ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মাইক্রোবাসের যাত্রী নারী-শিশুসহ ৮ জন গুরতর আহত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৭:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯
  • / ১৯১ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা-জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষ
ওয়াসিম রয়েল:
দর্শনা-জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের রেলক্রসিংয়ে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন ও মাইক্রোবাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, এ দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক, নারী-শিশুসহ আটজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ছয়জন। আহত ব্যক্তিরা হলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার গাংনী ষোলটেকা গ্রামের শের আলীর দুই ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৫) ও মঈনাল রহমান (৪২), বজলুল রহমানের স্ত্রী নাছিমা খাতুন (৪৫), আজিজুল হকের ছেলে হেলু (৫৫), আব্দুল মালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২২), আব্দুল হান্নানের দুই কন্যাশিশু ইয়ামিন (৭) ও ফাতেমা (৭) এবং মাইক্রোবাসের চালক একই গ্রামের মঈন উদ্দীনের ছেলে মিজানুর রহমান (২২)। দুই শিশুর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় বাকি ছয়জনের মধ্যে চালকসহ চারজনকে বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ সময় এলাকাবাসী জানান, দর্শনা-জয়নগর চেকপোস্টের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অরক্ষিত রেলক্রসিংই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার ষোলটেকা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম তাঁর খালু মঈনালের সঙ্গে ১৫ দিন আগে মরণব্যাধি ক্যানসার রোগের চিকিৎসা নিতে যান ভারতের ঠাকুর পুকুর ক্যানসার হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভারতের গেদে জয়নগর সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তাঁরা। এ সময় রোগীকে নিতে আসেন একই পরিবারের বজলুল রহমানের স্ত্রী নাছিমা খাতুন (৪৫), আজিজুল হকের ছেলে হেলু (৫৫), আব্দুল হান্নানের দুই কন্যাশিশু ইয়ামিন (৭) ও ফাতেমা (৭) এবং মাইক্রোবাসের চালক একই গ্রামের মঈন উদ্দীনের ছেলে মিজানুর রহমান (২২)। পাসপোর্ট-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নিজ বাড়ি মেহেরপুর গাংনীর উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। এ সময় দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দর থেকে একটি ভারতীয় মালবাহী ট্রেন মালামাল আনলোড করে দ্রুত ভারতের দিকে ফিরছিল। পথের মধ্যে ট্রেনটি রেলক্রসিংয়ের অদূরে বাঁশির সংকেত দিলেও মাইক্রোবাসের চালকের অসাবধানতায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা মেট্রো চ ৫১-৪৩২২ নম্বরের ওই মাইক্রোবাসটির ধাক্কা লাগে। এরপর মাইক্রোবাসটি পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে দর্শনা আইসিপি চেকপোস্টের বিজিবি সদস্যরা ও স্থানীয়রা তাঁদের মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার করে বিজিবির একটি গাড়িতে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শামীমা ইয়াসমিন ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় আহতদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, মঈনাল রহমান ও নাছিমা খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সবশেষে মাইক্রোবাসের চালক মিজানুর রহমানকে রাতেই রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক আহতদের দেখতে ছুটে আসেন হাসপাতালে।
ডা. এহসানুল হক তন্ময় জানান, ‘আহতদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, মঈনাল রহমান ও নাছিমা খাতুনের আঘাত গুরুত্বর। তাঁদের বুকের হাড় ভাঙাসহ শরীরে অভ্যন্তরীণ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, এ জন্য তাঁদের রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও ভারতীয় মালবাহী ট্রেনটি সংকেত দিয়েছিল, কিন্তু মাইক্রোবাসের চালক ট্রেনটির সংকেত খেয়াল না করে রেলক্রসিং পার হতে গেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এ রেলক্রসিংটি শুরু থেকেই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এখানে দুই দিকে দুটি বাঁশ রয়েছে, কিন্তু রেলওয়ের কোনো গেটম্যান নেই। দিনের বেলায় ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রেন ভারত থেকে আসা-যাওয়া করে থাকে। এ সময় স্থানীয় ভ্যানচালক ও দোকানদারেরা বাঁশ ফেলে রেলওয়ের গেটম্যানের দায়িক্ত পালন করেন।
এ বিষয়ে দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মীর লিয়াকত আলী জানান, ‘এ বিষয়টি আমার বিভাগের নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং-বিষয়ক বিভাগের। তবে আমি রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে এ দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ পদক্ষেপ নিতে পারে।’
এ বিষয়ে দর্শনা-জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন আফিসার রাশেদুজ্জামান জানান, এ আন্তর্জাতিক রেলক্রসিংটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত। রেলওয়ে বিভাগ যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আজ চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টম পুুলিশ ও আইসিপি চেকপোস্টের বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনে রেলক্রসিংয়ে একটি লোক রাখার ব্যবস্থা করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মাইক্রোবাসের যাত্রী নারী-শিশুসহ ৮ জন গুরতর আহত

