ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের কারাগারে শোচনীয় পরিস্থিতি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০
  • / ২১৪ বার পড়া হয়েছে

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যর্থতা ও কারাগারগুলোর শোচনীয় পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে। প্রতি বছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) ‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইনে নির্যাতন বা অন্যধরনের নির্মম, অমানবিক আচরণ বা শাস্তি নিষিদ্ধ থাকলেও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে এসব কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগটঠন ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীগুলো এসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আরো বলা হয়েছে, অভিযুক্ত জঙ্গি ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য নির্যাতন চালিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে যে, নিরাপত্তাবাহিনী হুমকি, মারধর, হাঁটুতে আঘাত করা (নিক্যাপিং; সাধারণত গুলি করে এধরনের আঘাত করা হয়), বৈদ্যুতিক শক দেয়া এবং মাঝে মাঝে ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতনও করেছে। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি (সিএটি) বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে নির্যাতন ও অসদাচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্বীকারোক্তি উদ্ধার বা ঘুষের অর্থ আদায়ের জন্য এসব নির্যাতন করা হয়ে থাকে। প্রতিবেদনটিতে নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত তথ্যের ঘাটতি এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে, বিশেষ করে র‌্যাবের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরা হয়। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অনুসারে, গত বছরে জুনে তাহমিনা বেগম নামের এক নারী নরসিংদীর গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে তার ছেলে সোহেল মিয়াকে আটকে রেখে তার কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। ছেলের মুক্তির জন্য তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। তিনি ওই টাকা দিতে অস্বিকৃতী জানালে পুলিশ তার ছেলেকে বৈদ্যুতিক শক দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে তার ছেলেকে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলার হুমকি দিলে তিনি পুলিশকে ১ লাখ টাকা দেন। এরপর তারা সোহেলকে ছেড়ে দেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটিতে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক রোহিঙ্গা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগও ওঠে এসেছে। বলা হয়, গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত চালু করে। ওই শিশুর ভাই মোহাম্মদ ওসমানের ভাষ্য, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর তিন সেনা মিলে তার বোনকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর তদন্ত এখনো চলছে। কিন্তু ওসমানের দাবি, নিরাপতাবাহিনীর সদস্যরা তার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ না করতে বলেছে। এসব হুমকির কারণে তারা অভিযোগ করেনি। এছাড়া, ২০১৮ সালের আগস্টে সাংবাদিক শহিদুল আলমের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
কারাগার ও বন্দিশিবিরের পরিস্থিতি:
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনটিতে, বাংলাদেশের কারাগারগুলোর কঠিন পরিস্থিতির সমালোচনা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিগুলো সময়ভেদে জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কারাগারের ভেতরকার পরিবেশ জনাকীর্ণ। এর স্থাপনাগুলো অপর্যাপ্ত ও সেখানে নিম্ন মানের স্যানিটেশন ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে।
শারীরিক পরিস্থিতি:
কারাগার বিভাগ অনুসারে, ৩৭ হাজার বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কারাগার ব্যবস্থায় বর্তমানে ৮০ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে মামলার বিচারকার্য শেষ হয়নি এমন বন্দিদের দোষী সাব্যস্ত বন্দিদের সঙ্গে রেখে দেয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিৎ এক মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে কারাগারগুলোয় ৮০ হাজারের বেশি বন্দিদের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র নয় জন। এছাড়া। ৬০টি কারাগারে কোনো চিকিৎসকই নেই। কারাগার বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক জানান, ২০১৮ সালে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১৬ জন বন্দি।
প্রশাসন:
কারাগারগুলোয় বন্দিরা অভিযোগ দায়ের করার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই। কারাগার কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা কর্মী ঘাটতিতে ভুগছে। পুনঃপ্রশিক্ষণ ও প্রত্যাবাসন কর্মসূচী খুবই সীমিত।
স্বাধীন পর্যবেক্ষণ:
সরকারি পরিদর্শকর ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি পর্যবেক্ষকদের কারাগার পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেসব পরিদর্শনের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশের কারাগারে শোচনীয় পরিস্থিতি

