ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বেড়েছে শীতজনিত রোগ : জীবননগরে আগুনে ঝলসে আহত ১

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৮
  • / ৪৮০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যেগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
ডেস্ক রিপোর্ট: কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা চলছে। এর মধ্যেই গতকাল সোমবার দেশের ইতিহাসের রেকর্ড সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দিনটি পার হয়ে গেল। এদিন সকাল থেকেই আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসগুলো হতে নিম্ন তাপমাত্রার সংবাদ আসতে থাকে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের মানুষ হিম হয়ে গেছেন শেষ পৌষের জেঁকে বসা শীতে। দরিদ্র, হত দরিদ্র ও ছিন্নমূলের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। মহাসড়ক-সড়ক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারের ভিড় শীতে উবে গেছে। ঘন কুয়াশায় রবি শস্যের বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। ঠান্ডার কারণে লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। ফলে পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারেও থাকতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। ছড়িয়ে পড়ছে শীতজনিত রোগ। পৌষের পরশে শুধু দরিদ্ররাই নয়, শিশু ও বয়স্করাও বেশ বেকায়দায় পড়েছে। তীব্র শীতে সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে শীতের পোশাক। জীবননগরে আগুন তফাতে যেয়ে একজন আহত হয়েছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। গতকাল সোমবার এ জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শীত বাড়ার সাথে সাথে গত ১৫ দিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন জেলা প্রশাসন। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাতেও জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তিনি দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। ইতোমধ্যে জেলায় ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরীভাবে আরো ২০ হাজার কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ জানান, জেলার শীতার্ত মানুষদের দুর্ভোগ লাঘবে সব সময় জেলা প্রশাসন পাশে আছে। এ সময় তিনি সরকারী সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরকেও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমাবার সমাজ সেবা অফিস চত্বরে ৪০৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৭১ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মোট ৪৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাজ সেবা অফিসার আবু তালেব, মৎস অফিসার এজেডএম তৌহিদুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা জেডএম দিদার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুর মোহাম্মদ জকু, অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান, আজিজুল হক সহ মুক্তিযোদ্ধা ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ কথা মনে প্রানে বিশ্বাস রেখে আসুন শীতার্থদের পাশে দাড়ায়। সম্প্রতি রেকর্ড অনুযায়ী সারা দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সবচেয়ে বেশি শীত অনুভুত হওয়ায় সরকারী, বেসরকারী, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তিগতভাবে শীতার্তদের পাশে দাড়িয়েছে। দর্শনা পৌরসভা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পৌর প্রবিণ কমিটির আয়াজনে দর্শনা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ২০০ জন দুস্থ-শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দর্শনা পুরাতন বাজার সোসাইটি চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, তীব্রশীতে দেশের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অসহায় গরীবের স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়েছে বাধাগ্রস্থ। বিশেষ করে এই শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব অসহায়েরা থর থর করে কাঁপছে। আর শীতবস্ত্রের জন্য এ সকল অসহায় মানুষগুলি বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আমাদের সকলের উচিত এসমস্থ অসহায়-দুস্থদের পাশে থাকা। তাই আসুন শীত নিবাড়নের জন্য আমরা প্রবল শীতকে ভাগাভাগি করে নিয়ে অসহায়দের পাসে দাড়াই। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন দর্শনা পৌর প্রবিণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আকমত আলী, দর্শনা পৌর আ. লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, ওয়ার্ড প্রবিণ কমিটির নেতা জাহিদুল ইসলাম, জামিল হোসেন, আব্দুল জব্বার, মহিলা সদস্য হাসিনা বেগম, কাউছার আলী শাহ, হুমায়ন কবির, বীর মুত্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী আনিছুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌরসভার সকল কাউন্সিলরগণ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গগনেরা। আলোচনা শেষে দর্শনা পৌরসভার পক্ষ থেকে ১’শ টি কম্বল ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের দর্শনা পৌর প্রবীণ কমিটির পক্ষ থেকে ৫০টি কম্বল ও ৫০টি চাঁদর ২০০জন শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধো।
