ইপেপার । আজশুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বাঁশের খুঁটি আর লাল পতাকায় সব দায়িত্ব শেষ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:২২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুলাই ২০২০
  • / ৩৪১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার লকডাউনকৃত এলাকায় জনসমাগম, চলছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের কয়েকটি পাড়ার লকডাউন। বাস্তবায়নে সঠিকভাবে মাঠে নেই পুলিশ-প্রশাসন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোর স্বেচ্ছাসেবকেরা। তাই লকডাউন তোয়াক্কা না করেই চলছে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। লকডাউনকৃত এলাকায় জনসমাগম। সাধারণ মানুষ লকডাউনকৃত এলাকায় যাচ্ছে, আবার লকডাউনকৃত এলাকার মানুষ বাইরে আসছে অহরহ। শুধুমাত্র বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে লাল পতাকা টাঙানো আছে, তবে নেই কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা স্বেচ্ছাসেবক। জেলা প্রশাসন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি দেওয়া হলেও, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত ওয়ার্ড পর্যায়ের এসব মনিটরিং কমিটির কোনো সদস্যের দেখা মেলেনি একটিও লকডাউনকৃত এলাকায়। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, এটি জেলার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের লকডাউনকৃত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় স্বাভাবিক চিত্র। শুধুমাত্র রাস্তাটিই বন্ধ আর লাল পতাকা টাঙানো। চুয়াডাঙ্গা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক ফেরিঘাট রোড। ব্যবসায়িক এলাকা নামেই খ্যাত এই রোডটি। দুপুরে দেখা গেছে প্রত্যেকটা দোকান অর্ধেক শার্টার নামিয়ে খোলা আছে। মালামাল ক্রয়-বিক্রয় চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কা নেই। যদিও লকডাউনকৃত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বাদে সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে, তবে এই রোডে তার কিছুই বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। অপর দিকে, চুয়াডাঙ্গা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়া ও শেখপাড়ার অবস্থাও একই রকম। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া এবং এতিমখানাপাড়ার অবস্থাও একই রকম। বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা আর লাল পতাকায় ঝুঁলছে। তবে এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হোসেনকে ফেরিঘাট রোডে বাঁশ পুততে দেখা গেছে। কিন্তু পরে আর কাউকেই পাওয়া যায়নি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুলশানপাড়া আর থানা কাউন্সিলপাড়ার কোনোটাতেই লকডাউনের ছাপ নেই। কোথাও বাঁশ কিংবা লাল পতাকাও চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘থানা কাউন্সিল পাড়াটির রাস্তাটি একমুখী সড়ক হওয়ায় বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আর গুলশানপাড়ায় চলাচলের জন্য শুধু একটি মাত্র রাস্তা। এলাকাবাসী বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দিবে না জানিয়ে বাঁশ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তবে স্বেচ্ছাসেবকসহ কমিটির সবাই কাজ করছেন।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করার। স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কমিটির আলোচনা সভা করাসহ প্রত্যেকটা কাজই করছি। আসলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচণ্ড অভাব।’
৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলা বলেন, ‘কঠোরভাবেই লকডাউন কার্যকর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াসহ লাল ফ্লাগ টাঙানো হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ‘যে যে এলাকা লকডাউন করা হয়েছে, সে এলাকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নিয়ে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়ম অমান্যকারীকে শাস্তি দিচ্ছেন। জরিমানা করছেন। তবুও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রচুর। মানুষ মানতেই চায় না। আসলে সুনাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে যদি সঠিকভাবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানেন, তাহলে এমন হয় না। এমন একটা পরিস্থিতি যেন সব দায়িত্ব প্রশাসন আর পুলিশের। কিন্তু আমাদেরও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় সচেতন হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাঁশের খুঁটি আর লাল পতাকায় সব দায়িত্ব শেষ!

