ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে না পাঠক, বইপাঠে তরুণদের নেই আগ্রহ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • / ১৮৬ বার পড়া হয়েছে

প্রায় ৬৭ হাজার বই নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে চুয়াডাঙ্গার দুটি গ্রন্থাগার
মেহেরাব্বিন সানভী:
এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই বলেছিলেন, ‘পাঠককে কাছে টানা পাঠাগারেরই কাজ’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাঠাগারের সংখ্যা, বইও প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর, তবে কমেছে পাঠক। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন হয়নি, লাগেনি প্রযুক্তির ছোঁয়া। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও নগণ্য। পাঠককে পাঠাগারমুখী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রযুক্তিবান্ধব তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিক করতে হবে, বইকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে, বই করতে হবে সহজলভ্য।
চুয়াডাঙ্গা শহরে দুটি গ্রন্থাগার আছে। একটি জেলা শহরের শহীদ রবিউল ইসলাম সড়কের টিএন্ডটি মোড়ে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগাটির আঙ্গিক উন্নয়ন হলেও বাড়ছে না পাঠক সংখ্যা। সরকারি গণগ্রন্থাগারে গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২৫ জন। ১০০ জন একসাথে বসতে পারলেও কখনোই একসাথে তার অর্ধেক মানুষকেও পড়তে দেখা যায় না। তবে সারা দিনে হয়তো একশ পাঠক আসেন। যা জেলা শহরের সরকারি গণগ্রন্থাগার হিসেবে খুবই নগন্য। কলেজের কাছাকাছি হওয়ায় অল্প কিছু শিক্ষার্থী আসলেও নারী পাঠকদের সংখ্যা একেবারেই কম। যাঁরা আসেন, তাঁদের সিংহভাগই চাকরিপ্রত্যাশী অথবা পত্রিকা পড়তে আসেন।
গণগ্রন্থাগারে হয়েছে নতুন ভবন, প্রতিনিয়তই বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা, কিন্তু পাঠক সংখ্যা গড়ে খুবই কম। খুব ধীরে ধীরে গত এক বছরে মাত্র ২৫ জন নতুন সদস্য হয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে সদস্য কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৬ জন সদস্য আছেন। আবার সদস্যদের একটা জামানত থেকে যাওয়ায় নবায়ন না করা হলেও তাঁরা সদস্য সিরিয়ালে অর্ন্তভুক্ত থাকছেন। নবায়ন না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে সদস্য সংখ্যা ৮৬ থেকে কমে আসবে একবারে তলানিতে। কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই পেয়েছে গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ। তবে সমস্যা তৈরি হয়েছে নতুন আরেকটি। বই পড়তে এসে অনেকের সামনে বই থাকলেও বইয়ের ওপর মোবাইল রেখে ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা ভোগ করছেন। আবার গ্রন্থাগারের বাইরে বিভিন্ন সময় মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া অনেকের। সরকারি গ্রন্থাগারের ই-লাইব্রেরি না থাকাটাও একটা সমস্যা বটে। সবমিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, গ্রন্থাগারে কি তাঁরা শুধু ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা নিতেই যাচ্ছেন?
