ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাটির স্তুপে ধস : চাপা পড়ে দু’শ্রমিকের করুণ মৃত্যু!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৮:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯
  • / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

দামুড়হুদার জয়রামপুরস্থ শেখ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ : তদন্ত কমিটি গঠন

প্রতিবেদক, দামুড়হুদা:দামুড়হুদায় ইটভাটার মাটি চাপা পড়ে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শ্রমিক। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসী শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিহত দুই শ্রমিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ এশা নিজ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভাটা বন্ধ করে দেয়াসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি। নিহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার নতুন বাস্তুপুর গ্রামের ইউনুচ আলীর ছেলে (কেশবপুরের ঘরজামাই) বাবু মিয়া (৩৫) এবং একই উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মৃত কালাচাঁদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল হান্নান (৪২)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দামুড়হুদার জয়রামপুর শেখপাড়াস্থ শেখ ব্রিক্স নামক ইটভাটায় ওই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইটভাটা শ্রমিক ইকরামুল হক জানান, প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাটায় জমাকৃত মাটি কাটা হচ্ছিল। মোট ৫ জন শ্রমিক ওই মাটি কাটার কাজ করছিল। সোহেল ও আরিফ নামের দু’জন শ্রমিক মাটির স্তুপের উপরে উঠে গোজ মেরে মাটি চাবলা নিচে ফেলার চেষ্টা করছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আকষ্মিক ওপর থেকে বড় একটি মাটির চাবলা ভেঙ্গে পড়ে এবং ওই ভেঙ্গে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে দুই শ্রমিক বাবু ও হান্নান। তাদের মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা নাফিস সুলতানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস ও পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম)। পরিদর্শন শেষে ইটভাটাবন্ধসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন ঘটনাটি তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস। বিকালে নিহত দুই শ্রমিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। সন্ধ্যায় নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের কাছে জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে ১৫ হাজার করে মোট ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন দামুড়হুদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন।
এদিকে, নিহত দুই শ্রমিকের লাশ নিজ গ্রাম কেশবপুরে পৌঁছালে স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় নিহত বাবুর মরদেহ তার নিজ গ্রামে নতুন বাস্তুপুরে দাফনের জন্য নেয়া হয়। দুই সন্তানের জনক নিহত বাবু কেশবপুরে শশুরবাড়ি দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করতেন। ৫ সন্তানের জনক নিহত আব্দুল হান্নান ছিলেন ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে সকলের ছোট।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাটির স্তুপে ধস : চাপা পড়ে দু’শ্রমিকের করুণ মৃত্যু!

আপলোড টাইম : ১০:৩৮:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

দামুড়হুদার জয়রামপুরস্থ শেখ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ : তদন্ত কমিটি গঠন

প্রতিবেদক, দামুড়হুদা:দামুড়হুদায় ইটভাটার মাটি চাপা পড়ে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও এক শ্রমিক। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসী শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিহত দুই শ্রমিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ এশা নিজ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ভাটা বন্ধ করে দেয়াসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ ঘটনায় গঠন করা হয়েছে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি। নিহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার নতুন বাস্তুপুর গ্রামের ইউনুচ আলীর ছেলে (কেশবপুরের ঘরজামাই) বাবু মিয়া (৩৫) এবং একই উপজেলার কেশবপুর গ্রামের মৃত কালাচাঁদ মন্ডলের ছেলে আব্দুল হান্নান (৪২)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দামুড়হুদার জয়রামপুর শেখপাড়াস্থ শেখ ব্রিক্স নামক ইটভাটায় ওই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইটভাটা শ্রমিক ইকরামুল হক জানান, প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভাটায় জমাকৃত মাটি কাটা হচ্ছিল। মোট ৫ জন শ্রমিক ওই মাটি কাটার কাজ করছিল। সোহেল ও আরিফ নামের দু’জন শ্রমিক মাটির স্তুপের উপরে উঠে গোজ মেরে মাটি চাবলা নিচে ফেলার চেষ্টা করছিল। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আকষ্মিক ওপর থেকে বড় একটি মাটির চাবলা ভেঙ্গে পড়ে এবং ওই ভেঙ্গে পড়া মাটির নিচে চাপা পড়ে দুই শ্রমিক বাবু ও হান্নান। তাদের মূমুর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হাসান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দা নাফিস সুলতানা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস ও পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান (পিপিএম)। পরিদর্শন শেষে ইটভাটাবন্ধসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন ঘটনাটি তদন্তের জন্য ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস। বিকালে নিহত দুই শ্রমিকের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। সন্ধ্যায় নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের কাছে জেলা প্রশাসকের তহবিল থেকে ১৫ হাজার করে মোট ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন দামুড়হুদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন।
এদিকে, নিহত দুই শ্রমিকের লাশ নিজ গ্রাম কেশবপুরে পৌঁছালে স্বজনদের কাঁন্না আর আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় নিহত বাবুর মরদেহ তার নিজ গ্রামে নতুন বাস্তুপুরে দাফনের জন্য নেয়া হয়। দুই সন্তানের জনক নিহত বাবু কেশবপুরে শশুরবাড়ি দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর যাবত ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করতেন। ৫ সন্তানের জনক নিহত আব্দুল হান্নান ছিলেন ৬ ভাই ৪ বোনের মধ্যে সকলের ছোট।
দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।