ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিগত দিনের ব্যর্থতা ভুলে, অফুরান নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৪০৭ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে নানা আয়োজন আর নব আলোয় নতুন বর্ষবরণ
সমীকরণ ডেস্ক: পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। শনিবার ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৫’ কে বরণ করে নিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি- পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। রাজধানীতে নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম বড় আয়োজন রমনার বটমূলে ছায়ানটে স্বাগত জানানো হয় বাংলা নতুন বছর ১৪২৫- কে। সত্য, সুন্দর আর ন্যায়ের আহবান জানানো হয় ধ্রুপদী সুরের মন্ত্রে। সুরের মূর্ছনায় বাংলা ১৪২৫ এর প্রথম সূর্যকে অভিবাদন। এ যেন সুরেলা বৈশাখ। রমনা বটমূলে প্রতিটি প্রাণেই উৎসবের রং। সুর, তাল আর যন্ত্রের মায়াজালে পাগলপারা সববয়সীরা। গেল পাঁচ দশকের পথচলায় ছায়ানটের পরিবেশনা ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ বর্ষবরণ উৎসব। এরপর যথারীতি নববর্ষের মঙ্গলবার্তা নিয়ে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাজির হয়েছেন হাজারো মানুষ। বাংলার চিরায়ত সাজে নববর্ষ বরণ করছে সবাই। শনিবার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ ছাড়া শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।


নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সকালে গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে যান। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়। চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরের চাঁদমারী মাঠে সাতদিনব্যপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর শহরের কোথাও কোন অনুষ্ঠান বা উৎসব আয়োজন চোখে পড়েনি। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন চত্ত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ’র মাধ্যমে বর্ষবরণের কর্মসূচী শুরু করা হয়। ঝিনাইদহের আয়োজন ছিল ভিন্ন। সব মিলিয়ে বর্ষ বরণে সাজসাজ রব আর রমরমা আয়োজন ছিল বাঙালীর উৎসব আনন্দের অন্তরায়।


চুয়াডাঙ্গায় মুকুল ফৌজ’র লোক উৎসব: ১৪ এপ্রিল বঙ্গাব্দ ১৪২৫ সনের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৬টায় ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মুকুল ফৌজ’র যৌথ উদ্যোগে বিদ্যালয় চত্বরে বর্ণিল লোক সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। মুকুল ফৌজ’র অন্যতম সদস্য নুঝাত পারভীনের প্রানবন্ত সঞ্চালনায় বাঙালি সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে বোশেখী গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করে শিশুরা। উপস্থিত সকলের মাঝে মুড়ি, মিঠাই আর বাতাসা বিতরণ করা হয়। মুকুল ফৌজ’র সভাপতি রাশেদা হাসনাওয়ারার নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি এড. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহা. জসীম উদ্দীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, এড. আব্দুল মালেকসহ আরো অনেকে।
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ উদযাপন উপলক্ষে ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী মাঠ) মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হওয়া এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্বদেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাজ-পোষাকে বয়ো-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
সরকারি কলেজে বর্ষবরণ উৎসব: বঙ্গাব্দ ১৪২৫ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি কলেজ মুক্ত মঞ্চে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।


জেলা প্রশাসকের বাঙালীপনা: পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পান্তাভাত, নানা পদের ভর্তাসহ দেশীয় বিভিন্ন খাবার মাটির পাত্রে (সানকী বা মালসা) পরিবেশনের মধ্য ছিল বৈশাখের মূল অনুসঙ্গ। জেলা প্রশাসকের এ বাঙালীপনায় অংশনেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, এড. আব্দুল মালেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, এনএসআই উপ-পরিচালক জাফর ইকবাল, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদীসহ আইনজীবি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও আলমডাঙ্গা কলা কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।


