ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভ্যাকসিন পলিটিক্স

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। প্রার্থনায় সাতশ’ কোটি মানুষ। ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির সবাই এককাতারে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কবে আবার সবকিছু আগের মতো হবে। নির্ভয়ে শ্বাস নেয়া যাবে? সবাই জানেন, একটা ভ্যাকসিনই পারে পরিস্থিতি পাল্টে দিতে। কিন্তু কখন আসবে সেই সময়টা। মানবজাতির জন্য এই ধরনের অপেক্ষা একেবারে অভিনব নয়। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিজ্ঞানীদের এবারকার প্রচেষ্টা সত্যি অভিনব। সম্ভবত, ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য টিকা পেতে চলছে মানুষ। কিন্তু এর আগে ক্ষতির মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সে প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টিকার জাতীয়তাবাদ আর রাজনীতি নিয়ে। ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক বাংলাদেশ সফরে যখন সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয় ভ্যাকসিনের কথা, তখন ভ্যাকসিন রাজনীতি কেইবা অস্বীকার করতে পারে। এর আগে চীনা একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন চেয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ২ শতাধিক করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চলছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে রয়েছে ২৭টি। ১১ই আগস্ট ভøাদিমির পুতিন অনেকটা আচমকাই করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদনের ঘোষণা দেন। নাম দেয়া হয়, স্পুটনিক-৫। এতেই ইঙ্গিত মেলে, শীতল যুদ্ধের দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে নতুন ফরম্যাটে। মহাকাশে স্পুটনিক স্যাটেলাইটের সফল উড্ডয়নের ইতিহাসই নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে রাশিয়া। তবে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জয় ছিল প্রশ্নহীন। এবার রাশিয়ার ঘোষণা এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। পুতিন এমনিতে বিশ্ব রাজনীতির এক ঝানু খেলোয়াড়। গত দশকে গুরুত্বপূর্ণ সব আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে রাশিয়াকে শামিল রেখেছেন তিনি। যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আগে কখনো দেখা যায়নি। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়েও নিজেকে পিছিয়ে রাখতে চাননি। বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে দেখা যায় তখনই রাশিয়াকে জয়ী ঘোষণা করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তার এ টিকা নিয়ে দুনিয়ার সংশয় এখনো কাটছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে সংস্থাটি রাশিয়ার সঙ্গে টিকা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। টিকার কার্যকারিতা প্রমাণে বড়ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই অনুমোদন দেয়া টিকাটি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তা নিয়ে কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অফিস। সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হ্যানস ক্লুগ বলেন, যেকোনো সম্ভাব্য টিকাই ভালো খবর। তবে আমাদের একই রকম কঠোর মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই যেতে হবে।’ ইউরোপ রাশিয়ার টিকা নিয়ে এরই মধ্যে অনাগ্রহ ও সংশয় প্রকাশ করেছে। জার্মানির একজন মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই টিকাকে অনুমোদন দেবে, যে টিকার পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মূল্যায়ন কিছুটা আলাদা। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ান বলয়ের কিছু দেশ এ টিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ ভ্যাকসিনের প্রতি নিজের অগাধ আস্থার কথা জানিয়েছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রগরিগো দুতার্তে। মেক্সিকোও রাশিয়ান ভ্যাকসিন নেয়ার কথা জানিয়েছে।
করোনাকে কেন্দ্র করে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে শুরু থেকেই। ডনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই করোনার জন্য চীনকে দায়ী করে আসছেন। এমনকি এই ভ্যাকসিনকে তিনি বহুবার ‘চায়না ভাইরাস’ বলেছেন। এ নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। করোনার সকাল দায় চীনকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও বলেন তিনি। চীনের পক্ষে কাজ করার কথিত অভিযোগ তুলে তিনি এই সংকটময় সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের এই উত্থানে বিপদ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গেব্রিয়েসিস বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদী আচরণ করা হলে মহামারি মোকাবিলার পথে বাধা তৈরি করবে। কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে তা কুক্ষীগত না রেখে সকলের জন্য ?উন্মুক্ত করে দেয়া হবে সবার জন্য ভালো। তিনি বলেন, বিশ্ব যদি দ্রুত এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে চায়, তবে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ এটি বিশ্বায়নের দুনিয়া। এখানকার অর্থনীতি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের একাংশ কিংবা গুটিকয়েক দেশ একা একা নিজেদেরকে ভাইরাস থেকে মুক্ত ভাবতে পারবে না। টেড্রোস অ্যাডানোম বলেন, মহামারি থেকে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যেকটি দেশকে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ভ্যাকসিন প্রভাব ফেলছে পরাশক্তিগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও। যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩রা নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তাই ডনাল্ড ট্রাম্প এর আগেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসেই বাজারে ভ্যাকসিন আনতে চাচ্ছেন। এতে বড়ধরনের নির্বাচনী সুবিধা পাবেন তিনি। তবে মার্কিন ভ্যাকসিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারণা, নির্বাচনের আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। আবার পর্যাপ্ত পরীক্ষা ছাড়া ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়লেও তাতে সৃষ্টি হতে পারে ব্যাপক সমালোচনা।
ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ আর রাজনীতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিছুটা কম। পৃথিবীর সাতশ’ কোটি মানুষ কীভাবে এই ভ্যাকসিন পাবেন। ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি দেশগুলোকে এখন থেকেই টিকা কর্মসূচি এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসি’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার বিষয়টা খুব সহজ হবে না। কারণ বেশকিছু ধনী দেশ ইতিমধ্যেই ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে চুক্তি করে ফেলেছে, যাতে ম্যাজিক ফর্মূলা পাওয়া গেলেই তাদের সরবরাহ নিশ্চিত হয়ে যায়। গ্যাভি’র প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলছেন, তিনি সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেটা হলো তথাকথিত ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’। ‘আমার মতে সব দেশকে এটা বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করতে হবে- এর একটা কারণ সেটাই হবে ন্যায়সঙ্গত। এছাড়াও এখানে স্বার্থের বিষয়টা জড়িয়ে আছে, সেটার উপরে উঠতে হবে। আপনার প্রতিবেশী দেশগুলো যদি ভাইরাসের খনি হয়, সেখানে যদি প্রচুর ভাইরাস ঘোরাফিরা করে, তাহলে তো আপনি স্বাভাবিক ব্যবসা বাণিজ্য, ভ্রমণ, মানুষের যাতায়াত এসব আবার শুরু করতে পারবেন না। এটা মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। সবাই নিরাপদ না হলে আমিও নিরাপদ নই।’ কোন দেশ আগে টিকা পাবে সে প্রশ্ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর আগে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দু’দিন আগে অথবা পরে টিকা যে পাওয়া যাবে- এ নিয়ে সংশয় নেই বিজ্ঞানীদের। কিন্তু এই টিকা সাতশ’ কোটি মানুষের কাছে সমতার ভিত্তিতে পৌঁছানো যাবে কি-না সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভ্যাকসিন পলিটিক্স

আপলোড টাইম : ১০:৪৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা। প্রার্থনায় সাতশ’ কোটি মানুষ। ধনী-গরিব, বাদশা-ফকির সবাই এককাতারে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, কবে আবার সবকিছু আগের মতো হবে। নির্ভয়ে শ্বাস নেয়া যাবে? সবাই জানেন, একটা ভ্যাকসিনই পারে পরিস্থিতি পাল্টে দিতে। কিন্তু কখন আসবে সেই সময়টা। মানবজাতির জন্য এই ধরনের অপেক্ষা একেবারে অভিনব নয়। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিজ্ঞানীদের এবারকার প্রচেষ্টা সত্যি অভিনব। সম্ভবত, ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য টিকা পেতে চলছে মানুষ। কিন্তু এর আগে ক্ষতির মাত্রা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সে প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে টিকার জাতীয়তাবাদ আর রাজনীতি নিয়ে। ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক বাংলাদেশ সফরে যখন সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয় ভ্যাকসিনের কথা, তখন ভ্যাকসিন রাজনীতি কেইবা অস্বীকার করতে পারে। এর আগে চীনা একটি কোম্পানি বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের অনুমোদন চেয়েছে।
বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ২ শতাধিক করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চলছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে রয়েছে ২৭টি। ১১ই আগস্ট ভøাদিমির পুতিন অনেকটা আচমকাই করোনা ভ্যাকসিন অনুমোদনের ঘোষণা দেন। নাম দেয়া হয়, স্পুটনিক-৫। এতেই ইঙ্গিত মেলে, শীতল যুদ্ধের দিনগুলো আবার ফিরে এসেছে নতুন ফরম্যাটে। মহাকাশে স্পুটনিক স্যাটেলাইটের সফল উড্ডয়নের ইতিহাসই নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে রাশিয়া। তবে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের জয় ছিল প্রশ্নহীন। এবার রাশিয়ার ঘোষণা এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। পুতিন এমনিতে বিশ্ব রাজনীতির এক ঝানু খেলোয়াড়। গত দশকে গুরুত্বপূর্ণ সব আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে রাশিয়াকে শামিল রেখেছেন তিনি। যা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আগে কখনো দেখা যায়নি। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়েও নিজেকে পিছিয়ে রাখতে চাননি। বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে যখন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে দেখা যায় তখনই রাশিয়াকে জয়ী ঘোষণা করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও তার এ টিকা নিয়ে দুনিয়ার সংশয় এখনো কাটছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ টিকার অনুমোদন দেয়নি। তবে সংস্থাটি রাশিয়ার সঙ্গে টিকা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। টিকার কার্যকারিতা প্রমাণে বড়ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই অনুমোদন দেয়া টিকাটি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে, তা নিয়ে কথা বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অফিস। সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হ্যানস ক্লুগ বলেন, যেকোনো সম্ভাব্য টিকাই ভালো খবর। তবে আমাদের একই রকম কঠোর মূল্যায়ন পদ্ধতির মধ্যে দিয়েই যেতে হবে।’ ইউরোপ রাশিয়ার টিকা নিয়ে এরই মধ্যে অনাগ্রহ ও সংশয় প্রকাশ করেছে। জার্মানির একজন মুখপাত্র বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই টিকাকে অনুমোদন দেবে, যে টিকার পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মূল্যায়ন কিছুটা আলাদা। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়ান বলয়ের কিছু দেশ এ টিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ ভ্যাকসিনের প্রতি নিজের অগাধ আস্থার কথা জানিয়েছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রগরিগো দুতার্তে। মেক্সিকোও রাশিয়ান ভ্যাকসিন নেয়ার কথা জানিয়েছে।
করোনাকে কেন্দ্র করে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাকযুদ্ধ চলছে শুরু থেকেই। ডনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই করোনার জন্য চীনকে দায়ী করে আসছেন। এমনকি এই ভ্যাকসিনকে তিনি বহুবার ‘চায়না ভাইরাস’ বলেছেন। এ নিয়ে তার সংবাদ সম্মেলনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। করোনার সকাল দায় চীনকে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথাও বলেন তিনি। চীনের পক্ষে কাজ করার কথিত অভিযোগ তুলে তিনি এই সংকটময় সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন। অন্যদিকে, ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের এই উত্থানে বিপদ দেখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির প্রধান টেড্রোস অ্যাডানোম গেব্রিয়েসিস বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে জাতীয়তাবাদী আচরণ করা হলে মহামারি মোকাবিলার পথে বাধা তৈরি করবে। কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলে তা কুক্ষীগত না রেখে সকলের জন্য ?উন্মুক্ত করে দেয়া হবে সবার জন্য ভালো। তিনি বলেন, বিশ্ব যদি দ্রুত এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হতে চায়, তবে একত্রিতভাবে কাজ করতে হবে। কারণ এটি বিশ্বায়নের দুনিয়া। এখানকার অর্থনীতি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের একাংশ কিংবা গুটিকয়েক দেশ একা একা নিজেদেরকে ভাইরাস থেকে মুক্ত ভাবতে পারবে না। টেড্রোস অ্যাডানোম বলেন, মহামারি থেকে বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। তাই প্রত্যেকটি দেশকে ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদী আচরণ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ভ্যাকসিন প্রভাব ফেলছে পরাশক্তিগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও। যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৩রা নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তাই ডনাল্ড ট্রাম্প এর আগেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসেই বাজারে ভ্যাকসিন আনতে চাচ্ছেন। এতে বড়ধরনের নির্বাচনী সুবিধা পাবেন তিনি। তবে মার্কিন ভ্যাকসিন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ধারণা, নির্বাচনের আগে ভ্যাকসিন বাজারে আসার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। আবার পর্যাপ্ত পরীক্ষা ছাড়া ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়লেও তাতে সৃষ্টি হতে পারে ব্যাপক সমালোচনা।
ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ আর রাজনীতির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিছুটা কম। পৃথিবীর সাতশ’ কোটি মানুষ কীভাবে এই ভ্যাকসিন পাবেন। ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভি দেশগুলোকে এখন থেকেই টিকা কর্মসূচি এবং এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনার আহ্বান জানিয়েছে। বিবিসি’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতার বিষয়টা খুব সহজ হবে না। কারণ বেশকিছু ধনী দেশ ইতিমধ্যেই ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে চুক্তি করে ফেলেছে, যাতে ম্যাজিক ফর্মূলা পাওয়া গেলেই তাদের সরবরাহ নিশ্চিত হয়ে যায়। গ্যাভি’র প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলছেন, তিনি সবচেয়ে বড় যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন, সেটা হলো তথাকথিত ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’। ‘আমার মতে সব দেশকে এটা বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিবেচনা করতে হবে- এর একটা কারণ সেটাই হবে ন্যায়সঙ্গত। এছাড়াও এখানে স্বার্থের বিষয়টা জড়িয়ে আছে, সেটার উপরে উঠতে হবে। আপনার প্রতিবেশী দেশগুলো যদি ভাইরাসের খনি হয়, সেখানে যদি প্রচুর ভাইরাস ঘোরাফিরা করে, তাহলে তো আপনি স্বাভাবিক ব্যবসা বাণিজ্য, ভ্রমণ, মানুষের যাতায়াত এসব আবার শুরু করতে পারবেন না। এটা মাথায় রাখা খুবই প্রয়োজন। সবাই নিরাপদ না হলে আমিও নিরাপদ নই।’ কোন দেশ আগে টিকা পাবে সে প্রশ্ন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর আগে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দু’দিন আগে অথবা পরে টিকা যে পাওয়া যাবে- এ নিয়ে সংশয় নেই বিজ্ঞানীদের। কিন্তু এই টিকা সাতশ’ কোটি মানুষের কাছে সমতার ভিত্তিতে পৌঁছানো যাবে কি-না সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।