আপলোড টাইম : ০৯:৪৭:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৯

দর্শনা-জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন-মাইক্রোবাস সংঘর্ষ
ওয়াসিম রয়েল:
দর্শনা-জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের রেলক্রসিংয়ে ভারতীয় মালবাহী ট্রেন ও মাইক্রোবাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, এ দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের চালক, নারী-শিশুসহ আটজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন ছয়জন। আহত ব্যক্তিরা হলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার গাংনী ষোলটেকা গ্রামের শের আলীর দুই ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৫) ও মঈনাল রহমান (৪২), বজলুল রহমানের স্ত্রী নাছিমা খাতুন (৪৫), আজিজুল হকের ছেলে হেলু (৫৫), আব্দুল মালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম (২২), আব্দুল হান্নানের দুই কন্যাশিশু ইয়ামিন (৭) ও ফাতেমা (৭) এবং মাইক্রোবাসের চালক একই গ্রামের মঈন উদ্দীনের ছেলে মিজানুর রহমান (২২)। দুই শিশুর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত হওয়ায় বাকি ছয়জনের মধ্যে চালকসহ চারজনকে বিভিন্ন বিভাগীয় হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
এ সময় এলাকাবাসী জানান, দর্শনা-জয়নগর চেকপোস্টের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অরক্ষিত রেলক্রসিংই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ। জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার ষোলটেকা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে তরিকুল ইসলাম তাঁর খালু মঈনালের সঙ্গে ১৫ দিন আগে মরণব্যাধি ক্যানসার রোগের চিকিৎসা নিতে যান ভারতের ঠাকুর পুকুর ক্যানসার হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ভারতের গেদে জয়নগর সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তাঁরা। এ সময় রোগীকে নিতে আসেন একই পরিবারের বজলুল রহমানের স্ত্রী নাছিমা খাতুন (৪৫), আজিজুল হকের ছেলে হেলু (৫৫), আব্দুল হান্নানের দুই কন্যাশিশু ইয়ামিন (৭) ও ফাতেমা (৭) এবং মাইক্রোবাসের চালক একই গ্রামের মঈন উদ্দীনের ছেলে মিজানুর রহমান (২২)। পাসপোর্ট-সংক্রান্ত সব কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নিজ বাড়ি মেহেরপুর গাংনীর উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। এ সময় দর্শনা আন্তর্জাতিক রেল বন্দর থেকে একটি ভারতীয় মালবাহী ট্রেন মালামাল আনলোড করে দ্রুত ভারতের দিকে ফিরছিল। পথের মধ্যে ট্রেনটি রেলক্রসিংয়ের অদূরে বাঁশির সংকেত দিলেও মাইক্রোবাসের চালকের অসাবধানতায় মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে ঢাকা মেট্রো চ ৫১-৪৩২২ নম্বরের ওই মাইক্রোবাসটির ধাক্কা লাগে। এরপর মাইক্রোবাসটি পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। পরে দর্শনা আইসিপি চেকপোস্টের বিজিবি সদস্যরা ও স্থানীয়রা তাঁদের মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার করে বিজিবির একটি গাড়িতে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শামীমা ইয়াসমিন ও হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামীম কবির আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রাখেন। পরবর্তীতে হাসপাতালের জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় আহতদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, মঈনাল রহমান ও নাছিমা খাতুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সবশেষে মাইক্রোবাসের চালক মিজানুর রহমানকে রাতেই রাজশাহী মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির পরিচালক আহতদের দেখতে ছুটে আসেন হাসপাতালে।
ডা. এহসানুল হক তন্ময় জানান, ‘আহতদের মধ্যে আব্দুল হান্নান, মঈনাল রহমান ও নাছিমা খাতুনের আঘাত গুরুত্বর। তাঁদের বুকের হাড় ভাঙাসহ শরীরে অভ্যন্তরীণ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন, এ জন্য তাঁদের রাজশাহী অথবা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের ন্যায় গতকালও ভারতীয় মালবাহী ট্রেনটি সংকেত দিয়েছিল, কিন্তু মাইক্রোবাসের চালক ট্রেনটির সংকেত খেয়াল না করে রেলক্রসিং পার হতে গেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এ রেলক্রসিংটি শুরু থেকেই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এখানে দুই দিকে দুটি বাঁশ রয়েছে, কিন্তু রেলওয়ের কোনো গেটম্যান নেই। দিনের বেলায় ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রেন ভারত থেকে আসা-যাওয়া করে থাকে। এ সময় স্থানীয় ভ্যানচালক ও দোকানদারেরা বাঁশ ফেলে রেলওয়ের গেটম্যানের দায়িক্ত পালন করেন।
এ বিষয়ে দর্শনা আন্তর্জাতিক স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মীর লিয়াকত আলী জানান, ‘এ বিষয়টি আমার বিভাগের নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং-বিষয়ক বিভাগের। তবে আমি রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে এ দুর্ঘটনার কথা জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট বিভাগ পদক্ষেপ নিতে পারে।’
এ বিষয়ে দর্শনা-জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন আফিসার রাশেদুজ্জামান জানান, এ আন্তর্জাতিক রেলক্রসিংটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত। রেলওয়ে বিভাগ যদি কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে আজ চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টম পুুলিশ ও আইসিপি চেকপোস্টের বিজিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনে রেলক্রসিংয়ে একটি লোক রাখার ব্যবস্থা করা হবে।