জেলা পরিষদের আয়োজন: বাঙালি জাতির পুরান ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকনের নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে অংশনেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবিরসহ জেলা পরিষদের সদস্য, আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ। সমগ্র বাঙালী আয়োজনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন জেলা পরিষদ সচিব নুরজাহান খানম। পান্তাভোজ শেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।
চাঁদমারী মাঠে পৌর বৈশাখী মেলা: ১৪২৫ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে উদ্বোধন করা হয় পৌর বৈশাখী মেলার। পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘বাংলার মেলা, বাঙালির মেলা’ স্লোগানে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় খেলার (চাঁদ মারী) মাঠে লাল ফিতা কেঁটে ১৫দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, জেলা আ’লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাকির হুসাইন জ্যাকী, প্রমূখ। মেলা উদ্বোধনের পর পরই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি দর্শনার্থীদের। তবে বিকেল থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জানান দেয় বাঙালী নান্দনিকতার। গতবছরের মত এবারও মেলায় হরেক রকমের খেলনা, নাগরদোলা, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, চটপটির দোকান, দই ফুসকা, ঐতিহ্যবাহী পানের দোকান ও কসমেটিক্স প্রসাধনী সামগ্রির দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তবে এবার নেই র‌্যাফেল ড্র ও কোন প্রকার জুয়ার আয়োজন। মেলায় শিশুদের খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নাগর দোলার পাশাপাশি ট্রেন, ঘোঁড়া, চরকাসহ বেশ কয়েকটি রাইড নিয়ে আসা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র বর্ষবরণ: বর্ষবরণ উপলক্ষে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টায় সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে. কর্ণেল আমির মজিদ। দিনব্যাপী সর্বসাধারনের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন ছিল সরগরম। মেলায় পান্তাভাত, দেশীয় প্রজাতির মাছ ভাজা, আলুভর্তা ও শুটকী ভর্তা, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বাইস্কোপ, গার্মেন্টস আইটেম, বিভিন্ন প্রকার দেশীয় পিঠা এবং শরবতের স্টলসহ বিভিন্ন প্রকার স্টল ছিল। মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, বানর খেলা, সাপ খেলা এবং নাগরদোলাও ছিল। এছাড়াও বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন: এ ছাড়াও নববর্ষের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সদর হাসপাতাল, সরকারি শিশু পরিবার, সমন্বিত অন্ধ স্কুল ও জেল খানায় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে সাথে বাংলা নববর্ষ বরণের নানা আয়োজন করা হয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে।


আমাদের আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। বাঙালীর চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা. সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকাল ৮টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকালে পান্তা ভাতের আয়োজন করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভা ও সঙ্গীত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি সহকারী কমিশনার সীমা শারমীন,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খকরুল আলম খান,ওসি তদন্ত লুৎফুল করিব। সমাজ সেবা অফিসার আবু তালেবের উপস্থাপনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি অফিসার একেএম হাসিবুল হাসান, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আল হেল কাফি, পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আব্দুস সাত্তারম ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াতক আলী লিপু মোল্লা, পাইলটের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিসুজ্জামান আনিস, আল ইকরা পরিচালক আব্দুল হাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনদ্দীন প্রমুখ। এছাড়াও শহরে বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে।

আমাদের দর্শনা অফিস জানিয়েছে, বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার নানা আয়োজন করে। এসব আয়োজনের মধ্যে ১লা বৈশাখ সকাল সাড়ে ৬টায় অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে দর্শনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গানে গানে বর্ষ বরণ। এরপর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় দর্শনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাবসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের অংশ গ্রহন করেন। দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের নেত্রীত্বে শোভাযাত্রা যে সব সংঘঠন অংশ নেয় এরা হলেন, রামনগর মাথাভাঙ্গা যুব সংঘ, দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, লিটিল এনজেলস ইন্টাঃ স্কুল, দর্শনা মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দর্শনা সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংঘঠন, দর্শনা গণ-উন্নয়ন গ্রন্থাগার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, দর্শনা সরকারী কলেজ, ওয়েভ ট্রেড ট্রেনিং সেন্টার, দর্শনা কোর্স, দর্শনা পরাণপুর ও রিফুজি কলোনী ক্রিকেট দল, জে সি ডি সংগঠন, প্রয়োজন সংগঠন, দর্শনা শূণ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক একাডেমী, সজীব সংগঠন, দর্শনা রেলবাজার আর্দশিক সমিতি ও দর্শনা হরিজন সম্প্রদায়। এসব সংগঠন দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে বের হয়ে দর্শনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পথ ঘুরে দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠে এসে সমাপ্ত হয়। এছাড়া সকালের বর্ণ্যাঢ আয়োজনের মধ্যে দর্শনা শূণ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক একাডেমীর আয়োজনে বিনা মুল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া দর্শনা কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে সকালে বর্ন্যাঢ র‌্যালী বের করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় দর্শনা কলেজ মাঠে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঝাপন গান পরিবেশন করেন বুইচে তলা গ্রামের ইউসুফ আলী ও মদনা গ্রামের মজিবর রহমান। এছাড়া সন্ধায় দর্শনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্বাণ থিয়েটারের পরিবেশনায় বর্ষবরণ সংগীত পরিবেশিত হয়। ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন। এছাড়া ১লা বৈশাখের সকল আয়োজনে অনির্বাণ থিয়েটার কর্মীদের মধ্যে ছিলেন, হসমত কবির, মাহাবুবুর রহমান মুকুল, ইসরাফিল হোসেন টিটু, আওয়াল হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন, মিরাজ উদ্দিন, সাদী, বকুল, সায়মুল হক টিপু, রিদয়, হাবিবুর রহমান, স্বপ্ননা, রাজু, লিটন প্রমূখ।


আমাদের জীবননগর অফিস জানিয়েছে, জীবননগরে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং বিভিন্ন সাজ সজ্জার মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপন পালিত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার সারা বাংলার সাথে তাল মিলেয়ে জীবননগরেও যেন আয়োজনের কোনো কমতি ছিলনা। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নতুন বছরের প্রথম দিনের শুরুতে সকাল ৭টায় উপজেলা চত্বর থেকে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও গ্রাম থেকে আসা শোভাযাত্রাগুলো একত্রিত হয়ে বিশাল জনসমুদ্রের মিলন মেলায় রুপান্তরিত হয়। শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পান্তা, মাছ ভাজি আর আলুর ভর্তা খাওয়ানো হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের। পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ কার হয়। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আফাজ উদ্দিন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

আমাদের মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, দিনব্যাপি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ৭ টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসন চত্বর থেকে শহরে মঙ্গল শোভযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক চত্বর গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ’র সভাপতিত্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম রসুল, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক খায়রুল হাসান, জেলা ভিডিপি ও আনছার আ্যাডজুটেন্ট আব্দুর রশীদ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.আক্তারুজ্জামান, পল্লী বিদুৎ সমিতির জিএম রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেহেরপুরের স্থানীয় শিল্পীরা এসময় সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও সরকারি বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজে বাঙালীর ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ পালন করে।


