ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাড়ছে নারী নির্যাতন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
  • / ১২২ বার পড়া হয়েছে

প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ চাই
গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্জন অনেক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অবস্থান এখন অনেক দৃঢ়; কিন্তু তার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কি কমেছে? বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫০ হাজার ১০টি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ মাসে দেশে আড়াই হাজারের বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি হিসাব বলছে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৩টি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৩৪৯টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৮৪টি। আর সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৭৫০টি। আর ২০১৯ সালে এই মামলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৩টি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্য মতে, গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন সহিংসতার ঘটনায় কল এসেছে ছয় হাজার ২৮৯টি। আর চলতি বছরের ১০ মাসেই কল এসেছে সাত হাজার ৭৩৫টি। নারী নির্যাতনের ঘটনা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সিলেট ও নোয়াখালীর ধর্ষণ-নিপীড়নের পর দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী তীব্র বিক্ষোভ হলে সরকার গত মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছে। কিন্তু এর প্রভাব অপরাধীদের মধ্যে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। সাজা বাড়লেও কমেনি ধর্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর আইন ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক হচ্ছে না। কারণ যারা এ অপরাধ করছে, তারা ধর্ষণকে অপরাধ বলেই মনে করে না। সচেতনতা বাড়ালে এবং শাস্তি কার্যকর করা গেলে এর প্রভাব পড়বে। তাঁদের মতে, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। যেসব মামলা হচ্ছে তার দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা। আমরা মনে করি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, বিশেষজ্ঞদের এই মতের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। সমাজপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাড়ছে নারী নির্যাতন

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০

প্রতিরোধে সম্মিলিত উদ্যোগ চাই
গতকাল ছিল আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। নারী উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অর্জন অনেক ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় ও প্রশংসনীয়। সব পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি কর্মক্ষেত্রে ও চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অবস্থান এখন অনেক দৃঢ়; কিন্তু তার পরও নারীর প্রতি সহিংসতা কি কমেছে? বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৫০ হাজার ১০টি। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ মাসে দেশে আড়াই হাজারের বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একটি হিসাব বলছে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৪৮৩টি, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৩৪৯টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৮৪টি। আর সুপ্রিম কোর্টের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশে নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৭৫০টি। আর ২০১৯ সালে এই মামলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৯৩টি। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্য মতে, গত বছর নারী ও শিশু নির্যাতন সহিংসতার ঘটনায় কল এসেছে ছয় হাজার ২৮৯টি। আর চলতি বছরের ১০ মাসেই কল এসেছে সাত হাজার ৭৩৫টি। নারী নির্যাতনের ঘটনা কেন বাড়ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্যাতনের মামলাগুলোর ‘ঠিকমতো বিচার না হওয়ার’ কারণেই নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সিলেট ও নোয়াখালীর ধর্ষণ-নিপীড়নের পর দেশব্যাপী ধর্ষণবিরোধী তীব্র বিক্ষোভ হলে সরকার গত মাসে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছে। কিন্তু এর প্রভাব অপরাধীদের মধ্যে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। সাজা বাড়লেও কমেনি ধর্ষণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর আইন ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক হচ্ছে না। কারণ যারা এ অপরাধ করছে, তারা ধর্ষণকে অপরাধ বলেই মনে করে না। সচেতনতা বাড়ালে এবং শাস্তি কার্যকর করা গেলে এর প্রভাব পড়বে। তাঁদের মতে, নির্যাতন কমাতে হলে সত্যিকার অর্থে আইনের কঠোর প্রয়োগ হতে হবে। যেসব মামলা হচ্ছে তার দ্রুত বিচার হতে হবে। বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মনে করেন তাঁরা। আমরা মনে করি, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, বিশেষজ্ঞদের এই মতের সঙ্গে আমরা সহমত পোষণ করি। সমাজপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতা। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।