আরেকটি হলো শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগার, যা চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। চুয়াডাঙ্গা শহরের সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার এটি। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে। শহীদ আবুল কাশেম সড়কে শ্রীমন্ত টাউন হলের দ্বিতীয় তলার এ লাইব্রেরিটি বেশ পরিচিত। সাপ্তাহিক শুক্রবার বাদে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পযর্ন্ত খোলা থাকে গ্রন্থাগারটি। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার বই আছে এখানে। আজীবন ২৬৭ এবং নিয়মিত ৫৭৪ জন সদস্য আছেন। সাধারণ সদস্যদের মাসিক চাঁদা ২০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা। পত্রিকা, ম্যাগাজিন রাখা হয় প্রায় আটটি। ২০১১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের থেকে লাইব্রেরিটির তত্ত্বাবধান নেয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। বর্তমানে ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার চেয়ে প্রতিনিয়তই কমছে। এখানেও পুরোনো সদস্যরা করছেন না নবায়ন। সব মিলিয়ে যা পাঠক আসেন, তাঁর প্রায় সবাই পত্রিকা পড়তেই আসেন। বই বাসায় নিয়ে যেয়ে পড়ার পাঠকও কমছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান জুলফিকার মতিন জানান, চুয়াডাঙ্গা পাবলিক লাইব্রেরিতে স্থানীয় লেখকদের বইসহ বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিশুসাহিত্য, দর্শন, খেলাধূলা, বাণিজ্য, ধর্মীয়, ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী, বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের মোট প্রায় ৩৭ হাজার বই রয়েছে। এ ছাড়া পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয়, সাপ্তাহিক, মাসিক, চাকরির পত্রিকাসহ নিয়মিত ১৪টি পত্রিকা রাখা হয়। লাইব্রেরির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮৬ জন। বর্তমানে চাকরিপ্রত্যাশী পাঠকই বেশি।
শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান আসাদুজ্জামান রাজু বলেন, ‘প্রায় পরিত্যক্ত ভবনে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম পরিচালিত। ভবনটির মেরামত করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ পাঠকই পত্রিকা পড়তে আসেন। তবে বই নিয়ে যেয়ে পড়ার পাঠকের সংখ্যা আগের থেকে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মেরামত ও বরাদ্দ বাড়িয়ে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী উন্নয়ন করলে পাঠকের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
সরকারি গণগ্রন্থাগারের একজন প্রবীণ পাঠক আকবর আলী জানালেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক। তিনি বলেন, আগের মতো বইয়ের পাঠক এখন আর নেই। মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে পাঠক একটু কমেছে। আগের মতো মানুষ আর এখন আসে না।
কথা হয় গণগ্রন্থাগারে আসা পাঠক প্রিন্সের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূল যারা পাঠক, সেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই ক্লাসের পড়ার চাপে লাইব্রেরিতে এখন আসতে পারছে না। আর জাতীয়ভাবেই আমাদের পাঠের অভ্যাস কমে গেছে। ছেলেমেয়েরা সব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে।’
গণগ্রন্থাগারের অফিস সহায়ক জানান, অন্যান্য জেলাগুলোর চেয়ে চুয়াডাঙ্গা পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক সমাগম অনেক। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে লাইব্রেরি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত প্রায় সব সময়ই পাঠক সমাগম থাকে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র ফাহিম। সময়ের সমীকরণকে তিনি জানান, প্রায় প্রতিদিনই পড়াশুনা ও টিউশনির ফাঁকে লাইব্রেরিতে আসেন তিনি। তবে বেশির ভাগ সময়ই পত্রিকা পড়তে আসা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অল্প সময় পাই, তাই লাইব্রেরিতে এসে বই পড়া হয় কম।’ ঠিক একইভাবে নিয়মিত লাইব্রেরিতে আসেন সোহানুর রহমান। পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি ম্যাগাজিন পড়তে পছন্দ করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, বইয়ের পাঠক আগের মতো আর নেই। ডিজিটাল যুগ আসার পর জ্ঞান অন্বেষণ থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে। একুশে বইমেলায় বিপুল উৎসাহ লক্ষ করা গেলেও বাস্তবে বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে। চেষ্টা আছে, কিন্তু বইয়ের দিকে ফেরানো যাচ্ছে না। ইন্টারনেট, ফেসবুক নিয়ে সবাই ব্যস্ত, কেউ লাইব্রেরিমুখী হতে চায় না। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু বইয়ের দিকেই আসতে হবে। না হলে প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণ হবে না। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না।