আমাদের মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছে, মুজিবনগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও গানে গানে বাংলা নববর্ষকে সাদরে বরণ করে নিয়েছে মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্ত্বর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তারের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি মুজিবনগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুজিবনগর উপজেলা চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে অংশ নেয় মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম, মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল, মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা কর্মচারি স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী এবং নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। মঙ্গল শোভাযাত্রার শেষে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হয় পান্তা উৎসব এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আমাদের আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছে, নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মেহেরপুর আমঝুপিতে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। শনিবার সকাল ১০টায় নিলকুঠি প্রাঙ্গনে আমঝুপি ক্রীড়া একাদশের আয়োজনে অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও আমঝুপি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ চুন্নু। প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর জেলা শিল্পকলার নবনিবার্চিত সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, আমঝুপি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউকয়ের র্নিবাহী প্রধান আসাদুজ্জামান সেলিম, আমঝুপি পাবলিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মতিউর আশরাফ। অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সাইদুর রহমান এবং ৪৭ তম জাতীয় শিশু পুরস্কার পাওয়ায় মিতুয়ারাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এছাড়াও আমঝুপি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আমঝুপি সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমঝুপি উত্তর পাড়া পৃথকভাবে বর্ষবরণের আয়োজন করে।
আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছে, পথ শিশু ও এতিম খানায় খাবার বিতরণ করে অন্য রকম বাংলা নববর্ষ পালন করেছে “ঝিনেদার আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ” নামে একটি ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন। বছরের একদিন পান্তা ইলিশ খেয়ে বাঙালি না সেজে সেই টাকা দিয়ে সংগঠনটি এতিম ও পথ শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে৷ গ্রুপের পরিচালনা পরিষদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ঝিনাইদহ বাসির কাছে ব্যতিক্রম ও ভিন্নতা এনে দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল ও গ্রুপ ক্রিয়েটর আমেরিকা প্রবাসি তরিকুল ইসলাম মিঠুর নির্দেশনায় শনিবার ঝিনাইদহের মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানা ও ভুটিয়ারগাতী এতিমখানার ৮৫ জন এতিম দুস্থ বাচ্চাদের মধ্যাহ্ন ও নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করা হয়৷ আঞ্চলিক ভাষা পরিষদের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিকু, অফিস সম্পাদক জাম্মিম সবুজ, সহ: অফিস সম্পাদক সোহাগ স্বপ্ন, অর্থ সম্পাদক শারমিন আক্তার, মেহেদি হাসান, সোহেল রানা ও উজ্জল এই খাবার বিতরনে সহায়তা করেন ৷এদিকে আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় ৫০ জন পথ শিশুর মধ্যে খাবার বিতরন করা হয় ৷এ শামিমা আক্তার, লিপটন, শাহাদৎ হোসেন, সাজ্জাত রায়হান, সুজয় কুমার, উজ্জল হোসেন, আল মেহেদী, হাফিজুর রহমান, রুবেল, ডালিয়া, রুমাহ ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন৷

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিগত দিনের ব্যর্থতা ভুলে, অফুরান নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালি

আপলোড টাইম : ০৭:৩৪:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশে নানা আয়োজন আর নব আলোয় নতুন বর্ষবরণ
সমীকরণ ডেস্ক: পুরানোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে আহ্বান জানানোর মাধ্যমে সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। শনিবার ‘বাংলা নববর্ষ-১৪২৫’ কে বরণ করে নিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। বাঙালি চেতনার ধারক মঙ্গল শোভাযাত্রা, গান, নাচ, বৈশাখী মেলা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন সকল শ্রেণি- পেশার মানুষ। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মানুষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। রাজধানীতে নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম বড় আয়োজন রমনার বটমূলে ছায়ানটে স্বাগত জানানো হয় বাংলা নতুন বছর ১৪২৫- কে। সত্য, সুন্দর আর ন্যায়ের আহবান জানানো হয় ধ্রুপদী সুরের মন্ত্রে। সুরের মূর্ছনায় বাংলা ১৪২৫ এর প্রথম সূর্যকে অভিবাদন। এ যেন সুরেলা বৈশাখ। রমনা বটমূলে প্রতিটি প্রাণেই উৎসবের রং। সুর, তাল আর যন্ত্রের মায়াজালে পাগলপারা সববয়সীরা। গেল পাঁচ দশকের পথচলায় ছায়ানটের পরিবেশনা ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ বর্ষবরণ উৎসব। এরপর যথারীতি নববর্ষের মঙ্গলবার্তা নিয়ে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। প্রতিবারের মতো এবারও মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাজির হয়েছেন হাজারো মানুষ। বাংলার চিরায়ত সাজে নববর্ষ বরণ করছে সবাই। শনিবার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ ছাড়া শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সদস্যরা।


নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, সংসদ সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সকালে গণভবনে শুভেচ্ছা জানাতে যান। এদিকে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে বাণী দেন। বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিসহ সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
নববর্ষ বরণ উপলক্ষে সারা দেশজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব। সারা বাংলা ভেসেছে বিপুল উচ্ছ্বাস আর উদ্দীপনায়। সাধারণ মানুষের পোশাকে ছিল লাল-সাদার সমাহার। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেজেছে ঢোল, ডুগডুগি। পথে পথে বসেছিল বাতাসা, মুড়ি-মুড়কি, মাটির জিনিস, পাটের জিনিস, বাঁশি ও খেলনার দোকান। দিনভর প্রখর রোদ থাকা স্বত্বেও ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানের তালে তালে মানুষ বিভিন্ন উৎসবে যোগ দেয়। চুয়াডাঙ্গায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শহরের চাঁদমারী মাঠে সাতদিনব্যপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর শহরের কোথাও কোন অনুষ্ঠান বা উৎসব আয়োজন চোখে পড়েনি। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন চত্ত্বর থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ’র মাধ্যমে বর্ষবরণের কর্মসূচী শুরু করা হয়। ঝিনাইদহের আয়োজন ছিল ভিন্ন। সব মিলিয়ে বর্ষ বরণে সাজসাজ রব আর রমরমা আয়োজন ছিল বাঙালীর উৎসব আনন্দের অন্তরায়।


চুয়াডাঙ্গায় মুকুল ফৌজ’র লোক উৎসব: ১৪ এপ্রিল বঙ্গাব্দ ১৪২৫ সনের প্রথম দিন অর্থ্যাৎ পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৬টায় ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মুকুল ফৌজ’র যৌথ উদ্যোগে বিদ্যালয় চত্বরে বর্ণিল লোক সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। মুকুল ফৌজ’র অন্যতম সদস্য নুঝাত পারভীনের প্রানবন্ত সঞ্চালনায় বাঙালি সাংস্কৃতিকে তুলে ধরে বোশেখী গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করে শিশুরা। উপস্থিত সকলের মাঝে মুড়ি, মিঠাই আর বাতাসা বিতরণ করা হয়। মুকুল ফৌজ’র সভাপতি রাশেদা হাসনাওয়ারার নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি এড. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সৈয়দ ফারুক আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহা. জসীম উদ্দীন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, এড. আব্দুল মালেকসহ আরো অনেকে।
বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনা করে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ উদযাপন উপলক্ষে ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (চাঁদমারী মাঠ) মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হওয়া এ শোভাযাত্রায় নেতৃত্বদেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বাঙালি জাতির বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন সাজ-পোষাকে বয়ো-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়।
সরকারি কলেজে বর্ষবরণ উৎসব: বঙ্গাব্দ ১৪২৫ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরকারি কলেজ মুক্ত মঞ্চে বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপুসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, শিক্ষক-ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হয়।


জেলা প্রশাসকের বাঙালীপনা: পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পান্তাভাত, নানা পদের ভর্তাসহ দেশীয় বিভিন্ন খাবার মাটির পাত্রে (সানকী বা মালসা) পরিবেশনের মধ্য ছিল বৈশাখের মূল অনুসঙ্গ। জেলা প্রশাসকের এ বাঙালীপনায় অংশনেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, এড. আব্দুল মালেক, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কামরুজ্জামান, প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, এনএসআই উপ-পরিচালক জাফর ইকবাল, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদীসহ আইনজীবি, সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও আলমডাঙ্গা কলা কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।