জীবননগর অফিস জানিয়েছে, জীবননগরে শীত সহ্য করতে না পেরে আগুন পোহাতে যেয়ে আগুনে ঝলসে একজন গুরুত্বর আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের বকুন্ডিয় গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধার সময় জীবননগর উপজেলার বকুন্ডিয়া গ্রামের কলিমদ্দির ছেলে দিনমজুর মতিয়ার রহমান (৪০) মাঠের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে গোসল করে বাড়ির উঠানে আগুন ধরিয়ে আগুন তফাতে যায়। অসাবধনতার কারনে তার পরনের লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায় এলাকাবাসী ছুটে এসে তার গায়ে পানি ঢেলে আগুন নেভায় এতে তার শরীরের অর্ধেক পুড়ে যায়।এ সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হেলেনা আক্তার নিপা আগুনে পুড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার সন্ধার সময় মতিয়ার নামের একটি ব্যাক্তি আগুনে পোড়া অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শরীরের প্রায় ২০ভাগ আগুনে পুড়ে গেছে তবে আশা করি খুব দ্রুত সুস্থ হবেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে গরীব অসহায় শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে সদর উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক পতœী স্মৃতি রানী সিনহা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। কম্বল বিতরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামিউল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পতœী নাদিরা আহামেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পতœী নুসরাত জাহান জুই প্রমুখ। সদর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ১০০ জন গরীব অসহায় শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে, মেহেরপুর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বশির আহামেদ উপস্থিত থেকে কম্বল বিতরণ করেন। এসময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠানিক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সেখানের উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, পৌষের এই কনকনে শীতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে দুস্থ-অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন অধ্যক্ষ কর্ণেল সাদিকুল বারী পিএসসি। এসময় অধ্যক্ষ কর্ণেল সাদিকুল বারী’র সহধর্মীনি ডা. রেহনুমা আক্তার তমা, এ্যাডজুটেন্ট লে. কমান্ডার আসাদুজ্জামান নুর, মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন আলী জাসিফ রেজওয়ান, কলেজের উপাধ্যাক্ষ রতন কুমার সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে শহরের বিভিন্ন এলাকার ৩’শ শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বেড়েছে শীতজনিত রোগ : জীবননগরে আগুনে ঝলসে আহত ১

আপলোড টাইম : ১২:৪৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০১৮

চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যেগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
ডেস্ক রিপোর্ট: কয়েকদিন ধরেই দেশজুড়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশা চলছে। এর মধ্যেই গতকাল সোমবার দেশের ইতিহাসের রেকর্ড সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দিনটি পার হয়ে গেল। এদিন সকাল থেকেই আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসগুলো হতে নিম্ন তাপমাত্রার সংবাদ আসতে থাকে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ অঞ্চলের মানুষ হিম হয়ে গেছেন শেষ পৌষের জেঁকে বসা শীতে। দরিদ্র, হত দরিদ্র ও ছিন্নমূলের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। মহাসড়ক-সড়ক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারের ভিড় শীতে উবে গেছে। ঘন কুয়াশায় রবি শস্যের বীজতলা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। ঠান্ডার কারণে লোকজন ঘরবন্দি হয়ে পড়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। ফলে পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারেও থাকতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষদের। ছড়িয়ে পড়ছে শীতজনিত রোগ। পৌষের পরশে শুধু দরিদ্ররাই নয়, শিশু ও বয়স্করাও বেশ বেকায়দায় পড়েছে। তীব্র শীতে সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে শীতের পোশাক। জীবননগরে আগুন তফাতে যেয়ে একজন আহত হয়েছে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। গতকাল সোমবার এ জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শীত বাড়ার সাথে সাথে গত ১৫ দিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন জেলা প্রশাসন। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাতেও জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ শহরতলীর বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। এ সময় তিনি দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। ইতোমধ্যে জেলায় ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জরুরীভাবে আরো ২০ হাজার কম্বল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ জানান, জেলার শীতার্ত মানুষদের দুর্ভোগ লাঘবে সব সময় জেলা প্রশাসন পাশে আছে। এ সময় তিনি সরকারী সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরকেও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমাবার সমাজ সেবা অফিস চত্বরে ৪০৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ও ৭১ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মোট ৪৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমাজ সেবা অফিসার আবু তালেব, মৎস অফিসার এজেডএম তৌহিদুর রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা জেডএম দিদার আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুর মোহাম্মদ জকু, অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান, আজিজুল হক সহ মুক্তিযোদ্ধা ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এ কথা মনে প্রানে বিশ্বাস রেখে আসুন শীতার্থদের পাশে দাড়ায়। সম্প্রতি রেকর্ড অনুযায়ী সারা দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলায় সবচেয়ে বেশি শীত অনুভুত হওয়ায় সরকারী, বেসরকারী, বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তিগতভাবে শীতার্তদের পাশে দাড়িয়েছে। দর্শনা পৌরসভা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পৌর প্রবিণ কমিটির আয়াজনে দর্শনা পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের ২০০ জন দুস্থ-শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দর্শনা পুরাতন বাজার সোসাইটি চত্বরে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, তীব্রশীতে দেশের জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। অসহায় গরীবের স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়েছে বাধাগ্রস্থ। বিশেষ করে এই শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব অসহায়েরা থর থর করে কাঁপছে। আর শীতবস্ত্রের জন্য এ সকল অসহায় মানুষগুলি বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। আমাদের সকলের উচিত এসমস্থ অসহায়-দুস্থদের পাশে থাকা। তাই আসুন শীত নিবাড়নের জন্য আমরা প্রবল শীতকে ভাগাভাগি করে নিয়ে অসহায়দের পাসে দাড়াই। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য রাখেন দর্শনা পৌর প্রবিণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী আকমত আলী, দর্শনা পৌর আ. লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, ওয়ার্ড প্রবিণ কমিটির নেতা জাহিদুল ইসলাম, জামিল হোসেন, আব্দুল জব্বার, মহিলা সদস্য হাসিনা বেগম, কাউছার আলী শাহ, হুমায়ন কবির, বীর মুত্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী আনিছুর রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌরসভার সকল কাউন্সিলরগণ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গগনেরা। আলোচনা শেষে দর্শনা পৌরসভার পক্ষ থেকে ১’শ টি কম্বল ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের দর্শনা পৌর প্রবীণ কমিটির পক্ষ থেকে ৫০টি কম্বল ও ৫০টি চাঁদর ২০০জন শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধো।
জীবননগর অফিস জানিয়েছে, জীবননগরে শীত সহ্য করতে না পেরে আগুন পোহাতে যেয়ে আগুনে ঝলসে একজন গুরুত্বর আহত হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের বকুন্ডিয় গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এলাকাবাসী ও পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সন্ধার সময় জীবননগর উপজেলার বকুন্ডিয়া গ্রামের কলিমদ্দির ছেলে দিনমজুর মতিয়ার রহমান (৪০) মাঠের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে গোসল করে বাড়ির উঠানে আগুন ধরিয়ে আগুন তফাতে যায়। অসাবধনতার কারনে তার পরনের লুঙ্গিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। একপর্যায় এলাকাবাসী ছুটে এসে তার গায়ে পানি ঢেলে আগুন নেভায় এতে তার শরীরের অর্ধেক পুড়ে যায়।এ সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হেলেনা আক্তার নিপা আগুনে পুড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার সন্ধার সময় মতিয়ার নামের একটি ব্যাক্তি আগুনে পোড়া অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শরীরের প্রায় ২০ভাগ আগুনে পুড়ে গেছে তবে আশা করি খুব দ্রুত সুস্থ হবেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর সদর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে গরীব অসহায় শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে সদর উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গনে জেলা প্রশাসক পতœী স্মৃতি রানী সিনহা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। কম্বল বিতরন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত নিবার্হী অফিসার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সামিউল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পতœী নাদিরা আহামেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) পতœী নুসরাত জাহান জুই প্রমুখ। সদর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ১০০ জন গরীব অসহায় শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে, মেহেরপুর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বশির আহামেদ উপস্থিত থেকে কম্বল বিতরণ করেন। এসময় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠানিক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম সেখানের উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, পৌষের এই কনকনে শীতে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে দুস্থ-অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন অধ্যক্ষ কর্ণেল সাদিকুল বারী পিএসসি। এসময় অধ্যক্ষ কর্ণেল সাদিকুল বারী’র সহধর্মীনি ডা. রেহনুমা আক্তার তমা, এ্যাডজুটেন্ট লে. কমান্ডার আসাদুজ্জামান নুর, মেডিকেল অফিসার ক্যাপ্টেন আলী জাসিফ রেজওয়ান, কলেজের উপাধ্যাক্ষ রতন কুমার সরকার ও সহকারী অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে শহরের বিভিন্ন এলাকার ৩’শ শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেওয়া হয়।