সরকারি চাকুরিজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা গণগ্রন্থাগারগুলো পাঠক ধরে রাখতে না পারার একটি কারণ হচ্ছে সময়সূচি। গণগ্রন্থাগারগুলো খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। চাকরিজীবীরা অবসর সময়টি লাইব্রেরিতে কাটাতে চাইলেও তা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, লাইব্রেরিগুলো পাঠক সমাগমের জন্য খোলা রাখা উচিত বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তা ছাড়া শুক্রবার ও শনিবারও খোলা রাখা উচিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাড়ছে না পাঠক, বইপাঠে তরুণদের নেই আগ্রহ

আপলোড টাইম : ০৯:১২:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

প্রায় ৬৭ হাজার বই নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে চুয়াডাঙ্গার দুটি গ্রন্থাগার
মেহেরাব্বিন সানভী:
এক সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই বলেছিলেন, ‘পাঠককে কাছে টানা পাঠাগারেরই কাজ’। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পাঠাগারের সংখ্যা, বইও প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর, তবে কমেছে পাঠক। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রন্থাগারের আধুনিকায়ন হয়নি, লাগেনি প্রযুক্তির ছোঁয়া। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও নগণ্য। পাঠককে পাঠাগারমুখী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, প্রযুক্তিবান্ধব তরুণ প্রজন্মকে বইমুখী করতে গ্রন্থাগারগুলোকে আধুনিক করতে হবে, বইকে তাদের কাছে নিয়ে যেতে হবে, বই করতে হবে সহজলভ্য।
চুয়াডাঙ্গা শহরে দুটি গ্রন্থাগার আছে। একটি জেলা শহরের শহীদ রবিউল ইসলাম সড়কের টিএন্ডটি মোড়ে অবস্থিত চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগার। গ্রন্থাগাটির আঙ্গিক উন্নয়ন হলেও বাড়ছে না পাঠক সংখ্যা। সরকারি গণগ্রন্থাগারে গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ২৫ জন। ১০০ জন একসাথে বসতে পারলেও কখনোই একসাথে তার অর্ধেক মানুষকেও পড়তে দেখা যায় না। তবে সারা দিনে হয়তো একশ পাঠক আসেন। যা জেলা শহরের সরকারি গণগ্রন্থাগার হিসেবে খুবই নগন্য। কলেজের কাছাকাছি হওয়ায় অল্প কিছু শিক্ষার্থী আসলেও নারী পাঠকদের সংখ্যা একেবারেই কম। যাঁরা আসেন, তাঁদের সিংহভাগই চাকরিপ্রত্যাশী অথবা পত্রিকা পড়তে আসেন।
গণগ্রন্থাগারে হয়েছে নতুন ভবন, প্রতিনিয়তই বাড়ছে বইয়ের সংখ্যা, কিন্তু পাঠক সংখ্যা গড়ে খুবই কম। খুব ধীরে ধীরে গত এক বছরে মাত্র ২৫ জন নতুন সদস্য হয়েছেন। ২০১৩ সাল থেকে সদস্য কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৬ জন সদস্য আছেন। আবার সদস্যদের একটা জামানত থেকে যাওয়ায় নবায়ন না করা হলেও তাঁরা সদস্য সিরিয়ালে অর্ন্তভুক্ত থাকছেন। নবায়ন না করার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে সদস্য সংখ্যা ৮৬ থেকে কমে আসবে একবারে তলানিতে। কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে ফ্রি ওয়াই-ফাই পেয়েছে গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ। তবে সমস্যা তৈরি হয়েছে নতুন আরেকটি। বই পড়তে এসে অনেকের সামনে বই থাকলেও বইয়ের ওপর মোবাইল রেখে ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা ভোগ করছেন। আবার গ্রন্থাগারের বাইরে বিভিন্ন সময় মোবাইল হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া অনেকের। সরকারি গ্রন্থাগারের ই-লাইব্রেরি না থাকাটাও একটা সমস্যা বটে। সবমিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, গ্রন্থাগারে কি তাঁরা শুধু ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা নিতেই যাচ্ছেন?
আরেকটি হলো শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগার, যা চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত। চুয়াডাঙ্গা শহরের সবচেয়ে পুরোনো গ্রন্থাগার এটি। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে। শহীদ আবুল কাশেম সড়কে শ্রীমন্ত টাউন হলের দ্বিতীয় তলার এ লাইব্রেরিটি বেশ পরিচিত। সাপ্তাহিক শুক্রবার বাদে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পযর্ন্ত খোলা থাকে গ্রন্থাগারটি। