ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিবেকশূন্য নির্বাচন কমিশন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০
  • / ১২৩ বার পড়া হয়েছে

ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনুন
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের ভোটারদের আপসোস লক্ষ করা গেছে; তারা কবে আবার নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে আমেরিকানদের মতো অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু যথাযথভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার কবে আসবে তা কারো জানা নেই। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট ব্যবস্থার এক প্রকার কবর রচিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন পর্যন্ত পুরোপুরিই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়ার পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে মানুষ হতবাক। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরপরই তিনি সেই নির্বাচনকে তাচ্ছিল্য করেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকার নাকি নির্বাচন ফলাফল বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে শেখার আছে।’ মূল ব্যাপার হলোÑ একটি শক্তিশালী নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো একজন ছদ্ম স্বৈরচারীকে পরাস্ত করেছে। আমেরিকায় নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীরা রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেপরোয়া আচরণের কাছে নতি স্বীকার করেননি। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন ‘নির্লজ্জ’ বক্তব্যে তাই জাতি হতবাক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে গত রোববার বাংলাদেশের ভেঙেপড়া নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। সুজনের আমন্ত্রণে সুশীল সমাজের সদস্যরা ওই বৈঠকে দেশের ভোটাধিকার নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সম্মতির শাসন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তাদের সামনে বিভিন্ন বিকল্প থাকে। সেখান থেকে তাদের পছন্দের উত্তম বিকল্পটি বাছাই করার স্বাধীনতা থাকে। একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য তারা কাউকে নির্বাচিত করেন। আর জনগণের সমর্থনের মাধ্যমে অর্জিত ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিরা জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে ব্যবহার করেন। সুজন সম্পাদক ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব দেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একে অন্যের সহযোগী হয়ে কাজ করবে। সংবিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন সংবিধান তাদের যে অধিকার ও দায়িত্ব দিয়েছে তার চর্চা সাম্প্রতিক সময়ে করেনি।’ গোলটেবিল বৈঠকে সবার বক্তব্যে একই সুর ধ্বনিত হয়েছে। বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের এক আশ্চর্য চরিত্র দাঁড়িয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ভোট গ্রহণ হয়ে যায়। তার আগে থেকেই জোরজবরদস্তি ভয়ভীতির নির্বাচন মানুষ দেখেছে। অনিয়ম বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্যের মধ্যে একচেটিয়া নির্বাচন এক সাধারণ চিত্র। এরপর মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ভোটকেন্দ্রে কেউ যদি উপস্থিতও হন তাহলেও তিনি নিজে ভোট দিতে পারছেন না। এমন কি ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি দলের লোকরাও ভোট দিতে গিয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ নেই, ক্ষমতাসীনরা বল প্রয়োগ করছেন, ভোটের ফল ছিনতাই করছেন। এসব অন্যায়ের ব্যাপারে দেশ-বিদেশের মানুষ জানেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে সিইসি যদি নির্বিচারে অসত্য বলে যান; তা হলে জনগণের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত হতেই থাকবে।
সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে গবেষক লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিবেকশূন্য ও প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’ তাই এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার কোনো আশা নেই। আলোচনায় সুশীল সমাজের সদস্যদের পক্ষ থেকে একই বক্তব্য এসেছে। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। একটি স্বাধীনচেতা নির্বাচন কমিশন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবহীন হতে হবে। সবাই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে আবারো যদি অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ফেরাতে হয়, তাহলে সেই ধরনের একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটি নামে তত্ত্বাবধায়ক না হলে সমস্যা নেই। সেই সরকার সংবিধানের আওতায় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চলতে দেবে। কোনো ধরনের অন্যায় হস্তক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে না। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষের জোর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিবেকশূন্য নির্বাচন কমিশন

