ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাল্যবিবাহ সামাজিক অভিশাপ এবং নারী জাগরণ ও মুক্তি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৬:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ নভেম্বর ২০১৮
  • / ২৮৭ বার পড়া হয়েছে

আওয়াল হোসেন ও সজল: আমাদের সমাজে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারনে যে কয়টি সামাজিক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ নারী ও পুরুষের বিশেষ করে নারীর শৈশব-কৈশর ও আগামির স্বপ্নগুলো কেড়ে নেয়। এতে করে একজন নারীর স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়। বাল্যবিবাহের কারনে শুধু অল্প বয়সি নারী বা তার পরিবারই আক্রান্ত হয় না, এতে সমাজ ও দেশ হয় অপুষ্টি ও দূর্বল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী। বাল্যবিবাহের প্রধান কারন হিসাবে দারিদ্রতা, শিক্ষার অভাব ও কুসংস্কারকে চিহ্নিত করা হয়। দারিদ্র্য মানুষের সব মৌলিক চাহিদাকে কারারুদ্ধ করে তাছাড়া এখন ও অনেক পরিবার, স্থান আছে যেখানে শিক্ষার আলো পৌছায়নি এবং ধর্মিয় কুসংস্কারের মধ্যে আবদ্ধ। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে যখন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় গড় সংখ্যা দাড়ায় দুই শতর উপরে অথচ ওই ছাত্র-ছাত্রীই যখন দশম শ্রেণীতে উঠে গড় সংখ্যা দাড়ায় শুধু ৭০ জনের আধিকাংশ ঝরে পড়ে বাল্যবিবাহ জনিত কারনে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশে তিনজন কিশোরির মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয় ১৮ বছরের নিচে আবার ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের বিয়ে হয় ১৫ বছর পূর্ণ হবার আগে। বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিবাহ রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। জেলাতে বাল্যবিবাহ রোধে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি হলেও থামানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। অন্যদিকে সমাজে যাদের বাল্যবিবাহ ঠেকানোর কথা তারাও অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের ভূমিকা রাখছে গোপনে। আবার কেউ কেউ ভোট অংকের হিসাব কষার কারনে আইন না মানার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারনে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব হচ্ছে না। বাল্যবিবাহ রোধে দরকার অভিভাবক ও আইন বাস্তবায়নকারীদের শক্ত পদক্ষেপ। কবির ভাষায় বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারি অর্ধেক নার নর। অধিকার ও দায়িত্ব ছোট ছোট দুটি শব্দ কিন্তু শব্দ দুটি অত্যন্ত শক্তিশালি এবং অর্থবহ।
উদাহরনস্বরুপ বলা যেতে পারে একজন শিশু সে তার মায়ের বুকের দুধ পান করবে এটা তার অধিকার মা, শিশুকে তার নিজের বুকের দুধ পান করাবে এটা মা হিসাবে তার দায়িত্ব তাই প্রত্যেক নারীকে তার নিজ দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে হতে হবে অত্যন্ত সচেতন। নারী শুধুই নারী নয়, নারীও মানুষ। মনুষ হিসেবে একক পরিচয়ে মাথা তোল তুমি নারী। যে পুরুষ তার ক্ষমতার অহংকারে বলীয়ান সে পুরুষকে সমাজে সরবরাহ করে নারী হিসেবে একজন মা। কিন্তু আদিকাল থেকে নারীর ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এক রকম স্বাভাবিক ব্যাপার। পত্রিকায় পাতায় বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিদিনকার ঘটনা। বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন বিচিত্র রকমের শারীরিক নির্যাতন, মানযিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও অর্থনৈতিক নির্যাতন। নির্যাতনের মূলে রয়েছে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব অর্থ উপার্জন বা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মোহ। নারী জাগরণের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল¯্রােতে নারীর অংশগ্রহন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাল্যবিবাহ সামাজিক অভিশাপ এবং নারী জাগরণ ও মুক্তি

