ইপেপার । আজমঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের জনশক্তি ১৬৮টি দেশে পাঠানো হচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯
  • / ১০৭০ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক সেমিনারে যুগ্ম সচিব শফিকুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা’ শীর্ষক প্রচারণামূলক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জেনে বুঝে বিদেশ যাই, অর্থ সম্মান দুটোই পাই’।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং এর আলোকে আলোচনা করেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও কল্যাণ) মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকার চাকরির জন্য বিদেশ গমনকারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৭ ও ১৮ সালেই জনশক্তি পাঠানো হয়েছে ১৭ লক্ষাধিক। অন্যদিকে প্রতিবছর ওই খাত থেকে ১৪-১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। জনশক্তিকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা আরও অধিক অর্জিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোনো দেশের প্রবাসী কর্মীরা চুক্তির মেয়াদ শেষে আর বিদেশে থাকেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রবাসীরা একবার বিদেশে যেতে পারলে মৃত্যুর আগে আর ফিরতে চান না। ফলে বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫-২০ জন প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে ফিরছে। গত বছর প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার।’
সেমিনারে বক্তারা চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্ট নিয়োগ, ডেমো অফিস স্থাপন, সঠিক তথ্য যাচাই, টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে বিদেশ পাঠানোর ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিসহ মাঠ পর্যায়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রতারণা ও দুর্ভোগ লাঘবে নিরাপদ অভিবাসনবিষয়ক ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর মতামত তুলে ধরলে, প্রধান অতিথি ওই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রবাসী কর্মৗদের জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপদে বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনে সহায়তা, প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, মৃত প্রবাসী কর্মীর মরদেহ দেশে আনয়ন এবং সৎকারসহ মৃতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, কর্মীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় ও ওয়ারিশদের মধ্যে বিতরণ, প্রবাসে আটক কর্মীদের মুক্তকরণ, নারী কর্মীর জন্য সেইফ হোম স্থাপনসহ ফেরত আনয়ন, আহত ও অসুস্থ কর্মীদের দেশে ফেরত আনয়ন, চিকিৎসার ব্যবস্থা ও আর্থিক সাহায্য প্রদান। এজন্য ২০১৬ সালে প্রবাসে মৃত ৫ হাজার ১০৫ জন প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৯৪২টি পরিবারতে প্রায় ১১৪ কোটি টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে মৃত ১ হাজার ৫৮ জন কর্মীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণবাবদ আদায়কৃত ৬৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন।
সেমিনারে চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে মোট ৪০ জন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। প্রত্যেক গ্রুপে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদা সুপারিশ মালা উপস্থাপন করেন। এতে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপদ অভিবাসন যেমন, ঋণ প্রদান, যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সে দেশের আইন-কানুন, ভাষা, আবহাওয়া, অধিকার, প্রশিক্ষণ, হেল্পলাইন খোলা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে ফেরত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের বিষয়ও উঠে আসে সুপারিশমালায়।
সেমিনারে জেলা প্রশাসনের কমকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাংবাদিক, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কমকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজের প্রধান, মসজিদের ইমামসহ বিভন্ন দপ্তরের কমকর্তারা অংশ নেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশের জনশক্তি ১৬৮টি দেশে পাঠানো হচ্ছে

আপলোড টাইম : ১০:১৮:০৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুন ২০১৯

চুয়াডাঙ্গায় দক্ষতা ও সচেতনতা শীর্ষক সেমিনারে যুগ্ম সচিব শফিকুল ইসলাম
বিশেষ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা ও সচেতনতা’ শীর্ষক প্রচারণামূলক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জেনে বুঝে বিদেশ যাই, অর্থ সম্মান দুটোই পাই’।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং এর আলোকে আলোচনা করেন প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (অর্থ ও কল্যাণ) মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সরকার চাকরির জন্য বিদেশ গমনকারীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তি পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে ২০১৭ ও ১৮ সালেই জনশক্তি পাঠানো হয়েছে ১৭ লক্ষাধিক। অন্যদিকে প্রতিবছর ওই খাত থেকে ১৪-১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে। জনশক্তিকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা আরও অধিক অর্জিত হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোনো দেশের প্রবাসী কর্মীরা চুক্তির মেয়াদ শেষে আর বিদেশে থাকেন না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রবাসীরা একবার বিদেশে যেতে পারলে মৃত্যুর আগে আর ফিরতে চান না। ফলে বার্ধক্য, অসুস্থতাসহ নানা কারণে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫-২০ জন প্রবাসী কর্মীর লাশ দেশে ফিরছে। গত বছর প্রবাসী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার।’
সেমিনারে বক্তারা চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্ট নিয়োগ, ডেমো অফিস স্থাপন, সঠিক তথ্য যাচাই, টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলে বিদেশ পাঠানোর ঘোষণা বাস্তবায়নের দাবিসহ মাঠ পর্যায়ে বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রতারণা ও দুর্ভোগ লাঘবে নিরাপদ অভিবাসনবিষয়ক ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তোলার ওপর মতামত তুলে ধরলে, প্রধান অতিথি ওই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
এ ছাড়া সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রবাসী কর্মৗদের জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপদে বিদেশ গমন ও প্রত্যাবর্তনে সহায়তা, প্রবাসী কর্মীর সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, মৃত প্রবাসী কর্মীর মরদেহ দেশে আনয়ন এবং সৎকারসহ মৃতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, কর্মীর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় ও ওয়ারিশদের মধ্যে বিতরণ, প্রবাসে আটক কর্মীদের মুক্তকরণ, নারী কর্মীর জন্য সেইফ হোম স্থাপনসহ ফেরত আনয়ন, আহত ও অসুস্থ কর্মীদের দেশে ফেরত আনয়ন, চিকিৎসার ব্যবস্থা ও আর্থিক সাহায্য প্রদান। এজন্য ২০১৬ সালে প্রবাসে মৃত ৫ হাজার ১০৫ জন প্রবাসী কর্মীর পরিবারকে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৯৪২টি পরিবারতে প্রায় ১১৪ কোটি টাকার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ সালে মৃত ১ হাজার ৫৮ জন কর্মীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণবাবদ আদায়কৃত ৬৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কানাই লাল সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোন্দকার ফরহাদ আহমদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা পারভীন।
সেমিনারে চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে মোট ৪০ জন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। প্রত্যেক গ্রুপে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলাদা আলাদা সুপারিশ মালা উপস্থাপন করেন। এতে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপদ অভিবাসন যেমন, ঋণ প্রদান, যে দেশে যেতে ইচ্ছুক সে দেশের আইন-কানুন, ভাষা, আবহাওয়া, অধিকার, প্রশিক্ষণ, হেল্পলাইন খোলা ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে। এ ছাড়াও বিদেশ থেকে ফেরত ব্যক্তি ও তাঁদের পরিবারের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের বিষয়ও উঠে আসে সুপারিশমালায়।
সেমিনারে জেলা প্রশাসনের কমকর্তা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সাংবাদিক, উপজেলা চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কমকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্কুল-কলেজের প্রধান, মসজিদের ইমামসহ বিভন্ন দপ্তরের কমকর্তারা অংশ নেন।