আপলোড টাইম : ১০:২২:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুলাই ২০২০

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার লকডাউনকৃত এলাকায় জনসমাগম, চলছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ডের কয়েকটি পাড়ার লকডাউন। বাস্তবায়নে সঠিকভাবে মাঠে নেই পুলিশ-প্রশাসন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোর স্বেচ্ছাসেবকেরা। তাই লকডাউন তোয়াক্কা না করেই চলছে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। লকডাউনকৃত এলাকায় জনসমাগম। সাধারণ মানুষ লকডাউনকৃত এলাকায় যাচ্ছে, আবার লকডাউনকৃত এলাকার মানুষ বাইরে আসছে অহরহ। শুধুমাত্র বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে লাল পতাকা টাঙানো আছে, তবে নেই কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা স্বেচ্ছাসেবক। জেলা প্রশাসন থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি দেওয়া হলেও, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত ওয়ার্ড পর্যায়ের এসব মনিটরিং কমিটির কোনো সদস্যের দেখা মেলেনি একটিও লকডাউনকৃত এলাকায়। সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, এটি জেলার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।
সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের লকডাউনকৃত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় স্বাভাবিক চিত্র। শুধুমাত্র রাস্তাটিই বন্ধ আর লাল পতাকা টাঙানো। চুয়াডাঙ্গা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক ফেরিঘাট রোড। ব্যবসায়িক এলাকা নামেই খ্যাত এই রোডটি। দুপুরে দেখা গেছে প্রত্যেকটা দোকান অর্ধেক শার্টার নামিয়ে খোলা আছে। মালামাল ক্রয়-বিক্রয় চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার তোয়াক্কা নেই। যদিও লকডাউনকৃত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকানপাট বাদে সবকিছু বন্ধ রাখার নির্দেশনা আছে, তবে এই রোডে তার কিছুই বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। অপর দিকে, চুয়াডাঙ্গা ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়া ও শেখপাড়ার অবস্থাও একই রকম। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া এবং এতিমখানাপাড়ার অবস্থাও একই রকম। বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা আর লাল পতাকায় ঝুঁলছে। তবে এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হোসেনকে ফেরিঘাট রোডে বাঁশ পুততে দেখা গেছে। কিন্তু পরে আর কাউকেই পাওয়া যায়নি। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুলশানপাড়া আর থানা কাউন্সিলপাড়ার কোনোটাতেই লকডাউনের ছাপ নেই। কোথাও বাঁশ কিংবা লাল পতাকাও চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘থানা কাউন্সিল পাড়াটির রাস্তাটি একমুখী সড়ক হওয়ায় বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। আর গুলশানপাড়ায় চলাচলের জন্য শুধু একটি মাত্র রাস্তা। এলাকাবাসী বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দিবে না জানিয়ে বাঁশ না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তবে স্বেচ্ছাসেবকসহ কমিটির সবাই কাজ করছেন।’
৭ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা চুয়াডাঙ্গা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউন বাস্তবায়ন করার। স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কমিটির আলোচনা সভা করাসহ প্রত্যেকটা কাজই করছি। আসলে মানুষের মধ্যে সচেতনতার প্রচণ্ড অভাব।’
৪ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ উদ্দৌলা বলেন, ‘কঠোরভাবেই লকডাউন কার্যকর করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়াসহ লাল ফ্লাগ টাঙানো হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ‘যে যে এলাকা লকডাউন করা হয়েছে, সে এলাকার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নিয়ে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিয়ম অমান্যকারীকে শাস্তি দিচ্ছেন। জরিমানা করছেন। তবুও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রচুর। মানুষ মানতেই চায় না। আসলে সুনাগরিক হিসেবে প্রত্যেকে যদি সঠিকভাবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানেন, তাহলে এমন হয় না। এমন একটা পরিস্থিতি যেন সব দায়িত্ব প্রশাসন আর পুলিশের। কিন্তু আমাদেরও সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ সংকট কাটিয়ে ওঠার উপায় সচেতন হওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।’