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার বই আছে এখানে। আজীবন ২৬৭ এবং নিয়মিত ৫৭৪ জন সদস্য আছেন। সাধারণ সদস্যদের মাসিক চাঁদা ২০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের ১০ টাকা। পত্রিকা, ম্যাগাজিন রাখা হয় প্রায় আটটি। ২০১১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের থেকে লাইব্রেরিটির তত্ত্বাবধান নেয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। বর্তমানে ৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার চেয়ে প্রতিনিয়তই কমছে। এখানেও পুরোনো সদস্যরা করছেন না নবায়ন। সব মিলিয়ে যা পাঠক আসেন, তাঁর প্রায় সবাই পত্রিকা পড়তেই আসেন। বই বাসায় নিয়ে যেয়ে পড়ার পাঠকও কমছে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি গণগ্রন্থাগারের জুনিয়র লাইব্রেরিয়ান জুলফিকার মতিন জানান, চুয়াডাঙ্গা পাবলিক লাইব্রেরিতে স্থানীয় লেখকদের বইসহ বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য, আইন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, শিশুসাহিত্য, দর্শন, খেলাধূলা, বাণিজ্য, ধর্মীয়, ভ্রমণ কাহিনী, আত্মজীবনী, বিজ্ঞান ও অন্যান্য বিষয়ের মোট প্রায় ৩৭ হাজার বই রয়েছে। এ ছাড়া পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী জাতীয়, আঞ্চলিক, স্থানীয়, সাপ্তাহিক, মাসিক, চাকরির পত্রিকাসহ নিয়মিত ১৪টি পত্রিকা রাখা হয়। লাইব্রেরির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮৬ জন। বর্তমানে চাকরিপ্রত্যাশী পাঠকই বেশি।
শহীদ আবুল হোসেন স্মৃতি পাঠাগারের লাইব্রেরিয়ান আসাদুজ্জামান রাজু বলেন, ‘প্রায় পরিত্যক্ত ভবনে লাইব্রেরিটির কার্যক্রম পরিচালিত। ভবনটির মেরামত করা প্রয়োজন। বেশির ভাগ পাঠকই পত্রিকা পড়তে আসেন। তবে বই নিয়ে যেয়ে পড়ার পাঠকের সংখ্যা আগের থেকে কমে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে মেরামত ও বরাদ্দ বাড়িয়ে বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী উন্নয়ন করলে পাঠকের সংখ্যা আরও বাড়বে।’
সরকারি গণগ্রন্থাগারের একজন প্রবীণ পাঠক আকবর আলী জানালেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই গ্রন্থাগারের নিয়মিত পাঠক। তিনি বলেন, আগের মতো বইয়ের পাঠক এখন আর নেই। মোবাইল প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে পাঠক একটু কমেছে। আগের মতো মানুষ আর এখন আসে না।
কথা হয় গণগ্রন্থাগারে আসা পাঠক প্রিন্সের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মূল যারা পাঠক, সেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই ক্লাসের পড়ার চাপে লাইব্রেরিতে এখন আসতে পারছে না। আর জাতীয়ভাবেই আমাদের পাঠের অভ্যাস কমে গেছে। ছেলেমেয়েরা সব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে।’
গণগ্রন্থাগারের অফিস সহায়ক জানান, অন্যান্য জেলাগুলোর চেয়ে চুয়াডাঙ্গা পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠক সমাগম অনেক। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে লাইব্রেরি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত প্রায় সব সময়ই পাঠক সমাগম থাকে।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র ফাহিম। সময়ের সমীকরণকে তিনি জানান, প্রায় প্রতিদিনই পড়াশুনা ও টিউশনির ফাঁকে লাইব্রেরিতে আসেন তিনি। তবে বেশির ভাগ সময়ই পত্রিকা পড়তে আসা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অল্প সময় পাই, তাই লাইব্রেরিতে এসে বই পড়া হয় কম।’ ঠিক একইভাবে নিয়মিত লাইব্রেরিতে আসেন সোহানুর রহমান। পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি ম্যাগাজিন পড়তে পছন্দ করেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, বইয়ের পাঠক আগের মতো আর নেই। ডিজিটাল যুগ আসার পর জ্ঞান অন্বেষণ থেকে মানুষ সরে যাচ্ছে। একুশে বইমেলায় বিপুল উৎসাহ লক্ষ করা গেলেও বাস্তবে বইয়ের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কমে যাচ্ছে। চেষ্টা আছে, কিন্তু বইয়ের দিকে ফেরানো যাচ্ছে না। ইন্টারনেট, ফেসবুক নিয়ে সবাই ব্যস্ত, কেউ লাইব্রেরিমুখী হতে চায় না। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু বইয়ের দিকেই আসতে হবে। না হলে প্রকৃত জ্ঞান অন্বেষণ হবে না। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হবে না।
সরকারি চাকুরিজীবী মনিরুজ্জামান বলেন, জেলা গণগ্রন্থাগারগুলো পাঠক ধরে রাখতে না পারার একটি কারণ হচ্ছে সময়সূচি। গণগ্রন্থাগারগুলো খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। চাকরিজীবীরা অবসর সময়টি লাইব্রেরিতে কাটাতে চাইলেও তা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, লাইব্রেরিগুলো পাঠক সমাগমের জন্য খোলা রাখা উচিত বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত। তা ছাড়া শুক্রবার ও শনিবারও খোলা রাখা উচিত।