ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভোগান্তিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০
  • / ১৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ভোগান্তিতে রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা প্রত্যাশিত সহায়তা পাচ্ছেন না। মিলছে না ব্যাংক ঋণ। পদে পদে হয়রানি তো রয়েছেই। করোনাকালে সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের সংগঠনগুলো বলছে, প্রায় ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর সঙ্গে অতিক্ষুদ্র প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। তবু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করছে অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলছেন, তাদের পুঁজির সংকট চলছে। করোনায় বসে বসে পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন, এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর খুব একটা লেনদেন বা ঋণের সম্পর্ক নেই। সরকার প্রণোদনার সব দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর দিলেও ব্যাংক ঋণ প্রদানে আগ্রহ দেখায় না। এক কথায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ ক্ষুদ্র তারা পাচ্ছে না। কারণ ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের পছন্দ না করলে ঋণ দেবে না। ব্যাংকগুলো সব সময় বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দ করে। তাদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। অথচ সারা দেশের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন আনুমানিক ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মচারী। তথ্যমতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে এ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০০ কোটি টাকা করে মূলধন প্রদান করা হয়েছে। তাদের কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও সেবা, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ইত্যাদি গ্রামের দরিদ্র কৃষক, বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবাদের গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে ব্যাংকগুলো নেই। তারা সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সরকারি ব্যাংকগুলোও ভূমিকা রাখছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসা টিকে না থাকতে পারলে কর্মসংস্থানে ধাক্কা আসবে। নতুন উদ্যোক্তাদেরও সহযোগিতা দিতে হবে। তারা সহযোগিতা না পেলে হতাশ হবেন। এসএমই খাতে নজর দিতে হবে। যদিও দেশের অর্থনীতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। রপ্তানিও স্বাভাবিক হয়েছে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অধিকাংশ ঋণ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অতিক্ষুদ্র অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ভ্যাট নিবন্ধন কিংবা ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি বা বাদাম বিক্রেতা। এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ পুঁজি ২০ হাজার টাকা। এ পুঁজি ৬৬ দিনের লকডাউনে বাসা ভাড়া আর ভরণপোষণে শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের হাতে কোনো পুঁজি নেই। এই অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে দ্রুত ঋণ দিতে হবে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে।’
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বলেন, ‘এসএমই ব্যবসায় টাকার সরবরাহ না হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাঁচবে না, অর্থনীতিও সচল হবে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংকগুলো প্রত্যাশিত সহযোগিতা করছে না। মানছে না সরকারি নির্দেশনাও। তবে দু-একটি ব্যাংক নামমাত্র সহযোগিতা করছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভোগান্তিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

আপলোড টাইম : ১১:৫১:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০২০

সমীকরণ প্রতিবেদন:
ভোগান্তিতে রয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা প্রত্যাশিত সহায়তা পাচ্ছেন না। মিলছে না ব্যাংক ঋণ। পদে পদে হয়রানি তো রয়েছেই। করোনাকালে সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের সংগঠনগুলো বলছে, প্রায় ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এখন পুঁজির সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এর সঙ্গে অতিক্ষুদ্র প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। তবু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করছে অধিকাংশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলছেন, তাদের পুঁজির সংকট চলছে। করোনায় বসে বসে পুঁজি ভেঙে খেয়েছেন, এখন হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের সঙ্গে ব্যাংকগুলোর খুব একটা লেনদেন বা ঋণের সম্পর্ক নেই। সরকার প্রণোদনার সব দায়িত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর দিলেও ব্যাংক ঋণ প্রদানে আগ্রহ দেখায় না। এক কথায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে, করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ ক্ষুদ্র তারা পাচ্ছে না। কারণ ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের পছন্দ না করলে ঋণ দেবে না। ব্যাংকগুলো সব সময় বড় ব্যবসায়ীদের পছন্দ করে। তাদের কোটি কোটি টাকা ঋণ দিলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের কয়েক লাখ টাকা দিতে আগ্রহী নয় ব্যাংকগুলো। অথচ সারা দেশের ক্ষুদ্র পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৭১৬টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন আনুমানিক ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৯২৯ জন কর্মচারী। তথ্যমতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা রেখেছে সরকার। চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) মাধ্যমে এ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০০ কোটি টাকা করে মূলধন প্রদান করা হয়েছে। তাদের কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও সেবা, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প ইত্যাদি গ্রামের দরিদ্র কৃষক, বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবাদের গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলাপ করলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘ছোট ব্যবসায়ীদের পাশে ব্যাংকগুলো নেই। তারা সরকার-ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। সরকারি ব্যাংকগুলোও ভূমিকা রাখছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসা টিকে না থাকতে পারলে কর্মসংস্থানে ধাক্কা আসবে। নতুন উদ্যোক্তাদেরও সহযোগিতা দিতে হবে। তারা সহযোগিতা না পেলে হতাশ হবেন। এসএমই খাতে নজর দিতে হবে। যদিও দেশের অর্থনীতি এখন স্বাভাবিক হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে। রপ্তানিও স্বাভাবিক হয়েছে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ৫৪ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অধিকাংশ ঋণ পাচ্ছেন না। এ ছাড়া অতিক্ষুদ্র অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রায় ৬০ লাখ উদ্যোক্তা রয়েছেন। এদের ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও ভ্যাট নিবন্ধন কিংবা ব্যাংক হিসাব নেই। তাদের কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি বা বাদাম বিক্রেতা। এসব অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তার সর্বোচ্চ পুঁজি ২০ হাজার টাকা। এ পুঁজি ৬৬ দিনের লকডাউনে বাসা ভাড়া আর ভরণপোষণে শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের হাতে কোনো পুঁজি নেই। এই অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁচাতে দ্রুত ঋণ দিতে হবে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে।’
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই)-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ বলেন, ‘এসএমই ব্যবসায় টাকার সরবরাহ না হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বাঁচবে না, অর্থনীতিও সচল হবে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংকগুলো প্রত্যাশিত সহযোগিতা করছে না। মানছে না সরকারি নির্দেশনাও। তবে দু-একটি ব্যাংক নামমাত্র সহযোগিতা করছে।’