ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মমতার বিকল্প প্রস্তাবে ‘মমতা’ নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:৪৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০১৭
  • / ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বললেন, তাঁকে না জানিয়ে মনোমোহন সিংয়ের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করেছিল বলে তিনি তাতে সায় দেননি। ২০১১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতেও রাজি হননি। ওই সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অন্য সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এসেছিলেন। সেটাই ছিল প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের যে নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল, তা প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছেন। এটি নিঃসন্দেহে ভারতের উদ্বেগ কমিয়েছে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের যে উদ্বেগ, তা সেই অবস্থায়ই রয়ে গেছে। ২০১১ সালে মমতার কারণে তিস্তার চুক্তি এবং বিজেপির বিরোধিতায় স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে যায়। পরে অবশ্য ক্ষমতায় এসে বিজেপি স্থলসীমান্ত চুক্তি সংসদে অনুমোদন করে এবং ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। কিন্তু তিস্তার বেলায়ই তিনি একের পর এক ওজর তোলেন। মমতা তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গকে ঠকিয়ে বাংলাদেশকে বেশি ‘জল’ দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘তিস্তায় জলই নেই বাংলাদেশকে দেব কী?’ তাঁর সর্বশেষ বয়ান হলো ‘যেহেতু তিস্তায় জল নেই, সেহেতু বাংলাদেশ বিকল্প উপায়ে জল খুঁজুক। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা খবর দিয়েছে, ‘ভারত ও বাংলাদেশে চলতি সরকারের মেয়াদকালেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সম্পাদন হবে বলে শনিবার দুপুরে আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এরপরেই মধ্যাহ্নভোজের আসরে এবং রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিস্তা নিয়ে জটিলতা কাটাতে মমতা নাকি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘আপনার তো জল দরকার। তোর্সা ও আরও যে দুটি নদী উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গেছে, তার জলের ভাগ ঠিক করতে দুই দেশ কমিটি গড়–ক। শুকনো তিস্তার জল দেওয়াটা সত্যিই সমস্যার।’ তাঁর ভাষায়, ‘আপনাদের তো জল পাওয়া নিয়ে কথা। বাংলাদেশকে জল দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তোর্সা রয়েছে। রয়েছে আরও নদী। সেগুলোর জলের ভাগ নিয়ে সমীক্ষা হোক। সেই জল দিতে রাজ্যের বাধা নেই। বাংলাদেশ জল পাক, সেটা আমিও চাই। এদিন মধ্যাহ্নভোজের সময়েই নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, অন্যান্য আন্তরাষ্ট্রীয় নদীগুলো থেকেও কীভাবে শুকনো মৌসুমে দুই দেশ পানি পেতে পারে, সামগ্রিকভাবে সেটা দেখা দরকার। তাঁর মতে, তোর্সা রয়েছে, উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আরও দুটি নদী ঢুকেছে। এগুলোর পানির ভাগ নিয়ে যৌথ সমীক্ষা করার নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান মমতাকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দ্বারকা স্যুইটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিয়ে যান বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী বালুচরি শাড়ি ও ‘বিশ্ববাংলা’ বিপণি থেকে নানা উপহার। কিন্তু তিস্তার চুক্তিটি তিনি আটকেই রাখলেন। মোদি তাঁর বিবৃতিতে তিস্তা নিয়ে যে আশাবাদের বেলুন উড়িয়েছিলেন, বলা যায় বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সেই বেলুনটিই ফুটো করে দিলেন মমতা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতির নিদর্শন হিসেবে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে বলেছেন। মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেশ্বরী পানি ও বিদ্যুৎকে এক করে ফেলেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ তো পানির বিকল্প নয়। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনে আনছি। আর তিস্তার পানি হলো অধিকার। অভিন্ন নদীর পানির ওপর ভারতের যেমন অধিকার আছে, তেমনি অধিকার আছে বাংলাদেশেরও। ভাটির দেশ বলে চীন, ভারত, নেপাল বা ভুটান অভিন্ন নদীর পানি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারে না। আর মমতা যে তোর্সা, ধানসিঁড়ি ইত্যাদি নদী থেকে বাংলাদেশকে পানি নিতে বলেছেন, সেটি একধরনের ধাপ্পা। কেননা ওসব নদীর ওপর বাঁধ নেই। পানি আসতেও বাধা নেই। তাহলে চুক্তির প্রশ্ন আসবে কেন? মমতার নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে উত্তরাঞ্চলে নদী নিয়ে কাজ করেন, এ রকম একজন গবেষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। জবাবে তিনি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবটি অবাস্তব। কেননা ভারতে যেসব নদীতে বাঁধ নেই, সেসব নদীর পানি বিনা বাধায়ই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব নদীর পানি বাড়লেও তিস্তা অঞ্চলে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিস্তাপারের মানুষও উপকৃত হবে না। তাহলে এই বিকল্প প্রস্তাবের অর্থ কী? মমতা বলে আসছেন, তিস্তায় পানিই নেই, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কীভাবে তিনি পানি দেবেন? তিস্তায় যখন পানিই নেই, তখন চুক্তি করতে আপত্তি কেন? পানি না থাকার কষ্টটা তো ভাগাভাগি করে নিতে পারতেন। তাই মনে হয়, মমতার বিকল্প প্রস্তাবে মমতা নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মমতার বিকল্প প্রস্তাবে ‘মমতা’ নেই