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০

ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনুন
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বাংলাদেশের ভোটারদের আপসোস লক্ষ করা গেছে; তারা কবে আবার নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে আমেরিকানদের মতো অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু যথাযথভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার কবে আসবে তা কারো জানা নেই। বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোট ব্যবস্থার এক প্রকার কবর রচিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচন পর্যন্ত পুরোপুরিই প্রহসনে পরিণত হয়েছে। একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়ার পরও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে মানুষ হতবাক। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরপরই তিনি সেই নির্বাচনকে তাচ্ছিল্য করেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমেরিকার নাকি নির্বাচন ফলাফল বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে শেখার আছে।’ মূল ব্যাপার হলোÑ একটি শক্তিশালী নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতো একজন ছদ্ম স্বৈরচারীকে পরাস্ত করেছে। আমেরিকায় নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারীরা রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করেছেন। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেপরোয়া আচরণের কাছে নতি স্বীকার করেননি। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এমন ‘নির্লজ্জ’ বক্তব্যে তাই জাতি হতবাক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে গত রোববার বাংলাদেশের ভেঙেপড়া নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করে। সুজনের আমন্ত্রণে সুশীল সমাজের সদস্যরা ওই বৈঠকে দেশের ভোটাধিকার নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন। সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সম্মতির শাসন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। তাদের সামনে বিভিন্ন বিকল্প থাকে। সেখান থেকে তাদের পছন্দের উত্তম বিকল্পটি বাছাই করার স্বাধীনতা থাকে। একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য তারা কাউকে নির্বাচিত করেন। আর জনগণের সমর্থনের মাধ্যমে অর্জিত ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিরা জনগণের স্বার্থে ও কল্যাণে ব্যবহার করেন। সুজন সম্পাদক ভোটের অধিকার রক্ষার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব দেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একে অন্যের সহযোগী হয়ে কাজ করবে। সংবিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবে। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন সংবিধান তাদের যে অধিকার ও দায়িত্ব দিয়েছে তার চর্চা সাম্প্রতিক সময়ে করেনি।’ গোলটেবিল বৈঠকে সবার বক্তব্যে একই সুর ধ্বনিত হয়েছে। বাংলাদেশে এখন নির্বাচনের এক আশ্চর্য চরিত্র দাঁড়িয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ভোট গ্রহণ হয়ে যায়। তার আগে থেকেই জোরজবরদস্তি ভয়ভীতির নির্বাচন মানুষ দেখেছে। অনিয়ম বিশৃঙ্খলা নৈরাজ্যের মধ্যে একচেটিয়া নির্বাচন এক সাধারণ চিত্র। এরপর মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ভোটকেন্দ্রে কেউ যদি উপস্থিতও হন তাহলেও তিনি নিজে ভোট দিতে পারছেন না। এমন কি ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি দলের লোকরাও ভোট দিতে গিয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার একাই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে মানুষের অংশগ্রহণ নেই, ক্ষমতাসীনরা বল প্রয়োগ করছেন, ভোটের ফল ছিনতাই করছেন। এসব অন্যায়ের ব্যাপারে দেশ-বিদেশের মানুষ জানেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে সিইসি যদি নির্বিচারে অসত্য বলে যান; তা হলে জনগণের ভোটাধিকার লুণ্ঠিত হতেই থাকবে।
সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে গবেষক লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিবেকশূন্য ও প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।’ তাই এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার কোনো আশা নেই। আলোচনায় সুশীল সমাজের সদস্যদের পক্ষ থেকে একই বক্তব্য এসেছে। এ অবস্থায় গণতন্ত্রের স্বার্থে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। একটি স্বাধীনচেতা নির্বাচন কমিশন স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবহীন হতে হবে। সবাই বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে আবারো যদি অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ফেরাতে হয়, তাহলে সেই ধরনের একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটি নামে তত্ত্বাবধায়ক না হলে সমস্যা নেই। সেই সরকার সংবিধানের আওতায় সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে চলতে দেবে। কোনো ধরনের অন্যায় হস্তক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে না। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষের জোর প্রতিবাদ করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।