ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভুল রিপোর্টের কারণে মারা গেল প্রসুতির গর্ভের সন্তান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭
  • / ১৫৩১ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবননগরের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দেয়া ভুল রিপোর্টের কারণে গর্ভেই মারা গেলো গৃহবধূর সন্তান। ডা. জাহাঙ্গীর আলমের করা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ভূল থাকায় পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মারা গেল গর্ভের সন্তান। এদিকে, সন্তানের মৃত্যুতে জীবননগরের তারিনীবাস গ্রামের হতভাগ্য পিতা মিঠু যেমন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তেমন মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট দেয়ার কারণে ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কর্তপক্ষের বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম করা চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের বিচার দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি। এদিকে, মিঠুর স্ত্রী প্রসুতি সুরাইয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের উপশম নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল রোববার সেখানেই মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। সুরাইয়ার গর্ভের সন্তান আনুমানিক ৫দিন আগেই মারা গেছে বলে ধারণা করছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমনকি আল্টাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সবই ভুল বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুরাইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের তারিনীবাস গ্রামের মিঠুর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুরাইয়া খাতুন গত ২৯ আগস্ট অর্থাৎ প্রায় দু’মাস আগে আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য জীবননগরে যান। জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে সেখানে ডা. জাহাঙ্গীর আলম রোগী সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। ওই দিন অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় দু’মাস আগে করা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে বলা হয়, সুরাইয়ার গর্ভকালের বয়স ২৯ সপ্তাহ ৬দিন, অর্থাৎ ১৮০ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজন ১ কেজি ৩৬০গ্রাম। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয় চলতি বছরের আগামী ৯ নভেম্বর। অবশ্য ৭দিন কমবেশি হওয়ার কথাও ছিলো।
এদিকে, গতকাল রোববার সুরাইয়া খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে গতকাল আবারও তাকে নেয়া হয় জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। গতকালও ডা. জাহাঙ্গীর আলম রোগী সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। গতকালের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, গর্ভকালের বয়স ২৩ সপ্তাহ ৫দিন, অর্থাৎ ১৬৬ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজন ৮৬০গ্রাম। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয়। সন্তান প্রসবের সময় গতকাল থেকে প্রায় চার মাস পর দেয়া হলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে, গর্ভের সন্তান মারা গেছে। প্রায় দু’মাস পর গতকাল রোগীর আল্টাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্টে দেখা যায়, দু’মাসে গর্ভকালের সময় বাড়েনি, বরং দু’সপ্তাহ কমেছে। তবে, সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় বেড়েছে গত দিন দেয়া সময়ের চেয়ে তিন মাসের ঊর্ধ্বে। দু’মাসে গর্ভকালের সময় কমেছে ১৪দিন আর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় পিছিয়েছে ৯৬ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজনও কমেছে ৫০০ গ্রাম। এ রিপোর্ট পেয়ে সুরাইয়ার পরিবারের লোকজন কিছুটা হতভম্ব হয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর খবর তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না। কারণ, দু’মাস আগের আল্ট্রাসনো রিপোর্ট অনুযায়ি ডেলিভারির তারিখ আরও ২০দিন পর। অবশেষে তারা সুরাইয়াকে চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গতকালই সুরাইয়াকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের উপশম নার্সিং হোমে। সেখানে মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সুরাইয়ার আল্টাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সবই ভুল। তার গর্ভের সন্তান আনুমানিক ৫দিন আগে মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সুরাইয়ার স্বামী মিঠু বলেন, যদি এমন পরিস্থিতিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন ভুল রিপোর্ট দেয়, তাহলে রোগিদের কি পরিস্থিতি হবে? তবে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং অনভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগ নির্নয়ের কোন পরিক্ষা করে ভুল রিপোর্ট দিয়ে যেন মানুষের জীবন নষ্ট না করে।
এদিকে, জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে দেখা গেছে, ডা. জাহাঙ্গীর আলম আল্ট্রাসনোগ্রাম করেছেন। তার একটি স্বাক্ষরও রয়েছে। ডা. জাহাঙ্গীর আলমের ডিগ্রী দেয়া রয়েছে ‘ডিএমএফ, সিএমইউ’। একজন ডিএমএফ চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে, অভিযুক্ত মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও ডা. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভুল রিপোর্টের কারণে মারা গেল প্রসুতির গর্ভের সন্তান

আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

জীবননগরের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: জীবননগরের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দেয়া ভুল রিপোর্টের কারণে গর্ভেই মারা গেলো গৃহবধূর সন্তান। ডা. জাহাঙ্গীর আলমের করা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ভূল থাকায় পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মারা গেল গর্ভের সন্তান। এদিকে, সন্তানের মৃত্যুতে জীবননগরের তারিনীবাস গ্রামের হতভাগ্য পিতা মিঠু যেমন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন, তেমন মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ভুল রিপোর্ট দেয়ার কারণে ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের কর্তপক্ষের বিরুদ্ধেও ফুঁসে উঠেছেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম করা চিকিৎসক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকের বিচার দাবি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন তিনি। এদিকে, মিঠুর স্ত্রী প্রসুতি সুরাইয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের উপশম নার্সিং হোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল রোববার সেখানেই মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। সুরাইয়ার গর্ভের সন্তান আনুমানিক ৫দিন আগেই মারা গেছে বলে ধারণা করছেন গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এমনকি আল্টাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সবই ভুল বলে জানিয়েছেন তিনি।
সুরাইয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের তারিনীবাস গ্রামের মিঠুর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুরাইয়া খাতুন গত ২৯ আগস্ট অর্থাৎ প্রায় দু’মাস আগে আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য জীবননগরে যান। জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে সেখানে ডা. জাহাঙ্গীর আলম রোগী সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। ওই দিন অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় দু’মাস আগে করা আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে বলা হয়, সুরাইয়ার গর্ভকালের বয়স ২৯ সপ্তাহ ৬দিন, অর্থাৎ ১৮০ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজন ১ কেজি ৩৬০গ্রাম। সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয় চলতি বছরের আগামী ৯ নভেম্বর। অবশ্য ৭দিন কমবেশি হওয়ার কথাও ছিলো।
এদিকে, গতকাল রোববার সুরাইয়া খাতুনের প্রসব বেদনা উঠলে গতকাল আবারও তাকে নেয়া হয় জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। গতকালও ডা. জাহাঙ্গীর আলম রোগী সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। গতকালের আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, গর্ভকালের বয়স ২৩ সপ্তাহ ৫দিন, অর্থাৎ ১৬৬ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজন ৮৬০গ্রাম। ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ দেয়া হয়। সন্তান প্রসবের সময় গতকাল থেকে প্রায় চার মাস পর দেয়া হলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে, গর্ভের সন্তান মারা গেছে। প্রায় দু’মাস পর গতকাল রোগীর আল্টাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্টে দেখা যায়, দু’মাসে গর্ভকালের সময় বাড়েনি, বরং দু’সপ্তাহ কমেছে। তবে, সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় বেড়েছে গত দিন দেয়া সময়ের চেয়ে তিন মাসের ঊর্ধ্বে। দু’মাসে গর্ভকালের সময় কমেছে ১৪দিন আর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য সময় পিছিয়েছে ৯৬ দিন। গর্ভের সন্তানের ওজনও কমেছে ৫০০ গ্রাম। এ রিপোর্ট পেয়ে সুরাইয়ার পরিবারের লোকজন কিছুটা হতভম্ব হয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর খবর তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলো না। কারণ, দু’মাস আগের আল্ট্রাসনো রিপোর্ট অনুযায়ি ডেলিভারির তারিখ আরও ২০দিন পর। অবশেষে তারা সুরাইয়াকে চুয়াডাঙ্গায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গতকালই সুরাইয়াকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের উপশম নার্সিং হোমে। সেখানে মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গার গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, সুরাইয়ার আল্টাসনোগ্রাফির রিপোর্ট সবই ভুল। তার গর্ভের সন্তান আনুমানিক ৫দিন আগে মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সুরাইয়ার স্বামী মিঠু বলেন, যদি এমন পরিস্থিতিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন ভুল রিপোর্ট দেয়, তাহলে রোগিদের কি পরিস্থিতি হবে? তবে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, ওইসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং অনভিজ্ঞ চিকিৎসক রোগ নির্নয়ের কোন পরিক্ষা করে ভুল রিপোর্ট দিয়ে যেন মানুষের জীবন নষ্ট না করে।
এদিকে, জীবননগর হাসপাতাল রোডের মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুরাইয়ার আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে দেখা গেছে, ডা. জাহাঙ্গীর আলম আল্ট্রাসনোগ্রাম করেছেন। তার একটি স্বাক্ষরও রয়েছে। ডা. জাহাঙ্গীর আলমের ডিগ্রী দেয়া রয়েছে ‘ডিএমএফ, সিএমইউ’। একজন ডিএমএফ চিকিৎসক আলট্রাসনোগ্রাম করতে পারেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে, অভিযুক্ত মহিমা ক্লিনিক এ্যান্ড মিতু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও ডা. জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।