জেলা পরিষদের আয়োজন: বাঙালি জাতির পুরান ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে পান্তাভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সেখ সামসুল আবেদিন খোকনের নিমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে অংশনেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কবিরসহ জেলা পরিষদের সদস্য, আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ। সমগ্র বাঙালী আয়োজনের তত্ত্বাবধানে ছিলেন জেলা পরিষদ সচিব নুরজাহান খানম। পান্তাভোজ শেষে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অতিথিরা।
চাঁদমারী মাঠে পৌর বৈশাখী মেলা: ১৪২৫ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে উদ্বোধন করা হয় পৌর বৈশাখী মেলার। পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে ‘বাংলার মেলা, বাঙালির মেলা’ স্লোগানে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় খেলার (চাঁদ মারী) মাঠে লাল ফিতা কেঁটে ১৫দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, জেলা আ’লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডা. মাহবুব হোসেন মেহেদী, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, যুগ্ম সম্পাদক জাকির হুসাইন জ্যাকী, প্রমূখ। মেলা উদ্বোধনের পর পরই তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি দর্শনার্থীদের। তবে বিকেল থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জানান দেয় বাঙালী নান্দনিকতার। গতবছরের মত এবারও মেলায় হরেক রকমের খেলনা, নাগরদোলা, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, চটপটির দোকান, দই ফুসকা, ঐতিহ্যবাহী পানের দোকান ও কসমেটিক্স প্রসাধনী সামগ্রির দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তবে এবার নেই র‌্যাফেল ড্র ও কোন প্রকার জুয়ার আয়োজন। মেলায় শিশুদের খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নাগর দোলার পাশাপাশি ট্রেন, ঘোঁড়া, চরকাসহ বেশ কয়েকটি রাইড নিয়ে আসা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র বর্ষবরণ: বর্ষবরণ উপলক্ষে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। শনিবার সকাল ১০টায় সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে. কর্ণেল আমির মজিদ। দিনব্যাপী সর্বসাধারনের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গন ছিল সরগরম। মেলায় পান্তাভাত, দেশীয় প্রজাতির মাছ ভাজা, আলুভর্তা ও শুটকী ভর্তা, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, বাইস্কোপ, গার্মেন্টস আইটেম, বিভিন্ন প্রকার দেশীয় পিঠা এবং শরবতের স্টলসহ বিভিন্ন প্রকার স্টল ছিল। মেলায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, বানর খেলা, সাপ খেলা এবং নাগরদোলাও ছিল। এছাড়াও বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
উন্নতমানের খাবার পরিবেশন: এ ছাড়াও নববর্ষের আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে সদর হাসপাতাল, সরকারি শিশু পরিবার, সমন্বিত অন্ধ স্কুল ও জেল খানায় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সাথে সাথে বাংলা নববর্ষ বরণের নানা আয়োজন করা হয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে।


আমাদের আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়েছে। বাঙালীর চিরায়ত এ উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আলোচনা সভা. সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকাল ৮টায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা চত্বরে এসে শেষ হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকালে পান্তা ভাতের আয়োজন করা হয়। পরে উপজেলা পরিষদ মঞ্চে আলোচনা সভা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভা ও সঙ্গীত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাহাত মান্নান। প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন। বিশেষ অতিথি সহকারী কমিশনার সীমা শারমীন,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী খালেদুর রহমান অরুন, থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খকরুল আলম খান,ওসি তদন্ত লুৎফুল করিব। সমাজ সেবা অফিসার আবু তালেবের উপস্থাপনায় আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি অফিসার একেএম হাসিবুল হাসান, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল আল হেল কাফি, পরিবার পরিকল্পনা অফিসার আব্দুস সাত্তারম ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোলাম সরোয়ার, আওয়ামী লীগ নেতা লিয়াতক আলী লিপু মোল্লা, পাইলটের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিসুজ্জামান আনিস, আল ইকরা পরিচালক আব্দুল হাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনদ্দীন প্রমুখ। এছাড়াও শহরে বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করে।

