ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মানবাধিকারে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৩৫৯ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের আইনে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার দেওয়া হলেও সরকার তা সীমিত করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০১৭ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের ‘নেতিবাচক আচরণের’ বিষয়টিও উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই বার্ষিক প্রতিবেদনে। ৪২ বছরের প্রথা অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার রাতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশের আইনে থাকলেও সরকার তা সীমিত করেছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে।”
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিবেদনে ‘এনজিও’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “এক সময়ের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এনজিও হিসেবে ঘরোয়া বৈঠকের অনুমতি চেয়েও পায়নি।”
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং তাদের মতামত নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারলেও যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে তারা নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও সরকার কখনও কখনও সে অধিকারের প্রতি ‘সম্মান প্রদর্শন করে না’।
কথা বলার অধিকারের প্রতি সরকারের একটি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কোনো কোনো সাংবাদিকও নিজে থেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারের দমন-পীড়নের আতঙ্কে। সবাই চুপ থাকছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশনার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদবির ‘ব্যাপক প্রভাব ফেলে’ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরাই সাধারণত লাইসেন্স পায়।
বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আইনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলেও ‘দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে’ তা কার্যকর হচ্ছে না।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের প্রসঙ্গও এসেছে প্রতিবেদনে।
ওই বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “বছরের (২০১৭ সাল) শেষ দিকে সরকার প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকে। আর সরকারের এসব কথাবার্তাকে মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতরা রাজনৈতিক অভিসন্ধিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন।”
মানবাধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে এতে অভিযোগ করা হয়, বিচারক, সরকারি কৌসুলি ও আদালতের কর্মকর্তারা অনেক আসামির কাছে ঘুষ দাবি করেন। “ঘুষ যারা চাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে (ক্রসফায়ার) ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। অধিকার নামের আরেকটি সংস্থার হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১৮ জন ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের’ শিকার হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসকের তথ্য অনুযায়ী গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর অধিকার বলেছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ‘আটক ছয়জনকে হত্যা করে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সবিস্তারে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণের দায় মিয়ানমার প্রশাসনকে নিতেই হবে। মানবিক বিপর্যয়ের জন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মানবাধিকারে

আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন
ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের আইনে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার দেওয়া হলেও সরকার তা সীমিত করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০১৭ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংবাদমাধ্যমের প্রতি সরকারের ‘নেতিবাচক আচরণের’ বিষয়টিও উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এই বার্ষিক প্রতিবেদনে। ৪২ বছরের প্রথা অনুযায়ী বিশ্বের প্রায় ২০০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গত শুক্রবার রাতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভান।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার বাংলাদেশের আইনে থাকলেও সরকার তা সীমিত করেছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে হচ্ছে।”
একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিবেদনে ‘এনজিও’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “এক সময়ের রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এনজিও হিসেবে ঘরোয়া বৈঠকের অনুমতি চেয়েও পায়নি।”
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং তাদের মতামত নিঃসংকোচে প্রকাশ করতে পারলেও যেসব গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে তারা নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে বাক স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও সরকার কখনও কখনও সে অধিকারের প্রতি ‘সম্মান প্রদর্শন করে না’।
কথা বলার অধিকারের প্রতি সরকারের একটি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কোনো কোনো সাংবাদিকও নিজে থেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন সরকারের দমন-পীড়নের আতঙ্কে। সবাই চুপ থাকছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রের প্রচার ও প্রকাশনার লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক তদবির ‘ব্যাপক প্রভাব ফেলে’ উল্লেখ করে এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীনদের সমর্থকরাই সাধারণত লাইসেন্স পায়।
বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আইনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকলেও ‘দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে’ তা কার্যকর হচ্ছে না।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগের প্রসঙ্গও এসেছে প্রতিবেদনে।
ওই বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, “বছরের (২০১৭ সাল) শেষ দিকে সরকার প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উত্থাপন করতে থাকে। আর সরকারের এসব কথাবার্তাকে মানবাধিকার নিয়ে কর্মরতরা রাজনৈতিক অভিসন্ধিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন।”
মানবাধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে এতে অভিযোগ করা হয়, বিচারক, সরকারি কৌসুলি ও আদালতের কর্মকর্তারা অনেক আসামির কাছে ঘুষ দাবি করেন। “ঘুষ যারা চাচ্ছেন তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে (ক্রসফায়ার) ১৬২ জন নিহত হয়েছেন। অধিকার নামের আরেকটি সংস্থার হিসাবে গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১১৮ জন ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের’ শিকার হন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসকের তথ্য অনুযায়ী গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর অধিকার বলেছে, বছরের প্রথম ছয় মাসে ‘আটক ছয়জনকে হত্যা করে’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সবিস্তারে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণের দায় মিয়ানমার প্রশাসনকে নিতেই হবে। মানবিক বিপর্যয়ের জন্য তাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতেই হবে।