ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিয়ের দুই মাসের মাথায় নববধূর সন্তান প্রসব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০২১
  • / ২৪৮ বার পড়া হয়েছে

হাসপাতালের বেডে পৌঁছাল তালাকনামা : পুত্রের স্বীকৃতি চায় সোনালী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় বিয়ের ২ মাস ১০ দিনের মাথায় পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন নববধূ। গত শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লাহ পুরাতন মসজিদপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নবজাতকসহ তার মা সোনালী খাতুনকে (১৭) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনায় নববধূ সোনালীকে গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতাল চত্বরেই তালাক দিয়েছেন স্বামী মোস্তাকিম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লাহ পুরাতন মসজিদপাড়ার আব্দুল আলিমের ছেলে মোস্তাকিমের সঙ্গে ২ মাস ১০ দিন আগে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুটবল মাঠপাড়ার আব্দুল হালিমের কন্যা সোনালী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। গত শনিবার রাতে সোনালী খাতুন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে সেখানেই সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে। পরদিন সকালে মা ও সদ্যভূমিষ্ট নবজাতককে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সোনালী খাতুনের স্বামী মোস্তাকিমের পরিবারের লোকজন বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের এক ঘটকের মাধ্যেমে পারিবারিকভাবে ২ মাস ১০ দিন আগে মোস্তাকিমের সঙ্গে সোনালীর বিবাহ হয়। বিয়ের পর আমরা কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি সোনালী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এখন এই সন্তান আমাদের নয়। এটা অবৈধ সন্তান।’
সোনালীর স্বামী মোস্তাকিম বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্ত্রী সোনালী খাতুন বিভিন্নভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যেত। তাই আমার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। সোনালী যে সন্তান জন্ম দিয়েছে, এটা আমার সন্তান নয়। তাই আজ (রোববার) দুপুরে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে আইনগতভাবে তাকে তালাক দিয়েছি।’
সোনালী খাতুন বলেন, ‘প্রায় বছর খানেক আগে কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুটবল মাঠপাড়ার প্রতিবেশী হারুনের ছেলে আশিক (২০) এক দিন কিছু একটা দেখানোর জন্য তার ঘরে যেতে বলে। আমি সেখানে গেলে আশিক জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। পরে লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। আজ (রোববার) দুপুরে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে তালাক দিয়েছে। তালাক দিলেও এখনো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেনি তারা।’ সে আরও জানায়, সে তার পুত্রসন্তানের স্বীকৃতি চায়।
মোস্তাকিমের পিতা বলেন, ‘বিয়ের পর সোনালী খাতুন কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। শনিবার রাতে পুত্রসন্তান প্রসব করে সে। এটা আমার ছেলের সন্তান নয়, অবৈধ সন্তান।’
সোনালী খাতুনের পিতা আব্দুল হালিম বলেন, কীভাবে কী হয়েছে, এটা আল্লাহপাক জানে। যাইহোক সন্তান তার পিতৃত্বের পরিচয়টা যেন পায়, এ জন্য আমি আইনের দারস্ত হব।’
সোনালী খাতুনের বরাত দিয়ে তার মা বলেন, ‘প্রায় বছর খানেক আগে প্রতিবেশী হারুনের ছেলে আশিক আমার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। এরপর আমার মেয়েকে হুমকি-ধামকি দেয় কাউকে কিছু না বলার জন্য। আমার মেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি।’
এলাকাবাসী জানান, ২ মাস পূর্বে বিবাহ হলে তাহলে ছেলে পক্ষ এতদিন কিছু বলল না কেন? শারীরিক গঠন দেখেও তো তারা বুঝতে পারত। হাসপাতালের মধ্যেই তড়িঘরি করে কেন তালাক দিল, তাও দেনমোহরও পরিশোধ না করেই। তারা আরও বলেন, মেয়েটির যখন বিবাহ হয়, সে তখন প্রায় ৭ মাসের গর্ভবতী। মেয়ের মা জেনেশুনে কেনই বা বিবাহ দিলেন। এখানে নিশ্চয় উভয়পক্ষই বিষয়টি জানত।
এদিকে সোনালী খাতুনের পরিবারের সদস্যা এ ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। মেয়েকে লোকলজ্জা থেকে বাঁচাতে পিতৃত্বের দাবিতে আশিকের দারস্থ হন। এ নিয়ে কয়রাডাঙ্গা এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে অভিযুক্ত আশিক ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলুকদিয়া গ্রামের এক ঘটকের মাধ্যমে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায় মেয়ে ও তার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার রাতে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে সোনালী খাতুন। তবে বিষয়টি উভয়পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হিয়েছে। এদিকে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর উভয় পক্ষের মীমাংসা করার করা বললেও দুপুরে ছেলে পক্ষের পরিবারের সদস্যরা সোনালীকে তালাক দেয়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিস সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিয়ের দুই মাসের মাথায় নববধূর সন্তান প্রসব

আপলোড টাইম : ১০:৫০:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ জানুয়ারী ২০২১

