ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ভারতের সাথে কী চুক্তি হয়েছে জানতে চেয়ে বিএনপির চিঠি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯
  • / ২৪৯ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত প্রকাশের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল (রোববার) দুপুর ১২টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া চিঠি গ্রহণ করে বিএনপি নেতাদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আমি আপনাদের চিঠি গ্রহণ করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি সফরে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর আপনাদের চিঠিটি পৌঁছে দেবো। এসময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রধানমন্ত্রীর উপ- প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার এবং সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।
পরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর মহাসচিবের স্বাক্ষর করা চিঠিটি আমরা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে দিয়ে এসেছি। চিঠিটি তারা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি শুধুমাত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়নি এমনকি প্রেসিডেন্টের কাছেও এই ফাইল গেছে কি না এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ কিছু জানে না। কিন্তু সংবিধানের ১৪৫/ক ধারায় এটা সংসদে পেশ করার এবং জানার জনগণের অধিকার রয়েছে। জনগণের সমর্থিত দল হিসেবে বিএনপি এই দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। অবিলম্বে এটা সংসদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা হোক। যাতে এটা পাবলিক ডিসকাশনের ব্যবস্থা হয়। সংসদে প্রতিনিধি আছে সেখানে উত্থাপন না করে এখানে কেন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, জাতীয় সংসদে আমাদের যারা সদস্য আছেন তারা কয়েক দফা এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, নোটিশ দিয়েছেন। তাদের সে নোটিশ গ্রহণ করা হয়নি। কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। আমরা অনন্যপায় হয়ে এখানে চিঠি দিলাম।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া বিএনপির এক পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সৌজন্যে আমরা জানতে পেরেছি যে, আপনি সর্বশেষ ভারত সফরকালে ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ভারতের সাথে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি রফতানি বিষয়সহ ৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে মর্মে প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে এ সফরে ভারতের সাথে সর্বমোট কয়টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সম্পর্কে জনগণ অবহিত নয়।
ইতোমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব চুক্তিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী তথা বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি হিসেবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। অপরদিকে স্বাক্ষরিত এসব চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মর্মে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভারত দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে অথচ ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি উত্তোলনের চুক্তি, বাংলাদেশের উপকূলে ভারতের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সহযোগিতা বিনিময়ের নামে ভারতকে আমাদের উপকূলে রাডার স্থাপনে (কোস্টাল সার্ভেইলেন্স সিস্টেম রাডার) চুক্তি এবং মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মতো স্পর্শকাতর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট চুক্তি সই করার পূর্বে বিষয়টি নিয়ে কখনও কোনো ধরনের পাবলিক ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়নি কিংবা বাংলাদেশের জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৪৫(ক)-তে উল্লেখ আছে যে, ‘বিদেশের সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি প্রেসিডেন্টের নিকট পেশ করা হবে এবং প্রেসিডেন্ট তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার সার্থে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে।’
কিন্তু ভারতের সাথে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো তার কোনোটিই জনসম্মুখে কিংবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণই এ সকল চুক্তির খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। অথচ এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির বিষয়ে অবহিত থাকা জনগণের মৌলিক অধিকার, যে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখা স্পষ্টতঃই সংবিধানের লঙ্ঘন। প্রকৃতপক্ষে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তিগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি।
এমতাবস্থায়, সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৪৫(ক) অনুযায়ী ভারতের সাথে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তির পূর্ণ বিবরণী অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করে জনমনে সৃষ্ট নানাবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ভারতের সাথে কী চুক্তি হয়েছে জানতে চেয়ে বিএনপির চিঠি

আপলোড টাইম : ১০:২৭:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত প্রকাশের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। গতকাল (রোববার) দুপুর ১২টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া চিঠি গ্রহণ করে বিএনপি নেতাদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আমি আপনাদের চিঠি গ্রহণ করলাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরকারি সফরে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পর আপনাদের চিঠিটি পৌঁছে দেবো। এসময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার, প্রধানমন্ত্রীর উপ- প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার এবং সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।
পরে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর মহাসচিবের স্বাক্ষর করা চিঠিটি আমরা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার কাছে দিয়ে এসেছি। চিঠিটি তারা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি শুধুমাত্র জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন। কিন্তু এ সম্পর্কে জাতীয় সংসদে আলোচনা হয়নি এমনকি প্রেসিডেন্টের কাছেও এই ফাইল গেছে কি না এ বিষয়ে সাধারণ জনগণ কিছু জানে না। কিন্তু সংবিধানের ১৪৫/ক ধারায় এটা সংসদে পেশ করার এবং জানার জনগণের অধিকার রয়েছে। জনগণের সমর্থিত দল হিসেবে বিএনপি এই দায়িত্ব পালনে অগ্রসর হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। অবিলম্বে এটা সংসদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা হোক। যাতে এটা পাবলিক ডিসকাশনের ব্যবস্থা হয়। সংসদে প্রতিনিধি আছে সেখানে উত্থাপন না করে এখানে কেন দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, জাতীয় সংসদে আমাদের যারা সদস্য আছেন তারা কয়েক দফা এ ব্যাপারে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, নোটিশ দিয়েছেন। তাদের সে নোটিশ গ্রহণ করা হয়নি। কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। আমরা অনন্যপায় হয়ে এখানে চিঠি দিলাম।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া বিএনপির এক পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সৌজন্যে আমরা জানতে পেরেছি যে, আপনি সর্বশেষ ভারত সফরকালে ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ভারতের সাথে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি রফতানি বিষয়সহ ৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে মর্মে প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে এ সফরে ভারতের সাথে সর্বমোট কয়টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সে সম্পর্কে জনগণ অবহিত নয়।
ইতোমধ্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব চুক্তিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী তথা বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি হিসেবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। অপরদিকে স্বাক্ষরিত এসব চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মর্মে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভারত দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে অথচ ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি উত্তোলনের চুক্তি, বাংলাদেশের উপকূলে ভারতের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সহযোগিতা বিনিময়ের নামে ভারতকে আমাদের উপকূলে রাডার স্থাপনে (কোস্টাল সার্ভেইলেন্স সিস্টেম রাডার) চুক্তি এবং মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মতো স্পর্শকাতর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট চুক্তি সই করার পূর্বে বিষয়টি নিয়ে কখনও কোনো ধরনের পাবলিক ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়নি কিংবা বাংলাদেশের জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৪৫(ক)-তে উল্লেখ আছে যে, ‘বিদেশের সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি প্রেসিডেন্টের নিকট পেশ করা হবে এবং প্রেসিডেন্ট তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার সার্থে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে।’
কিন্তু ভারতের সাথে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো তার কোনোটিই জনসম্মুখে কিংবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণই এ সকল চুক্তির খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। অথচ এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির বিষয়ে অবহিত থাকা জনগণের মৌলিক অধিকার, যে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখা স্পষ্টতঃই সংবিধানের লঙ্ঘন। প্রকৃতপক্ষে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তিগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি।
এমতাবস্থায়, সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৪৫(ক) অনুযায়ী ভারতের সাথে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তির পূর্ণ বিবরণী অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করে জনমনে সৃষ্ট নানাবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি।