ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে মহাপরিকল্পনার অংশই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮
  • / ৩৪৭ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করি ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। ২০১৭ সালের ৩০ শে নভেম্বর আমি এই প্রকল্পের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেছিলাম। সাত মাসে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে শুরু হলো দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ।
গতকাল শনিবার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জ্বালানি নীতিতে জীবাস্ম জ্বালানির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছি। তেল, গ্যাস বা কয়লার পাশাপাশি পারমাণবিক, সৌর এবং বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করেছি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সম্পর্কে কোন কোন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। আর্ন্তজাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আর্ন্তজাতিক মান এই প্রকল্পে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তার দিকটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। রাশিয়ার সর্বশেষ থ্রি প্লাস জেনারেশনের রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে। রাশিয়া এই প্রকল্পের বর্জ্য নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাতিল করে দেয়। পরে এই প্রকল্প নির্মাণে আবারো উদ্যোগ নেয়া হলে বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া এবং সে দেশের জনগণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং সে দেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। আমরা দেশের সকল মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেক্টরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন পেয়েছিলাম ৩২০০ মেগাওয়াট। এখন ১৮ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াটে উন্নিত হয়েছে। কোন লোড-সেডিং নেই। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। যেখানে এখনও বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন পৌঁছেনি সেখানে সোলার হোম সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, অনেক উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।। যা এবছরে ৭.৭৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত। আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির জনক বঙ্গন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রাশিয়ান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোচিভ বোরিসভ বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো একটি জটিল স্থাপনার নির্মাণ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে গুণগতভাবে প্রযুক্তির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত বছরগুলোতে দৃঢ়তার সঙ্গে উন্নতি লাভ করেছে। নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হাজারো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠনে মঞ্চে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, রাশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী এলিয়া সেস্তাকভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ এফ এম রুহুল হক, রসাটম ফার্স্ট ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেন্স ম্যানেজমেন্ট) ভারতের পরমাণু শক্তি অথরিটির চেয়ারম্যান ড. অভিলাস ভরদ্বাজ, বাংলাদেশ পরমাণু নিয়ন্ত্রণ অথরিটির চেয়ারম্যান নঈম চৌধুরী, বাংলদেম পরমাণ শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

‘বিদ্যুৎ উৎপাদনে মহাপরিকল্পনার অংশই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’

আপলোড টাইম : ১১:১৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮

সমীকরণ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করি ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এ কেন্দ্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ যুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। ২০১৭ সালের ৩০ শে নভেম্বর আমি এই প্রকল্পের প্রথম কংক্রিট ঢালাই উদ্বোধন করেছিলাম। সাত মাসে প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আজকে কংক্রিট ঢালাইয়ের মাধ্যমে শুরু হলো দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ।
গতকাল শনিবার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র দ্বিতীয় ইউনিটে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সুধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। তিনি আরও বলেন, টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আমরা জ্বালানি নীতিতে জীবাস্ম জ্বালানির পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছি। তেল, গ্যাস বা কয়লার পাশাপাশি পারমাণবিক, সৌর এবং বায়ু-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করেছি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ সম্পর্কে কোন কোন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকেন। আর্ন্তজাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার গাইডলাইন এবং আর্ন্তজাতিক মান এই প্রকল্পে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তার দিকটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। রাশিয়ার সর্বশেষ থ্রি প্লাস জেনারেশনের রিঅ্যাক্টর দিয়ে তৈরি পারমাণবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণের সর্বাধুনিক ব্যবস্থা আছে। রাশিয়া এই প্রকল্পের বর্জ্য নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা জ্বালানি নীতিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই আমাদের নেয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি বাতিল করে দেয়। পরে এই প্রকল্প নির্মাণে আবারো উদ্যোগ নেয়া হলে বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া এটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে এবং যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে রাশিয়া এবং সে দেশের জনগণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিন এবং সে দেশের বন্ধুপ্রতিম জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ অপরিহার্য। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রথমেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ। আমরা দেশের সকল মানুষের কাছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেক্টরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন পেয়েছিলাম ৩২০০ মেগাওয়াট। এখন ১৮ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াটে উন্নিত হয়েছে। কোন লোড-সেডিং নেই। ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। যেখানে এখনও বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন পৌঁছেনি সেখানে সোলার হোম সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ার নয়, অনেক উন্নত দেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিগত এক দশক ধরে বাংলাদেশ সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।। যা এবছরে ৭.৭৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আজকের বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত। আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে জাতির জনক বঙ্গন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রাশিয়ান ফেডারেশনের উপ-প্রধানমন্ত্রী মি. ইউরি ইভানোচিভ বোরিসভ বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো একটি জটিল স্থাপনার নির্মাণ বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে গুণগতভাবে প্রযুক্তির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত বছরগুলোতে দৃঢ়তার সঙ্গে উন্নতি লাভ করেছে। নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হাজারো নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশীয় রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠনে মঞ্চে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, রাশিয়ার কৃষি উপমন্ত্রী এলিয়া সেস্তাকভ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ এফ এম রুহুল হক, রসাটম ফার্স্ট ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (অপারেন্স ম্যানেজমেন্ট) ভারতের পরমাণু শক্তি অথরিটির চেয়ারম্যান ড. অভিলাস ভরদ্বাজ, বাংলাদেশ পরমাণু নিয়ন্ত্রণ অথরিটির চেয়ারম্যান নঈম চৌধুরী, বাংলদেম পরমাণ শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক।