ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ব্যাহত লক্ষ্য অর্জন, নতুন মুদ্রানীতিতেও যেন তেমনটি না ঘটে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯
  • / ২৭৭ বার পড়া হয়েছে

চলতি অর্থবছরের ডিসম্বর পর্যন্ত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অর্ধেকের চেয়েও কম হয়েছে। মুদ্রানীতি অর্থনীতিকে খুব একটা প্রভাবান্বিত করতে না পারলেও এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা কাছাকাছি পর্যন্ত যাওয়া যে কোনো অর্থনীতির জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক মুদ্রাস্ফীতিতে টার্গেট ৫ দশমিক ৫ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলেও টাকার প্রবাহ, অভ্যন্তরীর ঋণ, বেসরকারি ঋণ ও সরকারি ঋণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরের কথা, অর্ধেক পর্যন্তও যাওয়া যায়নি। টাকার প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ২-এর স্থলে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ৯ শতাংশের ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বেসরকারি ঋণ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৬৫ ও সরকারি ঋণ ৮ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ অবস্থায় ৩০ জানুয়ারি ঘোষিত হতে যাওয়া মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে যেন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো যায়, তাতে জোর দিতে হবে। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে জোর দেয়া দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, কোন কোন খাতে জোর দেয়া দরকার তা চিহ্নিত করা এবং কী কারণে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয় এবং কাছাকাছি অর্জন হলেই সন্তুষ্ট হয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কাছাকাছি তো দূরের কথা, ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অর্জন করাই সম্ভব হয়নি। ফলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পেছনের সমস্যা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা দরকার। এছাড়া আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের লাগাম ছাড়া পরিস্থিতি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র ইত্যাদি মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হওয়ায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিতে হবে। অবশ্য অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা সমস্যা ও উত্তেজনা নিয়ে কাটাতে হয়েছে। ফলে মুদ্রানীতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। নতুন সরকারের ঘোষিত প্রথম মুদ্রানীতি সে ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন অর্থনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। সত্যিকারার্থে নিজের ঘোষণা বাস্তবায়নে মন্ত্রী আন্তরিক হলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও গোটা আর্থিক খাতে এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। যেহেতু বৈশ্বিকভাবেই অর্থনীতিকে খুব একটা প্রভাবান্বিত করতে পারে না মুদ্রানীতি, সেহেতু অন্য প্রভাবকগুলো যেমন- মানি লন্ডারিং, খেলাপি ঋণ, ঋণ জালিয়াতি ও ব্যাংক অনিয়মের মতো গুরুতর সমস্যাগুলোর সমাধানে বেশি মনোযোগী হতে হবে। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায়, আর্থিক খাত শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অনিয়মমুক্ত হলে এবং অর্থ সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুফল পাওয়া যাবে। সরকার এক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগী হবে, সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে মুদ্রানীতি থেকে নিয়ে আর্থিক বিষয়াবলিতে ইতিবাচক নানা উদ্যোগ নেবে বলে সবার প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ব্যাহত লক্ষ্য অর্জন, নতুন মুদ্রানীতিতেও যেন তেমনটি না ঘটে

আপলোড টাইম : ০৯:২৩:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৯

চলতি অর্থবছরের ডিসম্বর পর্যন্ত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অর্ধেকের চেয়েও কম হয়েছে। মুদ্রানীতি অর্থনীতিকে খুব একটা প্রভাবান্বিত করতে না পারলেও এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা কাছাকাছি পর্যন্ত যাওয়া যে কোনো অর্থনীতির জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এক মুদ্রাস্ফীতিতে টার্গেট ৫ দশমিক ৫ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা গেলেও টাকার প্রবাহ, অভ্যন্তরীর ঋণ, বেসরকারি ঋণ ও সরকারি ঋণের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরের কথা, অর্ধেক পর্যন্তও যাওয়া যায়নি। টাকার প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ২-এর স্থলে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, অভ্যন্তরীণ ঋণ ১৫ দশমিক ৯ শতাংশের ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বেসরকারি ঋণ ১৬ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৫ দশমিক ৬৫ ও সরকারি ঋণ ৮ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ অবস্থায় ৩০ জানুয়ারি ঘোষিত হতে যাওয়া মুদ্রানীতির ক্ষেত্রে যেন পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো যায়, তাতে জোর দিতে হবে। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে জোর দেয়া দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, কোন কোন খাতে জোর দেয়া দরকার তা চিহ্নিত করা এবং কী কারণে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয় এবং কাছাকাছি অর্জন হলেই সন্তুষ্ট হয় নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কাছাকাছি তো দূরের কথা, ডিসেম্বর পর্যন্ত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত অর্জন করাই সম্ভব হয়নি। ফলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পেছনের সমস্যা ও বাধাগুলো খুঁজে বের করা দরকার। এছাড়া আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব, খেলাপি ঋণের লাগাম ছাড়া পরিস্থিতি, অনিয়ম-দুর্নীতি ও ব্যাংকে পরিবারতন্ত্র ইত্যাদি মুদ্রানীতির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হওয়ায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার বিষয়ে জোর দিতে হবে। অবশ্য অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা সমস্যা ও উত্তেজনা নিয়ে কাটাতে হয়েছে। ফলে মুদ্রানীতির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। নতুন সরকারের ঘোষিত প্রথম মুদ্রানীতি সে ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করা যায়। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন অর্থনৈতিক অপরাধের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। সত্যিকারার্থে নিজের ঘোষণা বাস্তবায়নে মন্ত্রী আন্তরিক হলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও গোটা আর্থিক খাতে এর প্রতিফলন দেখা যাবে বলে আমরা আশাবাদী। যেহেতু বৈশ্বিকভাবেই অর্থনীতিকে খুব একটা প্রভাবান্বিত করতে পারে না মুদ্রানীতি, সেহেতু অন্য প্রভাবকগুলো যেমন- মানি লন্ডারিং, খেলাপি ঋণ, ঋণ জালিয়াতি ও ব্যাংক অনিয়মের মতো গুরুতর সমস্যাগুলোর সমাধানে বেশি মনোযোগী হতে হবে। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে একমত হয়ে বলা যায়, আর্থিক খাত শৃঙ্খলাবদ্ধ ও অনিয়মমুক্ত হলে এবং অর্থ সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়মের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সুফল পাওয়া যাবে। সরকার এক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগী হবে, সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে মুদ্রানীতি থেকে নিয়ে আর্থিক বিষয়াবলিতে ইতিবাচক নানা উদ্যোগ নেবে বলে সবার প্রত্যাশা।