আমাদের দর্শনা অফিস জানিয়েছে, বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটার নানা আয়োজন করে। এসব আয়োজনের মধ্যে ১লা বৈশাখ সকাল সাড়ে ৬টায় অনির্বাণ থিয়েটারের সভাপতি ফজলুল হকের সভাপতিত্বে দর্শনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গানে গানে বর্ষ বরণ। এরপর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় দর্শনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাবসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠনের অংশ গ্রহন করেন। দর্শনা অনির্বাণ থিয়েটারের নেত্রীত্বে শোভাযাত্রা যে সব সংঘঠন অংশ নেয় এরা হলেন, রামনগর মাথাভাঙ্গা যুব সংঘ, দর্শনা বালিকা বিদ্যালয়, লিটিল এনজেলস ইন্টাঃ স্কুল, দর্শনা মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দর্শনা সাম্প্রতিক সাংস্কৃতিক সংঘঠন, দর্শনা গণ-উন্নয়ন গ্রন্থাগার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, দর্শনা সরকারী কলেজ, ওয়েভ ট্রেড ট্রেনিং সেন্টার, দর্শনা কোর্স, দর্শনা পরাণপুর ও রিফুজি কলোনী ক্রিকেট দল, জে সি ডি সংগঠন, প্রয়োজন সংগঠন, দর্শনা শূণ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক একাডেমী, সজীব সংগঠন, দর্শনা রেলবাজার আর্দশিক সমিতি ও দর্শনা হরিজন সম্প্রদায়। এসব সংগঠন দর্শনা কলেজ মাঠ থেকে বের হয়ে দর্শনা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পথ ঘুরে দর্শনা কেরুজ বাজার মাঠে এসে সমাপ্ত হয়। এছাড়া সকালের বর্ণ্যাঢ আয়োজনের মধ্যে দর্শনা শূণ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক একাডেমীর আয়োজনে বিনা মুল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া দর্শনা কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে সকালে বর্ন্যাঢ র‌্যালী বের করা হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় দর্শনা কলেজ মাঠে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঝাপন গান পরিবেশন করেন বুইচে তলা গ্রামের ইউসুফ আলী ও মদনা গ্রামের মজিবর রহমান। এছাড়া সন্ধায় দর্শনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনির্বাণ থিয়েটারের পরিবেশনায় বর্ষবরণ সংগীত পরিবেশিত হয়। ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অনির্বাণ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন। এছাড়া ১লা বৈশাখের সকল আয়োজনে অনির্বাণ থিয়েটার কর্মীদের মধ্যে ছিলেন, হসমত কবির, মাহাবুবুর রহমান মুকুল, ইসরাফিল হোসেন টিটু, আওয়াল হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন, মিরাজ উদ্দিন, সাদী, বকুল, সায়মুল হক টিপু, রিদয়, হাবিবুর রহমান, স্বপ্ননা, রাজু, লিটন প্রমূখ।


আমাদের জীবননগর অফিস জানিয়েছে, জীবননগরে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং বিভিন্ন সাজ সজ্জার মধ্যে দিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপন পালিত হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শনিবার সারা বাংলার সাথে তাল মিলেয়ে জীবননগরেও যেন আয়োজনের কোনো কমতি ছিলনা। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নতুন বছরের প্রথম দিনের শুরুতে সকাল ৭টায় উপজেলা চত্বর থেকে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও গ্রাম থেকে আসা শোভাযাত্রাগুলো একত্রিত হয়ে বিশাল জনসমুদ্রের মিলন মেলায় রুপান্তরিত হয়। শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পান্তা, মাছ ভাজি আর আলুর ভর্তা খাওয়ানো হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের। পরে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ কার হয়। জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মো. আব্দুল লতিফ অমল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার আফাজ উদ্দিন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

আমাদের মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, দিনব্যাপি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ৭ টায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসন চত্বর থেকে শহরে মঙ্গল শোভযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক চত্বর গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ’র সভাপতিত্বে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম রসুল, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক খায়রুল হাসান, জেলা ভিডিপি ও আনছার আ্যাডজুটেন্ট আব্দুর রশীদ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.আক্তারুজ্জামান, পল্লী বিদুৎ সমিতির জিএম রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেহেরপুরের স্থানীয় শিল্পীরা এসময় সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও সরকারি বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও স্কুল-কলেজে বাঙালীর ঐতিহ্য বাংলা নববর্ষ পালন করে।


আমাদের মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছে, মুজিবনগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা উৎসব ও গানে গানে বাংলা নববর্ষকে সাদরে বরণ করে নিয়েছে মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মুজিবনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্ত্বর থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তারের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি মুজিবনগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুজিবনগর উপজেলা চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে অংশ নেয় মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম, মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম, মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু, বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন, দারিয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিকুল বারী বকুল, মোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, মুজিবনগর উপজেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা কর্মচারি স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী এবং নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। মঙ্গল শোভাযাত্রার শেষে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত হয় পান্তা উৎসব এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আমাদের আমঝুপি প্রতিনিধি জানিয়েছে, নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মেহেরপুর আমঝুপিতে পালিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। শনিবার সকাল ১০টায় নিলকুঠি প্রাঙ্গনে আমঝুপি ক্রীড়া একাদশের আয়োজনে অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ও আমঝুপি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ চুন্নু। প্রধান অতিথি ছিলেন মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেহেরপুর জেলা শিল্পকলার নবনিবার্চিত সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, আমঝুপি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউকয়ের র্নিবাহী প্রধান আসাদুজ্জামান সেলিম, আমঝুপি পাবলিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মতিউর আশরাফ। অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় সাইদুর রহমান এবং ৪৭ তম জাতীয় শিশু পুরস্কার পাওয়ায় মিতুয়ারাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। এছাড়াও আমঝুপি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আমঝুপি সরকারি বালক প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমঝুপি উত্তর পাড়া পৃথকভাবে বর্ষবরণের আয়োজন করে।
আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছে, পথ শিশু ও এতিম খানায় খাবার বিতরণ করে অন্য রকম বাংলা নববর্ষ পালন করেছে “ঝিনেদার আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপ” নামে একটি ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন। বছরের একদিন পান্তা ইলিশ খেয়ে বাঙালি না সেজে সেই টাকা দিয়ে সংগঠনটি এতিম ও পথ শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে৷ গ্রুপের পরিচালনা পরিষদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ঝিনাইদহ বাসির কাছে ব্যতিক্রম ও ভিন্নতা এনে দিয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ও জেলার সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ ইকবাল কাজল ও গ্রুপ ক্রিয়েটর আমেরিকা প্রবাসি তরিকুল ইসলাম মিঠুর নির্দেশনায় শনিবার ঝিনাইদহের মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানা ও ভুটিয়ারগাতী এতিমখানার ৮৫ জন এতিম দুস্থ বাচ্চাদের মধ্যাহ্ন ও নৈশ ভোজের ব্যবস্থা করা হয়৷ আঞ্চলিক ভাষা পরিষদের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম লিকু, অফিস সম্পাদক জাম্মিম সবুজ, সহ: অফিস সম্পাদক সোহাগ স্বপ্ন, অর্থ সম্পাদক শারমিন আক্তার, মেহেদি হাসান, সোহেল রানা ও উজ্জল এই খাবার বিতরনে সহায়তা করেন ৷এদিকে আঞ্চলিক ভাষা গ্রুপের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ঢাকার হাতিরঝিল এলাকায় ৫০ জন পথ শিশুর মধ্যে খাবার বিতরন করা হয় ৷এ শামিমা আক্তার, লিপটন, শাহাদৎ হোসেন, সাজ্জাত রায়হান, সুজয় কুমার, উজ্জল হোসেন, আল মেহেদী, হাফিজুর রহমান, রুবেল, ডালিয়া, রুমাহ ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন৷