হাসপাতালের বেডে পৌঁছাল তালাকনামা : পুত্রের স্বীকৃতি চায় সোনালী
নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় বিয়ের ২ মাস ১০ দিনের মাথায় পুত্রসন্তান জন্ম দিলেন নববধূ। গত শনিবার রাতে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লাহ পুরাতন মসজিদপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নবজাতকসহ তার মা সোনালী খাতুনকে (১৭) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনায় নববধূ সোনালীকে গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে সদর হাসপাতাল চত্বরেই তালাক দিয়েছেন স্বামী মোস্তাকিম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ভিমরুল্লাহ পুরাতন মসজিদপাড়ার আব্দুল আলিমের ছেলে মোস্তাকিমের সঙ্গে ২ মাস ১০ দিন আগে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুটবল মাঠপাড়ার আব্দুল হালিমের কন্যা সোনালী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। গত শনিবার রাতে সোনালী খাতুন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গেলে সেখানেই সে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে। পরদিন সকালে মা ও সদ্যভূমিষ্ট নবজাতককে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে সোনালী খাতুনের স্বামী মোস্তাকিমের পরিবারের লোকজন বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের এক ঘটকের মাধ্যেমে পারিবারিকভাবে ২ মাস ১০ দিন আগে মোস্তাকিমের সঙ্গে সোনালীর বিবাহ হয়। বিয়ের পর আমরা কোনোভাবেই বুঝতে পারিনি সোনালী অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এখন এই সন্তান আমাদের নয়। এটা অবৈধ সন্তান।’
সোনালীর স্বামী মোস্তাকিম বলেন, ‘বিয়ের পর আমার স্ত্রী সোনালী খাতুন বিভিন্নভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যেত। তাই আমার পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। সোনালী যে সন্তান জন্ম দিয়েছে, এটা আমার সন্তান নয়। তাই আজ (রোববার) দুপুরে ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল চত্বরে আইনগতভাবে তাকে তালাক দিয়েছি।’
সোনালী খাতুন বলেন, ‘প্রায় বছর খানেক আগে কয়রাডাঙ্গা গ্রামের ফুটবল মাঠপাড়ার প্রতিবেশী হারুনের ছেলে আশিক (২০) এক দিন কিছু একটা দেখানোর জন্য তার ঘরে যেতে বলে। আমি সেখানে গেলে আশিক জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণ করে এবং এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। পরে লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। আজ (রোববার) দুপুরে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে তালাক দিয়েছে। তালাক দিলেও এখনো দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করেনি তারা।’ সে আরও জানায়, সে তার পুত্রসন্তানের স্বীকৃতি চায়।
মোস্তাকিমের পিতা বলেন, ‘বিয়ের পর সোনালী খাতুন কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়। শনিবার রাতে পুত্রসন্তান প্রসব করে সে। এটা আমার ছেলের সন্তান নয়, অবৈধ সন্তান।’
সোনালী খাতুনের পিতা আব্দুল হালিম বলেন, কীভাবে কী হয়েছে, এটা আল্লাহপাক জানে। যাইহোক সন্তান তার পিতৃত্বের পরিচয়টা যেন পায়, এ জন্য আমি আইনের দারস্ত হব।’
সোনালী খাতুনের বরাত দিয়ে তার মা বলেন, ‘প্রায় বছর খানেক আগে প্রতিবেশী হারুনের ছেলে আশিক আমার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। এরপর আমার মেয়েকে হুমকি-ধামকি দেয় কাউকে কিছু না বলার জন্য। আমার মেয়ে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি।’
এলাকাবাসী জানান, ২ মাস পূর্বে বিবাহ হলে তাহলে ছেলে পক্ষ এতদিন কিছু বলল না কেন? শারীরিক গঠন দেখেও তো তারা বুঝতে পারত। হাসপাতালের মধ্যেই তড়িঘরি করে কেন তালাক দিল, তাও দেনমোহরও পরিশোধ না করেই। তারা আরও বলেন, মেয়েটির যখন বিবাহ হয়, সে তখন প্রায় ৭ মাসের গর্ভবতী। মেয়ের মা জেনেশুনে কেনই বা বিবাহ দিলেন। এখানে নিশ্চয় উভয়পক্ষই বিষয়টি জানত।
এদিকে সোনালী খাতুনের পরিবারের সদস্যা এ ঘটনায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। মেয়েকে লোকলজ্জা থেকে বাঁচাতে পিতৃত্বের দাবিতে আশিকের দারস্থ হন। এ নিয়ে কয়রাডাঙ্গা এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে অভিযুক্ত আশিক ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলুকদিয়া গ্রামের এক ঘটকের মাধ্যমে বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায় মেয়ে ও তার পরিবারের সদস্যরা। শনিবার রাতে একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে সোনালী খাতুন। তবে বিষয়টি উভয়পক্ষের মধ্যে মীমাংসা হিয়েছে। এদিকে, ওয়ার্ড কাউন্সিলর উভয় পক্ষের মীমাংসা করার করা বললেও দুপুরে ছেলে পক্ষের পরিবারের সদস্যরা সোনালীকে তালাক দেয়।
চুয়াডাঙ্গা পুলিস সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।