আপলোড টাইম : ১০:১৩:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০২০

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকারবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন
সমীকরণ প্রতিবেদন:
বাংলাদেশে নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যর্থতা ও কারাগারগুলোর শোচনীয় পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে। প্রতি বছর এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) ‘২০১৯ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটির বাংলাদেশ অংশে বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইনে নির্যাতন বা অন্যধরনের নির্মম, অমানবিক আচরণ বা শাস্তি নিষিদ্ধ থাকলেও নিরাপত্তাবাহিনীর বিরুদ্ধে এসব কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগটঠন ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশসহ নিরাপত্তাবাহিনীগুলো এসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আরো বলা হয়েছে, অভিযুক্ত জঙ্গি ও রাজনৈতিক বিরোধীদলগুলোর সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য নির্যাতন চালিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে যে, নিরাপত্তাবাহিনী হুমকি, মারধর, হাঁটুতে আঘাত করা (নিক্যাপিং; সাধারণত গুলি করে এধরনের আঘাত করা হয়), বৈদ্যুতিক শক দেয়া এবং মাঝে মাঝে ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতনও করেছে। গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটি (সিএটি) বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে নির্যাতন ও অসদাচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, স্বীকারোক্তি উদ্ধার বা ঘুষের অর্থ আদায়ের জন্য এসব নির্যাতন করা হয়ে থাকে। প্রতিবেদনটিতে নির্যাতনের ঘটনাগুলো নিয়ে জনসাধারণের জন্য প্রকাশিত তথ্যের ঘাটতি এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে, বিশেষ করে র‌্যাবের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরা হয়। মানবাধিকার সংগঠন অধিকার অনুসারে, গত বছরে জুনে তাহমিনা বেগম নামের এক নারী নরসিংদীর গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে তার ছেলে সোহেল মিয়াকে আটকে রেখে তার কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনেন। ছেলের মুক্তির জন্য তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। তিনি ওই টাকা দিতে অস্বিকৃতী জানালে পুলিশ তার ছেলেকে বৈদ্যুতিক শক দেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে তার ছেলেকে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে মেরে ফেলার হুমকি দিলে তিনি পুলিশকে ১ লাখ টাকা দেন। এরপর তারা সোহেলকে ছেড়ে দেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটিতে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক রোহিঙ্গা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগও ওঠে এসেছে। বলা হয়, গত অক্টোবরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১২ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত চালু করে। ওই শিশুর ভাই মোহাম্মদ ওসমানের ভাষ্য, গত ২৯শে সেপ্টেম্বর তিন সেনা মিলে তার বোনকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর তদন্ত এখনো চলছে। কিন্তু ওসমানের দাবি, নিরাপতাবাহিনীর সদস্যরা তার পরিবারকে হুমকি দিয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ না করতে বলেছে। এসব হুমকির কারণে তারা অভিযোগ করেনি। এছাড়া, ২০১৮ সালের আগস্টে সাংবাদিক শহিদুল আলমের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
কারাগার ও বন্দিশিবিরের পরিস্থিতি:
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনটিতে, বাংলাদেশের কারাগারগুলোর কঠিন পরিস্থিতির সমালোচনা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিগুলো সময়ভেদে জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কারাগারের ভেতরকার পরিবেশ জনাকীর্ণ। এর স্থাপনাগুলো অপর্যাপ্ত ও সেখানে নিম্ন মানের স্যানিটেশন ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে।
শারীরিক পরিস্থিতি:
কারাগার বিভাগ অনুসারে, ৩৭ হাজার বন্দি রাখার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন কারাগার ব্যবস্থায় বর্তমানে ৮০ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে মামলার বিচারকার্য শেষ হয়নি এমন বন্দিদের দোষী সাব্যস্ত বন্দিদের সঙ্গে রেখে দেয়া হয়। গত সেপ্টেম্বরে প্রকাশিৎ এক মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে কারাগারগুলোয় ৮০ হাজারের বেশি বন্দিদের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র নয় জন। এছাড়া। ৬০টি কারাগারে কোনো চিকিৎসকই নেই। কারাগার বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক জানান, ২০১৮ সালে রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩১৬ জন বন্দি।
প্রশাসন:
কারাগারগুলোয় বন্দিরা অভিযোগ দায়ের করার মতো কোনো কর্মকর্তা নেই। কারাগার কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা কর্মী ঘাটতিতে ভুগছে। পুনঃপ্রশিক্ষণ ও প্রত্যাবাসন কর্মসূচী খুবই সীমিত।
স্বাধীন পর্যবেক্ষণ:
সরকারি পরিদর্শকর ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি পর্যবেক্ষকদের কারাগার পরিদর্শনের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেসব পরিদর্শনের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি।