ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিলাসী জীবন ছেড়ে ফুটপাতে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০১৯
  • / ৪৬৮ বার পড়া হয়েছে

বিস্ময় ডেস্ক:
একটু ভালো করে বাঁচতে এক জীবনে কত কী করি আমরা। নাড়ির বাঁধন ছিড়ে কেউ পাড়ি জমাই শহরে, কেউ পরবাসে। সেখানে কেউ সফল হয়, আবার কারো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে আশ্রয় নিতে হয় ফুটপাতে। তবে স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে ফুটপাতে বসবাসের উদাহরণ নজিরবিহীন। এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছেন সিমন লি। বায়ান্ন বছর বয়সি হংকংয়ের এই নাগরিক গত সাত বছর ধরে স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ত্যাগ করে ফুটপাতে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয় সহায়-সম্পদ, পরিবার, চাকরি এমনকি নিজের সঙ্গিনীকেও তিনি ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কেন? এই কাহিনি জানতে হলে সিমন লির পেছনের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন সিমন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভালো বেতনে চাকরিও করতেন। কিন্তু গৎবাঁধা জীবন ভালো লাগলো না সিমনের। তাই চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ‘এশিয়ার লাস ভেগাস’ খ্যাত ম্যাকাউয়ে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত সেখানে বাচ্চাদের পড়াতেন। এরপর গেলেন চীনের ঝুহাই শহরে। সেখানে ক্যাসিনোতে যেতেন, জুয়া খেলতেন। ঝুহাইয়ের ক্যাসিনোর জুয়াড়িরা বাজিতে জিতলে টাকার কিছু অংশ শহরের ফুটপাতে থাকা মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন। ফলে এই শহরেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিমন। তবে সিমনের এমন স্বেচ্ছা ভবঘুরে জীবনযাপনেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ঝুহাই কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় হংকংয়ে। কিন্তু নিজেকে পাল্টানোর সামান্যতম ইচ্ছে ছিল না সিমনের। শহরের ধনী এলাকার একটি ম্যাকডোনাল্ড থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার আর পার্শ্ববর্তী একটি শিখ মন্দির থেকে টুকটাক সহায়তা নিয়ে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার পোশাকগুলো হংকংয়ের সমাজসেবীদের দান করা অথবা রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া। সরকার থেকেও কোনো ধরনের সহায়তা নেন না তিনি। রাস্তা কিংবা পার্কে ঘুমালেও পুরো হংকং ঘুরে বেড়ান তিনি। নিজের এই অদ্ভুত জীবনাচার কোনো আদর্শ পদ্ধতি না হলেও নিজেকে পরিবর্তন করতে নারাজ সিমন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘আমার কাছে এটা আত্মমুক্তি। আমাকে বিল দিতে হয় না, বাড়ি কিনতে হয় না, আমি যেখানে-সেখানে ঘুমাতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘লোকের ফেলে দেয়া জিনিসের মধ্যে কোনো না কোনো কার্যকারিতা খুঁজে পাই আমি।’ বছর তিনেক ম্যাকাউয়ের এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সিমনের। বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এমনকি মা-বাবা আর তিন ভাইয়ের কাছ থেকেও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সিমন। ঘরবাড়ি আর স্বজন বলতে কেউ না থাকায় কাল কী হবে সে চিন্তা তাড়িয়ে বেড়ায় না সিমনকে। তাই নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিলাসী জীবন ছেড়ে ফুটপাতে

আপলোড টাইম : ১০:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ মে ২০১৯

বিস্ময় ডেস্ক:
একটু ভালো করে বাঁচতে এক জীবনে কত কী করি আমরা। নাড়ির বাঁধন ছিড়ে কেউ পাড়ি জমাই শহরে, কেউ পরবাসে। সেখানে কেউ সফল হয়, আবার কারো মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে আশ্রয় নিতে হয় ফুটপাতে। তবে স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ছেড়ে ফুটপাতে বসবাসের উদাহরণ নজিরবিহীন। এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটিয়েছেন সিমন লি। বায়ান্ন বছর বয়সি হংকংয়ের এই নাগরিক গত সাত বছর ধরে স্বেচ্ছায় বাড়িঘর ত্যাগ করে ফুটপাতে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয় সহায়-সম্পদ, পরিবার, চাকরি এমনকি নিজের সঙ্গিনীকেও তিনি ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কেন? এই কাহিনি জানতে হলে সিমন লির পেছনের জীবনের দিকে তাকাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে গ্র্যাজুয়েশন করেছিলেন সিমন। শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভালো বেতনে চাকরিও করতেন। কিন্তু গৎবাঁধা জীবন ভালো লাগলো না সিমনের। তাই চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ‘এশিয়ার লাস ভেগাস’ খ্যাত ম্যাকাউয়ে। ২০০৪ সাল পর্যন্ত সেখানে বাচ্চাদের পড়াতেন। এরপর গেলেন চীনের ঝুহাই শহরে। সেখানে ক্যাসিনোতে যেতেন, জুয়া খেলতেন। ঝুহাইয়ের ক্যাসিনোর জুয়াড়িরা বাজিতে জিতলে টাকার কিছু অংশ শহরের ফুটপাতে থাকা মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন। ফলে এই শহরেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সিমন। তবে সিমনের এমন স্বেচ্ছা ভবঘুরে জীবনযাপনেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ঝুহাই কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় হংকংয়ে। কিন্তু নিজেকে পাল্টানোর সামান্যতম ইচ্ছে ছিল না সিমনের। শহরের ধনী এলাকার একটি ম্যাকডোনাল্ড থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার আর পার্শ্ববর্তী একটি শিখ মন্দির থেকে টুকটাক সহায়তা নিয়ে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তার পোশাকগুলো হংকংয়ের সমাজসেবীদের দান করা অথবা রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া। সরকার থেকেও কোনো ধরনের সহায়তা নেন না তিনি। রাস্তা কিংবা পার্কে ঘুমালেও পুরো হংকং ঘুরে বেড়ান তিনি। নিজের এই অদ্ভুত জীবনাচার কোনো আদর্শ পদ্ধতি না হলেও নিজেকে পরিবর্তন করতে নারাজ সিমন। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ‘আমার কাছে এটা আত্মমুক্তি। আমাকে বিল দিতে হয় না, বাড়ি কিনতে হয় না, আমি যেখানে-সেখানে ঘুমাতে পারি।’ তিনি আরো বলেন, ‘লোকের ফেলে দেয়া জিনিসের মধ্যে কোনো না কোনো কার্যকারিতা খুঁজে পাই আমি।’ বছর তিনেক ম্যাকাউয়ের এক নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সিমনের। বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এমনকি মা-বাবা আর তিন ভাইয়ের কাছ থেকেও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন সিমন। ঘরবাড়ি আর স্বজন বলতে কেউ না থাকায় কাল কী হবে সে চিন্তা তাড়িয়ে বেড়ায় না সিমনকে। তাই নিজেকে ভাগ্যের হাতে সঁপে দিয়ে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেন তিনি।