আপলোড টাইম : ০৫:০৬:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ নভেম্বর ২০১৮

আওয়াল হোসেন ও সজল: আমাদের সমাজে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারনে যে কয়টি সামাজিক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহ নারী ও পুরুষের বিশেষ করে নারীর শৈশব-কৈশর ও আগামির স্বপ্নগুলো কেড়ে নেয়। এতে করে একজন নারীর স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়। বাল্যবিবাহের কারনে শুধু অল্প বয়সি নারী বা তার পরিবারই আক্রান্ত হয় না, এতে সমাজ ও দেশ হয় অপুষ্টি ও দূর্বল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উত্তরাধিকারী। বাল্যবিবাহের প্রধান কারন হিসাবে দারিদ্রতা, শিক্ষার অভাব ও কুসংস্কারকে চিহ্নিত করা হয়। দারিদ্র্য মানুষের সব মৌলিক চাহিদাকে কারারুদ্ধ করে তাছাড়া এখন ও অনেক পরিবার, স্থান আছে যেখানে শিক্ষার আলো পৌছায়নি এবং ধর্মিয় কুসংস্কারের মধ্যে আবদ্ধ। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বছরের শুরুতে যখন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয় গড় সংখ্যা দাড়ায় দুই শতর উপরে অথচ ওই ছাত্র-ছাত্রীই যখন দশম শ্রেণীতে উঠে গড় সংখ্যা দাড়ায় শুধু ৭০ জনের আধিকাংশ ঝরে পড়ে বাল্যবিবাহ জনিত কারনে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক নির্মম ব্যবস্থা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশে তিনজন কিশোরির মধ্যে দুইজনের বিয়ে হয় ১৮ বছরের নিচে আবার ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের বিয়ে হয় ১৫ বছর পূর্ণ হবার আগে। বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে চুয়াডাঙ্গার জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বাল্যবিবাহ রোধে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। জেলাতে বাল্যবিবাহ রোধে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি হলেও থামানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে। অন্যদিকে সমাজে যাদের বাল্যবিবাহ ঠেকানোর কথা তারাও অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের ভূমিকা রাখছে গোপনে। আবার কেউ কেউ ভোট অংকের হিসাব কষার কারনে আইন না মানার সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারনে বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব হচ্ছে না। বাল্যবিবাহ রোধে দরকার অভিভাবক ও আইন বাস্তবায়নকারীদের শক্ত পদক্ষেপ। কবির ভাষায় বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যানকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারি অর্ধেক নার নর। অধিকার ও দায়িত্ব ছোট ছোট দুটি শব্দ কিন্তু শব্দ দুটি অত্যন্ত শক্তিশালি এবং অর্থবহ।
উদাহরনস্বরুপ বলা যেতে পারে একজন শিশু সে তার মায়ের বুকের দুধ পান করবে এটা তার অধিকার মা, শিশুকে তার নিজের বুকের দুধ পান করাবে এটা মা হিসাবে তার দায়িত্ব তাই প্রত্যেক নারীকে তার নিজ দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে হতে হবে অত্যন্ত সচেতন। নারী শুধুই নারী নয়, নারীও মানুষ। মনুষ হিসেবে একক পরিচয়ে মাথা তোল তুমি নারী। যে পুরুষ তার ক্ষমতার অহংকারে বলীয়ান সে পুরুষকে সমাজে সরবরাহ করে নারী হিসেবে একজন মা। কিন্তু আদিকাল থেকে নারীর ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এক রকম স্বাভাবিক ব্যাপার। পত্রিকায় পাতায় বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিদিনকার ঘটনা। বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন বিচিত্র রকমের শারীরিক নির্যাতন, মানযিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন ও অর্থনৈতিক নির্যাতন। নির্যাতনের মূলে রয়েছে ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব অর্থ উপার্জন বা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মোহ। নারী জাগরণের মাধ্যমে বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মূল¯্রােতে নারীর অংশগ্রহন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নসহ সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারীর অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।