ্রুত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানেই একটি বিল্ডিং তৈরি করার জন্য মাটি খোঁড়া হয়। মাটি খোঁড়ার সময় নির্মাণ কর্মীরা প্রথমে কিছু বড় আকারের হাড়গোড় দেখতে পান। খবর যায় প্রশাসনের কাছে, পরে সেখানে যান বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা দেখেন, এগুলো কোনও বড় পশুর হাড়গোড়। পরে তাঁরা পরীক্ষা করে জানান, এগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ম্যামথের কঙ্কাল। প্রসঙ্গত, প্রাগৈতিহাসিক কালের বৃহৎ স্থলচরদের মধ্যে ম্যামথ ছিল অন্যতম। বর্তমানে আমরা যে হাতি দেখি, এরা তাদেরই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পূর্বপুরুষ। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে ম্যামথের কম-বেশি কঙ্কাল উদ্ধার হলেও এক সঙ্গে এত কঙ্কাল কোথাও উদ্ধার হয়নি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমেরিকা বা সাইবেরিয়াতেও প্রচুর ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, নির্মাণস্থলের প্রায় ২০০টি জায়গায় মাটির নিচ থেকে ১০০-রও বেশি ম্যামথের কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে। মেক্সিকোতে ম্যামথ কঙ্কালের যে খনি আবিষ্কার হল, তা এ ক্ষেত্রে আমেরিকা ও সাইবেরিয়াকে পিছনে ফেলে দিল। এটিই এখনও পর্যন্ত ম্যামথ-কঙ্কালের সব থেকে বড় ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াল। তবে উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের মধ্যে শুধু যে ম্যামথই রয়েছে তা নয়, সঙ্গে তুষার যুগের আরও কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর কঙ্কালও মিলেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ রুবেন মানজানিল্লার নেতৃত্বে এখানে কাজ করছে গবেষকদের একটি দল। তিনিই এক সঙ্গে এত ম্যামথ ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কঙ্কাল পাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। রুবেন জানিয়েছেন, প্রায় ২৪ হাজার বছর আগে এই এলাকায় বৃহদাকার পশুগেলো দল বেঁধে এসে পৌঁছয়। এই এলাকার ঘাস অন্যান্য গাছপালা এবং হ্রদের উপস্থিতি তাদের আশ্রয় তৈরি করতে সাহায্য করে। রুবেন ব্যাখ্যা করেছেন, এই জায়গাটি পশুদের কাছে স্বর্গের মতো ছিল। বরফ গলে যাওয়ার পর ম্যামথ ও সেই সঙ্গে প্রাচীন প্রজাতির উট, ঘোড়া, মহিষের মতো প্রাণীরা এখানে বসবাস শুরু করে। তুষার যুগের পর সেখানে বিস্তীর্ণ কর্দমাক্ত এলাকাও সৃষ্টি হয়। কর্দমাক্ত এলাকায় যাতায়াতের ফলে বড় বড় পশুরা কাদা জমিতেও নেমে পড়ত। আর বড় পশুদের ক্ষেত্রে যা হয় সেই গল্পই এখানে পুনরাবৃত্তি হয়েছে, কাদায় নেমে এক প্রকার ফাঁদে পড়ে যায় তারা। আর সেখানেই এক সময় মারা যেতে থাকে। রুবেন জানিয়েছেন, তাঁদের ধারণা ছিল বিশ্বে কোথাও না কোথাও এক সঙ্গে অনেক ম্যামথের কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে তার পরিমাণ যে এত হবে, সেটা তাঁরা কল্পনাও করেননি। এখন বিমানবন্দরটির মূল টার্মিন্যালের কাছে ম্যামথের একটি জাদুঘরের মতো তৈরি করে কঙ্কাল প্রদর্শনীর ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রুবেন। এই বিমানবন্দর তা হলে হয়ে দাঁড়াবে এক অনন্য জায়গা, যেখানে আধুনিক বিমান আর প্রাগৈতিহাসিক ম্যামথের কঙ্কাল একসঙ্গে অবস্থান করবে।