আপলোড টাইম : ০৫:৪৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০১৭

সমীকরণ ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বললেন, তাঁকে না জানিয়ে মনোমোহন সিংয়ের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি চূড়ান্ত করেছিল বলে তিনি তাতে সায় দেননি। ২০১১ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতেও রাজি হননি। ওই সময়ে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অন্য সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা এসেছিলেন। সেটাই ছিল প্রকৃতপক্ষে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতের যে নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল, তা প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছেন। এটি নিঃসন্দেহে ভারতের উদ্বেগ কমিয়েছে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের যে উদ্বেগ, তা সেই অবস্থায়ই রয়ে গেছে। ২০১১ সালে মমতার কারণে তিস্তার চুক্তি এবং বিজেপির বিরোধিতায় স্থলসীমান্ত চুক্তি আটকে যায়। পরে অবশ্য ক্ষমতায় এসে বিজেপি স্থলসীমান্ত চুক্তি সংসদে অনুমোদন করে এবং ৬৮ বছরের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব হতো না। কিন্তু তিস্তার বেলায়ই তিনি একের পর এক ওজর তোলেন। মমতা তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গকে ঠকিয়ে বাংলাদেশকে বেশি ‘জল’ দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে বললেন, ‘তিস্তায় জলই নেই বাংলাদেশকে দেব কী?’ তাঁর সর্বশেষ বয়ান হলো ‘যেহেতু তিস্তায় জল নেই, সেহেতু বাংলাদেশ বিকল্প উপায়ে জল খুঁজুক। কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা খবর দিয়েছে, ‘ভারত ও বাংলাদেশে চলতি সরকারের মেয়াদকালেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সম্পাদন হবে বলে শনিবার দুপুরে আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এরপরেই মধ্যাহ্নভোজের আসরে এবং রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিস্তা নিয়ে জটিলতা কাটাতে মমতা নাকি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘আপনার তো জল দরকার। তোর্সা ও আরও যে দুটি নদী উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গেছে, তার জলের ভাগ ঠিক করতে দুই দেশ কমিটি গড়–ক। শুকনো তিস্তার জল দেওয়াটা সত্যিই সমস্যার।’ তাঁর ভাষায়, ‘আপনাদের তো জল পাওয়া নিয়ে কথা। বাংলাদেশকে জল দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তোর্সা রয়েছে। রয়েছে আরও নদী। সেগুলোর জলের ভাগ নিয়ে সমীক্ষা হোক। সেই জল দিতে রাজ্যের বাধা নেই। বাংলাদেশ জল পাক, সেটা আমিও চাই। এদিন মধ্যাহ্নভোজের সময়েই নাকি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানিয়েছিলেন, অন্যান্য আন্তরাষ্ট্রীয় নদীগুলো থেকেও কীভাবে শুকনো মৌসুমে দুই দেশ পানি পেতে পারে, সামগ্রিকভাবে সেটা দেখা দরকার। তাঁর মতে, তোর্সা রয়েছে, উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আরও দুটি নদী ঢুকেছে। এগুলোর পানির ভাগ নিয়ে যৌথ সমীক্ষা করার নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান মমতাকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দ্বারকা স্যুইটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিয়ে যান বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী বালুচরি শাড়ি ও ‘বিশ্ববাংলা’ বিপণি থেকে নানা উপহার। কিন্তু তিস্তার চুক্তিটি তিনি আটকেই রাখলেন। মোদি তাঁর বিবৃতিতে তিস্তা নিয়ে যে আশাবাদের বেলুন উড়িয়েছিলেন, বলা যায় বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সেই বেলুনটিই ফুটো করে দিলেন মমতা। তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সহানুভূতির নিদর্শন হিসেবে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে বলেছেন। মনে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেশ্বরী পানি ও বিদ্যুৎকে এক করে ফেলেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ তো পানির বিকল্প নয়। আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনে আনছি। আর তিস্তার পানি হলো অধিকার। অভিন্ন নদীর পানির ওপর ভারতের যেমন অধিকার আছে, তেমনি অধিকার আছে বাংলাদেশেরও। ভাটির দেশ বলে চীন, ভারত, নেপাল বা ভুটান অভিন্ন নদীর পানি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারে না। আর মমতা যে তোর্সা, ধানসিঁড়ি ইত্যাদি নদী থেকে বাংলাদেশকে পানি নিতে বলেছেন, সেটি একধরনের ধাপ্পা। কেননা ওসব নদীর ওপর বাঁধ নেই। পানি আসতেও বাধা নেই। তাহলে চুক্তির প্রশ্ন আসবে কেন? মমতার নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে উত্তরাঞ্চলে নদী নিয়ে কাজ করেন, এ রকম একজন গবেষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। জবাবে তিনি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবটি অবাস্তব। কেননা ভারতে যেসব নদীতে বাঁধ নেই, সেসব নদীর পানি বিনা বাধায়ই বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব নদীর পানি বাড়লেও তিস্তা অঞ্চলে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। তিস্তাপারের মানুষও উপকৃত হবে না। তাহলে এই বিকল্প প্রস্তাবের অর্থ কী? মমতা বলে আসছেন, তিস্তায় পানিই নেই, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কীভাবে তিনি পানি দেবেন? তিস্তায় যখন পানিই নেই, তখন চুক্তি করতে আপত্তি কেন? পানি না থাকার কষ্টটা তো ভাগাভাগি করে নিতে পারতেন। তাই মনে হয়, মমতার বিকল্প প্রস্তাবে মমতা নেই।